somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানি যেন শুধু নিরীহ পশুহত্যা না হয়

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষ নিজেকে বেশী ভালবাসে, নাকি সন্তানকে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য একটি শিম্পাঞ্জীকে তার শিশুসহ খাঁচায় আটকে রেখে খাঁচার নীচে তাপ দেয়া হল। তাপ যত বাড়ে, শিম্পাঞ্জী তত অস্থির হয়ে তার হাতে, কোলে, ঘাড়ে, মাথায় নিয়ে বাচ্চাটাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে। এভাবে তাপ যখন সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেল, খাঁচার তলায় লোহার শিকে অতিরিক্ত তাপের কারণে আর পা রাখা সম্ভব হচ্ছিলনা, তখন বাচ্চাটাকে খাঁচার নীচে রেখে বাচ্চার উপর উঠে দাঁড়িয়ে শিম্পাঞ্জী নিজেকে তাপ থেকে বাঁচালো। তখন সাথে সাথে তাপ বন্ধ করে দেয়া হলো এবং বাচ্চাটাকে ও শিম্পাঞ্জীকে বের করে এনে বাঁচানো হলো।

মানুষ এমন করেনা। কখনও কখনও মা সন্তানের জন্য জীবন দেয় (কারেন্টের তারে জড়িয়ে ছেলে মারা যাচ্ছে দেখে মা ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও মারা গেছে। এক্ষেত্রে মা মারা যাবে, এটা নিশ্চিত জানতো না। যদি জানতো, দুজনেই মারা যাবে বা বাঁচাতে পারবে না, তাহলে কি যেত?), হাজার কষ্ট বুক পেতে নেবে বা নেয় - এমনটাই আমাদের বিশ্বাস। আসলেই তাই কি? আমার ধারণা, মানুষের বেলাতেও এরকম পরিস্থিতিতে শিম্পাঞ্জীর মত একই ফল আসবে। কারণ মানুষ নিজেকে ভালবাসে সবচেয়ে বেশী। তার প্রমাণও আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে পাই। বাবা বা মা যখন পরকীয়ায় জড়ায়, তখন সন্তানদের ত্যাগ করে, কখনও কখনও সন্তানদের খুনও করে। বাবা বা মা দ্বিতীয় বিয়ে করলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সন্তানকে ছেড়ে চলে যায়। আবার পানিতে ডুবলে মা বা বাবা সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু যখন দেখে, সে নিজেই ডুবে যাচ্ছে, তখন সন্তানের হাত ছেড়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচায়। আইয়ামে জাহিলিয়ার যুগে কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত কবর দিত বাবামা, এখনও ভারতে কন্যা শিশু ভ্রুণ হত্যা করা হয় ব্যাপকহারে, এমনকি জ্যান্ত শিশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। আমাদের দেশেও শিশু ভ্রুণ হত্যা কম হয়না। সন্তান বিক্রি, ত্যাগ করা, অবৈধ সন্তানকে কখনও হত্যার পর, কখনও জ্যান্তই ফেলে রাখা হয় ডাস্টবিনে। মা এবং সন্তান যেকোন একজনকে বাঁচানো সম্ভব হবে - এমন অবস্থায় প্রতিবার মাকে বাঁচানোর কথা বলা হয় (কুছ কুছ হোতা হ্যায় ছবিতে ছাড়া)। ভারতে সন্তান বলি দিলে সম্পদ লাভ হবে, গুরুর এমন কথায় বাবা নিজের ছেলেকে বলি দিয়েছে, এমন ঘটনাও জানা যায়। শুনতে খারাপ লাগলেও এগুলো ঘটে, ঘটছে।

কোরবানির আসল মহাত্ম হলো, নিজের মনের সব কলুষতা যেমন - লোভ, হিংসা, পাপ, অন্যায়, মিথ্যা, জুলুম, সুদ, ঘুষ,.... ইত্যাদি কে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে কুরবানি করা ও গরীবদের সাহায্য করা (মাংস খাওয়া, টাকার গরম দেখানো, প্রতিযোগিতা করা,... ইত্যাদি নয়)। আমরা কি তাই করি?

সুদ, ঘুষ, অবৈধ আয় দিয়ে কেনা পশুর কুরবানি হবেনা। আমাদের দেশের কতজন মানুষের আয় এসবের বাইরে? যাদের সাথে ভাগে কুরবানি দেবেন, তাদের আয়ও বৈধ হতে হবে। নাহলে কুরবানি হবেনা। সবার আয়ের উৎস কি আমরা জানি? অবৈধ জেনেও কি তাদের সাথে কুরবানি দেইনা?

কুরবানি দেবার পর ঘুষখোর কি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দেবে? যারা অন্যের সম্পদ হরণ করে, অন্যায় করে, জুলুম,খুন,ডাকাতি করে, মিথ্যা বলে,...... ইত্যাদি নানা পাপ কাজ করে, নিরীহ পশু কুরবানি করার পর তারা কি এসব ছেড়ে দেবে?

নিরীহ পশু কুরবানি করা খুবই সহজ। নিজের ছেলেকে কুরবানি (হত্যা) করাও তেমন কঠিণ কাজ নয়। কঠিণ হলো নিজেকে কুরবানি করা, নিজেকে বদলানো, নিজের বদ স্বভাবকে ত্যাগ করা, নিজের লোভকে ত্যাগ করা।

নিজের পশুত্বকে কোরবানি দিন। কুরবানির নামে শুধুই নিরীহ পশুহত্যা করবেন না।



সকলকে ঈদ মোবারক।

বিঃ দ্রঃ শিশুদের সামনে পশু জবাই করবেন না।

(এটি আমার শততম পোস্ট)।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×