ভালবাসার দিনে সর্বত্রই নামি দামী ফুলের ছড়াছড়ি, এ নিয়ে সামুর পাতায় সৌখিন সব বাহারী ফুলের সমাহার যা দেখে অবহেলিত বন্য ফুলের কথা মনে পরে যায় বারবার।
বন্য কিছু ফুল প্রকৃতির সবচেয়ে বিস্ময়কর এক সৃস্টি – অনেক বন্য ফুলের রয়েছে আশ্চর্যজনক চেহারা । তবে তাদের অধিকাংশই দেখতে সুন্দর, আনন্দদায়ক, সে সব ফুল হতে খুবই সুঘ্রান হয় নির্গত এবং অনেক ফুলে মধুও থাকে । গৃহ সজ্জা এবং অংগ সজ্জার জন্য যেমন রয়েছে তাদের ব্যবহার, রোমান্টিক অঙ্গভঙ্গি হিসাবে এবং প্রেমের অর্ঘ্য নিবেদনেও এদের কোন জুড়ি নাই । সব ফুল কিন্তু ফুল নয় , কিছু ফুলে আছে শুধু ফুলের নিদর্শন । তাদের চেহারা ফুলের মত না হলেও সৌখিন বাগানের ফুলকে করে দেয় ম্লান । সারা বিশ্বের কিছু অদ্ভুত সুন্দর বন্য ফুল প্রজাতী ও ফুল সদৃশ্য প্রাণীকুলের সাথে পরিচিত হয়ে তাদের কথা শেয়ার করা যাক একসাথে ।
১) আমেরিকান ভুতুরে অর্কিড ( Dendrophylax lindenii) বাহামা, কিউবা এবং ফ্লোরিডাতে এটি বেশী জন্মালেও পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এই প্রজাতীর ফুল দেখতে পাওয়া যায় । অন্য গাছপালার উপর নোঙ্গর করে এরা বেঁচে থাকে ও বিকশিত হয় । পরগাছা ফুল নামেই এরা পরিচিতি পায় । মানব সমাজেও পরগাছা ফুলের রয়েছে ছড়াছড়ি , পরের নির্যাস করে পান এদের রূপ যৌবন জৌলস কেবলি যায় বেড়ে ।
২) কোন কোন জায়গায় এই আমেরিকান ভুতুরে অর্কিড সাদা ব্যাঙ অর্কিড নামেও পরিচিত । অক্টোপাসের মত আশ্রয় দাতাকেই কেবলি জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় ।
৩) ব্লু জেব্রা প্রাইমরোজ (Primula acaulis ‘Zebra Blue’) একটি বিলুপ্ত প্রায় উপ প্রজাতি, বন্যপ্রজাতি সংরক্ষন আইন ১৯৬১ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশেই এ ফুল আহরন নিষিদ্ধ। বিশ্বের বুক হতে বিলুপ্তির পথে বন্য ফুল সদৃশ্য রোহিঙ্গাদের মত জনগুষ্ঠির তরে কেন নেই কোন ফুলের ন্যয় সংরক্ষন আইন, যা এখনো অবাক বিষ্ময়ই বটে ।
৪) বেলুন ফুল ( Platycodon grandiflorus ) সম্পূর্ণরূপে ফোটার আগে বেলুনের মত ফুটে । কাশি এবং ঠান্ডা প্রতিরোধে এর রস বেশ কাজে লাগে । পুর্ব এশিয়ার সর্বত্র পাওয়া যায় তবে চীন কোরিয়া ও জাপানে বেশি জন্মে । বাংলাদেশে আকন্দ ফুল কিছুটা এই প্রজাতি ভুক্ত ।
৫) বাংলাদেশী আকন্দ ফুল । ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার গড় অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের পথে শত শত গাছে ফুটে আকন্দ ফুল। এক সময় বাংলাদেশের আনাচে -কানাচে নিরস পতিত জমিতেও যে সকল মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ দেখা যেত, কালের অআবর্তে এখন তা দুর্লভ। এমনি একটি ফুলের নাম আকন্দ বা অর্ক। উদ্ভিজ্জ ভেষজের শ্রেণি বিন্যাসে আকন্দের স্থান প্রথম সারিতে। আকন্দের গুণাগুণ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিৎ। তাতে বিলুপ্তপ্রায় গাছটির কদর বাড়বে এবং সাধারণ মানুষ এটি সংরক্ষণে সচেষ্ট হবে।
