সপ্ত স্বর্গ বা সাত বেহেশত
সপ্ত স্বর্গ বা সাত বেহেশত হচ্ছে প্রধান প্রধান ধর্মসমূহে বর্ণিত মৃত্যুপরবর্তী আবাসস্থল যেখানে শুধু পৃথিবীতে সৎকর্মসম্পাদনকারী এবং বিশ্বাসীগণ স্থান পাবেন। ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মে সাত স্বর্গের কথা বলা হয়েছে। ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহে বলা হয় যে, এই সাত স্বর্গের ঠিক উপরেই সৃষ্টিকর্তার সিংহাসন অবস্থিত।
ইসলাম মতে
জান্নাত বা বেহেশত হচ্ছে ইসলামের পরিভাষায় স্বর্গ। মুসলমানগণ বিশ্বাস করে যে মৃত্যুর পরে ইমানদার এবং পরহেজগার ব্যক্তিগণ জান্নাতে অনন্তকাল ধরে বাস করবে।আরবী জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাগান বা উদ্যান।কুরআন শরীফে একাধিকবার সপ্ত স্বর্গ ,সামাওয়াত জান্নাহ, এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সময় সাত বেহেশত বা জান্নাতকে সাত আসমান বলা হয়।
কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের নামসমূহ
• জান্নাতুল ফিরদাউস
• দারুস সালাম
• জান্নাতুল মাওয়া
• দারুল খুলদ
• জান্নাতুল আদন
• জান্নাতুল আখিরাহ
• জান্নাতুন নাঈম
এই জান্নাতগুলোর মধ্যে জান্নাতুল ফিরদাউস হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত।
হিন্দু ধর্ম মতে
হিন্দু ধর্মে স্বর্গ কে স্বর্গলোক বলা হয় যা সাতটি লোক বা তলের সমন্বয়ে গঠিত। পর্যায়ক্রমে এই লোকগুলো হচ্ছেঃ পৃথ্বী লোক বা পৃথিবী, ভুবর্লোক, স্বর্লোক, মহর্লোক, জনলোক, তপোলোক এবং সব থেকে উপরে সত্যলোক, । হিন্দু পুরাণ এবং অথর্ববেদ এ ১৪ টি লোকের কথা বলা হয়েছে। এর সাতটি স্বর্গলোক বাকি সাতটি নরক বা পাতাল। সপ্ত স্বর্গের ঠিক নিচেই সপ্ত নরক অবস্থিত।স্বর্গের রাজধানী হচ্ছে অমরাবতী এবং ঐরাবত স্বর্গের প্রবেশদ্বার পাহারা দিচ্ছে।
ইহুদি ধর্ম মতে
তালমুদ হল ইহুদিদের একটি পবিত্র গ্রন্থ,তবে এতা তৌরাতের মত নয়। এটি কেবল ইহুদিদের দ্বারা মৌখিক আইন হিসেবে পরিচিত। একে সিনাই পর্বতে মুসার মাধ্যেমে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং রোমানরা জয় করার আগ পর্যন্ত যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল। তালমুদ লেখতে নিযুক্ত করা শুরু হয়েছিল যখন তাদের দ্বিতীয় উপাসনাগৃহ ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ তারা ভয় পেয়েছিল যে ইসরায়েলের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অন্তর্ধান করতে পারে।তৌরাতের অর্থ এবং তার লেখা সর্ম্পকে পন্ডিতএবং শিহ্মকদের মধ্যে তালমুদে একটি বিতর্ক সংগ্রহ রয়েছে। এটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
(১)মিশনাহ (পুনরাবৃত্তি) (সি. ২০০ সাধারণ যুগ), সর্বাপেক্ষা প্রাচীন শিহ্মকদের বিতর্ক অন্তর্ভুক্ত করে (দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত)
(২)জেমারা (সম্পূর্ণতা) (সি. ৫০০ সাধারণ যুগ), দ্বিতীয় এবং পঞ্চম শতকের মধ্যে লিখা হয়েছে যা মিশনাহর মূল পাঠসংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ দেয়।
ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ অনুসারে, মহাবিশ্ব সপ্ত স্বর্গ সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদিদের মারকাভাহ এবং হেইচালত সাহিত্যে সপ্ত স্বর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় ইনখ গ্রন্থে এর বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইসলাম মতে আরশ মঞ্জিল
