somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্কের সমস্যা

২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্পর্কের সমস্যা

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্য সব থাকে। দায়িত্ব-কর্তব্য-অধিকারবোধ, সামাজিক স্বীকৃতি, আর্থিক দায়বদ্ধতা, আবেগিক সম্পর্ক, পারষ্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি। থাকেনা শুধু প্রাণ খুলে মনের কথা বলার তাগিদ। থাকেনা অকারণ অপ্রয়োজনীয় কৌতুহল, অকারণে একে অন্যের সাথে সময় কাটানোর আগ্রহ, একে অন্যের প্রতি স্বার্থহীন মুগ্ধতা। আমার কোন বন্ধু যদি বলে, "চলে আয়। একসাথে বসে বাদাম খাব, গল্প করব।" আমি চলে যাব, যেতে চাইব, মানে আমার যেতে ইচ্ছে করবে।

স্বল্প পরিচিত বা একেবারেই অপরিচিত কেউ যদি আমার সাথে কথা বলতে চায়, তার মানসিকতা আমার কাছাকাছি হলে এবং হাতে সময় থাকলে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করবে। আবার স্বল্প পরিচিত কেউ যদি দেখা করতে চায়, আমাদের উভয়ের আগ্রহ আছে, এমন কোন বিষয়ে আলাপ করতে চায়, আমার দেখা করতে বা আলাপ করতে ইচ্ছে করবে বা করে।

কেন এই মনের টান? কেন এই ইচ্ছে বা আগ্রহ?

শুধু আমি কেন, প্রতিটা নারী পুরুষের মধ্যেই অজানাকে জানার বা অচেনাকে চেনার কৌতুহল ও নিজেকে প্রকাশ করার আগ্রহ চিরন্তন। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় বলেই অন্য মানুষের সাথে মিশতে চায়। এই চাওয়াটা মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এখন সোশাল মিডিয়ার কারণে এই চাহিদাটা আমরা সবাই কমবেশী মেটাই। আমার ভাবনার বিষয় হল - স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে আপন হওয়া সত্ত্বেও কেন অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে মনের ভাব আদান-প্রদানের যে চাহিদা থাকে, সেটা কেন স্বামী-স্ত্রীর প্রতি থাকেনা?

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আর নতুনত্ব থাকেনা। একে অন্যকে জানার কৌতুহল ফুরিয়ে যায়, একে অন্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ কমে যায়। তখন অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে যতটা ভাল লাগে, নিজের সঙ্গীর সাথে ততটা লাগেনা। এর কারণ কি? আসুন জানি।

১। স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্কটা এমন, যে বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উভয় উভয়ের সম্পর্কে প্রায় সবকিছুই জেনে ফেলেন। ফলে দু'জনের মধ্যে গোপন, নতুন বা অজানা কিছু না থাকার কারণে সম্পর্কের উষ্ণতা, আকর্ষণ বা Thrill কমে যায় বা থাকেনা। একটি কথা প্রচলিত আছে, বিয়ের বয়স বেশী হলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাইবোনের মত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রীর একে অন্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকেনা যা বিয়ের আগে প্রেম থাকাকালীন বা বিয়ের প্রথমদিকে ছিল। তখন দাম্পত্য জীবন দ্বায়িত্ব নির্ভর, একঘেঁয়ে হয়ে যায়। অনেকটা চুইংগামের মত। (একটি কৌতুক আছে। বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে এক ভদ্রলোককে প্রশ্ন করা হল, "আপনার মতে বিয়ে কি?" ভদ্রলোক বললেন, "বিয়ে আসলে চুইংগামের মত। প্রথম প্রথম কিছুদিন মিষ্টি লাগে, তারপর শুধু চিবাতে থাকো, চিবাতে থাকো....।")

২। নিষিদ্ধ বা অজানা কোনকিছুর প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। সেই আদম হাওয়ার যুগ থেকেই তা চলে আসছে। নতুন কোনকিছু জানার, আবিষ্কার বা উপভোগ করার বাসনা থেকেই মানুষ নতুন কোনকিছুর প্রতি ধাবিত হয়। হোক সে সুন্দর কিছু, কোন ভোগ্যপণ্য, খাবার, সম্পর্ক, মানুষ, দেশ, পরিবেশ, জাতি,.... ইত্যাদি। বিয়ের আগে শরীর সম্পর্কে মানুষের যে কৌতুহল, আকর্ষণ ও অতৃপ্তি থাকে, বিয়ের পর সেটা চলে যায়। ফলে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ ও কমে যায়।

