somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাক বাহিনী ও রাজাকাররা কিভাবে মানুষ মেরেছে আসুন সেটাই জানি-১

২২ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধে কত মানুস মারা গেছে তা নিয়ে অহেতুক জটিলতা এখনও তৈরি করা হচ্ছে। নানা জরিপের কথা বলা হচ্ছে। যারা এসব নিয়ে কথা বলেন তাদের বলছি, আপনারা সেই সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন যাদের ঘর-বাড়ি পুড়েছে, যারা হারিয়েছেন অসংখ্য স্বজন। এক একটি পরিবারের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান জানলেই বুঝা যায় কি ভায়াবহ পরিণতি দেখা দিয়েছিল তাদের জন্য।

এরকম একটি সাক্ষাৎকার এখানে আসুন আমরা পড়ি। এর সূত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ও প্রোফাইল অব বেঙ্গল।


নাম : রেবা রাণী রায়

পিতা : রমেশচন্দ্র মিস্ত্রী (১৯৭১ সালে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত)

গ্রাম : বেত্‌ড়া, ডাক : বেত্‌ড়া, ইউনিয়ন : নওগ্রাম

থানা : ঝালকাঠি, জেলা : ঝালকাঠি (১৯৭১ সালে বরিশাল জেলার অন্তর্গত মহকুমা)

শিক্ষাগত যোগ্যতা : বি. এসসি.

১৯৭১ সালে বয়স : ১৯/২০

১৯৭১ সালে পেশা : ছাত্রী

বর্তমান পেশা : চাকরি

প্র: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ সম্পর্কে আপনি কি শুনেছিলেন বা কখন কিভাবে সে খবর শুনেছিলেন ? তখন আপনি কি করলেন ?

উ: পাকিস্তানিরা যখন হামলা করে তখন বাগেরহাট পি.সি. কলেজে আমি অধ্যয়নরত ছিলাম। আমি কলেজের গার্লস হোস্টেলে থাকতাম। সেখানে বসেই শুনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়ে এবং সাধারণ লোকজন নাকি দলে দলে গ্রামের দিকে চলে আসছে। তাদের কারো কারো মুখেই পাকিস্তানি হামলার খবর শুনেছি। এই সব খবর তো তখন বাতাসে বিদ্যুৎবেগে ছড়াই যাইতো। ঐ হামলার পরই আমাদের এখানে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। তখন আমি আর বাগেরহাটে থাকা নিরাপদ মনে করি নাই এবং এটা আমার ধারণা ছিলো যে, এটা সহজে মিটবে না; ঘটনা আরো অনেক দূরে যাবে। আমরা তখন বাগেরহাট থেকে নিজ গ্রামে চলে আসাই নিরাপদ মনে করলাম। আমরা রওয়ানা দিলাম বাগেরহাট থেকে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাগেরহাট থেকে কখনো ভ্যানে, কখনো রিঙায়, আবার কখনো পায়ে হেঁটে আমার কয়েকজন সাথীকে সঙ্গে নিয়ে হুলারহাট পৌঁছলাম। আসলে পিরোজপুর হয়ে হুলারহাট পৌঁছলাম। বাস তখন চলছিলো না। এপ্রিল মাসের সাত-আট বা নয় তারিখের দিকে হবে সেটা। তারপর হুলারহাট থেকে উল্টা স্বরূপকাঠির দিকে একটা ট্রলারে চেপে বসলাম। সেখান থেকে পরের দিন আমার এক আত্মীয় ছিলো সোহাগদলে, সেখানে এক রাত্র থেকে পর দিন ওখান থেকে হেঁটে আমাদের গ্রামের বাড়ি বেত্‌ড়াতে পৌঁছাই।

প্র: ১৯৭১ সালে আপনি আক্রান্ত হয়েছিলেন কি ?

