হাকীম আল-মীযান
সমাজে ইদানিং যে সমস্যাটা বিশেষ ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে; তা হলো নারী ও শিশু নির্যাতন। ফলে, যাদের মেয়ে সন্তান আছে তারা এখন তাদের সন্তানদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। কিন্তু কি করা যায়? কেমন ভাবে বেরিয়ে আসা যায়, এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে?
মহান আল্লাহপাক মানুষ বানিয়েছেন, মানবতার জন্য; পশুত্বের জন্য নয়। নারীসহ যাবতীয় শিশু নিযার্তন পশুত্বেরই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং পশুত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষকে প্রথমে মানুষ হতে হবে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনাগুলি খুবই কার্যকর। কেউ যদি একথা ভাবে, আমি যদি কোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হই, তবে তা মহান আল্লাহপাক দেখছেন। একথা যদি অন্তরে গেঁথে আমল করে তাহলে; তার দ্বারা নারী ও শিশু নির্যাতন তো দূরের কথা, অন্য কোনো গুনাহের কাজও চিন্তা করা যায় না।
ইসলাম; বিবাহ প্রথাকে উৎসাহিত করেছে। চোখ এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করতে বলেছে। নফস্(মন)এর অবৈধ চাহিদাকে কন্ট্রোল করার মাধ্যমে রূহানিয়াতকে জাগ্রত করে শয়তানি মন-মানসিকতা থেকে ফিরিশতা মানসিকতায় প্রত্যাবর্তন করে- প্রকৃত মানুষ হতে বলেছে। এছাড়াও মানুষ হিসাবে জাতি, ধর্ম, মত নির্বিশেষে যার যার ধর্মীয় অনুশাসন সঠিক ভাবে মেনে চলাও একান্ত আবশ্যক। যতটুক জানি; কোন ধর্ম মতই মানবতার বিপক্ষে নয়। বিভিন্ন দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতাকে মানবিক কারণেই গ্রহন করেছেন। দেশ-জাতি ও মানবতার স্বার্থে শুধু মানুষ নামের মানুষ না হয়ে বরং প্রকৃত মানুষ হবার চর্চার গুরুত্ব আজ অপরিসীম।
বড় আফসোস হয়! নিজে একজন মানুষ হয়েও মানুষ নামের মানুষগুলো অন্য মানুষের অধিকার নিয়ে কেনো ভাবে না? নির্যাতিত মানুষগুলো আমাদের কারো না কারো আত্মীয়-স্বজন। একটা দেশের আইন ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুবিচার দেরি করে হলেও একদিন পাওয়া যায়। কিন্তু নির্যাতিতের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে, তা তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের ভাবার সময় এসেছে; আমরা অন্ধকার যুগের মানুষ নই। ভাবতে হবে; আমরা মানুষ এবং আলোকিত সময়ের মানুষ।
আমরা মানুষ ভিন্ন অন্য কোন প্রজাতির কিছু নই। আমরা এক সভ্য জাতি। যার নাম মানুষ। অনেকে বলে; মান + হুশ = মানুষ। কথাটা ব্যাকরণে আছে কিনা জানি না। কিন্ত একবারে ফেলে দেবার মতো নয়। আমরা যখন তখন যা ইচ্ছা তাই করে ফেলতে পারি না। যখন তখন যা ইচ্ছা তাই করাটা শান্তি প্রিয় মানুষের কাজ নয়। আমরা মানুষ জাতি; মানবতা নামক একটা সুন্দর নিয়মে গাঁথা। আর এ নিয়মটার পারস্পরিক বাস্তবায়নই হলো; মানবিকতা। এ জন্যই বোধ হয়; ভুপেন হাজারিকা গাইতেন- মানুষ মানুষের জন্য/জীবন জীবনের জন্য /একটু সহানুভুতি কি/ মানুষ দিতে পারে না?/ হে বন্ধু!
মানুষের একটা অভ্যাস হলো; সে যা নিয়ে চিন্তা করে; পরবর্তীতে সে তা আমলে পরিণত করতে চায়। বর্তমানে মোবাইল, ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায়; ভালো কাজের চর্চা ও আমল বেড়েছে। বিপরীতে কৌতুহল প্রিয় সুযোগ সন্ধানীদের খারাপ কাজের পরিধিও বেড়েছে। মানুষের কালচারে মানুষ যদি ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে- খারাপটাকে বর্জন করে এবং ভালোটাকে চর্চা করতে থাকে তাহলে একদিন দেখা যাবে, দিনে দিনে সবাই ভালো কাজে উৎসাহিত হচ্ছে। সমাজে মানুষের কাজ-কর্মে মানবতা বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই বলি; মানুষকে মানুষ হতে হলে; প্রথমে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে; মানবতার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর নির্যাতনসমূহ।
* লেখাটি বিগত ২১ - ৮ -২০১৫ইং এ লেখা এবং
সম্পাদনা করেছিঃ আজ ৩০-০১-২০১৬ ইং রাত ১১ টা থেকে প্রায় ১১ টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০১