৩। বিয়ের পর স্বামীরা ধরেই নেয়, স্ত্রী তার সারাজীবনের সম্পত্তি। তাই তাকে আর অত পাত্তা দেবার দরকার নেই। সে যাই করুক, স্ত্রী তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। কোথায় যাবে? তার যাবার জায়গা কই? স্বামী নির্যাতন করলেও পরিবার চায়না মেয়েরা ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ী আসুক। তার আর্থিক দায় বাবা বা ভাইরা নিতে চায়না। মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও ডিভোর্সি মেয়ের দায় পরিবার নিতে চায়না সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে। তাছাড়া ডিভোর্সি মেয়েকে কে বিয়ে করবে? কেন করবে? উল্টোদিকে স্ত্রীও মনে করে, বউ ছাড়া স্বামীর চলবে কি করে, তাছাড়া বাচ্চা থাকলে তো বউ ছাড়া আরোই সহজ নয়। তাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে যায় "নিরুপায় হয়ে একসাথে থাকা" টাইপের।

৪। সব সংসারে অশান্তি হয়, প্রেমের বিয়েতে আরো বেশী হয়। কারণ প্রেম চলাকালীন সময়ে প্রেমিক-প্রেমিকাদের একে অন্যের প্রতি প্রত্যাশা বেশী থাকে, আবেগ বেশী থাকে, ফলে যুক্তি কাজ করেনা। আর তারা সংসার জীবনের নানা বাস্তবতাকে আমলে না নিয়ে কল্পনায় সুখের সাগরে ভাসতে থাকে। একে অন্যকে ইমপ্রেস করার জন্য নিজের খারাপ দিকগুলো স্বেচ্ছায়, সযত্নে আড়াল করে রাখে, নিজের সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলে, নানা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয় একে অন্যকে যেকোন মূল্যে পাবার জন্য। বিয়ের পর কল্পনা আর বাস্তবের অমিল, একে অন্যের প্রতি আকর্ষণের তীব্রতা হ্রাস, স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও উভয়ের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মানিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা, সাংসারিক দায়-দ্বায়িত্বের চাপ ইত্যাদি কারণে একে অন্যের নেতিবাচক দিকগুলো সামনে চলে আসে। বিয়ের আগে একে অন্যের দোষগুলো স্বেচ্ছায় গোপন করার কারণে সেগুলো জানা যায়না। বিয়ের পর সেগুলো জানার পর আশাহত হবার কারণে নিজেকে 'প্রতারিত' মনে হয় যা সম্পর্কের উষ্নতা হ্রাসের জন্য দায়ী।

সেটল ম্যারেজে প্রত্যাশা কম থাকে। ফলে মনের মত অল্প কিছু পেলেই মনে হয়, "এটুকুও নাও পেতে পারতাম। শুকুরআলহামদুলিল্লাহ!!" যাদের পছন্দের মানুষ থাকেনা, তাদের বেলায় সেটল ম্যারেজে স্বামী-স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয় প্রত্যাশা কম থাকার কারণে।

এর বিপরীতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আকর্ষণ কমার কারণ হল অপছন্দের কাউকে বিয়ে করা। আমাদের দেশে তথা প্রাচ্যের দেশগুলোতে অভিভাবকরা জোর করে ছেলেমেয়েদেরকে অপছন্দের কাউকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন। বিয়ের পরে মনোমালিন্য বা মতের অমিল হলেই পুরনো প্রেমিক-প্রেমিকার কথা মনে পড়ে, তার সাথে যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করে, অনেকে করেও। মনে হয় তার সাথে বিয়ে হলে কোন অশান্তি হতনা, আমি মহাসুখে থাকতাম। এই অতৃপ্তি, অতি কাঙ্খিত মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে না পাওয়ার কষ্ট মানুষকে সারাজীবন অসুখী রাখে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে যায়। এটিও স্বামী-স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ না থাকার বা কমার জন্য দায়ী।

৫। সহজলভ্য কোন কিছুর প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকেনা । (বড় লোকের শিশুরা খায়না। কারণ তাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার আছে। দরিদ্র শিশুরা খাবার জন্য মরীয়া। কারণ সে পর্যাপ্ত খাবার পায়না।) বিয়ের পর প্রেমিক-প্রেমিকারা স্বামী-স্ত্রী হবার পর একে অন্যের কাছে সহজলভ্য হয়ে যায়। ফলে তার কদর থাকেনা। তখন ঘড়ায় তোলা জলের চেয়ে ( যখন ইচ্ছা খাওয়া যায়) সমুদ্র সাঁতরাতে বেশী ইচ্ছা করে।