উ: ১৯৭১ সালে আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম আমাদের বাড়ির কাছাকাছি হাট, বাওকাঠি হাটে। সময়টা সম্ভবত এপ্রিলের তৃতীয় কি চতুর্থ সপ্তাহে হবে। বাওকাঠি হাট বৃহস্পতি এবং রবিবারে বসে, সপ্তাহে দুই দিন। কোনো এক হাটবারে মিলিটারি যায় ওখানে। মিলিটারিরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাটের বেশ কিছু লোককে গুলি করে মেরে ফেলে। কাছাকাছি গ্রামেরও কিছু লোক মারা যায়। পরবর্তীতে মিলিটারি আতঙ্ক গ্রামে ছড়াইয়া পড়ে ভীষণ ভাবে। ওখান থেকে মাত্র মাইল খানেক দূরে আমাদের বাড়ি। আমরা পরের দিন ভোর রাতেই কিছু রান্না করা খাবার নিয়ে শাখা গ্রামের পানিখেত নামক জায়গায় আশ্রয় নিই। সে দিনই সন্ধ্যায় আবার বাড়ি ফিরে আসি। সেদিন বাড়ি ফিরে শুনতে পেলাম যে, গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি জ্বালাইয়া দিছে এবং অনেক লোকজন মারা গেছে। পরের দিন আমরা আবার শেষ রাত্রে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে বের হয়ে যাই। এবার আমরা জগদীশপুর পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেই। সেখানে পাঁচ সাত দিন থাকার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আমাদের গ্রামেরই বেশ বড় পরিবার মহীন্দ্রলাল বারৈ, তার বাড়ি পোড়াই দেয়। তিনি ছিলেন খুব ধনী ব্যক্তি। ওনার বাড়ি এবং আরও অনেকের বাড়ি পোড়ায় দেয়। আবার অনেক লোককে, আমার আজকে সবার নাম মনে নাই তাদেরকে, মেরে ফেলছিলো।
এরপর আমরা আর ওখানে মানে নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করলাম না। তখন আমরা শতদশকাঠির আরো অনেকটা গভীর এলাকায় গিয়া টিন দিয়া নৌকার ছই-এর মতো একটা মাচা তৈরি কইরা সেখানে থাকতে লাগলাম। ঐখানে শুধু আমরা না, হাজার হাজার লোক ঐ জায়গায় থাকতে শুরু করলো। ঐ এলাকার মুক্তিযোদ্ধারাও ওখানে আশ্রয় নিল। আমরা এভাবেই দিন কাটাতে থাকলাম। পরবর্তীতে খবর আসলো যে, এই পেয়ারা বাগান কাটা হবে। কিন্তু আমার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। কারণ মাইলের পর মাইল পেয়ারা বাগান কাটা কি সহজ কাজ ! আর পেয়ারা বাগান মানে তো একটা খাল। এটাকে গ্রামের ভাষায় বলে কান্দি, উঁচু অংশটারে। নিচটারে বলে পাইকা। সেই পাইকা ভর্তি জল। তখন তো জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস আইসা গেছে। সব তো জলে ভর্তি। এমন সময় মিলিটারিরা যে আইসা গাছ কাটবে এইটা আমার ধারণায় ছিলো না। আমি বললাম যে, মিলিটারিরা কেমনভাবে এতো গাছ কাটবে পানির মধ্যে? আশংকা সত্ত্বেও ঐ জায়গাতেই থাকতে লাগলাম। রান্না, খাওয়া সবকিছুই ঐ জায়গায়। মোটামুটি মূল্যবান জিনিসপত্তর বাড়ি থেকে নিয়া ঐ জায়গায় আমরা জমা করছিলাম নিরাপদ ভেবে। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২রা আষাঢ় একটা খবর আসলো যে পেয়ারা বাগান কালকে কাটা হবে। ভাবলাম পেয়ারা বাগান কাটা হলে আমাদের আর কোথাও যাওয়ার পথ থাকবে না।
