somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব - চৌদ্দ) :কোর্ট শাখা : বন্দী নিপিড়ন

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারাগারে অবস্থানকালে বন্দীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কারাগারে থাকাবস্থায় বন্দীদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার দায়িত্ব কারা প্রশাসনের কোর্ট শাখার। প্রতিটি কারাগারেই কোর্ট শাখা রয়েছে ডেপুটি জেলারের তত্ত্ববধানে কিছুসংখ্যক কোর্ট এ্যাসিসটেন্ট (কারা রক্ষী) এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মেজিষ্ট্রেট আদালত, জজ আদালতসহ হাইকোর্ট বোর্ডের সম্মুখে নিদৃষ্ট তারিখে আসামীকে আদালতে হাজির করানোর দায়িত্ব হলো কোর্ট শাখার। এই শাখায় নিয়োজিত এ্যাসিসটেন্টদের দূর্ণীতির কারনে বন্দীদের নানা বিধ সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোর্টের এ্যাসিসটেন্ট (কারা রক্ষীগণ) নানা বিধ দূর্ণীতির বেড়াজাল গড়ে তোলেছে কোর্ট শাখাকে কেন্দ্র করে।

১) কারাবন্দীদের হাজিরা দেয়া না দেয়ার বিষয়টি অনেকটা কোর্ট রক্ষীদের মন-মানসিকতার উপর নির্ভর করে। আদালতে হতে Custody তে তারিখে লিখে দেওয়ার পরও ঠিক মতো posting না দেওয়ার কারনে দেখা যায় কোন কোন আসামী নিদৃষ্ট তারিখে আদালতে উপস্থিত হতে পারেন।

২) দেখা যায়, আসামীদের সাথে টাকা-পয়সার দেন দরবারের মাধ্যমে ঠিক করা হয় আসামী কোর্টে যাবে কি যাবে না। Production মোতাবেক আসামী আদালতে যেতে চায় কিনা? যদি আসামীর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ হতে Remand নেয়ার জন্য বিশেষ করে RAB Remand এর Production সেক্ষেত্রে আসামী কোর্টে যেতে চায় না। টাকার বিনিময়ে এসব ঠেকান হয়। লেন-দেন এর পরিমাণ কম বেশী হয়ে থাকে, ক্ষেত্র বিশেষ ২/৪ হাজার প্রদান করতে হয়।

৩) অনেক আসামী শুধু কোর্টে যেতে চান না, এসবক্ষেত্রে ২/৪ শত টাকা হাতিয়ে নেয় কোর্ট রক্ষীগণ। সেক্ষেত্রে Custody পাঠিয়ে দিয়ে তারিখ নেয়া হয়।

৪) প্রতিদিন সকাল ৬.৩০ মিনিট হতে আসামীদের কোর্টে নেওয়ার জন্য তৈরী করা হয়। কোর্টে যাওয়ার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতিগুলো পালন করতে হয় সেক্ষেত্রে ভূল-ভ্রান্তি হতেই পারে। এই ব্যাপারে কোন কথাই শুনতে চান না কোর্ট রক্ষী ও কোর্ট রাইটারগণ। একটু খানি ভূল-ভ্রান্তি হলেই বেধরক পেটানো হয় বন্দী আসামীকে।

৫) যে সমস্ত আসামীদের সাথে কারারক্ষীদের টাকা-পয়সার লাইন রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোর্ট পরোয়ানা থাকলেও হাসপাতালের রোগী দেখিয়ে কোর্টে পাঠানো থেকে বিরত রাখেন। হাসপাতালের ডাক্তারদের তারাই ম্যানেজ করেন System এর মাধ্যমে।

৬) এমনও দেখা যায়, যে সমস্ত আসামী বন্দী জেলের ভিতরে ব্যবসা করেন তাদরে প্রতিদিন কোর্টে যাওয়া আসা হয় কারাগারে মালামাল কিনে নিয়ে আনার জন্য। সেক্ষেত্রে ঐ বন্দী আসামী প্রতিদিন যেন কোর্টে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করেন কোর্ট এ্যাসিসটেন্টগণ। তারা টাকার বিনিময়ে কোর্ট পেশকারের সাথে লাইন করে নেয় যাতে পেশকার Custody এর সাথে আসামীর চাহিদামত তারিখ লিখে দেন।

৭) কোন বন্দী ডান্ডা বেড়ি পড়ে কোর্টে যাবে আর কোন বন্দী ডান্ডা বেড়ি পড়বেনা তার নির্ধারক হলো কোর্ট এ্যাসিসটেন্টগণ, এই সমস্ত কোর্ট এ্যাসিসটেন্ট অর্থাৎ রক্ষীগণ যদি তাদের মন মতো টাকা পান তবে বহু দুর্ধষ মামলার আসামীকে ডান্ডা বেড়ি না পরিয়ে কোর্টে পাঠানো হয়, টাকা না পেলে অনেক ছোটখাট মামলার আসামীকে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে কোর্টে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন।

