মৃত্যু ব্যাপারটা একসময় খুব ভয় পেতাম, খুব অপ্রিয় ছিল। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই মৃত্যু জিনিসটা প্রিয় হয়ে উঠছে! কারোর স্বাভাবিক মৃত্যুর খবর শুনলে এক সময় মন খারাপ হত, এখন কেন জানি কারোর স্বাভাবিক মৃত্যুর খবর শুনলে আর মন খারাপ হয়না। তবে অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্খিত কোন মৃত্যুর খবর মনটা খারাপ করে দেয়। অসময়ে কেউ চলে গেলে শুনলে সেটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। যেমন আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রগুলা যে সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে গিয়ে মারা গেল সেটা মেনে নিতে খুব কষ্ট লাগছে। সেরকম কিছু অস্বাভাবিক এবং অসময়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া আমার চেনাজানা কিছু মানুষের মৃত্যর ঘটনা নিয়ে আজকের এই ব্লগ পোস্ট।
মৃত্যু এক
আমার তখন সামনে এস এস সি পরিক্ষা। অগ্রাহায়ণ মাস। বাড়িতে অনেক অত্তিয় স্বজন জড়ো হয়েছেন। সবাই মিলে খুব মজা করছিনেল।আমার মেজ বোনও তার তিন বাচ্চাকে নিয়ে আসছেন।ছোট ছেলের নাম তাহের, বয়স সাড়ে তিন বছর! তাহের ছিল অন্যান্য বাচ্চাদের চেয়ে কিছুটা আলাদা- শান্ত শিস্ট টাইপের ! আমি আমার রুমে বসে অংক করছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম সে আমার অংক করাটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। তার চলাফেরা খুব সাইলেন্স টাইপের হওয়ায় সে আমার পাশে এসে কখন দাঁড়িয়েছে সেটা টেরই পাইনি। তাকে কোলে নিয়ে আদর করে আবার অংকতে মজে গেলাম। মজে যাওয়ায় সে কখন চলে গেল সেটাও খেয়াল করিনি। এর ১০/১৫ মিনিট পরে মানুষের চিৎকার শুনে দৌড়ে বেরুলাম। বেরিয়ে গিয়ে দেখলাম আমার ভাগিনা তাহের আমাদের পিছনের পুকুরে পড়ে গেছে। পরে ডাঃ আসতে আসতে সে মারা গেল !
মৃত্যু দুই
আমার কাজিনের এক ফ্রেন্ডের নাম দোয়েল! কাজিন আমার বয়সে ছোট হলেও আমরা ছিলাম ফ্রেন্ডলি। তার সাথে ফ্রেন্ডলি হওয়ার কারনে তার কয়েকটা বন্ধুর সাথেও ছিলাম ফ্রেন্ডলি। এর মধ্যে দোয়েলও ছিল। একদিন সে আমাকে মার্কেটে পেয়ে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে বলল- ভাইজান আপনার সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ আছে। আপনে কোনদিন সময় করতে পারবেন। আমি তাকে একটা তারিখ দেই। সেই নির্দিষ্ট তারিখ আসার আগে সে খুন হয়! শিবিরের ক্যাডাররা তাকে কলেজের ভিতর টুকরু টুকরু করে ফেলে রাখে। সে ছাত্রদল করত। কোনদিনও জানা হবে না তার সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কি ছিল, কোনদিনও এমন আপন করে কেউ আমারে ভাইজান বলে ডাকবেওনা।
মৃত্যু তিন
ছোটবেলা খুব মার্বেল খেলতাম। খেলায় এত ভাল ছিলাম না। আমার এক মার্বেল খেলার সাথী ছিলো, নাম নজির হোসেন। যার সাথে আমি প্রায়ই জিততাম। তাই তার সাথে সব সময় খেলতাম। সেও আমার সাথে খেলত, কারন সেও কার সাথে জিত্তে পারত না আমি ছাড়া! একদিন ভরদুপুরে আমি তার সাথে খেলে বাড়ি ফিরে এসে পুকুরে সাঁতরাচ্ছিলাম। তখনই খবর পাইলাম সে কারেন্টে লেগে মারা গেছে। সে নাকি লম্বা রড দিয়ে নারকেল গাছ থেকে ডাব পাড়তে গিয়েছিল। ডাব গাছের কাছেই ছিল কারেন্টের লাইন। ডাবে মারতে গিয়ে সেটা ফসকে গিয়ে কারেন্টের লাইনে পড়ে যায়! এখনও মনে আছে সেদিন সে আমার সাথে মার্বেল খেলায় জিতেছিল।
মৃত্যু চার
একদিন মাঝরাতে হঠাৎ এক মেয়েলি কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম থেকে দেখলাম এক মহিলা কান্নাকাটি করছে, আর বলছে আম্মা আমারে আজকে রাতের জন্য জায়গা দেন তা না হলে ঐ ব্যাটা আমারে জানে মাইরা ফালাইবো। পরে বিস্তারিতে জানলাম তার স্বামী তারে প্রায়ই মাইরা ঘর থেকে বাহির করে দেয়। মহিলা আর তার স্বামী আমাদের পাশের বাসায় থাকে, সেখানে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে সেখানে তারা থাকে, সেটা তার স্বামী পাহারা দেয়! এর পরেরদিন আমি এম্নিতে ঐদিকে গেলাম। গিয়ে ঐ লোকটার সাথে কথা বললাম - তারে জিগাইলাম বউরে মারও কেন? জবাবে বলল - না ভাইসাব আর এরকম হবে না, মাঝেমাঝে বউ কথা শুনে না, খুব উলটাপালটা করে। সে সময় মাথা ঠিক রাখতে পারিনা। এর দুইদিন পরে জানলাম লোকটা কারেন্টে লেগে মারা গেছে। বউ পেয়ারা খেতে চেয়েছিল, বউয়ের জন্য লোহার রড দিয়ে পেয়ারা পাড়তে গিয়ে দূর্ঘটনাটা ঘটে।
মৃত্যু পাঁচ
ছেলেটার নাম রুহেল, আমার গ্রামের ছেলে। গ্রামে গিয়ে তার সাথে ক্রিকেট খেলছিলাম। যখন ব্যাটিং করছিলাম সে উইকেটকিপার ছিল। কয়েকবার বেশ জোরে এলবিডব্লিয়ের আবেদন করেছিল। অথচ কেউ জানত না তার মাঝে মরন ব্যাধি ক্যান্সার বাস করছে। এর কিছুদিন পরে জানলাম সে ক্যান্সারে মারা গেছে।
মৃত্যু ছয়
আমাদের গ্রামে এক পল্লি চিকিৎসক ছিলেন। তার বড় ছেলে শামিম আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিল। সে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতো। আমি খুব ভালো করে চিনতাম। একদিন হঠাৎ করে শুনলাম সে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্নহত্যা করছে। পরে জানছিলাম বিষয়টা প্রেম-ঘটিত ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:১১