৬) প্যাশন ফ্রুটস ( Passiflora eduli) দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফলজ গাছের ফুল । ফুলগুলি চমত্কার এবং এর ফল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
৭) হলুদ রমনী চপ্পল অর্কিড (Cypripedium calceolus প্রাচীন গ্রিক পুরান "শুক্র জুতো “Shoe of Venus " থেকে এর নাম করন হয়েছে । প্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ফুল গাছ জন্মে ।
৮)বানর অর্কিড (Dracula simia)এটি ইকোয়েডরের রেইন ফরেস্টের একটি অর্কিড প্রজাতি। সারা বছর ধরেই এটি প্রস্ফুটিত হতে পারে এবং এতে রয়েছে পাকা কমলা লেবুর সুবাস ।
৯) বিহাইভ আদা (Zingiber spectabile) আদা পরিবারভুক্ত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় ফুল , এটি মূলত একটি শোভাময় ফুল জাতীয় উদ্ভিদ , মুলত ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত। গবেষণায় দেখা গেছে উদ্ভিদটির উচ্চ ঘনত্বসম্পন্ন এনজাইমগুলি ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম ( সুত্র : Click This Link)
১০) চীনা লণ্ঠন (ফিজালিস আলেকেঙ্গি) ফুলটি দক্ষিণ ইউরোপ এবং সমগ্র পুর্ব এশিয়া জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় । চীনা লণ্ঠনের নামটি একটি উজ্জ্বল কমলা রঙের ফল থেকে উঠে এসেছে যা মুলত একটি কাগজের লণ্ঠনের মত দেখায় । এই ফুল হতে বিকসিত ফলে এন্টিব্যাটারিয়াল গুণাবলী রয়েছে বলে উল্লেখ দেখা যায় । দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগের রোগীদের জন্য সম্ভাব্য উপকারী বৈশিষ্ট্য এতে রয়েছে বলেও দাবী করা হয় ।
১১) চাইনীজ লন্ঠন ফুলটি শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুলের খুলসের ভিতরের লাল বিচিটি আলোক বর্তিকার মত জ্বলে থাকতে দেখা যায় ।
১২) কাল বাদুর ( Tacca chantrieri ) এই অসাধারণ উদ্ভিদটি কালো ফুলের জন্য বিশ্বের একমাত্র উদ্ভিদ। বৃহত্তর ফুলটিতে (প্রায় ১২ ইঞ্চির ) এরও বেশি লম্বা মুছ বা "কাঁটা" রয়েছে ।এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের আদিবাসী ফুল ।
১৩) মোম ফুল বা ওয়াক্স প্লান্ট (Hoya ) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াযর চিরহরিৎ ফুল । ফুল গুলি গুচ্ছ আকারে প্রতিটিতে পাঁচটি পাপরি নিয়ে ফুটে । এটি খুবই আকর্ষণীয় সুগন্ধিময় ফুল এবং এতে প্রচুর অমৃত রয়েছে ।
১৪) টিটান আরাম (Amorphophallus titanum ) পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল, তবে এ ফুলটিতে রয়েছে অত্যন্ত অস্বাভাবিক পচা মাংসের দুর্গন্ধ । ফুলটি এই দুর্গন্ধ মুলত মাছিকে আকৃষ্ট করার জন্য তৈরি ও নির্গত করে। ফুলের নামটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ phallos (লিঙ্গ) থেকে এসেছে । ফুল লিঙ্গটি ২০ ফুটেরও বেশী লম্বা হতে পারে । ফুলটি ইন্দোনেশিয়া , মালএশিয়া , অস্ট্রেলিয়া , যুক্তরাষ্ট্র , ইউকে ও জার্মানীর বিভিন্ন কনজারভেটরিতে দেখতে পাওয়া যায় ।
