মাছুম বাঁচ্চার পিতৃমায়া
মোঃ আবদুস সামাদ খান।
কোথায় পেলি এমন কথা
কে শিখালো তোরে !
“শেখ মুজিবের কাছে চিঠি
লিখলে কি হয় না- আম্মা,
আব্বারে আনতে পারে।”
এমন করুন কথা শুনে
আমার দু’ধার বয়ে অশ্রু ঝরে।
শেখ মুজিব এই দেশের নেতা
কে দিলো তোর কানে;
তার ক্ষমতায় আসবে বাবা
কেমন করে জাগলো প্রাণে।
নয় কি ইহা ঐশী বাণী
অবাক হয়ে ভাবি আমি
একথা কয় কেমন করে !
এমন করুন কথা শুনে
আমার দু’ধার বয়ে অশ্রু ঝরে।
দু’ইটি বছর চলে গেছে
পাকিস্তানে আটকা আছে
আইলো না তোর বাবা তবু
আপন দেশে ফিরে !
এমন করুন কথা শুনে
আমার দু’ধার বয়ে অশ্রু ঝরে।
প্রসংগঃ আমার কনিষ্ঠা কণ্যার স্বামী বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানে আটকা পড়ে। তখন আমার কণ্যা তার শিশু ছেলেসহ
আমার কাছে অবস্থান করতে ছিলো। একদিন সেই নাতী তার মায়ের কাছে বলতেছিল-“শেখ মুজিবের কাছে চিঠি লিখলে কি হয়না আম্মা; আব্বারে আমার আনতে পারে।” এই হৃদয় বিদারক করুন কথা মাছুম বাচ্চার মুখে শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। আমার দু’চোখ ভরে দর দর করে অশ্রুবান বয়ে গেলো, ভাবলাম শিশু ছেলের বুকে বাবার জন্য এত মায়া, এত ব্যথা এত বেদনা। এই ব্যথা বেদনার উপরই আমার
এই রচনা। মোঃ আবদুস সামাদ খান। ৩০/০১/১৯৭৩ইং।
আমার কথা: (হাকীম আল-মীযান)
১। উল্লেখ্যঃ পরে অবশ্য লেখকের জামাতা অর্থাৎ আমার পিতা যুদ্ধবন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ২৯ অক্টোবর, ১৯৭৩ইং এ দেশে ফিরে আসেন কিন্তু এটাও সত্য যে বহু সৈনিক বাংলা মায়ের সন্তান হবার কারণে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে হয়েছেন নির্যাতিত, দিয়েছেন আত্মহুতি। স্বজনেরা হয়েছেন- শোকাহত।
২। আমার নানাজান মো: আব্দুস সামাদ খান ছিলেন কবি ও লেখক। টাংগাইল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি লিখেছেন। তাঁর বড় ভাই আব্দুল লতিফ খানও একজন কবি ছিলেন। টাংগাইল জেলা নিয়ে লিখিত কৃষ্টি সঙ্গীতটা তাঁরই লেখা।
৩। ঐ সময়ে রেডিওতে আমি বঙ্গবন্ধুর কথা- শুনতাম। হয়তো: বুঝতাম; তিনি দেশের নেতা। একমাত্র তিনিই পারবেন, আমার আব্বাকে ফিরিয়ে আনতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার আবেদন এর বিষয়টি শুনে নানা হতবাক হন এবং তাঁর মনে দাগ কাটে বলেই তিনি আমাকে নিয়ে উক্ত কবিতাটি লিখেছিলেন।
৪। যতটুক জানি; যুদ্ধ বন্দী বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। এতে তৎকালীন ভারতীয় সরকারের সহযোগিতা ছিল। আমি তাই উভয়ের কাছে ব্যক্তিগত এবং পরিবার বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।।
৫। এই বিষয়টাকে আমি একটা প্রবন্ধ আকারে লিখেছি; টাইপকৃত ফাইলটি হাতের কাছে না পাওয়ায় তা আর আজকে প্রকাশ করা সম্ভব হলনা। পরে সুযোগ পেলে প্রকাশ করার আশা রাখি ইনশা - আল্লাহ।
৬। লেখাটি পূর্বে ঢাকাস্থ পল্লবী সি ব্লক থেকে স্বাধীনতা দিবসের একটি সংকলনে যথাসম্ভব: ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ এর ভেতরে প্রথম একবার প্রকাশিত হয়েছিল। সে হিসাবে আজকের এই পোষ্টটি উক্ত কবিতাটির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রকাশ।
ধন্যবাদান্তে: মো: মিজানুর রহমান ওরফে হাকীম আল-মীযান।
১৮/০৩/২০১৬ইং। রাত ১১.০০টা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৪