ব্রিটিশ শাসিত বাংলা ১৯৪৭ সালে তথাকথিত স্বাধিনতা লাভ করলেও বিভাজিত বাংলার দুই অংশের শাসন কৃতিত্ব লাভ করে ভারত এবং পাকিস্তান । পাকিস্তান অধিনস্ত পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তান এর জনমানুষের উপর পাকিস্তানিদের জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীরা আন্দোলন শুরু করে এবং যা পরবর্তীতে স্বাধিনতা আন্দোলনে রূপ নেয় । পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিনতার ঘোষণা যিনি দিয়েছিলেন তাকে বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষক বলা হয়ে থাকে । বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষক কে এই নিয়ে বিস্তর রাজনৈতিক মতভেধ থাকলেও কিছুদিন আগে বাংলাদেশের স্বাধিনতা বিরোধী অ্যামেরিকা ১৯৭১ এর তৎকালীন রিচার্ড নিক্সনের শাসনামলের সকল কূটনৈতিক গোপন নথি প্রকাশ করলে দেখা যায় এতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
মার্কিন গোপন নথিতে বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা
আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের South Asia Crisis, 1971 এই শিরোনামে র সকল গোপন নথি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিষয়ক । ২ মার্চ থেকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সকল রিপোর্ট এবং মিটিং এর বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই সংকলনে । যা বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অনেক গুরত্বপুরন ।
৬ মার্চ ১৯৭১
১৯৭১ সালের মার্চ ৬ এ হোয়াইট হাউজ সিচুয়েশন রুমে একটি হাই প্রোফাইল মিটিং হয় সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রি হেনারি কিসিঞ্জার , সি আই এ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর Minutes of Senior Review Group Meeting Washington, March 6 থেকে কে কিছু লাইন তুলে ধরা হোল । এই সভায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের এলক্সিস জনসন বলেন ।
" আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ বিকেলে ব্রিটিশ সঙ্গে কথা বলা হবে। মুজিব ১৬২ আসন থেকে ১৬০ টি গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন , এটি তার অনুপম রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আছে। তিনি মার্কিন দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো প্রায় মার্কিনদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ নয় । আমরা হয়ত এই দুই দেশকে এক সাথে রাখতে তাদের সাথে সমঝোতার ব্যাবস্থা করতে পাড়ি , কিন্তু তা হবার সম্ভবনা খুবই কম । এখন শুধু প্রশ্ন তারা কিভাবে বিভক্ত হবে এবং টা কত বড় আকারে বিভক্ত হবে "
৬ মার্চের মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর বাসভবন হোয়াইট হাঊসে হয়ে যাওয়া এই টপ সিক্রেট মিটিং এ পাকিস্তানের তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় । রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে মার্কিন গোয়েন্দাদের নিশ্চিত হন পাকিস্তান ভাগ হবেই , কিন্তু কিভাবে ভাগ হবে বা এর কোন রাজনৈতিক সমঝোতা আমেরিকা করতে পাড়ে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয় । সাত মার্চের শেখ মুজিবুর এর ভাষণের বিষয়বস্তু কি হবে তা নিয়ে আমেরিকানরা অনেকটাই জানতেন ।অর্থাৎ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তখনই ধারনা করে ৭ মার্চ ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিনতার ঘোষণা দিতে পাড়ে । এবং এই সাত মার্চের ঘোষণা আসলে ইয়াহিয়া কি ব্যাবস্থা নিতে পাড়ে তার ব্যাখ্যা করা হয় এই মিটিং এ ।
" যদি মুজিব আমাদের কাছে আসে এবং একটি সম্পুরন স্বাধিনতার ঘোষণার কথা বলে এবং আমাদের মতামত জানতে চায় তখন আমরা (আমেরিকা ) তাকে কি বলব সেটা অনেক বড় ব্যাপার । আর ইয়াহিয়া যদি তার মতে থেকে এই স্বাধিনতা ঘোষণার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে তখন আমরা ( আমেরিকা ) কি করবে তাও চিন্তা করতে হবে । এখন ইয়াহিয়ার ২০০০০ হাজার কমব্যাট ট্রুপ্স রেডি আছে এবং তার বিপক্ষে রিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন জনতা "
