somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামনে আরো অন্ধকার!!!!

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোন ছোট বা বড় যেকোন অপরাধ সংঘটিত হবার পর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি দ্রুত ও সহজ উপায়ে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি।কেননা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়না। অন্যদিকে অপরাধী তার টাকা বা ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে অপরাধ ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে এবং ভিকটিমকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা দেয় বা নানা ভয়ভীতি দেখায়, নির্যাতন করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাবার নিশ্চয়তার অভাব, আর্থিক সঙ্গতি না থাকা, পুলিশের হয়রানির ভয়, বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা, অপরাধী শক্তিশালী হলে তার নির্যাতনের ভয়, প্রিয়জনদের সমর্থন না পাওয়া,.... ইত্যাদি নানা কারণে আমরা অপরাধের প্রতিবাদ বা প্রতিকার করিনা, করতে পারিনা। সামাজিকভাবে হেয় হবার সম্ভাবনা থাকলে আমরা অপরাধটি গোপন করার চেষ্টা করি। এতে অপরাধী যেমন প্রশ্রয় পেয়ে আরো অপরাধ করে, তাকে দেখে আরো অনেকে অপরাধ করতে সাহস পায়, তেমনি নির্যাতিত ব্যাক্তি ও তার পরিবার ন্যায় বিচার না পেয়ে বার বার নির্যাতিত হয়। এভাবে দেশ ও সমাজ অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

একারণেই বাংলাদেশের মানুষগুলো দিনে দিনে জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে। এদেশের অনেক সমস্যা, দৈন্য মেনে নিতে পারি। মানুষের পশু হয়ে ওঠা মেনে নিতে পারিনা। একটা ধর্ষণের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটার খবর। কচি নিষ্পাপ শিশুকে এক নিমেশে পিষে মেরে ফেলছে! দয়া, মায়া, বিবেক, পাপের ভয়, আইনের ভয়, লোকনিন্দার ভয়,... কিচ্ছু নেই। দেশ ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। সবধরণের অপরাধের অবাধ বিস্তারের ফলে ধীরে ধীরে প্রিয় দেশটা অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে এদেশের সামাজিক অবক্ষয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। আমরা সকলেই চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে বসে আছি। আশা করছি, কোন এক অলৌকিক যাদুমণ্ত্রবলে সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। অথবা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছি এই দেখে যে, আমি বা আমার পরিবার এখনও নিরাপদে আছি। আইনের কঠোর প্রয়োগ করার পরিবর্তে ভিকটিমদের দোষ খুঁজে বের করছি।

আমরা অন্যায় হজম করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। যেমন ফরমালিন খেতে খেতে এখন মেনেই নিয়েছি খাদ্যে ফরমালিন না থাকাটাই অস্বাভাবিক। তেমনি বাকী সবকিছু। অহরহই নানা লোমহর্ষক ঘটনা বা অপরাধ ঘটছে। কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় সবার সামনে ঘটছে। কিছু মানুষ হায়েনা হয়ে যাচ্ছে আর কিছু মানুষ সাক্ষী গোপাল। তারা অথর্ব। সবাই চেয়ে চেয়ে বর্বরতা দেখে। প্রতিবাদ, প্রতিকার করেনা। অথচ বাঙ্গালী বীরের জাতি। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে অন্যায়কে পরাজিত করে এদেশের জন্ম। কোথায় গেল আমাদের সে বীরত্ব? কেন অপরাধ ঘটতে দেখেও এখন মানুষ থামায় না? কেন চুপ করে থেকে নির্মমতা দেখে? কেন সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করেনা?

