ভালো বাংলা ছবি মুক্তি পাবে আর প্রথম দিনের শো দেখবো না এমনটা ঘটেনি গত দুই বছর যাবত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির প্রথম দিনেই দেখে ফেললাম তৌকির আহমেদ পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘হালদা’। ১ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি সারা দেশের ৯৫টি হলে একযোগে মুক্তি দেওয়া হয়। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন তিশা, মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, ফজলুর রহমান বাবু, দিলারা জামান, রুনা খান প্রমুখ।
ছবির কাহিনী স্পয়লার করবো না। হলে গিয়ে দেখতে হবে ছবিটি। তবে কথা দিচ্ছি ছবিটি দেখে মনে হবে পুরোপুরি পয়সা উসুল। চট্টগ্রাম –খাগড়াছড়ি হয়ে বয়ে চলা নদী হালদাকে ঘিরে ছবির কাহিনি। তবে নদীর পাশাপাশি জেলে সম্প্রদয়ের জীবন, উচ্চবিত্তের গরীবের উপর শোষণ, দুর্নীতি সব কিছুই উপস্থাপিত হয়েছে অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসুকে (তিশা) ঘিরে এগিয়েছে ছবির কাহিনী। এখানে পরিচালকের সৃজনশীল চিন্তা ছাপিয়ে গিয়েছে এ বছরের সবগুলো ছবিকে। হাসু চরিত্র হালদা নদী তথা জেলে সম্প্রদায়ের মায়েরই প্রতীকী রূপে প্রকাশ পেয়েছে। ইটের ভাটার বর্জ্যের ফলে নদী দূষণের সাথে হাসুর জীবনের যন্ত্রণাদায়ক বিবাহিত জীবনের সাথে মেলানো হয়েছে।
অভিনয়ের কথা বললে বলতে হবে প্রতিটি চরিত্রে সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। গল্পের সাথে সাথে প্রত্যেকের অভিনয় চরিত্র অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তবে কিছু কিছু ছোট ছোট চরিত্রের অভিনয় কিংবা তাদের উপস্থিতি যথাযথ মনে হয়নি। যেমন হাসুর বিয়ের সময় তার বান্ধবীদের মধ্যে শহুরে ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। আবার হালদা আন্দোলনের সময় উপস্থিত মানুষগুলোর মধ্যে জড়তা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ছবির সংলাপে চট্টগ্রামের ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তবুও সংলাপে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। পরিপূর্ণ চট্টগ্রামের ভাষা কিংবা টান আসেনি কোন অভিনেতার মাঝেই। আবার সংলাপে একটু নোয়াখালীর ভাষারও ব্যবহার লক্ষ্য করা গিয়েছে যেটা সামঞ্জস্যহীন মনে হয়েছে।
ছবির দৃশ্যায়ন ভালো লেগেছে। আবহমান বাংলার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য অসাধারণ ফ্রেমিং এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে কালার কারেকশনে আরেকটু মনযোগী হলে ভালো হত।
ছবিতে চট্টগ্রামের জব্বারের বলি খেলা কিংবা মাইজভাণ্ডারীর মত ঐতিহ্যবাহী ব্যাপারগুলোও দেখানো হয়েছে যেটা ছবিতে অন্যরকম মাত্রা যোগ করেছে।
ছবির প্রতিটি গান শ্রুতিমধুর ছিল। তবে ২/১ টি গান চট্টগ্রামের ভাষায় করা যেত। ছবির আবহ সঙ্গীতও ভালো লেগেছে।
ছবির পোশাক পরিচ্ছদ ও রূপসজ্জা যথাযথ মনে হয়েছে। কোথাও আধিক্য দেখা যায়নি।
পরিশেষে বলতে হয় হালদা নিঃসন্দেহে তৌকির আহমেদের আরেকটি মাস্টারপিস ছবি যেটা তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করেছেন। এ জন্য অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার তিনি। দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যারা ভিন্ন ধারার ছবি পছন্দ করেন তাদের জন্য মাস্ট ওয়াচ ক্যাটাগরির ছবি ‘হালদা’।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১১