somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েদের কাঁদাতে নেই

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়েদের কাঁদাতে নেই

কেউ প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনও ক্ষমতা বা জোর খাটিয়ে, ভয় দেখিয়ে, কখনও শিক্ষিতরা ভদ্রতার মুখোশে মেয়েদের নির্যাতন করে। মেয়েদেরকে অপমান করতে পারলে পুরুষরা খুশী হয়, অপদস্থ বা ব্যবহার করতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করে, গর্ব করে বন্ধুদের কাছে বলেও। অসম্ভব বন্য তৃপ্তি পায়, যখন দেখে তাদের অপমানে, নির্যাতনে কোন মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।

অধিকাংশ পুরুষরা মেয়েদের নির্যাতন করে মূলত দুটি কারণে। যথা -

১। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তথা মেয়েদের প্রতি হীন মানসিকতা, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব ও নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ ভাবা। এবং

২। পুরুষরা মনে করে, মেয়েদেরকে পুরুষের আজ্ঞাবহ রাখতে হলে মেয়েদেরকে নির্যাতন করা জরুরী।

প্রতি পদে পদে মেয়েরা নানা নির্যাতনের শিকার। কোন দোষ না করেও মেয়েরা শাস্তি পায়। এমন দোষ যার উপরে মেয়েদের কোন হাত নেই। বাবা যৌতুক দিতে না পারলে, সন্তান না হলে, ছেলে সন্তান না হলে, গায়ের রং কালো হলে, দেখতে সুন্দর হলে, বিধবা হলে, স্বামীর চেয়ে বেশী যোগ্য হলে.....ইত্যাদি। কখনও কখনও অন্যের ইচ্ছা মেনে নিতে না পারলেও তারা নির্যাতিত হয়। যেমন- বখাটেকে প্রেমিক হিসেবে পছন্দ করতে না পারলে, কাউকে বিয়ে করতে রাজী না হলে, স্বামীর অত্যাচারে ডিভোর্স নিতে চাইলে, স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দিলে, স্বামীকে ২য়, ৩য়.. বিয়ের অনুমতি না দিলে, নিজের কষ্টার্জিত টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিতে রাজী না হলে....ইত্যাদি।

এর কারণ সমাজে ছেলেদের গুরুত্ব বেশী, মেয়েদের কম। কেননা ছেলে সন্তান আমাদের সব পরিবারে খুব বেশী কাংখিত। কারণ বৃদ্ধ বয়সে বাবামাকে আশ্রয় দেয়া, দেখাশোনা, খাওয়া- পরা - এসব দায়িত্ব ধর্মমতে ছেলে মেয়ে উভয়ের হলেও সমাজ মনে করে এসব দায়িত্ব মূলতঃ ছেলেদের। তাই সব পরিবারে ছেলে সন্তান এত বেশী প্রয়োজনীয়, কাঙ্খিত, গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা নয়।

মেয়ে সন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় তখন থেকেই যখন জানা যায় গর্ভস্থ শিশুটি মেয়ে। ছোটবেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা পরিবার, প্রতিবেশী, স্কুল, খেলার সাথী, শিক্ষক, সমাজ - এদের কাছ থেকে দিনে দিনে একটু একটু করে শেখে যে মেয়েরা নীচু শ্রেণীর জীব, পুরুষের আজ্ঞাবহ, চাকর সমতুল্য এবং কোনমতেই সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ নয়।

