somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলহামদুলিল্লাহ, কানাডা'র সাসকাচুয়ান প্রভিন্সে আমি ইমিগ্রেশন নমিনেশন পেলাম!

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কানাডা’র সাসকাচুয়ান প্রভিন্স থেকে OID স্ট্রীমে আমি নমিনেশন পেলাম। সুখবরটা হাতে এলো গত ১৭ অক্টোবর, ২০১৬ অর্থাৎ মাত্র তিনদিন আগে। এই খবরটি আমার জীবনের অন্যতম খুশীর খবরগুলোর একটি বলেই আজ সবার সাথে শেয়ার করছি।

কানাডা’র ইমিগ্রেশনের পথে আমার যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের মাঝামাঝি। তখনও ভাবিনি যে, এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত কানাডা'র সাসকাচুয়ান প্রভিন্সে নমিনেশন লাভ করবো। আমি বাংলাদেশের ঢাকা শহরের বাসিন্দা। আর যারা ইমিগ্রেশন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন, তারা প্রায় সবাই হয়তোবা জানেন যে, বাংলাদেশের 'সিস্টেমে' ইমিগ্রেশনের কাগজগুলো ready করা কতটা কঠিন এবং ঝামেলাপূর্ণ। আমি কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি। লেগে থেকেছি। পাসপোর্ট, বার্থসার্টিফিকেট থেকে শুরু করে প্রতিটি ডকুমেন্ট-এর একটা একটা করে ready করেছি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। এখন নমিনেশন পাবার অর্থ হলো, আমার বাকী সব কাগজপত্র যেগুলো ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আমার কাছে চেয়েছে, সেগুলো দ্রুত তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া। এরপর শুধু অপেক্ষার পালা। আশা করছি সব ঠিক থাকলে ২০১৭ সালের কোন এক কাকডাকা ভোরে আমার যাত্রা শুরু হবে কানাডা'র পথে।

ইমিগ্রেশনের কাজে হাত দেবার আগে প্রথমে ভেবেছিলাম যে, এটি খুব কঠিন একটি কাজ এবং এর জন্যে অনেক অনেক জ্ঞান প্রয়োজন এবং সর্বোপরি শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক ভাগ্যবান/ভাগ্যবথী মানুষের জন্যেই এটি আল্লাহপাক ঠিক করে দিয়েছেন। ইমিগ্রেশনের কাজ আসলেই কঠিন এই অর্থে যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঠিক তথ্য কাজে লাগিয়ে সঠিক কাগজগুলো তৈরি করা এবং ধৈর্য্যসহকারে এই কাজগুলোর পেছনে লেগে থাকা আসলেই কঠিন ব্যাপার। এছাড়া বলতে পারি, 'এটি কোন রকেট সায়েন্স নয়'। সুতরায় একটু সময় দিলেই যে কেউ নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন প্রসেসিং করতে পারবেন।

মজার ব্যাপার কি জানেন? ইমিগ্রেশন যে রকেট সায়েন্স নয় এবং আমি যে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন প্রসেসিং করতে পারি এই কথাটাই আমি জানতাম না। তাই যখন কানাডা’র স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, চটকদার এক বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে প্রথমেই চলে গেলাম ধানমণ্ডিতে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য কনসালট্যান্সি ফার্মের সুন্দর ইন্টেরিয়র-সুসজ্জিত অফিসে। যে আপুটি আমাকে খুব সুন্দর করে ইমিগ্রেশনের তার 'নিজের কাহিনী' শোনালেন এবং বোঝালেন, তাতে আমি যারপরনাই হতাশ হলাম। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের কনসালট্যান্সি ফার্মে আমাকে বিশাল অঙ্কের টাকা শুরুতেই দিতে হবে। এবং তারপর তাদের নিয়ম অনুযায়ী ধাপে ধাপে আরও টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইমিগ্রেশন বিষয়ক আমার বেশকিছু প্রশ্নের উত্তরে সেই আপুটি বললেন যে, এই উত্তরগুলো এখনই দেয়া যাবেনা। একমাত্র টাকা দিলেই আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ঢাকায় একটা বেসরকারী ব্যাংকে চাকরী করছি। বেতন যা পাই, তা সামান্যই। বাবা-মা-কে নিয়ে কোন মতে চলে যায়। আমার পক্ষে ওই কনসালট্যান্সি ফার্মের এত টাকা দেয়া কিভাবে সম্ভব, সেটা চিন্তা করতে করতে বাসায় ফিরলাম। তারপর?