পরের দিন সকাল দশটা কি এগারোটা বাজে, এই সময় মনে হইলো যে, হাজার হাজার লোক পেয়ারা বাগানের চারদিকটা ঘিরে ফেলছে। তখন তাদের শ্লোগান ছিলো ‘নারায়ে তকবীর আল্লাহু আকবর,’ ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। সমস্ত পেয়ারা বাগান প্রকম্পিত হইতেছিলো তাদের সেই শ্লোগানে। পরে লোক মুখে শুনছি যে, ত্রিশ চল্লিশ হাজার লোক আসছে পেয়ারা বাগান কাটতে। এরমধ্যে আমাদের এক বোন এবং ভগ্নীপতি আমাদের ওখানে আসে। আইসা আমার নাম ধরে ডেকে বলে যে, ‘রেবা, তুই এখান থেকে পালা, চল শিগগির, পালা, আমার বাবা তখন ওখানে ছিলেন। আমি বাবারে বলি যে, বাবা আপনি যান। আমার সেই বোন এবং ভগ্নীপতি একটা নৌকা নিয়ে আসছিলো। ওরা নৌকায় আমারে খুব টানাটানি শুরু করলো যে, তুই শিগগির আয়। তখন আমি বড়। কাজেই আমায় নিয়ে বেশ চিন্তা। আর এদিকে আমার চিন্তা বাবারে নিয়া। আমি বললাম, বাবা তুমি যাও, তুমি যাও। এই দুই জনের ঠেলাঠেলি যখন চলছেজ্জ তখন ঐ শব্দ ক্রমশ কাছে আসতে লাগলো। শব্দ, লোকজনের কোলাহল এতো জোরে হইতেছিলো যে মনে হইছে আমাদের মৃত্যু খুবই কাছাকাছি। মৃত্যু ভয়ে তখন কে যে কোথায় গেলাম তা বলা মুস্কিল। আমি লাফ দিয়ে নৌকায় পড়ছিজ্জ এইটা মনে আছে। কিন্তু কতদূর যাওয়ার পরে নৌকাটা যেন আর চলছিলো না। পেয়ারা বাগানের জল এপাশে আর ওপাশে ধাক্কা দিচ্ছিলো। ওদিকে ঐ যমদূতেরা মানে যারা পেয়ারা বাগান আক্রমণ করছেজ্জ তারা যেন খুব কাছে আসছে মনে হইলো। তখন নৌকা থেকে আমরা সবাই লাফ দিয়ে পড়লাম। নৌকাটা কোথায় গেলো তার কোনো খবর নাই। আমি দৌড়াইতে দৌড়াইতে কোন্‌দিকে যে গেলাম তাও ঠিক মনে নাই। অনেক দূরেই গেছি। কিন্তু এর মধ্যে মনে হইলো যে, আরো কাছাকাছি আইসা গেছে শত্রুরা। বোন-ভগ্নীপতির খবর নাই। আমার উপস্থিত বুদ্ধিতে আমি তখন এই বাগানের ভিতরে যে খালগুলোজ্জ তাতে লম্বা লম্বা কচুরিপানাতে একদম ঠাসা ছিলো, আমি খালের গা বাইয়া নিচে নামলাম। নিচে নাইমা ডুব দিয়া ঐখান থেকে পনের বিশ হাত দূরে গিয়া কচুরিপানা একটু সরাইয়া নাক বের করিয়া ডুব দিয়া থাকলাম। ইতমধ্যে ঐসব লোক আইসা গেছে সমস্ত বাগানে।
আমি কিছুটা সময় থাকার পরেই টের পাইলাম যে, পেয়ারা ডালে পা দিয়া তারা খুব নাড়ছে। পা দিয়া তীরের দিকে ধাক্কা দিছে আর বলে পাইছি, পাইছি, পাইছি-এইতো আছে, এইতো আছে। কিন্তু আমি সচেতন ছিলাম যে, যতক্ষণ তারা আমারে না জল থেকে টেনে তুলবে ততক্ষণ আমি উঠবো না। আমার মোটেই নড়ন চড়ন নাই। এইভাবেই আছি। কিছুক্ষণ পরে গলার ভিতরে পচা জল আর ময়লা জমে গেলো। টের পাইছিলাম যে, শামুক আমার পা চাটতে চাটতে দেহের উপরে উঠছে। জোঁকেও ধরছে। শামুকে আমার পা চাটতে চাটতে যে ময়লা তুলছিলো তাতে মনে হলো যে, পা টা আমার বুঝি শেষ হয়ে যাবে। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম। শামুকে চাটা কেমন যন্ত্রণা সেটা অনেকেই বোধহয় জানেন না। অসহ্য যন্ত্রণা। আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। এ দিকে দফায় দফায় লোক আসছে, মাথার উপরে, কচুরির উপরে বোধকরি লেজা টেজা বা লম্বা লাঠি দিয়া পিটাইতেছিলো। এইটা একটা তাদের চালাকি ছিলো। আমি আর নড়িচড়ি নাই। প্রচণ্ড হাঁচি আসা সত্ত্বেও হাঁচি দিতেছিলাম না। কারণ হাঁচি দিলেই তো ওরা টের পেয়ে যাবে আমি কোথায়। কিন্তু নাকের ভিতরে জল ছিলো। অতো পচা জল নাকের ভিতর, গলার ভিতরজ্জ সে এক করুণ দশা। এরপরে যখন বেলা পাঁচটা বাজে বোধহয়, ঘড়ি টড়ি তো ছিলো না; পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা বাজে মনে হয়-তখন আর কোনো শব্দ টের পাইলাম না। আমি তখন আস্তে আস্তে কচুরির ভিতর থেকে বার হয়ে এপারে এসে কাদার মধ্যে একটু হেলান দিয়া দাঁড়াইলাম। তখন দেখি যে, দুই একটা লোক যারা মৃত্যু ভয়ে পলাইছিলো, তারা আসছে। তাদের কাছে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমরা যেখানে মাচা করেছিলাম সেই মাচার স্থান এবং লোকেশন সম্বন্ধে। ওরা আমারে চিনলো কেউ কেউ। বললো, সোজা যাও। আমি খাল বিল কাদার ভিতর দিয়া সেই এলাকায় আসছি। কিন্তু আমার মনে হইতেছিলো কি একটা হারাইছি, কি একটা হারাইছি। আমাদের সেই বাসার কাছে আইসা দেখি যে, সব তছনছ, স্থানীয় লোকজনের মুখে এই রকম শুনলাম যে, এইটা মুক্তিযোদ্ধাদের বাসাজ্জ এই কইয়া সব মালপত্র নিয়া গেছে। আর যা যা না নিতে পারছে, সেইগুলা ভাইঙাচুইরা তছনছ করিয়া রাইখা গেছে। আমার সেদিকে অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নাই। আমি শুধু ভাবছিলাম যে, আমরা সবাই জীবিত আছি কিনা। আমার ভাই তখন ক্লাস-টু-এর ছাত্র। হয়তো ছয় সাত বছর বয়স। ওরে আমি প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, বাবা কোথায়? ও আমার কথা শুনেই কেঁদে ফেললো। বললো যে, দিদি, বাবারে ধরে নিয়ে গেছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে নিয়ে গেছে? তখন সে বললো যে, বাবা আমার মতো কচুরির ভিতর পালাইছিলো না। একটা বাগানের ভিতর নলখেত ছিলো, সেই নলখেতের ভিতরে বাবা ছিলো। আমি আমার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম বাবাকে সেখান থেকে কিভাবে ধরিয়া নিলো। ভাই বলছে, তাঁর কয়েকজন ছাত্রই তাঁকে ধরছে। আমার ভাই নাকি কথোপকথনটা শুনছে কাছ থেকেই, ওরা হয়তো খেয়াল করে নাই। বাবা নাকি বলছে যে, তোদের আমি কোলেপিঠে করে মানুষ করছি; তোরা এখন আমাকে ধইরা নিবি! আমার কাছে টাকা আছে, স্বর্ণ অলংকার আছে, তোরা এইগুলি নিয়া নে। তখন তারা বলে যে, শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা যখন মানুষ করছো তখন করছো, এখন আর কি। তোর টাকা পয়সা আমরা চাই না। এই বইলা তারা আমার বাবাকে একটা গামছা দিয়া পিঠে হাত নিয়া বাইন্দা তাকে নিয়া চইলা গেলো।