নাটক, সিনেমা, খবরে প্রতিনিয়ত শিশুরা দেখে যে, মেয়েরা আক্রান্ত হয়, যার কোন প্রতিকার হয়না। অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। পুরুষ দোষ করলেও সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন - ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে, মারতেই পারে, সে তো স্বামী, দোষ না করলে এমনি মারে? ফলে দিনে দিনে বড় হতে হতে ছেলেরা মনে করে মেয়েদের সংগে তারা যেকোন আচরণ, যেকোন নির্যাতন করতে পারে। ছেলে শিশুরা ওদের সামনে মেয়েদের সাথে করা বড়দের নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনমূলক আচরণ থেকে এমন ধারণা পায়। তাই পরবর্তীতে সেও বড়দের মতই আচরণ করে।
মেয়েরা দেখে যে, তাদের মা, বোন, চাচী, খালা,ফুফু... এরা নানা সময় নির্যাতিত হয় এবং সেসব নির্যাতন মেনে নেয়। তাই মেয়েরাও মেনে নেয় যে, মেয়েদের প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য।

শিশুরা ছোটবেলা থেকে দেখে যে বাবা মাকে গালি দেয়, দিতে পারে ( কখনও কখনও মারেও)। এটা তার অধিকার। কিন্তু কোন মা সেটা পারেনা। মা গালি বা মার খেয়েও হাসিমুখে আবার সংসার করে, অন্যায় করলেও বাবার শাস্তি হয়না, তাকে কেউ কিছু বলেনা। বাবার কোন আচরণকেই অন্যায় মনে করা হয়না। তাই বাবার মর্যাদা বেশী, মায়ের কম।

শিশুরা দেখে যে, পরিবারে ও সমাজে ছেলেদের গুরুত্ব বেশী, মেয়েদের কম।
পুরুষ দোষ করলেও মেয়েদেরকে প্রতি পদে পদে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যেমন - বখাটের উৎপাত প্রতিহত করতে না পেরে আমরা মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বা পড়া বন্ধ করে দেই। যৌন নির্যাতন করলে গোপন করি, কারণ সমাজ মেয়েটিকেই ভ্রষ্টা বলে। অর্থাৎ দোষ করে পুরুষ, শাস্তি পায় নারী। ইতিহাস বলে, এভাবেই মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, এমন কি মসজিদে নামাজ পড়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।

পুরুষরা ধর্ষণ করে যেকোন বয়সের, বিবাহিতা - অবিবাহিতা নারীকে, এমনকি ছোট শিশুরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়না। কোন কোন পুরুষ একইসাথে একাধিক প্রেম করাকে 'যোগ্যতা' মনে করে, ধর্ষণে সেঞ্চুরীর পর মিষ্টি বিলায়।

পুরুষরা একাধিক বিয়ে করে, তুচ্ছ কারণে তালাক দিয়ে বা না দিয়ে বৌ-বাচ্চা ফেলে আবার বিয়ে করে। মেয়েরা পড়ে অথৈ সাগরে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এমনকি খুন করে, মতের পার্থক্য হলে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে, মতপ্রকাশে স্বাধীনতা দেয়না, পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার সময় তার সাথে আলোচনা করেনা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরখা পরায় বা কোনকিছু করতে বাধ্য করে, লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়, চাকরী ছাড়ায়, এমন কি চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে স্বামী ও তার পরিবার। কোন বিবাহিত মেয়ের ছেলেবন্ধু থাকা যাবেনা, ফোন করা, দেখা করা যাবেনা- এমন হাজার বাধা। বৌ সুন্দরী হলে সারাজীবন তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এই বুঝি কারো সাথে তার ভাব হয়ে গেল! বিয়ে করেছে মানে তাকে গোলাম হিসেবে কিনে নিয়েছে। তাই তার বিনা অনুমতিতে বউ নিঃশ্বাস ও নিতে পারবেনা।

সব ধর্মে নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। সব ধর্মে পুরুষের বহুবিবাহ জায়েজ। মেয়েদের বিশেষ কারণ বশতঃ জায়েজ। বিধবা বিয়ে চালু ও সতীদাহ রদ করতে ধর্মগুরু ও সমাজের বিরুদ্ধে কম যুদ্ধ করতে হয়নি।