ইসলাম ধর্মমতে আরশ মঞ্জিল হল আল্লাহ সুবহানু তায়ালার সব থেকে বড় সৃষ্টি। আর মুসলমান বিশ্বাস করেন আল্লাহ সুবহানু তায়ালা তার ক্ষমতার নিদর্শন স্বরূপ আরশ মঞ্জিল সৃষ্টি করেছেন। আল কোরআনের ২৫টি স্থানে আরশ মঞ্জিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ২৩ নম্বর সুরা আল-মুমিনুনের ১১৬ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ মহিমান্বিত, মহারাজাধিরাজ, চিরন্তন সত্য; তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই; তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।"
যারা আরশ বহন করেন আর যারা এর চতুর্পাশে অবস্থান করছে তারা সদা প্রভুর প্রশংসা করছে এবং তার প্রতি বিশ্বাস এনেছে...... সুরা আল মুমিন, ৭নং আয়াত ।
আর তুমি দেখতে পাবে যে ফিরিশতারা আরশের চতুর্দিক ঘিরে রয়েছে, তাদের প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করছে, এবং তাদের মধ্যে বিচার,মিমাংসা করা হবে সততার সাথে, আর বলা হবে,সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের মালিক-আল কোরআন, সুরা আজ-জুমার, ৩০ নং সুরা, আয়াত ৭৫
আল কোরআনে আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসি নিয়ে সুরা বাকারায় কুরসি নাজিল হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহর বিখ্যাত নাম আল-হাই, আল-কাইয়ুম এর কথা বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, রসুল (সঃ) বলেছেন, প্রতি নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার পুরষ্কার জান্নাত এবং এটা পাঠ করলে শয়তানের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করা যায়।. হাদিস থেকে জানা যায় আরশ মঞ্জিলের অবস্থান সর্বোচ্চ বেহেশত জান্নাতুল ফিরদাউসের উপরে যেখানে রোজ হাশরের বিচারের পর আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সান্নিধ্যে অবস্থান করবেন।
খ্রিস্টান ধর্ম মতে সিংহাসন কয়েক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে
তুন বাইবেল বা নিউ টেস্টামেন্টে থ্রোন অব গডকে কয়েক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। দাউদের সিংহাসন, থ্রোন অব গ্লোরি, থ্রোন অফ গ্রেস এবং আরো অনেক । ইহুদি ধর্মে বর্ণিত স্বর্গকেও নতুন বাইবেলে গডের সিংহাসন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্ম মতে
হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব মতে ভগবান বিষ্ণুর সিংহাসন হচ্ছে শেষ বা শেষাঙ্গ। শেষকে অনেক সময় অনন্ত শেষ বা আদি শেষ নামেও ডাকা হয়। সাধারনত শেষ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় এটি বিশাল দুগ্ধসাগরে ভাসমান একটি সিংহাসন যেখানে বিষ্ণু শুয়ে থাকেন। তিনি কখনো পাঁচ বা সাত মাথা আবার কখনো হাজার মাথা নিয়ে আবির্ভূত হন ।
সূত্র: Click This Link
http://www.sacred-texts.com/jud/zdm/zdm027.htm
আল-কোরআন, সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১১৬
আল কোরআন, সুরা আল-মুমিন, ৪০ নং সুরা, আয়াত ১৭।
আল কোরআন, সুরা আজ-জুমার, ৩০ নং সুরা, আয়াত ৭৫।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা উইকি পিডিয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