somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প কথক

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কিছু মানুষের জীবনে কিছু ব্যতিক্রমী শখ থাকে। ঠিক তেমনি আমারও একটা শখ আছে। মানুষের জীবনের গল্প সংগ্রহ করে সে গল্প ছড়িয়ে দেয়া। আমার এই শখের কারণে অনেকে আমাকে গল্প-কথক হিসাবে চিনে। মানুষের গল্প সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি। কত অচেনা অজানা বিচিত্র সব মানুষের সাথে দেখে হয়েছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে গল্প সংগ্রহ করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছি।কিন্তু কিছু গল্প আমি কোনদিন কাউকে বলিনি, নিজের কাছে গোপন করে রেখে দিয়েছি। বলিনি যে সেটা কিন্তু ইচ্ছাকৃত না। না বলার কারণ ছিল এই গল্পগুলা বললে মানুষ হয়ত সেটা বিশ্বাস করত না। এরকম কিছু অবিশ্বাস্য গল্প ক্রমানুসারে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

গল্প এক:

পড়ন্ত বিকেলে রাশিয়ার মস্কোর রাস্তায় হাঁটছি। সেদিন ছিল ফ্রাই ডে, তাই শহর প্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শহরের বার, রেস্তরাঁ, ক্লাবগুলা ফ্রাই ডে নাইটের উম্মাদনায় জীবন্ত হয়ে উঠে। হঠাৎ দেখলাম একটা বারের সামনে একটা ব্যান্ড দল গান করছে আর কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে তাদের গান শুনছে। আমিও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পাশে একটা লাল সুটকেস হাতে চাইনিজ এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন সুটকেসটা আবার পলিথিন দিয়ে বাঁধা। চাইনিজ বললাম কারণ লোকটার নাক চায়নিজদের মত বোচা ছিল। তাই অনুমান করে নিলাম লোকটা চাইনিজ হবে। সেই চাইনিজ লোকটা রুশ সুন্দরী ভোকালিস্ট মেয়েটার কণ্ঠের প্রশংসা করে যেচে-যেচে আমার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলেন। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমার অবাক হওয়ার কারণ হল আমার অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু জানি চাইনিজরা খুব সহজে কারো সাথে মিশে না বা কারো সাথে সহজে আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা। যাই হোক আমিও ভোকালিস্ট মেয়েটার কণ্ঠের প্রশংসা করে তার কথার উত্তর দিলাম। একটা গান শুনার পর আমি হাঁটা ধরলাম। একটু সমানে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম সেই চাইনিজলোকটাও আমার পিছে-পিছে আসছে। তার আসা দেখেই হুট করে মাথায় আসলো- আচ্ছা লোকটার জীবনের গল্প শুনলে কেমন হয়। সে কাছে আসার সাথে সাথেই আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো আমি আপনাকে আমার জীবনের গল্প বলতে চাই। আমি কিছুটা থতমত খেয়ে কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেই আমাকে বলল- চলেন ঐ সামনের বাস স্টপের বেঞ্চে গিয়ে বসি। আমি অনেকটা রোবটের মত তাকে ফলো করে বাস স্টপে গিয়ে বসলাম। বসার পর সে আমাকে তার পরিচয় দিল। আমি তাকে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম আমি একজন গল্প-কথক। আমার শখ হল মানুষের জীবনের গল্প সংগ্রহ করা। আমার মনে হয়েছিল সে এসব শুনে হয়ত কিছুটা অবাক হবে, কিন্তু না তার চেহারায় সেরকম কিছু লক্ষ্য করলাম না।

আমি তার জীবনের গল্প শুনতে চাওয়ার সাথে সাথে সে তার জীবনের গল্প বলা শুরু করে দিল। তার মনোভাব দেখে মনে হয়েছিল হয়ত ব্যতিক্রমী কিছু শুনবো। পুরা গল্প শুনে খুব হতাশ হলাম। কারণ তার জীবনের গল্পে তেমন আলাদা কিছু ছিল না। বিদেশে এসে জীবন সংগ্রাম, প্রেম, বিয়ে-বাচ্চা তারপর বিচ্ছেদ এসব হাবিজাবি।