১৩ মার্চ ১৯৭১ – হোয়াইট হাউজ
৬ মার্চের এই মিটিং এর পড় ১৩ই মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনারি কিসিঞ্জার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সন কে পূর্ব পাকিস্তান ( বাংলাদেশের) ব্যাপারে রিপোর্ট প্রদান করেন Memorandum From the Presidentʼs Assistant for National Security Affairs (Kissinger) to President Nixon1তাতে লেখা হয়
" দেখা যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার পূর্ব পরিকল্পিত স্বাধিনতার ঘোষণার থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছেন । ৭ মার্চের ভাষণের পূর্ণ কপি তে দেখা যায় অনেক কঠিন কথা বলেছেন তিন , এবং এটা মনে হচ্ছে তার এই পিছিয়ে পড়া তার একটি স্ট্রেটেজিক কৌশল হতে পাড়ে । উনি ব্যাপারটা পরিস্কার করেছেন তারা স্বাধিনতার খুব কাছা কাছি “
১৩ মার্চের মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রি এবং প্রেসিডেন্ট এর মিটিং এর প্রধান বিশয়বস্তু ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ মার্চের ভাষণ । এই হাই প্রোফাইল সিক্রেট মিটিং এ তৎকালীন সময়ের গুরত্বপুরন রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের ব্যাপার গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে । ৬ মার্চে দেওয়া ভূট্টোর দেওয়া ভাষণে স্বাধিনতার বিপক্ষে অনেক কঠিন ব্যাবাস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলে হয়ত শেখ মুজিব সম্পুরন স্বাধিনতার ঘোষণা থেকে পিছিয়ে আসেন বলে মোমেরান্ডাম এ বলা হয় ।
" আমাদের ইসলামাবাদ এমব্যাসি বিশ্বাস করে রহমানের উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানি প্রভাব থেকে রাজনৈতিক স্বধিনতা চান । এটা এখন মনে হচ্ছে এক পাকিস্তান থেকেও পূর্ব পাকিস্তানের সায়ত্বস্বাসন সম্ভব । কিন্তু তা হবার সম্ভবনা খুবই কম , যদি তা না হয় রহমান বিশ্বাস করেন যে রাজনৈতিক স্বাধিনতা তিনি চাইছেন তা কেবল পূর্ণ স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পাড়ে । গত রবিবারের ভাষণে এটাই স্পষ্ট যে উনি সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে ধিরে দিরে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাইছেন যা হয়ত আনফিসিয়াল স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পাড়ে “
১৩ মার্চের এই প্রতিবেদনের পড় ২৬ শে মার্চ থেকে প্রতিনিয়ত একদিন দুইদিন পড় পরই হোয়াইট হাউজে রিপোর্ট এবং মিটিং হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের বিষয় নিয়ে । মার্চের ২৯ তারিখে প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সনের সাথে কিসিঞ্জারের আলাপে নিক্সনের ইয়াহিয়ার প্রতি সমর্থন এর কথা প্রকাশ্যে উঠে আসে । ২৬ মার্চের ইমারজেন্সি মিটিং Minutes of Washington Special Actions Group Meeting[৫] এ বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিনতা ঘোষণা করা হয়েছে ।
২৬ মার্চ ওয়াশিংটনে স্পেশাল একশন গ্রূপ মিটিং এ উপস্থিত চিলেন হেনারি কিসিঞ্জার , স্টেট ডিপার্টমেন্ট , ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ও সি আই এর প্রতিনিধিবিন্দ । যারা ২৫ ও ২৬ মার্চ ঘোটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমারজেন্সি মিটিং করছিলেন । সেখানে সি আই এর মিস্টার রিচারড হেলমস বলেন
" মার্চের ২৪ তারিখের আলোচনায় একটি সমোঝোতা আসলেও সেই চুক্তি ভেঙ্গে যায় কারন মুজিবুর রহমান সম্পুরন সামরিক শাসন প্রত্যাহার চাইছিলেন।একটি ক্ষিন ও গোপনীয় রেডিও ব্রডকাস্টে শেখ মুজিবুর রহামান বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা করেন । সেখানে প্রায় ২০০০০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য রয়েছে । বিপক্ষে রয়েছে ৫০০০ পূর্ব পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৩০০০ আধা সামরিক বাহিনী কিন্তু তারা কোন পক্ষে থাকবে তা নিশ্চিত নয় "
তথ্য পিডিয়া এবং Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৯