আমি আমার জীবনকে ঘৃণা করি’--কানাডার একটি বাংলা কাগজে এমন শিরোনাম পড়ে চমকে উঠেছিলাম। বিস্তারিত পড়ে দেখলাম আরতি নামের এক নারীর গল্প।
পত্রিকাটির রিপোর্টার জানাচ্ছেন--
মাসখানেক আগে চাকরি হারিয়েছিলেন আরতি। সেই থেকেই হতাশার উৎস সম্ভবত। কিন্তু কোনো সুইসাইড নোট না লিখে যাওয়ায় পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি
তবে তদন্ত চলছে। আর সেই তদন্তে আরতির ফেসবুক পেজটির ভূমিকা এখন অনেকখানি। চাকরি হারানোর কয়েক দিনের মধ্যেই আরতি তাঁর ফেসবুকের ‘কভার' ছবিটিও বদলে দিয়েছিলেন। সেই ছবিতে তিনি নিজেই ‘কমেণ্ট' করেছিলেন, আমার ব্যক্তিত্ব এমনই, যা সামলানো কঠিন। যে প্রোফাইল ছবিটিতে আরতি তাঁর হতাশার কথা জানিয়েছিলেন, সেই ছবিটি ‘লাইক' করেছেন তাঁর মা-ও। কিন্তু মেয়ের বিষাদের গভীরতার কোনো খোঁজ নেননি তিনি। আরতির দুঃখ-হতাশার কারণ জানতে এগিয়ে আসেননি তাঁর ফেসবুকের বন্ধুদের একজনও। এ সবেরই ফলশ্রুতি, চূড়ান্ত মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এ সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখছেন এমনকি মনোরোগ বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
আরতির ঘটনার প্রেক্ষিতে ইন্দোরের এক মনোবিদ মন্তব্য করেছেন, আরতির মা যথাসময়ে যদি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতেন, ফেসবুকে লেখা ‘মন্তব্য' নিয়ে মেয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, তবে হয়তো বিপদ এড়ানো যেত।
নিজের প্রোফাইল ছবিতে তরুণী তাঁর জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণার কথাই জানিয়েছিলেন ফেসবুকের বন্ধুদের। লিখেছিলেন, আমি আমার জীবনকে ঘৃণা করি। কিন্তু ১০ দিন পর সেই হতাশাই যে তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেবে সে কথা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কেউ। গত শনিবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের আরতি শ্রীবাস।
আমার আরও দুটি কথা---
এধরনের সমস্যা এখন বাড়ছেই। সব সময় এই ধরনের রোগীদের মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রে বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আনা সম্ভব হয় না। নানা কারন থাকে। অর্থনৈতিক কারণ থাকে। এধরনের রোগীরা ডাক্তার দেখাতে চান না। আত্মীয় স্বজনরা আনতে অনীহ হন।
তাই বলে এরা কি চিকিৎসা পাবে না। আমরা কি এদের সুইসাইড সহজভাবে দেখব। না, তা দেখব না। অবশ্যই না। এদেরকে মানসিক রোগ নিরাময় হাসপাতাল বা মনোরোগ চিকিৎসকদের কাছে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। কারন এই রোগের চিকিৎসা আছে। তাকে নিয়মিত চিকিৎসা ও মনিটরিং করতে পারলে সুস্থ-দীর্ঘায়ু সম্ভব। এটা তার অধিকার। জীবনের অধিকার। দায়িত্ব কেবল আত্মীয় স্বজনের নয়। দায়িত্ব বন্ধুদের। দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্রের। সমাজের সেটা ভুলে গেলে চলবে না। দায়িত্ব আধুনিক কালৈ ফেসবুক বন্ধুদেরও রয়েছে। ফেসবুক বন্ধুতা দায়হীন কিন্তু নয়।