আমার মনে হয় পৃথিবীতে মেয়েদের প্রতি যত বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তারমধ্যে মানসিক দিক থেকে সবচেয়ে নির্মম হল স্বামীর বহুস্ত্রীর একসাথে বসবাস। একটা মেয়ের জন্য চোখের সামনে তার স্বামীর অন্য স্ত্রীর ঘরে শুতে যেতে দেখাটা যে কতটা অমানবিক, একটু কল্পনা করলেই বোঝা যায়। মেয়েরা এমন করলে পুরুষদের কেমন লাগবে? মাঝরাতে স্ত্রীর মোবাইল ফোন বেজে উঠলে যেখানে পুরুষদের গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে যায়, সেখানে...। পুরুষরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বহুবিবাহের মত অনেক আইন বানিয়ে নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। ইরানের পার্লামেন্ট আইন পাস করেছে যে বয়স ১৩ বছর হলেই পিতা তার পালক কন্যাকে বিয়ে করতে পারবে। ভাবা যায়? সম্প্রতি তুরস্কের পার্লামেন্টে পাশ করতে যাচ্ছে একটি আইন। তা হল, ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে রাজী হলেই তার ধর্ষণের শাস্তি মাফ করে দেয়া হবে। এ আইনের প্রকৃত অর্থ হল, কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় কাউকে বিয়ে করতে রাজী না হলে তাকে রেপ করলেই বিয়ে করা যাবে। এই হল আমাদের আধুনিক বিশ্বের পুরুষদের মানসিকতা।

মেয়েরা সারাজীবন পরনির্ভশীল। বাবা, স্বামী বা ছেলের উপর। তারা জানে স্বামীর অবর্তমানে ওদের অবস্থা কতটা নাজুক হয়। তাদেরকে সবসময় আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাবার সম্পত্তি, বিধবা হলে স্বামীর সম্পত্তি ঠিকমত দেয়া হয়না। নিজে উপার্জন করলেও নিজের ইচ্ছামত স্বামী তা খরচ করতে দেয়না। এমন কি দেনমোহরটাও দেয়না। নারীকে বেশীরভাগ পুরুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে দেয়না। স্ত্রীধন, তালকের পর খোরপোষ - বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এসব দেয়া হ্য়না। এমনকি বাবার দেয়া যৌতুক বা সম্পদের উপরেও স্ত্রীর কোন নিয়ণ্ত্রণ থাকেনা। কেউ কেউ মোহরানা দেন। কিন্তু সেটা কোন না কোন বিনিয়োগে খাটানো হয় যা স্বামী নিয়ন্ত্রণ করেন।

শিশু জানে, টাকা থাকে বাবার হাতে, মা ভিখারী। যেকোন প্রয়োজনে বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়। বাবার মর্জি হলে দেয়, না হলে দেয়না। না দিলে মায়ের কিছু করার থাকেনা। ভিখারীর আবার মর্জি কি?
চাকুরীজীবী মায়েরাও টাকা ইচ্ছামত খরচ করতে পারেনা। স্বামী করতে দেয় না। মা ও বাড়ীর মেয়েরা অনুৎপাদনশীল কাজ করে। অর্থাৎ তারা যত কাজই করুক, তারা সে কাজের কোন পারিশ্রমিক পায়না। মা টাকা আয় করেনা। তাই শিশুরা মায়ের কাজ বা পরিশ্রমকে 'ফালতু' ভাবতে শেখে। মায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন মনে করে।

সব খারাপ বা নেতিবাচক ঘটনার জন্য মেয়েদেরকে দায়ী করা হয়। যেমন- সন্তান ফেল করলে, বখে গেলে, দোষ করলে, ভুল করলে, প্রেম করলে, চুরি করলে... তার দায় মায়ের। কারণ বাবা আয় করেন, তাই বাকী আর কিছু সে করবেনা। তার কাছে কেউ কিছু আশাও করেনা। সন্তান লালন-পালন, পড়াশোনা, সব দায় একা মায়ের। শিশুরা এসব দেখে দেখে মেয়েদের অশ্রদ্ধা করতে শেখে। ছেলে শিশুরা নিজেদেরকে বাবার মত ক্ষমতাধর ভাবতে শেখে আর মেয়েরা নিজেদেরকে দূর্বল, পরনির্ভরশীল ও হেয় ভাবতে শেখে।