ছবিটি ২০১৫ সনে কানাডার এডমন্ট মুট্রাট কনজারভেটরী থেকে নেয়া হয়েছে ।
১৫) ক্যান্ডি ক্যান সরেল (Oxalis versicolor ) দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আদিবাসী ফুল , মিছরি বেতের মত দেখায় বলে এ নামটি গায়ে ধারণ করেছে ।
১৬) জাপানীজ ক্যামেলিয়া ( Camellia japonica ), কেমেলিয়া পরিবারভুক্ত , বিভিন্ন আকার এবং রং এর বেশ কিছু উপ-প্রজাতি এর রয়েছে, ইচ্ছা করলে এর থেকে যে কেও ভাল চাও তৈরী করতে পারেন।
১৭) লোমশ ফোঁটা লিলি ( Tricyrtis hirta ) জাপানী নেটিভ ফুল , তবে বেশিরভাগই ছায়াময় পাথুরে অঞ্চলে জন্মায় ।
১৮) কলম্বাইন ম্যাগপি ( Aquilegia) উত্তর গোলার্ধে পাওয়া যায়, প্রধানত ম্যাডো এবং উডল্যন্ড বনভূমিতে । ফুল খুব মিষ্টি তবে পরিশোধন করে খাওয়া যায় । কিন্তু এর বীজ খুবই বিষাক্ত।
১৯) বাংলাদেশের ধুতুরা ফুল, বৈজ্ঞানিক নাম Dutura metel, এক প্রকারের বিষাক্ত উদ্ভিদ । বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে । ভুক্ত ভোগী যারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরেছেন তারা এর গুণাগুণ সম্যক জানেন । উত্তর আমিরিকা ও আফ্রিকাতেও এটি জন্মায় ।
২০) রাতের রানী Queen of the Night (Selenicereus grandiflorus) এটি এক বছরে একবারের জন্য ফুটে বলে এমন নামটি পেয়েছে । বছরে মাত্র এক বারেই ফুটে । এটি সেন্ট্রাল এবং দক্ষিণ আমেরিকার নেটিভ ফুল সেখানে এটি ভেনিলা ক্যাকটাস নামে পরিচিত , এটি যেমনি সুন্দর তেমনি সুগন্ধি ।
২১) পৃথিবীর সবচেয়ে সুগন্ধী গোলাপটি কিন্তু বন্য গোলাপই বটে , কম পাপরী মেলে ফুটার জন্য সৌখিন কিংবা ফুলের বানিজ্যিক বাগানে উপেক্ষিত হলেও বনে থেকে নীজ গুনে সে এখনো গুণান্বিত ।
২২) ফুলের ন্যয় সুরভি ছড়ানোর মত অগনিত অবহেলিত নিষ্পাপ মানব শিশু বিশ্বজুরে আজ ক্ষুধা , তৃঞ্চা , অপুষ্টি , শিক্ষা ও নিরাপত্তা হীনতার শিকাড়। আমাদের গ্রাম- গঞ্জের ছেলে-মেয়েরা বড়ই নিষ্পাপ। তাদের প্রকৃতিও নিষ্কলঙ্ক। শিমুল গাছের ফুল, শিউলী কিংবা বকুল ফুল কুড়ায়ে মালা গেথে হাতে নিয়ে অভাবের তাড়নায় কেও ব্যস্ত মহাসড়কের ফুটপথে সে গুলি বেচতে । আজকের ভালবাসার দিন শেষে সকলের দৃঢ় প্রত্যয় হোক এদের তরে ভালবাসা বিলোবার । এরা ফুল তুলে রাস্তায় ফেরী না করে নীজ ঘরে নিয়ে এসে নিজালয়ে সকলে মিলে গড়ে তুলুক এক সুখী সমৃদ্ধ পরিবার এ কামনাই রইল ।
সকলের তরে রইল বাসন্তি শুভেচ্ছা ।
ছবি ও তথ্য সুত্র : সকৃতজ্ঞতায় গুগল অন্তরজাল
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২