somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রদের মৃত্যুতে প্রিন্সিপালের সুইসাইড: এড়ানো কি যেত?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন আছেন!
আমি এই ডাক্তারি কলামে সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে পরামর্শমুলক আলাপ জারি রাখতে চাই।
দক্ষিন কোরিয়ার ব্যাপারটা দেখুন। সেখানে স্মরণকালের শোকাবহ ফেরী দুর্ঘটনায় বিপুল মৃত্যু ঘটেছে। এরমধ্যে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থীও রয়েছে। গভীর শোক জানাই এই শিশুদের প্রতি। তারা অবকাশের জন্য একটি দ্বীপে যাচ্ছিল। পত্রিকায় পড়লাম-- ওই শিক্ষার্থীরা যে প্রতিষ্ঠানের ; সেটির ভাইস প্রিন্সিপাল শোক কষ্টে আত্মহত্যা করেছেন। খুবই দু:খজনক ঘটনা।
প্রথমটি ছিল দুর্ঘটনা। তাতে প্রিন্সিপাল নিজেই সুইসাইড করলেন! কেন করলেন! এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করব আমরা!

পড়াশোনা ও ট্রেনিং নিতে কিছুকাল আমার দক্ষিন কোরিয়া থাকার সুযোগ হয়েছিল। কাছে থেকে দেখেছি এই কোরীয়দের। চাপা স্বভাবের কর্মমুখী জাতি। জাপানিদের মত কাজ ভালবাসে। আবেগ কম বলেই ধারনা হয়েছিল। কিন্তু এই কোরীয় শিক্ষক তো আবেগের চরম বাড়াবাড়ি করে ফেললেন। কেন করলেন!

অনেকে হয়তো বলবেন তাতে আমার কি আসে যায়! একজন মনোচিকিৎসক হিসেবে অবশ্যই আসে যায়। জীবন সুই সাইড করার জন্য নয়। বাচার জন্য। উপভোগের জন্য। সেই জন্য নিত্য কাজ--স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়নের জন্য। এখানে সুই সাইডের কোন সুযোগ নেই। এটা মেনে নেয়া যায় না। সুইসাইড কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটা অস্বাভাবিক। একজন মনোরোগবিদ্যার ছাত্র হিসেবে আমরা সব সময় মানুষকে জীবনের পথ দেখাতে চাই।
এই প্রিন্সি পাল ভদ্রলোক ধরে নেয়া যায়-- ছাত্রদের অত্যধিক ভাল বাসতেন। স্নেহ করতেন। তাদের মৃত্যুর পর যে নি:সঙ্গতা সেটা তার জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছিল।

এই যে চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা-- এটাই অতি আবেগ । এটা মানসিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে। এবং নিরাময় যোগ্য।
হতে পারে তিনি বিষন্নতায় ভুগতেন। ডিপ্রেশন।এই রোগটি আমাদের সমাজেও বেড়েই চলেছে। সাবধান হতে হবে আপনাকে আমাকে--সবাইকে। কখন যে এর স্বীকার হবো বলা মুশকিল। তবে আগাম ধারনা থাকলে সচেতন থাকলে সবারই সুবিধা।

ধান ভানতে গিয়ে একটু শিবের গীত গেয়ে নিই। আমাদের সবার বিষয় গুলে জানা থাকলে ভাল।

দেশে মহিলাদের মধ্যে বিষন্নতা রোগ বেশী। তবে শিশুকিশোর নারী পুরুষ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই এই রোগে ভুগতে পারেন। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে--কাজে কর্মে অনাগ্রহ। মনে নিরান্দ ভাব। ভুলে যাওয়া, ঘুম কম বেশী। খেতে অনীহা; যৌন আকাঙ্খা কমে যাওয়া; এই বিষন্নতা আর আত্মহত্যার প্রবনতা যেন পিঠাপিঠি ভাই। নিজের ভুতভবিষ্যত নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা;

ছাত্রদের মৃত্যুতে কোরীয় পিন্সিপাল সুই সাইড করলেন স্কুল ক্যাম্পাসে গলায় ফাস দিয়ে--কি এক অব্যাক্ত যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি। তার এই মর্মান্তিক বিদায় কখনওই কাম্য নয়।