ছোটবেলা থেকেই সব ভাল জিনিসটা বরাদ্দ থাকে ছেলেদের জন্য। সবসময় ছেলের সুবিধার কথা আগে ভাবা হয়, পরে মেয়েদের। যত্ন ও ভালবাসাও ছেলের জন্যই বেশী। ফলে মেয়েরা নিজেদেরকে ছেলেদের তুলনায় কম কাঙ্খিত ও কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে বাধ্য হয়।

স্ত্রী নিজেকে স্বামীর অধীনস্ত মনে করে, ভয় পায়, স্বামী অসন্তুষ্ট হতে পারে, এমন কোন কাজ নিজে করেনা, সন্তান বা অন্য কাউকে করতে দেয়না। মা বাচ্চাকে বলে, "এটা কর বা ওটা করোনা, বাবা রাগ করবে।" ফলে শিশু বোঝে, পরিবারে পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ, তার কথাই শেষ কথা। বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলে, অর্থাৎ কোন না কোন পুরুষ মেয়েদের পরিচালিত করে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামত কিছু করতে পারেনা। সে কি করবে, কি করবেনা, সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, নিতে দেওয়া হয়না। তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ। ফলে শিশুরা মেয়েদেরকে পরনির্ভরশীল বা পুরুষের পরগাছা ভাবে, কখনোই স্বাধীন সত্ত্বা ভাবতে পারেনা।

মেয়েদেরকে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় সবসময়। যেমন - একা কোথাও যেতে দেওয়া হয়না, সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে বা থাকতে দেয়া হয়না, ভীড়ে একা ছাড়া হয়না, ছেলেদের সাথে মিশতে দেয়া হয়না, সব পরিবেশে যেতে দেওয়া হয়না, সব কাজ করতে দেয়া হয়না,.... ইত্যাদি। অর্থাৎ মেয়েরা আক্রমণযোগ্য প্রাণী। যেকোন সময় যেকোন পুরুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে, এই ভয় তার মনে বদ্ধমূল করে দেয়া হয় বলে সে নিজেকে দূর্বল ভাবে, ভয়ে ভয়ে সাবধানে চলে এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখে।

স্বামীর হুকুম ছাড়া স্ত্রী কিছু করতে পারেনা। ধর্মও তাই বলেছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া দানও করতে পারবেনা। ধর্ম স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করতে বলেছে। তবে স্বামী সেটা না করলে সমাজ তেমন আপত্তি করেনা। তাই পুরুষ তা করার প্রয়োজন অনুভব করেনা। বাবা মালিক, মা চাকর। বাবাকে না খাইয়ে মা খায়না, খেতে পারেনা। সব ভাল খাবার বাবা, ছেলে, বাড়ীর গুরুজনদের দিয়ে তারপর মেয়েদের দেয়। সবার খাওয়া হয়ে গেলে মা নিজে হাসিমুখে যা থাকে তাই খায় বা কখনও কখনও বাসি বা উচ্ছিষ্ট খাবার খায়।

আমাদের সমাজের নিয়ম অনুসারে কিছু কাজ ছেলেদের, কিছু কাজ মেয়েদের। তুলনামূলকভাবে মেয়েদের কাজগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ও বোরিং। রান্না, কাচা, বাচ্চা সামলানো, পরিবারের সবার দেখাশোনা.. ইত্যাদি সব কাজ করতে গিয়ে সে অবসর পায়না। দিনরাত ব্যস্ত। পুরুষরা কাজ বা চাকরী শেষে বাড়ী ফিরে আরাম করে, বৌ-মেয়ে-বোন-মা তার সেবা করে, কারণ সে সংসার চালানোর জন্য টাকা আনে।