যাওয়ার আগে সে ফিসফিস করে বলল আমাকে কি কিছু টাকা দেয়া যাবে, বিয়ার খাবো। বিনিময়ে আমার এই সুটকেস তোমাকে দিয়ে দিব। আমি জিজ্ঞেস করলাম সুটকেসে কি আছে। সুটকেসের ভিতর আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান এবং সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিসের কিছু অংশ বিশেষ আছে। তার রহস্যঘেরা এরকম উত্তর শুনে কিছুটা অবাক এবং আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- বিষয়টা আরেকটু খুলে বলেন তো। তারপর সে বলতে শুরু করল-

আজকে দুপুরে চার্চের সামনে আমার একমাত্র ছেলের সাথে দেখা হলো। সে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। আমি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম- তোমার মা কোথায়, তুমি একা কেন বাসায় ফিরছো। সে বলল তার মা বলেছে আজকে সে তার এক নতুন বনধুর সাথে দেখা করতে যাবে, তাই তাকে নিতে স্কুলে আসতে পারবেনা। সে যেন একা একা বাসায় চলে যায়। আমি তাকে বললাম তাহলে আমার সাথে চল, তোমাকে কিছু শপিং করে দিব, তারপর তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। আমি বলার সাথে সাথে সে রাজি হয়ে গেল। আমি তাকে নিয়ে প্রথমে চার্চে গেলাম, সেখানে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল। তারপর সেখান থেকে শপিং মলে গেলাম। তাকে তার প্রিয় সব খেলনা কিনে দিলাম! শপিং শেষে সোজা আমার ঘরে চলে আসলাম। ঘরে আসার পর ছেলেটাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তাকে বললাম ক্লান্ত লাগলে আমার বিছানায় শুয়ে একটু রেষ্ট নিয়ে নাও। আমি তোমার মাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি তুমি আমার সাথে আছ, সন্ধ্যার পর দিয়ে আসবো। সে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে লক্ষ্য করলাম সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তাকে ঘুমের মধ্যে তার হাত পা মুখ খুব শক্ত করে বেঁধে ফেললাম। তরপর তাকে নিয়ে গেলাম রান্নাঘরে। ড্রয়ার থেকে সবচেয়ে বড় ছুরিটা বের করলাম। তারপর টুকরু টুকরু করে তাকে কাটলাম। কাটার পর কিছু অংশ ফ্রিজে রাখলাম আর কিছু অংশ এই সুটকেসে ভরলাম। এখন বের হয়েছি এই সুটকেসটা কোথাও ফেলে দিব। সবকিছু শুনে বুঝলাম লোকটার মাথায় মধ্যে বিরাট কোন ঝামেলা আছে। তাই তার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে দশ ডলার দিয়ে বিদায় করলাম। দশ ডলার দেয়ার পর সে আমাকে সুটকেসটা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি নেয়নি। যাবার সময় বলে গেল- আজকের রাতের খাবারটা আমার ছেলের মাংসের কাবাব দিয়ে করব!

রাতে হোটেলের রুমে এসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ করে একটা ব্রেকিং নিউজ পর্দায় ভেসে উঠল "বাবা'র হাতে নয় বছরের ছেলে খুন"! সেই ব্রেকিং নিউজে দেখলাম সন্ধ্যার সেই চাইনিজ লোকটাকে দেখাচ্ছে। পুরা নিউজ শুনে বুঝলাম- সন্ধ্যার সেই চাইনিজ লোকটাই হচ্ছে নিউজের খুনী বাবা এবং লোকটা আমাকে যে সুটকেসের গল্পটা বলেছিল তা কাটায় কাটায় সত্যি ছিল।
___________________________

টু বি কন্টিনিউ উইথ এ নিউ স্টোরি.....................................।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:১০
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×