দেশেও এমন রোগী পাই। স্বজনের মৃত্যু-কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। নিজেকেই শেষ করে দিতে চান তিনি। অনেকে চেষ্টা করার পর মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসেন।

কিন্তু দক্ষিন কোরীয় প্রিন্সিপাল কি জানতেন-- তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন। তিনি যদি সময় মত চিকিৎসা করাতেন-- কিংবা তার স্বজনরা সহকর্মিরা বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আনতেন-- তবে ফেরী দুর্ঘটনার মহা বিয়োগান্তক ঘটনার পর এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটত না। দক্ষিন কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা ইর্ষনীয় পর্যায়ের। সব কাজে তারা সুদক্ষ। স্বাস্থ্যসেবাও নিবিড় জালে আটকানো। সেখানে রোগ জানলেই আগে চিকিৎসা--গাফিলতির সুযোগ নেই।

সেই দেশেই এই রকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে-- তাহলে ভাবুন আমাদের দেশের ডিপ্রেশন রোগীরা কি অবহেলায় রয়েছেন। এটাকে আমরা রোগ বলে স্বীকারই করতে চাই না। বলি পাগলামির লক্ষন। নানাভাবে এই রোগীদের সমাজে সংসারে যন্ত্রনা দেই। কিন্তু সবারই তো বাচার অধিকার আছে। আত্মহত্যা বা সেই চেষ্টা তো সুস্থতার লক্ষন নয়।

দক্ষিন কোরীয় প্রিন্সিপালের অনাকাঙ্খিত মুত্যু কি ঠেকানো যেত না! অবশ্যই যেত। তিনি রোগে ভুগছিলেন। শিক্ষক ; তার পরিবার স্বজন সহকর্মি যদি তার বিষন্নতা, অস্বাভাবিক নানা আচরনে দেখে সচেতন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন ; তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে এই ঘটনা ঘটত না।
আপনি আমি আমাদের চারপাশের লোকজন কি এইরকম সমস্যাতে ভুগছি। ভুগছি যে না-- এটা জোর গলায় বলতে পারি না।

এরকম সমস্যা হলেই কি ১০০ মাইল বেগে ডাকাতারের চেম্বারে ছুটতে হবে। নগদ নারায়ন দিয়ে কি চিকিৎসা নিতে হবে।

না। আমার পরামর্শ তা নয়।
আমার পরামর্শ ছোটখাট সমস্যাদি শেয়ার করুন। মনের মধ্যে পুষে রাখবেননা। আপনার অসন্তোষ কষ্ট কাছের মানুষকে বলুন। যাকে পছন্দ করেন, বিশ্বাস করেন; তাকে বলুন। একা নয় সবাইকে নিয়ে চলুন। নিজের মধ্যে যেন গুম না হয়ে থাকি। কাছের কোন মানুষকে নিজের মধ্যে গুম হয়ে থাকলে তাকে সহযোগিতার করুন। কথা বলুন। সমস্যাদি শেয়ার করতে বলুন। বাসায় নিকট জনকে বলুন। অফিসে পছন্দের বিশ্বাসী জনকে বলুন। তাতে বিষন্নতা রোগে ভোগার যে আশংকা তা রুদ্ধ হবে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। আর যদি হয়ই -- শেয়ার করলে আপনার নিকটজন তা বলবেন। সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া তখন সহজ হবে।


ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। রোগ মুক্ত থাকুন। সেজন্য আত্মপ্রয়াসী হোন। মানসিক রোগ কোন দৈব বা গায়েবী রোগ নয়। আর দশটা রোগের মত সাধারন রোগ। অন্য রোগে যেমন কেমিকেল অষুধ দেয়া হয়-- মানসিক রোগেও এলোপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে দিব্যি ভাল থাকা যায়। দীর্ঘায়ু থাকা যায়।

আমার ইমেইলে আপনার সমস্যা জানাতে পারেন-- সময় সুযোগ মত আমার পরামর্শদেব। আমার ইমেইল ঠিকানা[email protected]
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×