৩০ আগস্ট প্রথম আলোতে ‘ঈদ উপহার’ নামে ১৬ পৃষ্ঠার একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ পেয়েছে যেখানে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় কার্টুনিস্ট শাহরিয়ারের জনপ্রিয় চরিত্র ‘বাবু’কে নিয়ে একটি কমিকস প্রকাশিত হয়েছে।
কমিকসের কাহিনী এরকম যে, রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামে বাবু যখন সিগন্যালের অপেক্ষায় ছিল ঠিক তখন গলায় সাপ পেঁচিয়ে এক বেদেনী বাবুর কাছে ৫০০ টাকা দাবী করে বসে। বাবু টাকা দিতে অস্বীকার করায় বেদেনী সাপটি বাবুর কোলে ছেড়ে দেয়। প্রথমে ভয় পেলেও পরে বাবু সাপটি গলা টিপে মেরে লাঠি বানিয়ে রাস্তায় বেদেনীকে প্রহার করতে উদ্যত হয়ে বেদেনীর পিছে দৌড় লাগায়।
আপাত দৃষ্টিতে এটাকে মজার মনে হলেও রূপক ভাবেই কিন্তু এখানে নারী নির্যাতনের ব্যাপারটাকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, শহরে হিজড়া এবং বেদেনীদের পথচারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা নতুন কিছু নয়। তবে বেদেনীরা পথচারীদের কাছ থেকে এইভাবে ৫০০ টাকা চেয়ে বসে এমনটা কখনো দেখিনি। আবার বাক্স বন্দী অথবা হাতে পেঁচানো সাপ পথচারীদের গায়ে ছেড়ে দেবার ঘটনাও কখনো দেখিনি। তবে কমিকসে সবচেয়ে বিরক্তিকর এবং হীন লেগেছে লাঠি নিয়ে বেদেনীকে মারতে রাজপথেই তার পিছে পিছে দৌড়ানো। এখানে কি নারী নির্যাতনকেই প্রতীকী অর্থে প্রকাশ করে সেটাকে উৎসাহিত করা হয়নি?
একজন কার্টুনিস্ট তার কমিকসের মাধ্যমে পাঠককে বিনোদিত করে তোলেন। কিন্তু তাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যেন বিনোদনের নামে সেটা যেন সামাজিক অবক্ষয়ে রূপ না নেয়। অন্যান্য পেশার মানুষের মত একজন কার্টুনিস্টের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও নেহায়েত কম নয়। সেখানে শাহরিয়ারের মত একজন জনপ্রিয় কার্টুনিস্টের কাছে এমন কমিকস আশা করা যায় না। এখানে একজন নারীকে প্রহার করতে উদ্যত হওয়া না দেখিয়েও কমিকসটি অন্যভাবেও প্রকাশ করা যেত।
এবার আসি প্রথম আলোর প্রসঙ্গে। প্রথম আলোর মত এমন জনপ্রিয় একটি পত্রিকা যারা কিনা এসিড দগ্ধদের সহায়তা, বন্যার্তদের সহায়তা কিংবা মেধাবীদের বিভিন্ন সময়ে আর্থিক ভাবে সহায়তা করে থাকে অথবা প্রতি সপ্তাহে ‘নারীমঞ্চ’ নামের পাতায় নারীদের সাফল্য, ঘুরে দাঁড়াবার সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। সেখানে তারা কিভাবে ঈদ উপহারে এমন একটি কমিকস প্রকাশ করে যেখানে নারী নির্যাতনকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৬