মেয়েরা সংসার, বাচ্চা সামলিয়ে সময় পায়না। ফলে তার সৃজনশীলতা থাকলেও প্রকাশ পায়না। ধীরে ধীরে সে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনা, সারাজীবন পরনির্ভরশীল থেকে যায়। পুরুষ ইচ্ছে করে মেয়েদের অর্থ-সম্পদ করায়ত্ব করে যাতে মেয়েরা তাকে ছাড়া একা বাঁচতে না পারে।

হিন্দু মেয়ে বিধবা হলে গহনা-শাঁখা-সিঁদুর খুলে নেয়া হয়। আগে চুল কেটে দিয়ে কুশ্রী করা হত যাতে কেউ তাকে পছন্দ না করে, বিয়ে করতে না চায়। যৌন চাহিদা অবদমনের জন্য ধর্মের দোহায় দিয়ে বিধবাদের নিরামিশ খাওয়ানো হয়। রংগীন পোষাক, রূপচর্চা সব নিষিদ্ধ। মুসলিমদের মধ্যেও বিধবাদের গহনা পরা, রঙীন পোষাক পরা ভাল চোখে দেখা হয়না। অর্থাৎ স্বামী ছাড়া সমাজে মেয়েদের অবস্থান দূর্বল ও নীচু হয়, তার সব চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা-মন্দলাগা গুরুত্বহীন হয়ে যায়। ফলে মেয়েরা বাধ্য হয় যেকোন মূল্যে পুরুষের সাথে, তার ছত্রছায়ায় থাকতে।

ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরকে বিয়ে করে সংসার করার জন্য তৈরী করা হয়। তারা পড়াশুনা, চাকরী, রূপচর্চা, শরীর ঠিক রাখা- এসবই পুরুষের জন্য করে যাতে তার ভাল বিয়ে হয়। অর্থাৎ মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল ভাল বিয়ে হওয়া। অন্য কথায় ভাল আশ্রয় পাওয়া। নিজেকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন চেষ্টাই সে করেনা। কারণ সে জানে, একা সে টিকতে পারবেনা, তাকে টিকতে দেয়া হবেনা।

বাংলাদেশে আগে শতকরা ৬৪ ভাগ, বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগ নারী নিজ গৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। এমনিতেই আমাদের দেশের মেয়েরা প্রতিনিয়ত নানা অমানবিক ও দৈহিক-মানসিক নির্যাতনমূলক আচরণের শিকার। তার উপর মাথার উপরে বাবা, স্বামী বা ছেলে, মানে কোন পুরুষের ছায়া না থাকলে মেয়েরা আরো বেশী আক্রমণযোগ্য হয়ে যায়। তাই যত সমস্যাই হোক, যত অত্যাচারই করুক, তবু মেয়ে ও তার পরিবার চায়না স্বামীকে তালাক দিতে।

ছেলেদেরকে ছোটবেলা থেকেই বেশী প্রাধান্য না দিয়ে সমান প্রাধান্য দিতে হবে। মেয়েদের কে মানুষ ভাবতে শেখাতে হবে যাতে সে বড় হয়ে মেয়েদেরকে অপমান, নির্যাতন বা ছোট মনে না করে। মেয়েদের প্রতি মানবিক হয়। এটা খুব জরুরী।

ছোটবেলা থেকে ছেলেদের বলা হয়, ছেলেরা কাঁদবেনা। কাঁদবে মেয়েরা। নারীর জীবন মানেই কান্না। ছেলেরা কাঁদাবে। তাই মেয়েদের প্রতি এত অত্যাচার। তাই এখন সময় এসেছে আমাদের শিশুদের শেখানোর, "মেয়েদের কাঁদাতে নেই।"

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1888822408038250&id=100007315272396
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৫
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×