somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

-হারাবার নাই কিছুই! (ছোট গল্প)

২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দমকা হাওয়া বইছে।
রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে
লাতু পাগলা
টাইটানিকের মতো
হাত দুটো টানটান করে
চোখ বন্ধ করে আছে।
বাতাসে উড়ছে তার
ছেঁড়া ময়লা শার্ট,
ময়লায় ভারি হওয়া বড়
বড় চুল আর দাড়ি
আরো বেশি ময়লায়
ভারি হচ্ছে।....
মিলি আপু : এই শোনো
সবসময় রাস্তার
চায়ের দোকানটায় বসে
থাকো কেন? বিরক্ত
লাগে আমার বলে
দিলাম।
লুৎফর ভাই : তোমার
বিরক্ত লাগলে আমার
কি? বেশি বিরক্ত
লাগলে চারতলা থেকে
লাফ দিও, আমি চায়ের
কাপটা ছুঁড়ে ফেলে
দিয়ে তোমাকে ক্যাচ
ধরবো।.......রাগ ে টকবগ
করতে করতে মিলি
আপু রুমে চলে গেল।।
লুৎফর ভাই চায়ের
দোকানে বসে সামনের
বাসার বেলকোনিতে
দাঁড়িয়ে থাকা মিলি
আপুকে দেখতো আর
তার সাথেই ফোনে কথা
বলত। ভাললাগা,
ভালবাসা আর
খুনসুটিতে কেটে
যাচ্ছে তাদের
সম্পর্কের তিন বছর।
লুৎফর ভাই মা বাবার
আদরের দুলাল। তার
কোন ভাইবোন নেই।
তাই মা বাবা কোন
ভাবেই চায় না ছেলে
তাদের কন্ট্রোলের
বাহিরে চলে যাক।
মিলি আপুর বাপে তিন
চারটা বিয়ে করছে।
তাই আঙ্কেল আন্টি
মিলি আপুকে একদমই
পছন্দ করেনা। কিন্তু
লুৎফর ভাইয়ের কাছে
মিলি আপুর চেয়ে দামী
কিছুই নাই। মা বাবাকে
ডিরেক জানিয়ে
দিয়েছে সে যেকোন
মুহুর্তে মিলি আপুকে
নিয়ে পালাবে।
খুব দুশ্চিন্তার কথা।
লুৎফর ভাইয়ের বাবা
মা তাই চিন্তা করে
করে একে অপরের
মাথার চুল ছেড়ার
প্রতিযোগিতা
চালাচ্ছে। শেষমেষ
তারা একটা বুদ্ধি বের
করল, তারা বাসা
চেঞ্জ করে ছেলেকে
নিয়ে অনেকদুরে চলে
যাবে। এবং দুই মাসের
মধ্যে তারা তাইই
করল। পরে থাকল
মিলি আপু।.....
লুৎফর ভাই আসে
মাঝে মাঝে। লুৎফর
ভাইয়ের মা বাবা খুব
কঠোরভাবে জানিয়ে
দিয়েছে তাকে, যদি
মিলি আপুকে সে বিয়ে
করার মতো সিদ্ধান্ত
নেয় তবে সেদিন তারা
দুনিয়া থেকে বিদায়
নিবে।
এদিকে মিলি আপুর
বাসা থেকে বিয়ের
জন্য প্রচন্ড প্রেসার
দেয়া হচ্ছে। লুৎফর
ভাই আর মিলি আপু
দোনোজনই শুকায়ে
কঙ্কাল। মিলি আপুকে
আজই মেরিন
ইঞ্জিনিয়ার এক
ছেলে দেখতে আসবে
আর পছন্দ হলে আজই
বিয়ে। মিলি আপু বেশ
সুন্দরী ছিলেন তাই
ব্যাপারটা খুবই
সিরিয়াস। ফোন দিল
মিলি আপু......
মিলি আপু : লুৎফর
যখন তুমি নিচের
দোকানটায় সারাদিন
