৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস ; যা বাঙালি জাতির জীবনে কলঙ্কময় দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ঠিক এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যা কালো অধ্যায়ে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে সারাজীবন। কারাগারের মতো কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গায় এ ধরনের নারকীয় হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সারাজীবন নজিরবিহীন হয়ে থাকবে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।অন্যদিকে তাজউদ্দীন আহমদ একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন।আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানও একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি ও ত্রাণ এবং পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।মুহাম্মদ মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন ।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ।
তিনি ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশকে পাক শত্রু মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি বাঙালি জাতিসত্বাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পূনরূত্থানের সুযোগ করে দিয়েছিল।
তাজউদ্দীন আহমদ
তাজউদ্দীন আহমদ তিনি ছিলেন বাংলদর প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুকতিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন। একজন সৎ এবং মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যা মুজিবনগর সরকার নামে অধিক পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলী
মোঃ মনসুর আলী হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্যাপ্টেনও ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম একজন নেতা। তিনিও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ এবং দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিতি ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ধারাবাহিকতায় মাত্র আড়াই মাসের মাথায় এই জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছিল, যা বাঙ্গালীর ইতিহাসে সব থেকে দুঃখজনক এবং অত্যন্ত লজ্জ্বাজনক এক ইতিহাস
হয়ে থাকবে সারাজীবন।