প্র: আপনি বলছিলেন যে, ওরা আপনার বাবার ছাত্র, ওদের নামগুলো কি আপনার মনে পড়ছে ?

উ: রুহুল আমীন কইরা এক ছাত্র। অনেক দিন আগের কথা তো আমি অনেক নাম এখন ভুলে গেছি। যাহোক, আমি তো তখন কান্নায় একেবারে ভেঙে পড়েছি। আমার ফ্যামিলির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার বাবা। বাবা আমার জীবনের আদর্শও। মা তখন কাঁদতে কাঁদতে আমার ছোট দুই বোনকে নিয়া বাহানের ভিতরে আসে। তিনি তখন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আমরা বাসা করে থাকতাম। সেখানে আমি, বাবা এবং মেজবোন থাকতাম। মেজবোন তখন এস. এস. সি-র ক্যানডিডেট ছিলো। আমার ভাইটি, ক্লাস টু-এ পড়তো। আমরা পর পর তিন বোন তারপর ঐ ভাই। মা বাড়িতে ছোট বোন, সেজ বোন এবং ছোট ভাইকে নিয়ে থাকতো। দূর থেকেই দেখলাম যে, মা কাঁদতে কাঁদতে আসছে এবং বলছে, মনু, তোর বাবা, মনু তোর বাবা। বাবাকে ধরে নেওয়ার খবরটা ছড়াই গেছিলো ভীষণভাবে। আমার বাবাকে ঐ এলাকায় সবাই চিনতো। তিনি বাওকাঠি স্কুলের টিচার ছিলেন। মা এসে বললেন যে, তিনিও আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারে নাকি মিলিটারিরা অনেক পিটাইছে, হাত ফুইল্লা গেছে। দেখলাম তাঁর শরীরও ফোলা। আমার ছোট বোনের তখন বছর দেড়েক বয়স। ওরে বুট পায়ে বলের মতো শট দিছে আর্মি। সে অন্য জায়গায় গিয়া পড়ছে। আবার দিছে। মা যখন চিৎকার করছে তখন মারে ধইরা পিটাইছে। আমার ছোট বোন তখন অজ্ঞান হইয়া গেছে। অজ্ঞান হইয়া যাওয়ায় ওরা মনে করছে ও মারা গেছে। আমার মা-ও মনে করছে মারা গেছে। ওরা বোনকে রাইখ্যা গেছে। কিন্তু কিছু সেবাযত্নের পরে বোনটার আবার জ্ঞান ফিরে আসে। সে অবশ্য এখন জীবিত আছে।
ঐ দিন আমাদের গ্রামের বহু লোককে মাইরা ফালায়। অনেক শিশুও মারা গেছে। সেই দিনই আমার এক মামা বীরেন্দ্রনাথ ঘরামি এবং আমার এক মেসো কার্তিকচন্দ্র বেপারি তাদেরও হত্যা করে। কার্তিকচন্দ্র বেপারি হাল চাষ করছিলো মাঠে। সেই মাঠেই তাকে গুলি করছে। আমাদের গ্রামের এবং বাগান থেকে বোধ করি ধইরা নিয়া গেছে শতাধিক লোককে। সেদিন ওদেরকে বাওকাঠিতে যে একটা ক্যাম্প করছিলো, সেখানে রাখছিলো। ৩রা আষাঢ় এটা ছিলো। ৪ঠা আষাঢ়ও রাখছে। ৫ই আষাঢ় খুব ভোরে নবগ্রাম যে একটা পাকা পুল আছে সেই জায়গায় নিয়া চব্বিশ জন না ছাব্বিশ জনকে এক জায়গায় লাইন করাইয়া গুলি করছে। আর পথে ঘাটে কিছু তো মারছে যাদের পাইছে। পরের দিনও ঐ পেয়ারা বাগানের গাছ কাটা অব্যাহত থাকলো। পরে লোকমুখে শুনছি যে, ত্রিশ চল্লিশ হাজার লোকই নাকি এটা করছে। ঝালকাঠি থানা, নলছিটি থানা, স্বরূপকাঠি থানা এদের মধ্যে সবাই যে রাজাকার তা নয়। জোর করে নিয়া গেছে প্রত্যেক বাড়ি থেকে। বানারীপাড়া থানার লোকজনকেও জোরপূর্বক ধরে নিয়া গেছে। প্রতি বাড়ি থেকেই যুবক বা পুরুষদের আসতে হবে। এটা করা হয়েছিলো বাধ্যতামূলক। না হইলে তাদের আবার জীবনাশঙ্কা। তাদের জোর করিয়া নিয়া আসতো লঞ্চে লঞ্চে, ট্রলারে ট্রলারে। তাদের দিয়া ঐ পেয়ারা বাগানগুলি কাটা হইতো। ঐ জায়গার গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন করার কারণ ছিলো মূলত আমাদের পঁচিশ ছাব্বিশটা গ্রাম ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। হিন্দুরা এবং মুক্তিবাহিনী ঐ সব জায়গায় আশ্রয় নিছিলো। এমন কি ঝালকাঠি, বরিশালের অনেক ব্যবসায়ী হিন্দুও ঐখানে আশ্রয় নিছিলো। তারা ভাবছিলো যে, পেয়ারা বাগানে পাক আর্মি, রাজাকাররা আসবে না। এইজন্য ঐ সব জায়গায় অনেক লোক ছিলো। হাজারে হাজারে লোক ছিলো। পরের দিনও গাছ কাটা অব্যাহত থাকলো। প্রতি দিনই এগারোটার দিক থেকে বাগানটাকে ঘিরে ফেলতো। আমরা মৃত্যু ভয়ে দৌড়াইতাম। ভিজা কাপড়। আর তো কোনো কাপড় জামা ছিলো না, খাবার ছিলো না। যখন এইভাবে আক্রমণ করতো তখন আমাদের মাইলের পর মাইল দৌঁড়াইতে হইতো। কিছু কিছু ধান খেতও ছিলো। তখন ক্রলিং-এর মতো করে বুকে মাটি টাইন্না মৃত্যুর ভয়েতে যাওয়া লাগতো। ভিতরে অনেকগুলি খাল ছিলো ঐ বাগান এলাকায়। স্রোত খুব। বাবারে মাইরে ফালাইছে। এখন ভাইকে তো বাঁচাইতে হবে। ওকে এক হাতে নিয়া আর এক হাত দিয়ে সাঁতরে পার হয়ে যাইতাম। তখন দেখছি যে সবাই এক। মৃত্যু ভয়ে ভীত সবাই। সবাই এক সাথে দৌঁড়াইতাম। এক সাথে ডুবাইতাম। এইভাবে চার পাঁচ দিন চললো।