বসে থাকতে আমি খুব
বিরক্ত হতাম। তোমার
খেয়াল আছে?
লুৎফর ভাই : হ্যা
আছে। কিন্তু কেন?
মিলি আপু : তুমি কি
বলতে তা মনে আছে
তোমার ?
লুৎফর ভাই : না।
মিলি আপু : বলতে,
বেশি বিরক্ত হলে
চারতলা থেকে লাফ
দিতে। আজ আমি খুব
বেশি বিরক্ত। রাতে
আমার বিয়ে। তার
আগে যদি তুমি
আমাকে না নিয়ে যাও
আমি সত্যি চারতলা
থেকে লাফ দিবো। আজ
তো আর কেউ আমাকে
বাঁচাবার নেই।।
লুৎফর ভাই : তুমি
উল্টা পাল্টা বলিও না।
আমার কাছে হাজার
বিশেক টাকা আছে।
তোমাকে নিয়ে
ফুটপাতে ঘুমাতে হবেনা
ইনশাল্লাহ। আমি
আসবো আমার জন্য
সন্ধ্যা পর্যন্তু
অপেক্ষা করো প্লিজ।
মিলি আপু : মনে রেখ,
সন্ধ্যার পরে এলে
আমাকে আর পাবেনা।
এই বলে ফোনটা রেখে
দিলো।
লুৎফর ভাইয়ের মা
সবকিছু শুনে ফেলেছে।
ঝড় শুরু হয়ে গেল তার
বাসায়। সন্ধ্যা হতে
মাত্র দুই ঘন্টা। তার
মা বাবার সাথে প্রায়
মারামারি অবস্থা শেষ
করে সে বের হলো।
মিলি আপুর বাসার
সামনে আসতে আসতে
এশার আজান হয়ে
গেল। বাসার সামনে খুব
ভীড় দেখে লুৎফর
ভাইয়ের হাত পা ঠান্ডা
হয়ে গেল।
ভীড় ঠেলে ঠেলে
সামনে আগালো। সে
ভেবেছিল বিয়ে মনে
হয় হয়ে গেছে এখন
বিদায় পর্ব চলছে।
কিন্তু না সে গিয়ে
দেখল মিলি আপু নেই,
চলে গেছে যোজন
যোজন দুরে। নিচে
একটা ইটের উপর
মুখটা পরায় চেহারা
আর চেনার মতো নেই।
পাথর হয়ে মিলি আপুর
লাশের পাশে বসে পরল।
ঘন্টা খানিক পরে
তাদের পাশের বাসার
কেউ একজন ফোন
করে জানায় তার মা
বাবা দুজনই গলায় ফাস
লাগাইছে। ফোনটা
তারেক ভাই ধরে
লুৎফর ভাইকে
জানালো খবরটা।
আমরা সবাই শুনলাম।
আর একটা কথাও
বলতে শুনিনি লুৎফর
ভাইকে ।.... ....
আজ সবাই ভুলে গেছি
লুৎফর ভাইকে। তাকে
আর মনে নেই কারো।
এখন সবাই লাতু
পাগলারে চিনি।
সবকিছু হাড়িয়ে
নিঃস্ব হওয়া লাতু কে।
সবকিছুর সাথে সাথে
হাড়িয়েছে নিজের
নামটাও। কতোটা কষ্ট
পেলে মানুষের এমন
করুন দশা হয়।।
এখনও সেই চায়ের
দোকান আছে। এখনও
কেউ চা খায় আর
বেলকোনির দিকে
তাকিয়ে কি জানি
বিড়বিড় করে। না
লুৎফর ভাই নয়, সেতো
লাতু পাগলা।......
ঝড়ো হাওয়ার সাথে
সাথে বৃষ্টি পরতে
লাগল। সবাই দৌড়া
দৌড়ি করে বাসায়
যাচ্ছে। তখনও
একইরকম ভাবে
দাঁড়িয়ে আছে লাতু
পাগলা। বৃষ্টির পানি
চুল মাথা কপাল চোখ
চিবুক গ্রিবা
অতিক্রম করে বয়ে
যাচ্ছে লাতু পাগলার
সমস্ত শরীর।.....

লেখিকা--সুবর্ণ স্বপ্ন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×