ঢাকা থাকলে মোটামুটি মানের সব বাংলা মুভি দেখা হয় হলে বসে। এবারের ঈদের ছুটিতে খুলনা আসার পর ঠিক করলাম ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো দেখতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঈদের দিন বিকালেই শঙ্খ সিনেমা হলে চলে গেলাম। উদ্দেশ্য ‘নবাব’ ছবিটি দেখবো। কিন্তু হলে পৌঁছেই হতাশ হতে হল। হলের সামনে লোকারণ্য অবস্থা। কোন মতেই টিকিট কেটে হলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা টিকিট কাটতে কাটতে হাউজফুল হয়ে যাবে নিশ্চিত। এর আগে ২০১৪ সালের ঈদে খুলনার হলে মুভি দেখতে এসেছিলাম কিন্তু তখন এমন লোকারণ্য ছিল না। যাই হোক, ঈদের পরের দিনও টিকিট পেলাম না। এরপর মাঝে একদিন বাদ দিয়ে একবারে ঈদের চতুর্থ দিন গেলাম, তাও ভর দুপুরের শো দেখতে। ভর দুপুর হলেও তখনও হাউজফুল ছিল হলটা। খুলনার মত শহরে ঈদের চতুর্থ দিনে সিনেমা হল হাউজফুল সেটা এক বিরাট ব্যাপার।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত ‘নবাব’ ছবিটি দেশের ১২৫টি হলে মুক্তি পেয়েছে। যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল আজিজ এবং জয়দেব মুখার্জী। ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শুভশ্রী, রজতাভ দত্ত, অমিত হাসান, অপরাজিতা, খরাজ, মেঘলা প্রমুখ।
ছবির কাহিনীটা আর না বলি। আমি চাই দর্শক হলে গিয়েই দেখুক ছবিটি। ছবিটি মুক্তির আগেই অবশ্য এর কাহিনী নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়েছে যে কাহিনী অন্যান্য কিছু ছবি থেকে কপি করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই ব্যাপারে বলবো যে বলিউড কিন্তু তাদের বেশিরভাগ ছবি হলিউড কিংবা কোরিয়ান মুভি কপি করে বানায় এবং আমার সেগুলো দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। এমন কি খোদ হলিউডের অনেক ছবিও অন্যান্য বিভিন্ন দেশের ছবির অবলম্বনে নির্মিত হয়। সেগুলোও আমরা দেখতে কার্পণ্য করি না। এখন আমার কথা হল আমাদের দেশের ছবি যদি নির্মাণের দিক থেকে ভালো হয় তবে কেন দেখবো না হলে গিয়ে বাংলা ছবি? হোক সেটা দুই চারটা ছবি থেকে কপি করা কিন্তু পরিপূর্ণ বিনোদন তো পাচ্ছি আমরা। আবার যৌথ প্রযোজনা নিয়েও আরেক ক্যাচাল দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে যে যৌথ প্রযোজনার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এখন যারা এই ছবি নিয়ে ক্যাচাল করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, আপনারা নিজেরা কেন মান সম্পন্ন ছবি বানাচ্ছেন না দেশে? তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। দেশের দর্শক আর যৌথ প্রযোজনার ছবি দেখবে না তাহলে। পরিপূর্ণ দেশীয় ছবিই দেখবে। একটু খেয়াল করলে আমরা দেখবো যে যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়িয়েছে তাদের সবার ক্যারিয়ার ডেট এক্সপায়ার হয়ে গিয়েছে অথবা সিনেমায় বেশী সুবিধা করতে পারেনি। নিজেরা সুবিধা না করতে পারেন কিন্তু অন্যদের পেছনে আজাইরা বাঁশ দেওয়াটা কতখানি যুক্তিসংগত?
যাই হোক, আমরা আবার নবাবে ফিরে আসি। অভিনয়ের দিক থেকে সবার পারফর্মেন্স ছিল অসাধারণ। কি কেন্দ্রীয় চরিত্র, কি পার্শ্ব চরিত্র সবার অভিনয় শৈলী চোখে পড়ার মত। তবে সবচেয়ে বেশী নজর কেড়েছে শাকিব খানের রাজীব চৌধুরী ওরফে নবাব চরিত্রটি। ছবিতে তার অভিনয় দেখেই বোঝা যায় যে চরিত্রটির জন্য বেশ পরিশ্রম করেছেন তিনি। তার সংলাপ ডেলিভারি, নাচ, অ্যাকশন সব মিলিয়ে যেন একটি যথাযথ প্যাকেজ। ক্রাইম রিপোর্টারের চরিত্রে শুভশ্রীও ভালো করেছেন। তবে তার চরিত্রের ব্যাপ্তি আরেকটু হলে ভালো হত। মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রে অপরাজিতা এবং সব সময় কমেডি চরিত্রে অভিনয় করা খরাজের ভিলেনের চরিত্রটি ছিল আকাঙ্ক্ষার চেয়েও অনেক বেশী ভালো।
ছবিতে মোট তিনটি গান রয়েছে এবং তিনটি গানেই তিন ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। ‘যাবো নিয়ে’ গানটিতে পাওয়া যাবে সফট মেলোডি, ‘ষোলআনা’ গানে রয়েছে মশলাদার বিট আবার ‘ও ডিজে’ গানে পাওয়া যাবে পরিপূর্ণ বাংলা আইটেম গানের আমেজ। গানের সাথে সাথে ভালো ছিল ছবির আবহ সংগীতও।
ছবির শিল্প নির্দেশনা, ঝকঝকে ক্যামেরার কাজ, পোশাক পরিচ্ছদ, মেকআপ সব কিছু মিলিয়ে যথাযথ মনে হয়েছে। ছবির প্রতি পদে পদে যে টুইস্ট সেটাও অনেক উপভোগ্য। কোথাও কোথাও কাহিনীর প্যাঁচে একটু আধটু বিরক্তি ধরলেও সব মিলিয়ে ‘নবাব’ একটি পয়সা উসুল ছবি। যারা এখনো দেখেননি তারা প্রিয়জনের সাথে দেখে আসতে পারেন ছবিটি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