প্র: কত তারিখ ?

উ: এটা হবে ৮ আষাঢ় সম্ভবত। আটই আষাঢ় রাত্রে সমস্ত বাগান বিরান এলাকাতে পরিণত হয়। অর্থাৎ গাছপালা কাইট্যা ফালাইছে সব। এখানে ওখানে শুধু লাশ। আর লোকজন যাদের গার্জিয়ান ছিলো তারা তো সব ওখান থেকে চইলা গেলো। কেউ ইন্ডিয়া চইলা গেলো। কিন্তু আমাদের তো গার্জিয়ান ছিলো না। আমাদের যাওয়া আর কোথাও হইলো না। আমরা রোজ ঐভাবে দৌড়াইয়া পালাইয়া কচুরির ভিতরে লুকাইয়া থাকতে লাগলাম। একদিন রাত এগারোটার দিকে আমরা প্রাণপণে কয় ভাই-বোন এবং মা মিলে একটা নৌকা উদ্ধারের চেষ্টা করলাম। এইজন্য যে, নৌকা করে আমরা এখান থেকে কোথাও বের হয়ে যাইতে পারি কিনা। যদিও নৌকা চালাইবার মতো কেউ ছিলো না, তবুও বাঁচার প্রচণ্ড চেষ্টা। পথে যতো গাছ কাইট্যা ফেলছে সে সব সরাইয়া সরাইয়া কোনোভাবে একটা খাল পরিষ্কার করি যাতে বাইরে বের হইতে পারি। খাল যখন পরিষ্কার করি এই সময় শুনি অনেক দূর থেকে আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে। তখন বুঝতে পারলাম যে, কোনো আত্মীয় স্বজন হয়তো আমাদের উদ্ধার করার জন্য ওখানে আসছে। আমরা সবাই মিলে প্রাণপণে সাড়া দিলাম যে, আমরা এইখানে। যতো জোরে পারি ততো জোরে সবাই মিলে চিৎকার করার পরে উনারা আস্তে আস্তে আমাদের কাছে আসছে। দেখলাম মায়ের এক কাকাতো ভাই। আমার মামা তিনি কয়েকজন সঙ্গী নিয়া আমাদের উদ্ধারের জন্য আসছেন। তিনি আমাদের ঐ নৌকাটাতে তুললেন। তারপর মামা উনাদের নিয়া গাছের গুড়িগুলা সরাইয়া টরাইয়া একটা খাল পরিষ্কার করলেন। তারপর আমাদের সবাইকে নৌকায় নিয়া লোকালয়ে নিয়া রাইখ্যা আসলো। আর আমারে নিয়া ঐ রাত্রেই ওখান থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত গেলো। মাঝখানে দুইটা বড় খাল। তখন তো খাল বেশ বড় ছিলো। সেই খাল সাঁতরাইয়া আমরা নবগ্রামের এক বাড়িতে গিয়া আশ্রয় নিলাম।

প্র: আপনি বলছিলেন যে, অনেক লোক পেয়ারা বাগান কেটে ফেলছিলো। এই পেয়ারা বাগান কেটে ফেলার জন্য যে লোকজন এসেছিলো ওদের নেতৃত্বে কে বা কারা ছিলো ?

উ: আমরা শুনেছিলাম যে, আখতার ব্যারিস্টার, মুসলিম লীগ থেকে নির্বাচনে দাঁড়াইছিলেন। তিনি হাইরা গেছেন। এই হারাটা তাঁকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলে। নেছারাবাদের হুজুর তিনিও বাংলাদেশ স্বাধীন হোক এইটা চাইছিলো না। এই দু’জনার নেতৃত্বেই পেয়ারা বাগান কাটা হয় বলে শুনছি। হাজার হাজার লোককে জোরপূর্বক, বলপূর্বক বিভিন্ন থানা থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়।

প্র: আপনার কথায় আপনি একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘পাইছি,’ ‘পাইছি’ বলে। এই শব্দটি কারা করতো এবং কেন করতো, কাদের খুঁজতো ?

