somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলা সহজ, মানা কঠিণ

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বলা সহজ, মানা কঠিণ

বলা বা উপদেশ দেয়া খুব সহজ। বলাই যায়, অন্যায় সহ্য করোনা, প্রতিবাদ করো, এতদিন কেন সহ্য করেছ, কেন প্রতিবাদ করনি, অপরাধীকে শাস্তি দাও, ইত্যাদি। কোন মানুষই স্বেচ্ছায় কোন নির্যাতন মেনে নেয়না। নেবার কথা নয়। কারণ নির্যাতন উপভোগ্য কোন বিষয় নয়।

বহূ মেয়েকে পাওয়া যাবে যারা স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ঘর ছাড়েন। আবার কিছুদিন পর সেই মেয়েই সুড়সুড় করে সেই হারামী স্বামীর সাথেই ঘর করেন। অনেকে তালাকও দেন। পরে আফসোস করেন।

আমাদের এক ম্যাডামের স্বামী অন্য এক মেয়ের সাথে ধরা পড়ার পর ম্যাডাম দুই বাচ্চা নিয়ে বাবার বাড়ী উঠলেন। তখন শুনলাম ওদের ডিভোর্স হচ্ছে। তার মাসখানেক পরেই শুনি উনি আবার স্বেচ্ছায় স্বামীর ঘরে ফিরে গেছেন। কারণ জানতে পারলাম। ম্যাডামের বাবা, মা, ভাই, বোন তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। কারণ ম্যাডাম ও তাঁর বাচ্চার দেখাশোনা অসুবিধা হচ্ছিল। আরো সহজ করে বললে, ম্যাডামের ঝামেলা তার পরিবার নিতে চায়নি। ফলে একা বাসা নিয়ে দুই বাচ্চা ও চাকরীর ঝামেলা উনি সামলাতে পারছিলেন না। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা, দুই বাচ্চা তাদের বাবাকে মিস করছিল। আমাদের আকতার জাহান ম্যাডামও স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে অনেকবার তালাক দিতে চেয়েও পরিবারের কারণে পারেননি। পরে শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করেন। এতো গেল উচ্চবিত্ত, উচ্চশিক্ষিত, চাকুরীজীবী মেয়েদের কথা।

মধ্যবিত্ত ঘরের এক ননদ বাপের বাড়ী থাকে স্বামী ছেলে নিয়ে। স্বামীটা বেকার, নেশাখোর, জুয়ারী, মিথ্যেবাদী। বাজারের নানা দোকানে বাকী করে রেখে আসে। বউ স্কুলমাস্টারী করে সেসব শোধ দেয়। রাতদিন খায়, ঘুমায় আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। নিজের ছেলেটাকেও পড়ায় না। আরো সমস্যা, রাতদিন বউ ছেলেকে গালি দেয়, নির্মমভাবে মারে। কেউ কিছু বলতে গেলে তার সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। একদিন শ্বাশুড়ীর কাছে দুলাখ টাকা চাইলো। শ্বাশুড়ী দিতে রাজী না হওয়ায় বউ, শ্বাশুড়ী ছেলে সবার উপর চড়াও হল। আলমারীতে লাথি, বউয়ের গলা টিপে ধরা, সবাইকে মারতে যাওয়া। লোকজন এসে কোনরকমে তাদেরকে প্রাণে রক্ষা করলো। এরপর ননদকে তার এক ভাবী বলল, "তুমি যদি মনে কর এই স্বামীর সাথেই ঘর করবে, তাহলে আলাদা বাসা নিয়ে স্বামী-ছেলে নিয়ে চলে যাও। আমাদের বাসায় এসব অত্যাচার চলবেনা।" এরপর ননদ স্বেচ্ছায় স্বামীকে তালাক দিল। তার কিছুদিন পর ননদ, শ্বাশুড়ী সহ শ্বশুরবাড়ীর সবাই ভাবীকে বলল, "তুমি ওর জীবনটা নষ্ট করলে।" এই হল আমাদের মানসিকতা!!!

এবার বলি নিম্নবিত্তদের অবস্থা। আমার অফিসের এক সুইপার পরকীয়ায় আসক্ত। তার বউ প্রতিবাদ করাতে মারধর করে। বাধ্য হয়ে বউ অফিসে এসে বিষয়টা জানালো। এই শুনে অফিস থেকে সেই সুইপারকে শোকজ করা হলো। তার পরের দিন বউটা এসে স্বামীর মারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখিয়ে বলল, "আমাকে মেরে ফেলবে। আমি কি করব?" এই মেয়ের না আছে কোথাও যাবার জায়গা, না আছে মামলা করার সামর্থ। তার পাশে সাহায্য করার মত কেউ নেই।

আসল সমস্যাটা এখানে। এসব অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ থাকেনা। নিজের পরিবারও না। ভারতে অনেক এনজিও আছে এসব অসহায় মেয়েদের সাহায্য করার জন্য, এদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দেবার জন্য। আমরা কি সেটা দিতে পেরেছি? কিছু এনজিও আইনগত সহায়তা দেয়। কিন্তু সেটা কি যথেষ্ট?