৬। সাংসারিক বা পেশাগত ব্যস্ততার কারণে স্বামী বা স্ত্রীরা একে অন্যের প্রতি অতটা মনোযোগী হতে পারিনা, আগের মত সঙ্গীর প্রশংসা করিনা, তার কোনকিছুতে আর মুগ্ধ হইনা, আগের মত ভালবাসিনা, যত্ন নেইনা। এসব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। অন্যকে মুগ্ধ করার বা সারপ্রাইজ দেবার চেষ্টা থাকেনা। একসাথে বেড়াতে যাওয়া, বাইরে খাওয়ার, অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন দিবস পালনের ব্যস্ততায় ভাটা পড়ে। ফলে সম্পর্ক উত্তাপ হারায়। তখন আমরা চাই অন্য কেউ আমাদের প্রশংসা করুক, ফিল করুক, মিস করুক, ভালবাসুক।

৭। সংসার জীবনে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মতের অমিল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই অমিল কখনও কখনও খুব বেশী হলে দু'জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। তখন আমরা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করি। একসাথে থেকেও একা বাঁচার চেষ্টা করি, সঙ্গীর প্রতি উদাসীন থাকি। অন্য কারো প্রতি আগ্রহী হই।

৮। কিছু সমস্যা তৈরী হয় যার সমাধান সহজ নয় বা কখনও কখনও সমাধান পাওয়া যায়না। যেমন- পরকীয়া, সন্তান না হওয়া, অসুস্থতা ইত্যাদি । তখন কেউ কেউ সঙ্গীকে ছেড়ে অন্য কাউকে বেছে নেবার চেষ্টা করি।

৯। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি, স্বামী ও স্ত্রীর ত্রুটিপূর্ণ আচরণ তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করে। যেমন - সন্দেহ করা, দূর্ব্যবহার করা, নির্যাতন করা। তখন চাইলেও আর সঙ্গীকে ভালবাসা যায়না।

১০। কিছু পরিস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়ায় বা আকর্ষণ কমায়। যেমন - পেশাগত বা কোন কারণে আলাদা বাস করা। তখন স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো প্রতি সহজেই আগ্রহী হয়।

১১। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে বহূগামী (যদিও ধর্মীয়-সামাজিক বাধা, নৈতিকতাবোধ, উন্নয়ন ও মঙ্গল চিন্তা করে মানুষ একগামী থাকার চেষ্টা করে)। সেজন্যই একাধিক প্রেম, শারীরিক সম্পর্কের পর প্রেমিক বা প্রেমিকার শরীরের প্রতি আগ্রহের অবসান হলে প্রেমে বিচ্ছেদ, পরকীয়া, বহূবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, পতিতালয়,.. এসবের জন্ম। মানুষের এই বহুগামীতা স্বভাব অন্য কোন নারী বা পুরুষের প্রতি আগ্রহের কারণ।

১২। মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ বাড়তি সম্পর্কে জড়ায়। বাইপোলার মুড ডিজর্ডার রোগে আক্রান্ত রোগীরা কোনকিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায়না। এরোগে আক্রান্ত স্বামী বা স্ত্রীরা সহজেই একাধিক প্রেমে জড়ায়। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, যেসব পুরুষের মধ্যে ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশী, তারের মধ্যে একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর, এমন কি বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়ানোর প্রবণতা অন্যদের তুলনায় বেশী থাকে।

১৩। অনেক পুরুষ পরকীয়া বা কারো সাথে সম্পর্ক করাকে অন্যায় মনে করেনা। তারা মনে করে, বিয়ে করেছে বলেই আর কোন মেয়েকে ভালবাসা যাবেনা বা শারীরিক - মানসিক সম্পর্ক রাখা যাবেনা, এটা ঠিক নয়। স্ত্রীকে তার জায়গায় রেখে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করা যেতেই পারে। যুগে যুগে ক্ষমতাবান পুরুষরা এই যুক্তিতে পরকীয়া, যৌন ব্যাভিচার, বহুবিবাহ, (আধুনিক যুগে সোশাল মিডিয়া প্রেম) করেছে, করছে, করবে।

