গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত হয় ভারতীয় লেখক চেতন ভগতের সপ্তম উপন্যাস ‘ওয়ান ইন্ডিয়ান গার্ল’। মূলত এক ভারতীয় তরুণীর জীবনকে ঘিরে উপন্যাসের কাহিনী রচিত হলেও এতে এশিয়ান উপমহাদেশের কর্মজীবী নারীদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
রূপা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ২৭২ পৃষ্ঠার এই বইটির কাহিনী আবর্তিত হয় রাধিকা মেহতা নামের এক তরুণীকে ঘিরে। ভারত থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে নিউইয়র্কে ব্যাংকে চাকরির সুযোগ পায় রাধিকা। সেখানেই পরিচয় হয় দেবাশিসের সাথে। বন্ধুত্ব থেকে রূপ নেয় প্রেমে। প্রথম প্রথম সব কিছু ঠিক থাকলেও দুই বছরের মাথায় দেখা দেয় সমস্যা। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করা দেবাশিস যখন দেখে তার ভালোবাসার মানুষটির বেতন এবং বোনাস তার থেকে তিন গুণ বেশী তখন সেটা সহ্য করতে পারে না দেবাশিস। কালক্রমে দেখা যায় আরও সমস্যা। যদিও লোভনীয় চাকরিটা ছাড়তেও এক সময় রাজী হয় রাধিকা, শুধুমাত্র তার ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে রাখার জন্য। কিন্তু কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারে না দেবাশিসকে। পরবর্তীতে দুঃখ কষ্ট ভোলার জন্য বদলি হয়ে হংকং চলে আসে রাধিকা। কাহিনী মোড় নেয় আরেকদিকে।
রাধিকার মত সফল কর্মজীবী নারীর জীবনেও যে সমস্যার অন্ত নেই সেটাই সুন্দর এবং সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। এশিয়ান উপমহাদেশের নারীদের অবস্থা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায় যে, মেয়ে পড়াশোনা করা অবস্থায় তাকে পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়, তার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারও তখন ম্লান হয়ে যায়। আবার কোন নারী যদি তার স্বামী অথবা প্রেমিকের চেয়ে বেশী রোজগার করে তবে তা নাকি ঐ স্বামী অথবা প্রেমিকের জন্য হয়ে যায় মানহানিকর। আবার কোন অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলেও পাত্র পিছিয়ে যায় বিয়ে না করার জন্য। আর কারণ ঐ একটাই, বউয়ের রোজগার কোনক্রমেই তার চেয়ে বেশী হওয়া চলবে না। বিয়ের পরও সমস্যার অন্ত নেই কর্মজীবী নারীদের। বাচ্চা জন্মের পর তাদের দমিয়ে রাখা হয়। শুধু বাচ্চার দেখভালের ছুতো দিয়ে তাদের কাজ করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনই সব থিম নিয়ে ‘ওয়ান ইন্ডিয়ান গার্ল’ বইটি।
অসাধারণ এই বইটি সকল বইপ্রেমীদের পড়াই বাঞ্ছনীয় বোধ করি, আর নারীদের তো অবশ্যই। নারী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবার মত একটি বই এটি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৪৩