আমাদের অফিসের সিনিয়র সৌদি কলিগ আবু সাদির মেয়ের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। প্রথম কোনো সৌদি বিয়ের দাওয়াত পেয়ে খুবই রোমান্চিত। অফিস থেকে তিনজন দাওয়াত পেয়েছি, দুজন ইনডিয়ান আর আমি। কি পোশাক পরে যাব, কি গাড়ি নিয়ে যাব, কত রকমের ভাবনা। ইনডিয়ান দুজন শার্ট-প্যান্ট পরলেও আমি পান্জাবি আর জিন্স। একটা প্রাডো গাড়ি নিয়ে শহর থেকে প্রায় ৫০ কিমি দুরে একটা এস্তেরাতে বিয়ের আসরে হাজির হলাম। এত দামি প্রাডো নিয়েও সেখানে গিয়ে মনে হলো গাড়িটা কোথায় লুকিয়ে রাখা যায়। সব দামি দামি গাড়ির মাঝে প্রাডোকে বেশ সস্তা টাইপের কিছু একটা মনে হলো। মার্সিডিজ, অডি, ফেরারি, লেক্সাস, জি ম সি অারো কত বিখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি।
যাই হোক কনের বাবা আবু সাদি নিজেই অভ্যর্থনা জানিয়ে ভিতরে বসতে বলল। খুবই অভিজাত একটা জলসাঘর মনে হল। দেয়ালের ছবিগুলো একেকটা দেখে তাদের রুচির প্রশংসা করতেই হয়। প্রথমেই গাওয়া দিয়ে আপ্যায়ন, সাথে উন্নত মানের খেজুর। একটু পরেই আবার তাজা জুস দিয়ে আপ্যায়ন। পেশাদার ক্যামেরাম্যান দিয়ে ভিডিও এবং ছবি তোলার কাজ চলছিল। দুইটা হল ঘর একেবারে কানায় কানায় পুর্ণ। সবার একই পোশাক একই মনে হয় যেন কোন স্কুলে সবাই একই স্কুল ড্রেস পরে এসেছে। শিশু, তরুন, বৃদ্ধ একই পোশাক মাথা্য় ঘোমটার মতো রুমাল আর কালো একটা বেল্ট। শুধু আমরা তিনজনই ব্যাতিক্রম ছিলাম পোশাকে।
কিন্তু বিয়ের জন্য যে রোমান্চ ছিল সেইটা কোথাও দেখতে পেলাম না। কোথায় বর-কনে ? বা সেই রকম কোনো আনুষ্ঠানিকতা কিছুই নেই। পরে জেনেছি সেইটার জন্যে আলাদা আয়োজন। সেখানে শুধু মহিলারাই থাকে আর বরের সাথে দু'একজন পুরুষ যেতে পারে। এর বাইরে আর কোন কিছুই দেখতে পাইনি। আফসোস...।
এরপর রাত বারোটার পর খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। একেকটা টেবিলে একেকটা করে সাকান মানদি ডিস পাচ জনের জন্যে। অথচ সেই খাবারগুলো ৮/১০ জন খেতে পারবে। আমরা আমাদের খাবারগুলো অনেক কষ্ট করে অর্ধেকের মতো খেয়েছি যেন অপচয় না হয়। কিন্তু পাশের টেবিলে দেখলাম তিনজনে মিলে ১০ ভাগের একভাগ খেয়েছে, বাকিগুলো শুধুই অপচয়। এতদিন শুধু সমালোচনাই শুনেছি যে এরা কত খাবার অপচয় করে, এখন নিজেই চাক্ষুস শাক্ষী হয়েছি। বারবার শুধু আফ্রিকা, ইয়েমেনের ক্ষুদার্থ শিশুদের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।
সবশেষে চলে আসার সময় আবার আবু সাদি নিজে আবার গেট পর্যন্ত্য এসে বিদায় জানাল। তাদের আতিথিয়েতা আমি মুগ্ধ, কোথাও কোন কমতি ছিলনা। কিন্তু চলে আসার সময় গাড়িতে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল তাদের অপচয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৫৪