জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ও দক্ষতার বিচারে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে আসছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ মিশনের মত একটি বহু রাষ্ট্রীয় কর্ম পরিবেশে আমাদের সুশৃঙ্খল সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ মিশনের মত একটি বৈরি এলাকায় শান্তি রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে জাতিসংঘ মিশনে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের বিশ্বের দরবারে এ প্রশংসার পাশাপাশি দেশের জন্য বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করে আনছে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দীর্ঘদিন ধরে শান্তিরক্ষী মিশনে প্রশংসনীয় ভুমিকার কারনে জাতিসংঘে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা, ইরসনিও সাফল্য ও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবার বিষয়টি আমাদের প্রতিযোগী বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশের জন্য ঈর্ষা ও ভাবনার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ৫৫ হাজার বর্গ মাইলের ১৬ কোটি জনবলের অতি সাধারণ অর্থনীতির একটি ছোট্ট দেশই কি না জাতিসংঘে ‘Highest Troops Contributing Country’!!! এটা যেন মেনে নিতেই পারছে না বাংলাদেশের প্রতিযোগী তথা বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক মহল ও তাদের এদেশীয় এজেন্টরা। এখন যেন তারা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের নিল নকশা ও চক্রান্ত বাস্তবায়নে।
সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তথাকথিত একটি মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য সাম্প্রতিক কালে নিখোঁজ হওয়া ৮ ব্যক্তিকে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। সভায় নিখোঁজ আত্মীয় স্বজনদের পাশাপাশি মুল ব্যক্তিবর্গ বা বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথাকথিত স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের পরিচয়ধারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ শাহদিন মালিক, দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, আওয়ামী লীগের পতিত নেতা ও বর্তমানে নাগরিক ঐক্কের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনা সভায় এসকল বুদ্ধিজীবীরা অন্যান্য বক্তব্যের পাশাপাশি গুম, হত্যা ও অপহরণের সাথে র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে র্যাবে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ বন্ধের দাবী জানান। এ বিষয়ে তারা সম্প্রতি বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন।
প্রিয় পাঠক, কথিত বুদ্ধিজীবীদের এমন দাবীকে আপনি নিশ্চয়ই স্বাভাবিক দাবী হিসেবে ধরে নিবেন। কিন্তু সূক্ষ্ম ভাবে চিন্তা করলেই বেরিয়ে আসবে এই দাবীর অন্তরালে লুকিয়ে আছে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। একবার চিন্তা করে দেখুন তো, একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী মিশন বন্ধ হলে লাভবান হবে কারা ? নিশ্চয় বাংলাদেশ নয়, লাভবান হবে ওই সমস্ত দেশ যারা বাংলাদেশের এ সুনাম সহ্য করতে পারে না, বাংলাদেশ উন্নতি করুক তা তারা চায় না। একবার চিন্তা করে দেখুন তো জাতিসংঘে বাংলাদেশের বন্ধ হয়ে গেলে ভেঙ্গে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্তপূর্ণ একটি স্তম্ভ, বন্ধ হয়ে যেতে পারে বৈদেশিক আয়ের বড় একটি অংশ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুলন্থিত হতে পারে দেশের সুনাম ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক অথচ নির্মম সত্য যে, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব বিলুপ্তি ও র্যাবে কর্মরতদের শান্তিরক্ষী মিশনে না নেয়ার আহবান জানিয়ে আমাদের দেশকে কলুষিত করার সুযোগ করে দিয়েছেন । আমার দেহে অসুস্থতা দেখা দিলে তো আমি দেহকে ত্যাগ করতে পারি না, অঙ্গহানিও করতে পারি না, তখন আমার দরকার হবে একান্ত পরিচর্যা ।
তবে আমি কিন্তু আমাদের এ সকল বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যে মতেই বিচলিত নই। প্রতিযোগী ও প্রতিবেশী যেসব দেশ তাদের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ দেশের অভ্যন্তরে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীর অন্তরালে তাদের যেসব এজেন্টদের নিয়োগ দিয়ে রেখেছিল, আজ তারা সজাগ হয়েছে কেবল। তাদের এ চক্রান্ত চলতেই থাকবে। তবে হ্যা, তারাও সক্রিয় থাকবে এও যেমন সত্য, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকবো এ কথাও দিবালোকের মত সত্য। একই সাথে আমি পাঠকদের আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই আর তা হল, শুধু এরাই নয়, এদের মত আরও অনেকেই সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, তাদেরকে সনাক্ত করতে হবে, বর্জন করতে হবে - এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া...।
তাহলেই পথ হারাবে না বাংলাদেশ ।