উ: আমাদের লুকানোর বিষয়টি সবাই জেনে গেছিলো। আমি বলেছি, এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। হিন্দু মেয়ে, পুরুষ, যুবা, বৃদ্ধ সবাই জলের কচুরির ভিতরে পলাইছিলো। ওরা পাইছি, পাইছি বললে যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং খালের কচুরির ভিতর থেকে বাইর হইয়া আসে। মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার জন্যই ওরা এই ‘পাইছি’ ‘পাইছি’ শব্দগুলি ব্যবহার করতো। পরে শুনছি যে, এই শব্দে অনেকে বের হইয়া আসছে। খাল ছাইড়া উঠছে। তখন তারে ধইরা নিছে। কিন্তু আমি সচেতন ছিলাম যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমারে চুলের মুঠি ধইরা না উঠাইবে ততক্ষণ আমি উঠবো না। এই জন্য ঐ শব্দে আমারে বিভ্রান্ত করতে পারে নাই। পরবর্তীতে শুনছিলাম যে, আমার নাম ধরিয়াও নাকি কোনো কোনো এলাকায় কেউ কেউ ডাকাডাকি করছিলো। মোটামুটি আমাকে চিনতো সবাই। ঐ এলাকায় গ্রামের মধ্যে তখন লেখাপড়া করা মেয়ের সংখ্যা কম ছিলো। আমি তখন কলেজে পড়ি, বাগেরহাট পি.সি. কলেজে। আমি ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে। সুতরাং কারো কারো দৃষ্টিতে একটু খারাপই লাগতো।

প্র: আপনারা ঐ সময় কিভাবে জীবন ধারণ করেছিলেন ?

উ: জীবন বাঁচানোর জন্য পোড়া চাল সংগ্রহ করে নিয়ে বিলের মধ্যে এক বাড়িতে রান্না হতো। সেই পোড়া চালের ভাত যে কি বিস্বাদ তা আজ মনে করতেও কষ্ট হয়। অথচ প্রাণে বাঁচতে ঐটাই খাইতে হইতো। সেই সঙ্গে পানিকচু, শাপলা অর্থাৎ বিলের মধ্যে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে রান্না হতো। তখন বাইরের বাজারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিলো না। লবণের অভাব ছিলো প্রচণ্ড। লবণ ছাড়াই আমাদের সেই অর্ধেক পোড়া আর অর্ধেক ভাল চাউলের ভাত আর শাপলা সিদ্ধ খেতে হতো। একদিন আমার মা কোথা থেকে একটা পুটুলিতে করে ভিজানো আতপ চাল নিয়ে আসলেন। সেই চাল দুই দিন পর্যন্ত বোধহয় পানির নিচে ছিলো। ফলে, গন্ধ ছিলো প্রচণ্ড। সেই চাল সিদ্ধ করেও খেয়েছি। আর দিনের বেলা পেয়ারা টেয়ারা খাইতাম। পেয়ারা ছাড়া আর কিছুই খাওয়ার ছিলো না তখন।

প্র: আপনার এলাকায় কোনো বাড়িঘর পুড়ানো বা লুটপাট হয়েছিলো কি ?

উ: হ্যাঁ, সব বাড়ি পুড়ানো হইছে। সব বাড়ি লুটপাট হইছে। সব বাড়িরই দুই চার জন করে লোক মারা গেছে, ধইরা নিয়া গেছে অথবা গুলি করে বা বেয়নেট চার্জ করে মারছে। আছড়িয়েও মারা হইছে অনেকরে।

প্র: আপনার এলাকায় এই যে, বাড়িঘরগুলো লুট এবং পুড়ানো হইছে, প্রথম কি লুট হইছে না প্রথমে পুড়ানো হয়েছে ?

উ: প্রথমে লুট এবং সঙ্গে সঙ্গে পুড়ানো পাশাপাশিই চলছে। আগে লুট কইরা মালামাল নিয়া পরে আগুন দিয়া দিছে। আমাদের গ্রামে একটা বা দুইটা ঘর থাকতে পারে, সেই সময় আর কোনো বাড়ি অক্ষত ছিলো না। সব বাড়ি পুড়াই দিছিলো।

প্র: আপনাদের পেয়ারা বাগান এলাকায় কতোটি গ্রাম বা কতোটি ঘর বাড়ি ছিলো?

উ: মোট ওখানে ২৬টি হিন্দু গ্রাম। কিন্তু পেয়ারা বাগান এলাকায় পনের বিশটি গ্রাম হবে। এর মধ্যে প্রচুর বাড়ি। আমি সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না। কোনো কোনো বাড়ির ত্রিশ পঁয়ত্রিশটি ঘর ছিলো।

প্র: আপনি বলছিলেন যে, আপনার এলাকায় মুক্তিবাহিনী ছিলো। এরা মূলত এখানে কি করতো ?

