somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোড় মন্দির বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তাগাছার মহারানী বিমলা দেবী স্মৃতি বহন করছে এই জোড় শিব ও কালী মন্দির। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার মুক্তাগাছা শহরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের সামনে জমিদার বাড়িতে মন্দিরজোড়া অবস্থিত। মুক্তাগাছা উপজেলা থেকে মন্দিরজোড়ার দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার।


ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মহারানী বিমলা দেবী ১৮২০ সালে এই জোড় শিব এবং কালী মন্দির স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মন্দির দুটিতে ব্যাপক আকরে ভাংচুর চালানো হয়। আর সেজন্য মূল্যবান পাথরের তৈরি
বিগ্রহ ধ্বংস হয়। তাছাড়াও মন্দিরের মূল্যবান মালামাল লুন্ঠন করা হয়।


মন্দির দুটি স্বর্ণকুন্ডশোভিত এবং কারুকার্যমন্ডিত। শিব মন্দিরের ভিতরে রয়েছে বাবা বিশ্বনাথের মূর্তি এবং কালী মন্দিরের রয়েছে মা কালীর মূর্তি। মন্দির দুটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। পাশেই রয়েছে বিশাল দিঘী।



রাজবাড়ির ঠিক একেবারে মাঝখানে শ্বেতপাথরের সয়ংক্রিয় ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ। পাশে নান্দনিক কারম্নকার্য খচিত রাজরাজেশ্বরী মন্দির। তার পেছনে রাজ কোষাগার, টিন এবং কাঠের সুরম্য দ্বিতল রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদ লাগোয়া রাজমাতার অন্দরমহল। রাজরক্ষী এবং প্রহরীদের আসত্মানা। রাজবাড়ির সম্মুখভাগের বিশাল লোহার ফটক পেরম্নতেই সু-উচ্চ করিডর। তার একপাশে রাজদরবার ও দ্বিতল কাছারিঘর। আরেক পাশে লাইব্রেরী। করিডরের দু'পাশে ছিল হাতির ছয়টি মাথার উপর শিকার করা বাঘের নমুনা। রঙ্গমঞ্চ আর এই করিডরের মাঝখানে ছিল লক্ষ্মীপুজো দুর্গাপুজোর ঘর। এসবের অনেক কিছুই এখন কিংবদনত্মি বা কালের সাক্ষী হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও মুক্তাগাছার ষোল হিস্যার জমিদার মহারাজ সূর্যকানত্ম আচার্য চৌধুরীর রাজবাড়িটিতে এখনো দেখার আছে অনেক কিছু।
রাজবাড়ি লাগোয়া বিশাল সব পুকুর, মন্দির এবং যুগল মন্দিরসহ সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর এই বাড়িটি ঘুরেফিরে দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।


ময়মনসিংহ শহর থেকে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১৬ কিমি। এই মুক্তাগাছায় ছিলেন ষোল হিস্যার জমিদার। ষোলজন জমিদার মুক্তাগাছা অঞ্চল শাসন করতেন। মহারাজ সূর্যকানত্ম আচার্য চৌধুরী ছিলেন অন্যতম জমিদার। তারই দত্তক পুত্র মহারাজ শশীকানত্ম আচার্য চৌধুরী।


