মানুষ নিজেকে বেশী ভালবাসে, নাকি সন্তানকে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য একটি শিম্পাঞ্জীকে তার শিশুসহ খাঁচায় আটকে রেখে খাঁচার নীচে তাপ দেয়া হল। তাপ যত বাড়ে, শিম্পাঞ্জী তত অস্থির হয়ে তার হাতে, কোলে, ঘাড়ে, মাথায় নিয়ে বাচ্চাটাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে। এভাবে তাপ যখন সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেল, খাঁচার তলায় লোহার শিকে অতিরিক্ত তাপের কারণে আর পা রাখা সম্ভব হচ্ছিলনা, তখন বাচ্চাটাকে খাঁচার নীচে রেখে বাচ্চার উপর উঠে দাঁড়িয়ে শিম্পাঞ্জী নিজেকে তাপ থেকে বাঁচালো। তখন সাথে সাথে তাপ বন্ধ করে দেয়া হলো এবং বাচ্চাটাকে ও শিম্পাঞ্জীকে বের করে এনে বাঁচানো হলো।
মানুষ এমন করেনা। কখনও কখনও মা সন্তানের জন্য জীবন দেয় (কারেন্টের তারে জড়িয়ে ছেলে মারা যাচ্ছে দেখে মা ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও মারা গেছে। এক্ষেত্রে মা মারা যাবে, এটা নিশ্চিত জানতো না। যদি জানতো, দুজনেই মারা যাবে বা বাঁচাতে পারবে না, তাহলে কি যেত?), হাজার কষ্ট বুক পেতে নেবে বা নেয় - এমনটাই আমাদের বিশ্বাস। আসলেই তাই কি? আমার ধারণা, মানুষের বেলাতেও এরকম পরিস্থিতিতে শিম্পাঞ্জীর মত একই ফল আসবে। কারণ মানুষ নিজেকে ভালবাসে সবচেয়ে বেশী। তার প্রমাণও আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে পাই। বাবা বা মা যখন পরকীয়ায় জড়ায়, তখন সন্তানদের ত্যাগ করে, কখনও কখনও সন্তানদের খুনও করে। বাবা বা মা দ্বিতীয় বিয়ে করলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সন্তানকে ছেড়ে চলে যায়। আবার পানিতে ডুবলে মা বা বাবা সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু যখন দেখে, সে নিজেই ডুবে যাচ্ছে, তখন সন্তানের হাত ছেড়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচায়। আইয়ামে জাহিলিয়ার যুগে কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত কবর দিত বাবামা, এখনও ভারতে কন্যা শিশু ভ্রুণ হত্যা করা হয় ব্যাপকহারে, এমনকি জ্যান্ত শিশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। আমাদের দেশেও শিশু ভ্রুণ হত্যা কম হয়না। সন্তান বিক্রি, ত্যাগ করা, অবৈধ সন্তানকে কখনও হত্যার পর, কখনও জ্যান্তই ফেলে রাখা হয় ডাস্টবিনে। মা এবং সন্তান যেকোন একজনকে বাঁচানো সম্ভব হবে - এমন অবস্থায় প্রতিবার মাকে বাঁচানোর কথা বলা হয় (কুছ কুছ হোতা হ্যায় ছবিতে ছাড়া)। ভারতে সন্তান বলি দিলে সম্পদ লাভ হবে, গুরুর এমন কথায় বাবা নিজের ছেলেকে বলি দিয়েছে, এমন ঘটনাও জানা যায়। শুনতে খারাপ লাগলেও এগুলো ঘটে, ঘটছে।
কোরবানির আসল মহাত্ম হলো, নিজের মনের সব কলুষতা যেমন - লোভ, হিংসা, পাপ, অন্যায়, মিথ্যা, জুলুম, সুদ, ঘুষ,.... ইত্যাদি কে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে কুরবানি করা ও গরীবদের সাহায্য করা (মাংস খাওয়া, টাকার গরম দেখানো, প্রতিযোগিতা করা,... ইত্যাদি নয়)। আমরা কি তাই করি?
সুদ, ঘুষ, অবৈধ আয় দিয়ে কেনা পশুর কুরবানি হবেনা। আমাদের দেশের কতজন মানুষের আয় এসবের বাইরে? যাদের সাথে ভাগে কুরবানি দেবেন, তাদের আয়ও বৈধ হতে হবে। নাহলে কুরবানি হবেনা। সবার আয়ের উৎস কি আমরা জানি? অবৈধ জেনেও কি তাদের সাথে কুরবানি দেইনা?
কুরবানি দেবার পর ঘুষখোর কি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দেবে? যারা অন্যের সম্পদ হরণ করে, অন্যায় করে, জুলুম,খুন,ডাকাতি করে, মিথ্যা বলে,...... ইত্যাদি নানা পাপ কাজ করে, নিরীহ পশু কুরবানি করার পর তারা কি এসব ছেড়ে দেবে?
নিরীহ পশু কুরবানি করা খুবই সহজ। নিজের ছেলেকে কুরবানি (হত্যা) করাও তেমন কঠিণ কাজ নয়। কঠিণ হলো নিজেকে কুরবানি করা, নিজেকে বদলানো, নিজের বদ স্বভাবকে ত্যাগ করা, নিজের লোভকে ত্যাগ করা।
নিজের পশুত্বকে কোরবানি দিন। কুরবানির নামে শুধুই নিরীহ পশুহত্যা করবেন না।
সকলকে ঈদ মোবারক।
বিঃ দ্রঃ শিশুদের সামনে পশু জবাই করবেন না।
(এটি আমার শততম পোস্ট)।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫০