এ জগতে হায় সেই বেশী চায়....
"প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উপরে বিরক্ত" - এই খবরটি পড়ার পর থেকে ভাবছিলাম, সচিবরা এত সুবিধা পাবার পরেও কেন এত দাবী তুলছেন যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হচ্ছেন? সচিবরা নিশ্চয় মনে করছেন যে, তাঁরা যেসব সুবিধা পান, তা মোটেই যথেষ্ট নয়। মনে করতেই পারেন। সবার বিবেচনা তো সমান নয়। আগে দেখি সচিবরা নতুন কি কি সুবিধা পাচ্ছেন।
সচিবদেরকে নতুন যে সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা হল, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার চাকুরীজীবিরা বাবুর্চি ও প্রহরীদের বেতন বাবদ মাসিক বত্রিশ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সেটা এই দুই পদের লোক রাখলেও পাবেন, না রাখলেও পাবেন। শোনা যাচ্ছে, এমন আইনও নাকি হতে যাচ্ছে যেখানে সরকারী চাকুরীজীবিদের বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অভিযুক্তকে।
এবার দেখি সচিবরা কি কি দাবী তুলেছেন।
১। সচিবরা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও নিজেদের প্রাধিকার সুবিধা চেয়েছেন। অর্থাৎ অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকার সময় গাড়ি, বাড়ি, গৃহকর্মীসহ যেসব সুবিধা তাঁরা পান, পেনশন ভোগের সময়ও সেসব সুবিধা তাঁরা চাচ্ছেন।
২। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়সসীমা বাড়ানো। (বাড়িয়ে ৬২ বছর করা)।
৩। নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান প্রকাশের জন্য প্রতীক বরাদ্দ। এবং
৪। সিনিয়র সচিবের পদ বাড়াতেও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন সচিবরা।
গত ২ জুলাই রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবসভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিনিয়র সচিবরা এসব অনুরোধ জানান।
আমি মনে করি, সচিবদের তোলা প্রতিটা দাবিই খুব যৌক্তিক। কারণ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, আর আমলারা সেই জনগণেরর সেবক। সেবকরা নিজেরা সেবা না পেলে জনগণের সেবা তাঁরা করবেন কিভাবে? সৈন্যকে খালি হাতে যুদ্ধ করতে বললে কি সে পারবে? পারবেনা। তাকে বন্দুক দিতে হবে। তাছাড়া সারাজীবন ওনারা যেসব সুবিধা ভোগ করে এসেছেন, সেগুলো ছাড়া থাকা কি কষ্টকর নয়? মানুষ তো অভ্যাসের দাস। আর জিনিসপত্রের যা দাম! ছেলেমেয়েকে বিদেশে পড়ানো, গিন্নীর শপিং, বাজারখরচ.. এসবের খরচ তো কম নয়। বেতনের অল্প ক'টা টাকায় এতকিছু করা যায়না বলেই তাঁরা বাধ্য হয়ে ঘুষ খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সারাবছর না পড়িয়ে বসে বসে বেতন খান। তাঁদেরকে ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরী করতে দিলে সচিবরা নয় কেন?
শুধু কি সচিবরা বাড়তি টাকা চান? স্কুল কলেজের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা কামান, প্রশ্ন ফাঁস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কনসাল্টেন্সি করেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, ইভিনিং প্রোগ্রাম চালান, প্রশ্ন ফাঁস করেন। ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, পেটে বাচ্চা রেখেই পেট সেলাই করেন, গরীব রোগী টাকা দিতে পারবেনা বলে তার ডেলিভারী করান না, রোগীর অপারেশন ফেলে সেল্ফি তোলেন। ইন্জিনিয়াররা ঘুষ খান, রডের বদলে বাঁশ দেন, উদ্বোধনের আগেই তাদের বানানো সেতু, স্কুল, রাস্তা ভেঙ্গে পড়ে। রাজনীতিবিদরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হন। পুলিশরা খুন, অপহরণ করেন, ঘুষ খান। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে জিনিসপত্রের দাম বাড়ান, মজুত করেন, সিন্ডিকেট চালান। বাড়ীওয়ালারা, মেসমালিকরা চাঁদাবাজি করেন, অযথা ভাড়া বাড়ান,....। কে বাড়তি টাকা চাননা?
আমলারা জনগনের সেবক বলেই তাঁদেরকে প্রভুর মত সেবা করতে হবে। নাহলেই ঝামেলা! যেমন পাবনার জেলা প্রসাশককে তার বাংলোতে গিয়ে চিকিৎসা না দেওয়ায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মঞ্জুরা রহমানকে ওএসডি করা হয়েছে।
যারা সচিবদের এই বাড়তি আবদারকে ন্যায্য মনে করেননা বা দিতে চাননা, তারা মনে করেন, সচিবদেরকে বেশী সুবিধা দিলে তাঁরা আস্কারা পেয়ে যাবেন। আস্কারা জিনিসটা মোটেই ভাল কিছু না। নিন্দুকেরা বলে, আস্কারা দিলে লোকে মাথায় উঠবে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি মহোদয়ের অফিসকক্ষে ভিসি মহোদয়ের উপস্থিতিতে একজন জুনিয়র শিক্ষিকা ভিসি মহোদয়ের চেয়ারের হাতলে বসে থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে একটি গল্প প্রচলিত আছে। এক রাজার খুব প্রিয় একটি পোষা বানর ছিল। রাজা রোজ বানরটিকে রাজসভায় এনে একটি বেতের বারি মেরে বানরটিকে রাজার সিংহাসনের একপাশে বসিয়ে রাখতেন। বিচার শেষে রাজা অন্দরমহলে যাবার সময় বানরটাকে নিয়ে যেতেন। একদিন মন্ত্রী রাজাকে প্রশ্ন করলেন, "বানরটাকে আপনি এত ভালবাসেন। তবু রোজ তাকে মারেন কেন?" রাজা বললেন, "বেশ। আজ থেকে মারবনা। তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে কেন মারি?" এরপর রাজা রোজ বানরটাকে রাজসভায় এনে না মেরে বসিয়ে রাখেন। প্রথমদিন বানর তার জায়গা ছেড়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালো। রাজা কিছুই বললেন না। পরের দিন এক মন্ত্রীর গলার হার ছিঁড়ে দিল। রাজা কিছুই বললেন না। এভাবে সপ্তম দিনে বানর যখন রাজার মাথায় চড়ে বসলো, তখন মন্ত্রী বলল, "বুঝেছি মহারাজ। আপনি বানরকে মারুন।"
আমি কিন্তু সচিবদেরকে মোটেই মারতে বলছিনা। কারণ সবার মত আমার ঘাড়েও একটাই মাথা!!!! বড়ি নাইনসাফি!!!!!!!
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৪