আমাদের ছোট বেলায় অর্থাৎ জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে আজকের মতো এতো কিন্ডারগার্টেন তথা প্রাইভেট স্কুল ছিলো না। তখন ছিল বেশিরভাগ সরকারী প্রাইমারী , এলাকা ভিত্তিক বেসরকারী প্রাইমারী ও হাইস্কুল সমূহ। এখনকার মতো এতো প্রাইভেট (কিন্ডারগার্টেন) স্কুলের বালাই ছিলো না। আমি নিজে বি,এ, এফ শাহীন স্কুল কুর্মিটোলায় পড়েছি । সেখানে তখন ১ম থেকে ১০ম (এস, এস,সি) পর্যন্ত ছিলো।
জীবনের প্রথমে আমি সেই স্কুলে ১ম শ্রণীতে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার কাছে লেখা-পড়া তখন কোন চাপের বিষয় মনে হয়নি। অল্প কয়টা বই- খাতা আর পেন্সিল- রবার নিয়ে স্কুলে যেতাম। ব্যাগ লাগতো না। আর এখন বাবা-মাকে স্কুল পর্যন্ত বাচ্চার ব্যাগ সঙ্গে করে নিয়ে এগিয়ে দিতে যেতে হয়। পরীক্ষার সময় বাবা-মাকেও বাচ্চার সাথে অনেক পড়তে হয়।
১ম শ্রেণী থেকেই আমার - অ আ ক খ শুরু হয়। আর এখন এটা পড়তে গেলে ভর্তি হতে হয় প্লে নামক একটি শ্রেণীতে। এরপর নার্সারীতে শব্দ, অতপর: ১ম শ্রেণীতে গিয়ে বাক্য। আর আমরা ২য় শ্রেণীতে গিয়ে বাংলা দ্রুত রিডিং পড়তে পাড়তাম।
আমাদের পূর্বে যারা পড়া-লেখা করেছেন অর্থাৎ আমাদের বাপ-চাচারা; উনারা তুলনামূলক ভাবে আমাদের চেয়ে লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছিলেন। তারা বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজীতে অনেক পারদর্শী ছিলেন। অথচ বর্তমানের বাচ্চারা এতো বই-পুস্তক আর খাতা-পত্রসহ স্কুলে যাওয়া-আসা করে অথচ পড়ার মান ও ব্যক্তিগত চরিত্র উন্নয়নে কেমন যেন ভাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমাদের সময়ে আমরা আমাদের একজন স্যারকে দূর থেকে দেখলে আর কথা নেই; সাথে সাথে সচেতন হয়ে যেতাম স্যারকে সালাম জানাতাম। আর এখন স্যারদের সম্মান যেমন কমেছে বিপরীতে কিছু কিছু শিক্ষক- শিক্ষিকাও কেমন যেন অতিরিক্ত কমার্শিয়াল হয়ে উঠেছেন। শিক্ষকতা যে এক মহান পেশা তা যেন বেমালুম ভুলেই গেছেন। খালি প্রাইভেট আর প্রাইভেট। কিভাবে স্কুলে ঠিক মতো না পড়িয়ে বাচ্চাদের চাপের পড়া দিয়ে জিম্মি করে অর্থনৈতিক সুযোগটা আয়ত্ব করা যায়; এ কৌশলটা একটা সংক্রামিত রোগ হিসাবে বিস্তার ঘটিয়েছে। মাঝে মধ্যে ভর্তির সময় পত্রিকা পড়লে দেখা যায়; কত স্কুল কত রোগগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। আবার কিছু কিছু গার্জিয়ানরাও একটু বেশি বাড়াবাড়িতে নেমে পড়েছেন; তাদের ছেলে-মেয়েদের একটু চাপের পড়া না পড়ালে সেটাকে তারা পড়া-লেখাই মনে করেন না। এই হলো আমাদের লেখা-পড়ার নাজুক অবস্থা।
আমাদের বুঝা উচিত লেখা-পড়ার সাথে বাচ্চাদের বয়সের একটা সম্পর্ক আছে। অতিরিক্ত চাপ তার ভবিষ্যত জীবন বাঁধাগ্রস্থ করতে পারে। চাপ জনিত কারণে সে একদিন লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে উঠতে পারে অথবা মানসিক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ বিষয়টা আমাদের ভেবে দেখা উচিত। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান ভর্তি বাণিজ্য, প্রতি বছর বই পাল্টিয়ে বই বাণিজ্য, নানাবিধ আশ্বাস দিয়ে আশ্বাস বাণিজ্যে লিপ্ত। অথচ আমাদের কাছে যারা পড়া-লেখা শিখতে এসেছে তারা যে আমাদের কাছে পবিত্র আমানত আর শিক্ষাদান যে মহান পেশা, এ কথাটি যেন বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
আমার প্রাথমিক জীবনে আমি কোনদিন প্রাইভেট পড়িনি । প্রাইভেট এর তেমন একটা চলও ছিল না। একমাত্র ক্লাস নাইনে উঠে সাইন্স নেয়ার বদৌলতে জনৈক স্যারের কাছে ব্যাচে ইলেকট্রিভ ম্যাথ পড়েছি। আমি দেখেছি স্যারের কাছে টাকাটা বড় ছিলো না। বড় ছিলো আমাদের কিছু শেখানো। তবুও এখন আমি বুঝতে পারি; ঐ সময় স্যার যদি আমাদের ক্লাসে আরো একটু শেখাতে চেষ্টা করতেন তাহলে বোধ হয় তার কাছে পড়ার প্রয়োজন ছিলো না। মূলত: স্কুলে যদি কিছু শেখানোর উদ্দেশ্যে কিছু শেখানো হয় তবে কিছু গবি(দুর্বল) বাচ্চা ব্যতীত যারা জকি(চালাক) এবং মধ্যম তারা তো অবশ্যই ক্লসের পড়া ক্লাসেই শিখতে সক্ষম।
পড়া -লেখা নিয়ে আরো অনেক কিছু লিখতে আশা। আপনাদের সাথে প্রকৃত বাস্তবতা শেয়ার করতে চাই। যদিও ছোটবেলা থেকেই আমি ভাবতাম; পড়া-লেখা করে কি হবে? কবি নজরুল, ফকির লালনসহ আরো অনেকে আর কতটুক একাডেমিক লেখাপড়া করেছেন? অথচ তাদের সাহিত্য নিয়ে মানুষ ডক্টরেট করছে। কিন্তু এ চিন্তা সবার করা উচিত নয়; আজকের যুগই এসেছে লেখা-পড়ার। লেখা-পড়া ছাড়া কোন পেশাতেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়।
তবুও লেখাপড়া যেন আমাদের বাচ্চাদের মাথার বোঝা হয়ে না হয় সে প্রসংগ নিয়ে আরো লেখার অবতারনা করার জন্য আমার আজকের পোষ্ট। এ বিষয়ে আমার চেয়ে আরো ভালো জানা থাকলে তার কাছ থেকে আরো কিছু জানার আশা রাখছি। ইদানিং আমি প্রায়ই দেখি আমার ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে পড়তে পড়তে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যায়। তখন ওর মাকে বলি: বাদ দাও তো। এখন ওকে রেষ্ট দাও। দরকার নেই এই চাপের পড়া-লেখার । যা পারে তাই পড়বে। আগে বাচ্চাকে সুস্থ রাখা দরকার এরপর সম্ভব হলে পড়া-লেখা।
আপনারা ভাববেন; পড়া-লেখার সমস্যা নিয়ে লিখলেন। কিন্তু সমস্যাগুলো তো আরো স্পেসিফিক ভাবে লিখলেন না। কথাটা ঠিক । আসলে অনেক রাত হয়ে গেছে কিনা। পরবতীতে আরো স্পষ্ট করে লেখার আশ্বাস দিয়ে এখন ঘুম যাই। অনেক ভোরে ওঠে আবার স্কুলের জন্য তৈরি হতে হবে কিনা? বাচ্চারা যেমন পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আমিও ঠিক তেমনি কম্পিউটার আর সামহোয়্যার ব্লগ নিয়ে সময় দিতে দিতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। -ভুল ত্রুটি ক্ষমাপ্রার্থী। মার্জনীয়। আসসালামুআলাইকুম।