১৪। আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের কাছে মনের সৌন্দর্যের চেয়ে শারাীরিক সৌন্দর্য বেশী প্রিয়। তাই নিজের স্বামী বা স্ত্রী অসুন্দর বা মনের মত না হলে তারা সুন্দর কারো সাথে পরকীয়ায় জড়ায়। কেউ স্লিম বৌ পছন্দ করে। বাচ্চা হবার পর মেয়েরা মুটিয়ে গেলে তা অনেক স্বামীর ভাল না লাগার কারণে তারা সুন্দরী মেয়েদের পটাতে চায়।

১৫। আবার কোন কোন পুরুষ একইসাথে একাধিক প্রেম, রেপ বা পরকীয়া করতে পারাকে 'যোগ্যতা' মনে করে। তাদের নৈতিকতাবোধ কম। বউ রেখে অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানো মানে বউকে ঠকানো - তাদের মধ্যে এই অন্যায়বোধ কাজ করেনা।

১৬। মানুষের চাহিদার শেষ নেই। কখনোই তার মন পুরোপুরি ভরেনা। নদীর এ পাড় কহে.....। কারো প্রতি আগ্রহ বা পরকীয়ার মূল কারণ হল অতৃপ্তি, অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা। আমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে গুণ বা বৈশিষ্ট্য আশা করি (মানসিক, আর্থিক, দৈহিক, যৌন বা অন্য যেকোন), সংগত কারণেই তার সবগুলো পাওয়া যায়না। সেই 'না পাওয়া' আমাদেরকে প্ররোচিত করে অন্য কারো মধ্যে সেগুলো খুঁজতে।

১৭। কাউকে পেয়ে গেলে তার আর দাম থাকেনা। ঘর কা মুরগি ডাল বরাবর। আমি অনেক পুরুষের চোখে এখনও ভীষণ সুন্দরী, আকর্ষণীয়া, আরাধ্য। এখনও অনেকে মনে করে আমাকে পেলে তার জীবন ধন্য হয়ে যাবে। আর আমার স্বামীর কাছে????

১৮। সংসার জীবনে নানা সমস্যার কারণে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। যেমন - নিজেদের মধ্য মনোমালিন্য, বাচ্চার অসুখ, পরীক্ষা, বাসায় অতিথি, নিকট আত্মীয় কারো সমস্যা, মৃত্যু ইত্যাদি। আর দুশ্চিন্তা থাকলে রোমান্টিকতা থাকেনা। ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভাটা পড়ে। অন্য কারো সাথে টাংকি মারতে চায় বিনোদন পাবার জন্য, দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য।

১৯। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সাংসারিক কথাবার্তা প্রাধান্য পায়, যা নিয়ে আলাপ করতে আমরা আনন্দ পাইনা। এজন্যই অন্যদের সাথে ইটিশ পিটিশ করতে ভাল লাগে।

২০। মানুষ দ্বায়িত্ব নিতে বা কষ্ট করতে চায়না, কিন্তু আনন্দ পেতে ভালবাসে। তাই ফাও খেতে তার বেশী ভাল লাগে। নিজে গাছ লাগিয়ে ফল খাওয়ার চেয়ে অন্যের গাছের চুরি করা ফল খেতে অনেক বেশী ভাল লাগে। (খাও খেতে ছেলেরা কতটা ভালবাসে, সেটা আমি টের পাই আমার বর বিদেশে গেলে। তখন আমার চারপাশে অনেক প্রেমিক গজিয়ে ওঠে। কিন্তু বর থাকাকালীন তাদের টিকিও দেখা যায়না)।

২১। স্বামী-স্ত্রী দু'জনের মুড বেশীরভাগ সময়ে এক হয়না। স্বামী কিছু বলতে গেল, বউ তখন বিজি বাচ্চা সামলাতে বা অন্যকোন কাজে। বউ কিছু বলতে গেল, স্বামী তখন অন্যকিছু নিয়ে টেনশনে আছে। বউ বেড়াতে চাইলো। স্বামীর সময় বা টাকা নাই। স্বামী বলল, আজ চাঁদটা কি সুন্দর! বউ বলল, তোমার মা এই বলেছে, তোমার বোন বা সন্তান এই করেছে। সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত হলে আর আবেগ কাজ করেনা, ঘুম পায়। তবে অন্য কারো সাথে আড্ডা দেবার সময় ফাও খাওয়ার লোভ কাজ করে বলে কখনোই ক্লান্তি আসেনা।