তারপরের কাহিনীটুকু গল্প বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই আমার জীবনরে বাস্তব ঘটনা। সামহোয়ারইন প্ল্যাটফরমে ২০১৫ সালে আমার পরচিয় হয় কানাডা প্রবাসী ব্লগার পয়গম্বর -এর সাথে। সামুতে আমার নিজের তখন কোন অ্যাকাউন্ট ছিলোনা। কিন্তু সামু'র ওয়বেসাইটে ঢুকে আমি অন্যদের লেখা পড়তাম। এভাবেই একদিন ব্লগার পয়গম্বরের ’কানাডায় কিভাবে সেটেল হওয়া যায়’ - এই বিষয়ক লেখাগুলো আমার নজরে আসে। আমি তাকে সামহোয়্যার ইন ব্লগে নিয়মিত ফলো করা শুরু করলাম। আর একদিন সাহস করে ইমিগ্রেশনের ধাপগুলো জানতে চেয়ে ছোট্ট একটা ইমেইল-ও করে ফেললাম। তিনি সবিনয়ে জানালেন, ইমিগ্রেশন প্রত্যাশীদের জন্যে তাঁর বিস্তারিত লেখাগুলো খুব শীঘ্রই সামহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হবে।

ব্লগার পয়গম্বর তাঁর কথা রেখেছেন। তাঁর সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টগুলো ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী যেকোন ব্যাক্তি এবং কানাডায় সেটেলমেন্টের জন্যে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন।

আমি এক্সপ্রেস এন্ট্রির প্রোফাইল খুলি ২০১৬ এর মাঝামাঝি। কিন্তু তারও আগে থেকে IELTS প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ECA করানো, EE প্রোফাইল ক্রিয়েট, প্রভিন্সিয়াল অ্যাপ্লিকেশনের খুঁটিনাটি, SINP -তে আবেদন পর্যন্ত সবকিছুতে আমি ব্লগার পয়গম্বর -এর যে প্রত্যক্ষ সহযোগীতা পেয়েছি, তার জন্যে তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর আমার কোন ভাষা নেই। এমনকি গত অক্টোবরে খুব স্বল্প সময়ের জন্যে খোলা SINP EE ইন্টেকে আমার আমার আবেদন-ও তিনি দশ মিনিটের মাথায় অনলাইনে সাবমিট করছেনে। ব্লগার পয়গম্বর- এর জন্যে আমার শুভকামনা রইলো।

আমার এই সুসংবাদটি লাভের পেছনে আমার বন্ধু-বান্ধব এবং মেন্টর, যারা আমাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আর সবশেষে আমার বাবা মা -এর অবদান না বললেই নয়। আমি তাদেরকে ভালোবাসি তারা আমার বাবা -মা বলেই শুধু নয়, বরং তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা-মা'দের অন্যতম।

আমার টাইমলাইনটি সবার জন্যে তুলে ধরছি:
Application: 30st August, 2016 (SINP Occupation In Demand)
NOC code: 1225
In Process: 1st October, 2016
Fund Conversion: No
ADR: 14th Oct, 2016
Doc sent: 17th Oct, 2016
In Process: 17th Oct, 2016
Nomination: 18th October, 2016

আমার প্রোফাইল এবং এডুকশেনাল কোয়ালফিকিশেন:
Master of Businesses Studies (Management) Institute- National University
Age- 28
IELTS- L/W/S-6.5 R-7=overall 6.5
Work experience - Almost 6 year Current job- in a regulated Bank in logistic support division NOC-1225 ( purchase officer)

আমার ফেসবুক প্রোফাইল
https://www.facebook.com/alia.nur.524?fref=ts

সবার জন্যে মিষ্টি

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২৮
৩৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×