প্রতিবাদ যে একদমই করেনা, তা কিন্তু নয়। মিছিল, স্লোগান, ফেসবুকে, পেপারে, ব্লগে লেখালেখি, অপরাধ ও অপরাধীর ছবি/ভিডিও শেয়ার বা প্রচার, মানববন্ধন, কান ধরে ছবি, মুখে কালো কাপড় বাঁধা, কালো ব্যাজ ধারণ,... ইত্যাদি তো করছি। আসল কাজটাই করছি না। যখন খাদিজা, রাজন, সাবিনারা, তানহা, বনানীর দুই তরুণী, বগুড়ার মা-মেয়ে,.... ইত্যাদি অসংখ্য মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তখন আমরা অনেকেই সেসব নির্যাতনের কথা জেনেও, দেখেও তার প্রতিকারের বা ভিকটিমকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিনা। কারণ আমাদের আত্মকেন্দ্রিক ও সুবিধাবাদী মানসিকতা, পুলিশের ঝামেলায় না জড়ানোর ইচ্ছা, প্রতিবাদ করতে গিয়ে অপরাধীর রোষানলে না পড়ার মানসিকতা, সামাজিক ও আইনগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকা, ইত্যাদি । আগে গ্রামের বা পাড়ার কোন ছেলেকে সিগারেট খেতে দেখলেও বয়স্ক লোকেরা ধমক দিতেন বা ছেলের বাবাকে বলে দিতেন। ফলে ছেলেমেয়েরা অপরাধ করতে সাহস পেতনা। আর এখন পাড়ার বখাটেরা মেয়েদের গায়ে হাত দিলে, মানুষ খুন করলে, চাঁদাবাজি করলে, এসিড ছুঁড়লে,.......ও আমরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাই বা বিনা প্রতিবাদে প্রাণভয়ে চুপ করে থাকি, অপরাধ হজম করি, অন্যায় মেনে নেই, অপরাধীকে ভয় করি, সমীহ করি। এর কারণ কি? নিজেকে প্রশ্ন করুন। উত্তরটা পেয়ে যাবেন। পাননি?

বেশ। বলে দিচ্ছি। এর কারণ হল - এখন আমাদের সমাজে কোন সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। কেউ অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হলেও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় যণ্ত্র তাদেরকে সাহায্য করেনা বা রক্ষা করতে পারেনা। উল্টে অপরাধীরাই জয়ী হয়। জয়ী হয়ে নির্ভয়ে আরো বড় বড় অপরাধ করে। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত মানুষ অপরাধীদের ফুলে-ফেঁপে ওঠা দেখে। তাই মানুষ এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। অন্য কারো নিরাপত্তা দিতে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে সাহস পায়না। কারণ সে জানে, সে নিজে আক্রান্ত হলে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবেনা।

আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষামূলক, রাজনৈতিক, আইনগত, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়,.... সব অনুশাসনের সংস্কার দরকার। নাহলে এ অবস্থা আরো খারাপ হবে। এ নরক থেকে উত্তোরণের কোন উপায় নেই। একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বা দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে চলবেনা। চোখ বন্ধ করলেই প্রলয় থামেনা। তাই চোখ খুলে ভালমত জাগতে হবে, প্রলয় থামানোর জন্য দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে সবক্ষেত্রে। দেশপ্রেমের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা আর দেশের শান্তি বজায় রাখতে নিজে সম্পূর্ণ সৎ থেকে নিরপেক্ষভাবে কঠোরভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা এক কথা নয়। আমাদের ভণ্ডামী বন্ধ হওয়া দরকার। প্রলয় থামাতে সবার ভূমিকা দরকার। কিন্তু সেটা নিশ্চিত করা যাবে কিভাবে?

সবার আগে দরকার দল মত নির্বিশেষে সব ধরণের অপরাধে লিপ্ত সব অপরাধীর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, যা কেবল পারে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র কি সবক্ষেত্রে সেটা পারছে?

যে নিজেই নানা অপরাধে জড়িত, তার নৈতিক ভিত্তি থাকেনা আরেকজনের অন্যায় রোধ করবার বা অন্যের অপরাধের বিষয়ে কথা বলার। যে ঘুষ খায়, সে আরেকজনকে ঘুষ খাওয়ার অপরাধে শাস্তি দিতে পারেনা। তেমনি আমরা সবাই যার যার অপরাধ ঢাকতে, নিজের চারপাশ, নিজের চেয়ার সামলাতে ব্যস্ত। বাকীরা জাহান্নামে যাক। তাছাড়া যারা প্রতিকার করতে চাইবে, তাদেরকে যে বিপদে ফেলা হবেনা, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? বড় ভয়াবহ সময়! অপরাধীদের হাত অনেক শক্ত! আরো যে কত কত ভয়াবহ জিনিস দেখতে হবে, কে জানে?

সরকার চাইলেই পারেন নিরপেক্ষভাবে অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশটাকে নিরাপদ করতে। অপরাধী অপরাধীই। আমরা আশাবাদী হতে চাই। বীর বাঙ্গালীর গর্ব ধরে রাখতে চাই।








সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×