কিছু কিছু মানুষের জীবনে কিছু ব্যতিক্রমী শখ থাকে। ঠিক তেমনি আমারও একটা শখ আছে। মানুষের জীবনের গল্প সংগ্রহ করে সে গল্প ছড়িয়ে দেয়া। আমার এই শখের কারণে অনেকে আমাকে গল্প-কথক হিসাবে চিনে। মানুষের গল্প সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি। কত অচেনা অজানা বিচিত্র সব মানুষের সাথে দেখে হয়েছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে গল্প সংগ্রহ করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছি।কিন্তু কিছু গল্প আমি কোনদিন কাউকে বলিনি, নিজের কাছে গোপন করে রেখে দিয়েছি। বলিনি যে সেটা কিন্তু ইচ্ছাকৃত না। না বলার কারণ ছিল এই গল্পগুলা বললে মানুষ হয়ত সেটা বিশ্বাস করত না। এরকম কিছু অবিশ্বাস্য গল্প ক্রমানুসারে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
গল্প এক:
পড়ন্ত বিকেলে রাশিয়ার মস্কোর রাস্তায় হাঁটছি। সেদিন ছিল ফ্রাই ডে, তাই শহর প্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শহরের বার, রেস্তরাঁ, ক্লাবগুলা ফ্রাই ডে নাইটের উম্মাদনায় জীবন্ত হয়ে উঠে। হঠাৎ দেখলাম একটা বারের সামনে একটা ব্যান্ড দল গান করছে আর কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে তাদের গান শুনছে। আমিও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পাশে একটা লাল সুটকেস হাতে চাইনিজ এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন সুটকেসটা আবার পলিথিন দিয়ে বাঁধা। চাইনিজ বললাম কারণ লোকটার নাক চায়নিজদের মত বোচা ছিল। তাই অনুমান করে নিলাম লোকটা চাইনিজ হবে। সেই চাইনিজ লোকটা রুশ সুন্দরী ভোকালিস্ট মেয়েটার কণ্ঠের প্রশংসা করে যেচে-যেচে আমার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলেন। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমার অবাক হওয়ার কারণ হল আমার অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু জানি চাইনিজরা খুব সহজে কারো সাথে মিশে না বা কারো সাথে সহজে আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা। যাই হোক আমিও ভোকালিস্ট মেয়েটার কণ্ঠের প্রশংসা করে তার কথার উত্তর দিলাম। একটা গান শুনার পর আমি হাঁটা ধরলাম। একটু সমানে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম সেই চাইনিজলোকটাও আমার পিছে-পিছে আসছে। তার আসা দেখেই হুট করে মাথায় আসলো- আচ্ছা লোকটার জীবনের গল্প শুনলে কেমন হয়। সে কাছে আসার সাথে সাথেই আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো আমি আপনাকে আমার জীবনের গল্প বলতে চাই। আমি কিছুটা থতমত খেয়ে কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেই আমাকে বলল- চলেন ঐ সামনের বাস স্টপের বেঞ্চে গিয়ে বসি। আমি অনেকটা রোবটের মত তাকে ফলো করে বাস স্টপে গিয়ে বসলাম। বসার পর সে আমাকে তার পরিচয় দিল। আমি তাকে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম আমি একজন গল্প-কথক। আমার শখ হল মানুষের জীবনের গল্প সংগ্রহ করা। আমার মনে হয়েছিল সে এসব শুনে হয়ত কিছুটা অবাক হবে, কিন্তু না তার চেহারায় সেরকম কিছু লক্ষ্য করলাম না।
আমি তার জীবনের গল্প শুনতে চাওয়ার সাথে সাথে সে তার জীবনের গল্প বলা শুরু করে দিল। তার মনোভাব দেখে মনে হয়েছিল হয়ত ব্যতিক্রমী কিছু শুনবো। পুরা গল্প শুনে খুব হতাশ হলাম। কারণ তার জীবনের গল্পে তেমন আলাদা কিছু ছিল না। বিদেশে এসে জীবন সংগ্রাম, প্রেম, বিয়ে-বাচ্চা তারপর বিচ্ছেদ এসব হাবিজাবি।