মেয়েরা প্রতিবাদ করেনা, জেনেশুনে নির্যাতন হজম করে। কারণ প্রতিবাদ করার পর মেয়েটার পাশে আর কাউকে পাওয়া যায়না। দু'চারদিন সমবেদনা জানানোর জন্য কেউ কেউ আসে, তারপর ভোগান্তি একা মেয়ের, মেয়ের পরিবারের। আমরা এখনও এমন পরিবেশ তৈরী করতে পারিনি যেখানে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করা যায় এবং ন্যায় বিচার পাবার সম্ভাবনা সুনিশ্চিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ করলেও অপরাধীদের শাস্তি হয়না। টাকার জোরে ছাড়া পেয়ে যায়। এই কারণগুলো নারীকে মানসিকভাবে অসহায় ও দূর্বল ভাবতে শেখায়।

কখনও কখনও আর্থিক সঙ্গতি না থাকা, পুলিশের হয়রানির ভয়, বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা, অপরাধী শক্তিশালী হলে তার নির্যাতনের ভয়, প্রিয়জনদের সমর্থন না পাওয়া,.... ইত্যাদি কারণে আমরা অপরাধের প্রতিবাদ বা প্রতিকার করিনা, করতে পারিনা। এতে অপরাধী যেমন প্রশ্রয় পেয়ে আরো অপরাধ করে, তেমনি নির্যাতিত ব্যাক্তি ন্যায় বিচার না পেয়ে বার বার নির্যাতিত হয়।

বর্তমানে মিডিয়ার কারণে মেয়েদের উপর নানা সহিংসতার বিভৎস চেহারাটা খুব তীব্রভাবে আমাদের সামনে এসেছে। মানুষের পশু প্রবৃত্তির জঘণ্য প্রমাণ মাঝে মাঝেই আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় সব অপরাধের ক্ষেত্রেই। সুষ্ঠু রাজনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ ও সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারা এসব অপরাধের ব্যাপক বিস্তৃতির মূল কারণ।

আমাদের দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন তা আমরা সবাই জানি। যেদেশে পুলিশ ঘুষ খেয়ে মানুষ খুন করে, সেদেশে আইনের শাসন আশা করা মূর্খতা ছাড়া আর কি? অসংখ্য আলোচিত হত্যাকাণ্ড আছে যার সুরাহা হয়নি, কোনদিন হবেও না, তা সবাই জানে, মেনেও নিয়েছে। কিছুদিন আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তারপর ভুলে যাই। আবার নতুন কোন ঘটনা ঘটলে পুরোনোটা আবার মনে পড়ে।
বাঘে ছু্ঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে চুয়ান্ন ঘা। একারণে আমরা অপরাধ গোপন করি। আর গোপন করি বলেই একের পর এক শিশু, নারী বা মানুষ অপরাধের শিকার হয়।

বাংলাদেশে আগে শতকরা ৬৪ ভাগ, বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগ নারী নিজ গৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। এই ৮০ ভাগ মেয়ে প্রতিবাদ করে বেরিয়ে এলে এদেশের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

প্রতিবাদ করে বেরিয়ে আসা যায়। কিন্তু তাতে সবাই আপনাকেই খারাপ বলেবে, দোষ দিবে। তাও হয়তো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, যখনি সমাজ দেখবে কোন মেয়ে একা, তখন অন্য পুরুষেরা আপনাকে খুবলে খাওয়ার চেষ্টা করবে। আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু, অফিসের কলিগ, রাস্তার বখাটে, পরিচিতজন,...। মেয়েরা যাবে কোথায়? তাই স্বামী হল মেয়েদের সাইনবোর্ড, মন্দের ভালো। স্বামী ছেড়ে একা হওয়া মানে গরম কড়াই থেকে সোজা জ্বলন্ত চুলায় পড়া। ডিভোর্সি, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা অবিবাহিতা একা মেয়েদেরকে প্রশ্ন করলে জানা যাবে প্রতি পদে পদে তারা কত রকমভাবে নির্যাতিত হয়।

পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোতে সত্যিকারের আইনের শাসন আছে। অর্থাৎ সেসব দেশে অপরাধ করে কেউ পার পায়না। ঘুষ খেয়ে কেউ অপরাধীকে শাস্তি থেকে রেহায় পেতে সাহায্য করেনা। ওসব দেশে অপরাধীদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেনা। অপরাধীরা নানাভাবে হেয় হয়। আর আমরা জেনেশুনে ঘুষখোর অফিসার, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা ঘুষখোর পুলিশের সাথে আত্মীয়তা করি। অপরাধ করেছে জেনেও সব ভুলে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি। নিজ দল বা মতের লোকেদের বা আত্মীয়দের অপরাধের কথা গোপন করি। মেনে নেই। মনে করি তার অপরাধ এমন গুরুতর কিছুনা বা অপরাধই না।

আমেরিকার মত দেশেও একই কাজের জন্য ছেলেদের বেতন বেশী, মেয়েদের কম। আর কি বলব?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×