আমার জানামতে আমার প্রেমিকের সংখ্যা নয়জন। সুন্দরী মেয়েদের প্রেমিকের সংখ্যা আরো বেশী থাকে। আমার বেলায় আমাকে পছন্দ করার কারণ আমার মানসিকতা। বিভিন্ন সময়ে এই নয়জন মানুষ আমার সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা আমাকে তাঁদের ভাললাগার কথা বলেছেন। এঁদের সবার এক কথা- আমি রাজী হলে তাঁরা এক মুহূর্ত দেরী না করে যেকোন মূল্যে আমাকে বিয়ে করতেন এবং সারাজীবন আর কোন মেয়ের দিকে আড়চোখেও তাকাতেন না। এঁদের সবার সাথেই আমার কমবেশী যোগাযোগ আছে। এঁরা এখনও আমাকে না পাবার আফসোসের কথা বলেন। অতি সস্প্রতি আরও তিনজন আমাকে তাঁদের ভাললাগার কথা জানিয়েছেন। এঁদের সবার মত, আমার মত অসাধারণ মেয়ে হয়না। আর আমার স্বামীর কাছে? আমার আগের লেখায় আমার বিরুদ্ধে আমার স্বামীর কিছু অভিযোগের কথা লিখেছিলাম। এঁদের সবার কথাই আমার বর জানেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল - সব স্বামীর কাছে অন্যের বউ ভাল, সব বউদের কাছে অন্যের স্বামী ভাল। নদীর এপাড় কহে.....

প্রেমিক-প্রেমিকা যতই থাকুক, তারা ফাও খেতে চায়, দায়িত্ব নিতে চায়না।
দিনশেষে স্বামী-স্ত্রীই সব। আমার এতগুলো প্রেমিক থাকার পরেও কোন ঈদে একটা শাড়ীও তাঁদের কারো কাছ থেকে উপহার পাইনি। তাঁরা কি সত্যিই আমাকে ভালবাসতেন?


সমাধান

সম্পর্ক লালন করতে হয়। স্বামী স্ত্রীর উচিত, হাজার ব্যস্ততার মাঝেও একান্ত নিজেদের জন্য কিছুটা সময় বের করে একান্তে কাটানো। একে অন্যের অনুভূতিগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া। একে অন্যের প্রতি উদাসীন না থাকা।

পরিবার, সন্তানদের সময় দিন। যেকোন সমস্যা সমাধানে সবার মত নিন।
সাধ্যের মধ্যে পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে যান। তাতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়।

ঝগড়া বা মনোমালিন্য হলে স্বামী বা স্ত্রীকে কিছুটা সময় দিন। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। কিছু সময় পর সে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে। নিজে দোষ করলে সাহসের সাথে স্বীকার করে সরি বলুন।

মাঝে মাঝে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা পরিজনদের সারপ্রাইজ দিন। সাধ্যমত উপহার, কাছাকাছি কোথাও বেড়াতে বা খেতে যাওয়া, আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, অসুস্হ রিলেটিভদের দেখতে যাওয়া ইত্যাদি।

কোনমতেই বিশেষ দিনগুলো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এতে আপনি তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছেন, এমন বাজে অনুভূতি তৈরী হয়।

আর্থিক বিষয়ে স্বামীস্ত্রী উভয়ে আলোচনা করে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। তাহলে মনোকষ্ট হবেনা।

একটি সত্যি ঘটনা বলি। আমেরিকান এক মহিলা তাঁর স্বামী মারা যাবার পর তাঁর জন্মদিনে বিশাল এক লাল গোলাপের ঝুড়ি উপহার পেলেন যার কার্ডে লেখা: "প্রিয়তমা পত্নীর জন্য স্বামীর উপহার।" উপহার পেয়ে মহিলা ভীষণ অবাক হয়ে ফুলের দোকানে ফোন করে জানতে চাইলেন, উপহারটি কে পাঠিয়েছে? দোকানদার জানালো, মহিলার স্বামী বেঁচে থাকতেই বেশ কিছু টাকা তাকে দিয়েছেন যাতে প্রতি বছর জন্মদিনে তাঁর স্ত্রীকে গোলাপের ঝুড়ি উপহার হিসেবে পাঠানো হয়।

সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা। আনন্দে কাটুক সবার ঈদ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০৯
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×