যাওয়ার আগে সে ফিসফিস করে বলল আমাকে কি কিছু টাকা দেয়া যাবে, বিয়ার খাবো। বিনিময়ে আমার এই সুটকেস তোমাকে দিয়ে দিব। আমি জিজ্ঞেস করলাম সুটকেসে কি আছে। সুটকেসের ভিতর আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান এবং সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিসের কিছু অংশ বিশেষ আছে। তার রহস্যঘেরা এরকম উত্তর শুনে কিছুটা অবাক এবং আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- বিষয়টা আরেকটু খুলে বলেন তো। তারপর সে বলতে শুরু করল-
আজকে দুপুরে চার্চের সামনে আমার একমাত্র ছেলের সাথে দেখা হলো। সে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। আমি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম- তোমার মা কোথায়, তুমি একা কেন বাসায় ফিরছো। সে বলল তার মা বলেছে আজকে সে তার এক নতুন বনধুর সাথে দেখা করতে যাবে, তাই তাকে নিতে স্কুলে আসতে পারবেনা। সে যেন একা একা বাসায় চলে যায়। আমি তাকে বললাম তাহলে আমার সাথে চল, তোমাকে কিছু শপিং করে দিব, তারপর তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। আমি বলার সাথে সাথে সে রাজি হয়ে গেল। আমি তাকে নিয়ে প্রথমে চার্চে গেলাম, সেখানে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল। তারপর সেখান থেকে শপিং মলে গেলাম। তাকে তার প্রিয় সব খেলনা কিনে দিলাম! শপিং শেষে সোজা আমার ঘরে চলে আসলাম। ঘরে আসার পর ছেলেটাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তাকে বললাম ক্লান্ত লাগলে আমার বিছানায় শুয়ে একটু রেষ্ট নিয়ে নাও। আমি তোমার মাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি তুমি আমার সাথে আছ, সন্ধ্যার পর দিয়ে আসবো। সে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে লক্ষ্য করলাম সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তাকে ঘুমের মধ্যে তার হাত পা মুখ খুব শক্ত করে বেঁধে ফেললাম। তরপর তাকে নিয়ে গেলাম রান্নাঘরে। ড্রয়ার থেকে সবচেয়ে বড় ছুরিটা বের করলাম। তারপর টুকরু টুকরু করে তাকে কাটলাম। কাটার পর কিছু অংশ ফ্রিজে রাখলাম আর কিছু অংশ এই সুটকেসে ভরলাম। এখন বের হয়েছি এই সুটকেসটা কোথাও ফেলে দিব। সবকিছু শুনে বুঝলাম লোকটার মাথায় মধ্যে বিরাট কোন ঝামেলা আছে। তাই তার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে দশ ডলার দিয়ে বিদায় করলাম। দশ ডলার দেয়ার পর সে আমাকে সুটকেসটা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি নেয়নি। যাবার সময় বলে গেল- আজকের রাতের খাবারটা আমার ছেলের মাংসের কাবাব দিয়ে করব!
রাতে হোটেলের রুমে এসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ করে একটা ব্রেকিং নিউজ পর্দায় ভেসে উঠল "বাবা'র হাতে নয় বছরের ছেলে খুন"! সেই ব্রেকিং নিউজে দেখলাম সন্ধ্যার সেই চাইনিজ লোকটাকে দেখাচ্ছে। পুরা নিউজ শুনে বুঝলাম- সন্ধ্যার সেই চাইনিজ লোকটাই হচ্ছে নিউজের খুনী বাবা এবং লোকটা আমাকে যে সুটকেসের গল্পটা বলেছিল তা কাটায় কাটায় সত্যি ছিল।
___________________________
টু বি কন্টিনিউ উইথ এ নিউ স্টোরি.....................................।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:১০