৮) কোর্ট হতে Remand আদেশ নামটি কোর্ট শাখায় পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে কোর্ট রক্ষীগণ আগেই জানেন কোন কোন আসামী ধনী ও রিমান্ড এ যেতে চান না। কোনরুপ Remand আদেশ না থাকা সত্তে¡ও কোর্ট রক্ষীগণ আসামীর কাছে গিয়ে জানাবে তার নামে Remand এসেছে। যেহেতু তারা জানেন উক্ত আসামী ধনী Remand এ ভয় পায়। তাই Remand এর কথা শুনলে ভয় পেয়ে টাকার কথা বলবেই। বাস্তবে তাই ঘটে, Remand এর কথা শুনে ভয়ে ২/৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কোর্ট রক্ষীদের প্রদান করেন।

৯) বাইরের জেল আদালত হতে কোন মামলার আসামীর Production পাঠানো হলে; যদি বুঝতে পারে যে, উক্ত আসামী ঐ সময়ে অন্য জেলা আদালতে হাজির হতে চায় না, সেক্ষেত্রে তাকে পাঠাতেই হবে এরূপ হুশিয়ারী দিয়ে ২/৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। যদি বুঝতে পারে যে আসামী বন্দী Production মোতাবেক যেতে খুবই ইচ্ছুক তখন কোর্ট রক্ষী বলবে Scott না আসা পর্যন্ত পাঠানো যাবেনা। আরো বলবে ২/৩ হাজার টাকা দিলে Scott ব্যবস্থা করা যাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে এভাবে ৪/৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

১০) Remand মঞ্জুর হওয়ার পর বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হতে Scott কারাগারে উপস্থিত হয় আদালতের আদেশ মোতাবেক বন্দী আসামীকে নিয়ে যাবার জন্য। বন্দী কোর্ট রক্ষীগণ আসামীর সাথে টাকা লেন-দেন করতে পারলে, তবে শত বার খুঁজেও আসামীকে খুঁজে পাবেন না। ২/১দিন একই ভাবে লুকিয়ে রেখে আসামীর ইচ্ছামত সময়ে Remand পাঠাবেন; বা Remand কার্যকরী তারিখ শেষ করে। আসামীর আপনজন ইতি মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে ফেলবে।

১১) কোর্ট শাখা তাড়াতাড়ি আসামীদের আদালতে হাজির করার উছিলায় বন্দীদের হাজিরা তারিখের পূর্ববর্তী দিনে লক-আপের আগে বহিঃগমনে এনে রাখার প্রথা চালু করেছেন। বন্দীগণ বহিঃগমনে নিজ নিজ ওয়ার্ড বা সেল থেকে সরাসরি ভোর বেলায় কোর্ট টেবিলে উপস্থিত হতে চায়; সেক্ষেত্রে প্রতি বন্দীকে ২০০ টাকা জজ আদালতের জন্য এবং মেজিষ্ট্রেট আদালতের জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হয় বহিঃগমন রাইটারের কাছে। সেই টাকার একটি ভাগ নেয় ডেপুটি জেলার ও কোর্ট রক্ষীগণ। বাকী টাকা বহিঃগমন রাইটার, সুবেদার ও জেলার পেয়ে যান।

১২) যেহেতু কোর্ট রাইটারগণ জানেন বহিঃগমনে অনেক বন্দী যাবেনা, সেক্ষেত্রে আরো অনেক বন্দীর সাথে গোপনে সমঝোতা করে বন্দীকে কোর্ট সিলিপ সরাসররি দিয়ে দেন, এবং তার ফিগার বহিঃগমনে দেয় না। যদি ১০জন বন্দীকে কোর্ট সিলিপ সরাসরি দিয়ে দেয় তবে ১০x১০০=১০০০/- হাজার টাকা প্রতিদিন সেই কোর্ট রাইটারদের আয় হয়ে যায়।

১৩) কোর্টে যে গাড়ীতে পাঠানো হয়, তা এতো পুরানো ও ছোট যে, তাতে ৩০ জনের বেশী ধারণ ক্ষমতা নেই। তবুও সেই গাড়ীতে ৬৫ জন করে পাঠানো হয়। অনেক সময় গাড়ীর গরম ও বন্দীদের শরীরের গরমে অনেক বন্দী অসুস্থ হয়ে পড়েন। (চলবে......)
বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব -তের) পড়তে somewherein এখানে অথবা bd news এখানে ক্লিক করুন ।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×