ডুপ্লেক্স বাসার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেখলাম এই রাতে এগারটায় এক আতিথি আমার দুয়ার পার হয়ে এসে পরেছে আমার লবিতে। এই তো আর একটু এলেই সে পৌঁছে যাবে আমার ড্রিইংরুমে। সে মনের আনন্দে গুন গুনিয়ে গান গাইতে গাইতে বোধ হয় এসে ছিল ভুল করে। হঠাৎ খেয়াল হতেই কি জানি কি মনে করে ফিরে চলল। আমার বুক সেলফ দুইটার মাঝে যে বড় মাটির টবটা আছে, যাতে আমি রেখেছি কিছু কাগজের ফুল তাদের খুব মন দিয়ে দেখল। হয়ত খানিকটা অবজ্ঞার হাসি ছড়িয়ে দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আমায় দেখল। কি জানি কি বলবার জন্য আমার সিঁড়ির নিচে দাঁড়াল?
আমি তখন মোবাইলে চিৎকার করে কথা বলতে ব্যাস্ত। বাচ্চাদের সরিয়ে রাখতে বলছি, বুক দিয়ে আগলে রাখতে বলছি আমার বাসার কাজের মেয়েটাকে। এই অনিন্দ্য ভয়ংকর সুন্দরের সামনে থেকে। ওকে বলছি বাচ্চাদের নিয়ে উপরের বেড রুমে যাও দরজা বন্ধ করে দাও। ওরা যাচ্ছে না শুধু বলছে মা তুমিও আস। আমি একা অসহায় এই ভয়ংকর সুন্দরের সামনে। আমি এই রাতে কাউকে পাচ্ছিনা ফোনে। জানুকে রিং করছি না কারন ও ঢাকায় অযথা চিন্তা করবে। ও এই মুহূর্তে আমার সামনে আসতে পারবে না।
আমি সিঁড়ি থেকে নড়তে পারছি না, ও আবার কোথায় চলে যাবে আমি তাকে খুঁজে পাব না। মোবাইলে এক সহকর্মীকে পেলাম। সে আসছে আমি প্রস্তুত হচ্ছি এই সুন্দরের সাথে মুখোমুখি হতে ।
কি জানি আবার - কি ভেবে চলে গেল আমার ডইনিং রুমে আমি ধীরে ধীরে, তাকে চোখে চোখে রাখার মানসে ডাইনিংরুমে উঁকি দিলাম। সে দেখি আবারও ফিরছে । আমি দ্রুত নেমে সিঁড়ির নিচ থেকে অবহেলায় পরে থাকা বাবুর ক্রিকেট ব্যাটটা হাতে নিলাম। আবার ও এক লাফে সিঁড়িতে উঠে পিছন ফেরে দেখি সে আমার সিঁড়ির শুরুতে স্থির দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে তাকে আমি কি ভাবে গ্রহন করছি। আস্তে আস্তে একটা সিঁড়িতে উঠল। মসৃন মোজাইকের এই মেঝেতে তার হাঁটতে বড় অসুবিধা হচ্ছে। আমি প্রানপন জোড়ে ওকে আঘাত করতে চাইলাম। হাত থেকে ব্যাটটাই পরে গেল।
এবার সে বোধ হয় তার বিপদ বুঝতে পারল। ছিটকে চলে গেল বুক সেলফ গুলির পেছনে। সহকর্মীরা এল। খুঁজে বের করে আঘাতে আঘতে ভয়ংকর সুন্দরের পরিসমাপ্তি ঘটানো হল।
সে যে এসে ছিল আমি তাকে রাখতে পারিনি, ভালবাসা দিয়ে গ্রহন করতে পারিনি। আমি আমার নিষ্ঠুর রূপ তাকে দেখিয়েছি। কি করবো আমার কিছুই করার ছিল না?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:২৪