মুক্তাগাছার দর্শনীয় স্থানসমূহের এই রাজপরিবারের বাড়িটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রায় এক শ' একর জমির উপর রাজপরিবারের তিনটি বাড়ির অবস্থান। এক নম্বর বাড়িটি ছিল মহারাজ সূর্যকানত্মের। সম্মুখভাগের একতলা ভবনটি বেশ উঁচু ও উপরিভাগে নানা কারম্নকার্য খচিত রয়েছে। লোহার পাত ও কাঠের পাটাতনের ওপর এর ছাদ নির্মিত। এর চারপাশে ব্যবহৃত লোহার পাতেও রয়েছে নানা নকশা খচিত। পবশ চওড়া করিডর। হাতি অনায়াশে এই ভবনের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারত। এই ভবনের একপাশে ছিল রাজদরবার আরেক পাশে লাইব্রেরী। রাজদরবারের পেছনে দ্বিতল ভবনে ছিল কাছারি। লাইব্রেরীর পেছনের একতলা ভবনে ছিল মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে শ্বেতপাথর ও কষ্টিপাথরের নানা মূর্তিসহ জমিদারদের ব্যবহৃত ঢাল তলোয়ার ও নানা সামগ্রী ছিল। মিউজিয়াম ও কাছারি লাগোয়া ছিল চমৎকার ভেন্টিলেশনের লক্ষ্মীপুজো ও দুর্গাপুজোর দৃষ্টিনন্দন ঘর। লক্ষ্মীপুজো ঘরের মূর্তি রাখার আসনটি মোড়ানো ছিল শামুক আর ঝিনুকসহ মূল্যবান পাথর দিয়ে। তেমনি দুগাপুজোর ঘরটিও ছিল চমৎকার।


তখন সেসবের পেছনে রাজবাড়ির ঠিক যেন মাঝখানে ছিল সয়ংক্রিয় ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ। এটি শ্বেতপাথরে নির্মিত ছিল। পরে এটি ময়মনসিংহ শহরের টাউনহলে স্থাপন করা হয়েছিল। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির এই রঙ্গমঞ্চের পাশেই ছিল রাজেশ্বরী মন্দির। তার মেঝে শ্বেতপাথরে মোড়ানো। দরজায় জোড়া সিংহ এবং জোড়া ময়ূরসহ সিমেন্টের ওপর নানা কারম্নকার্যখচিত রয়েছে। রঙ্গমঞ্চের পেছনে আছে গোপন রাজকোষের সুরক্ষিত লোহার পাঁচ কুঠুরি। রাজ পরিবারের সোনাদানা, হীরা মানিক মুক্তাসহ নগদ অর্থকড়ি রাখা হতো এই সুরক্ষিত কুঠুরিতে। তার পেছনে রয়েছে টিন কাঠের দ্বিতল সুরম্য রাজপ্রাসাদ, মহারাজ শশীকানত্মের শোবার ঘর। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর এই ঘরের নিচতলায় চারপাশে করিডর দিয়ে ঘেরা চারটি পৃথক কক্ষ। এসব কক্ষের চারপাশ কাঁচ দিয়ে ঘেরা ছিল। তবে বাথরম্নম লাগোয়া উপরের চারটি কক্ষ ছিল লোহার পাত দিয়ে ঘেরাও করা।


শশীকানত্মের শোবার ঘরের এক কোনায় ছিল রাজমাতার ঘর। এটিও টিন ও কাঠের দ্বিতল। পুরো বাড়ির পেছনে রাজরক্ষী ও প্রহরীদের থাকার ব্যবস্থা। এর পেছনে গোপন সুরঙ্গ। জনশ্রম্নতি রয়েছে, এই সুরঙ্গপথে মুক্তাগাছা রাজবাড়ির সঙ্গে ময়মনসিংহ শহরের শশীলজের যোগাযোগ ছিল। চারপাশে দেয়াল দেয়া ঘেরা বাড়ির পেছনে বিশাল পুকুর। মূলত এটিই ছিল মুক্তাগাছায় শশীকানত্মের বসতবাড়ি। বর্তমানে এই রাজবাড়িটি জাতীয় জাদুঘরের অধীনে রয়েছে। জাদুঘরের অধীনে থাকা বাড়িটি দেখভাল করতে দু'জন কর্মচারীও রয়েছে। কিন্তু তাদের বেতন মিলছে না গত দু'বছর ধরে। বাড়ির মালিকানা নিয়ে চলছে আইনী লড়াই। এসব কারণে জাদুঘরও বাড়িটির কোন সংস্কার করতে পারছে না। ফলে সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর এই বাড়িটি এখন বিপন্নের পথে।

সূত্র : দৈনিক জনকন্ঠ ২০১০ সাল ৩রা ফেব্রুয়ারী তারিখে প্রকাশ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×