উ: এরা আশ্রয় নিছিলো। ওরাও বোধহয় প্রথমে এই ধারণা করছিলো যে, এতবড় বাগান, এখানে কেউ হয়তো আক্রমণ করতে পারবে না। ওরা এখানে প্রশিক্ষণ নিতো এবং মানুষকে মটিভেট করতো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মন যেন খারাপ না হয়, সাহস রাখে এ জন্য তারা সাহস জোগাইতো।

প্র: আপনি বলেছেন যে, আপনার এলাকার অনেক লোককে ঐ দিন হত্যা করেছিলো। এই যে লোকজন নিহত হয়েছিলো বা শহীদ হয়েছিলো-এদের লাশগুলো কি অবস্থায় ছিলো বা এদের লাশগুলো পরে কি করা হয়েছিলো ?

উ: এদের লাশগুলির অধিকাংশই খালে ভাসায় দেওয়া হইছে। আর কিছু নদীতে, মাঠে, জলাভূমিতে, স্কুলের পিছনে পড়ে ছিলো। দু’টা স্কুল ছিলো, যেখানে ছিলো বধ্যভূমি। একটা হইছে জগদীশপুর, এখন যেটা প্রাইমারি। ঐ সময় ওটা আপগ্রেড ছিলো। আর শতদলকাঠি গার্লস স্কুল। এই দু’টা স্কুলে মূলত বধ্যভূমি ছিলো। আর ওপাশেও ছিলো কিনা সেটা আমার আর চোখে পড়ে নাই। লাশগুলি স্কুলের পিছনে আর খালে ফেলে দিছে। স্কুলগুলির পিছনেই পড়া ছিলো বেশি লাশ।

প্র: আপনি বলেছেন আপনার বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলোজ্জ আপনার বাবার লাশ কি পরে পেয়েছিলেন ?

উ: না, আমরা লাশ পাই নাই বা দেখতেও পাই নাই। কারণ তখন তো জীবন এবং সম্মানের ভয়ে আমরা ভীত। শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তখন আমাদের শক্তি সাহস কোনো কিছুই ছিলো না। আমরা লাশ পাইনি। দেখি নাই। বাবা আমাকে বলেছিলেন যে, তুই নৌকায় যা। আমি বলছিলাম, তুমি যাও। আমার সঙ্গে তাঁর সেই শেষ দেখা, শেষ কথা।

প্র: আপনি কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন ?

উ: আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি নাই অর্থাৎ অস্ত্র হাতে ধরি নাই। তবে মানুষকে মটিভেট করার সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি আমি। মহিলাদের সাহস জোগাইছি। গ্রামের মহিলারা তো ভয় পাইয়া গেছিলো। তারা ভাবছে এইভাবে বোধহয় সবাইকে শেষ হইয়া যাইতে হইবে। তখন আমি তাদের সান্ত্বনা দিছি, সাহস দিছি। বলছি, এইভাবে চলতে পারে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে, একদিন না একদিন দেশ স্বাধীন হবেই। এ কথা আমি মেয়েদের বলছি।

প্র: আপনার এলাকা কখন পাকিস্তানিরা আক্রমণ করলো ? কিভাবে আক্রমণ করলো ?

উ: সম্ভবত এপ্রিলের তৃতীয় কি চতুর্থ সপ্তাহে আক্রমণ করছে। প্রথম দিকে রাস্তাঘাটে মানুষ মেরে ফেলতো, গুলি করতো, লুট করতো। লুট অবশ্য স্থানীয়রাই করছে। পাক সেনারা বেশিরভাগ গুলি করছে। স্থানীয় রাজাকার, শান্তি কমিটির লোকজন-এরাই মানুষকে লুট করার জন্য, ঘরে আগুন দেওয়ার জন্য বলতো। গরু বাছুরসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে যাইতো তারা।

প্র: আপনার এলাকায় কিভাবে পাক বাহিনী গিয়েছিলো ?

উ: তারা বোটেই গেছিলো। কারণ ঝালকাঠি থেকে বাওকাঠির যোগাযোগ তো খুব ভালো। তারা নিজেদের বোটে কইরা চইলা গেছে ওখানে। বাওকাঠি তো আমাদের গ্রামের কাছাকাছি।

প্র: পাকিস্তানি বাহিনী আপনার এলাকায় আর কি করলো ?

উ: তারা রাজাকারের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি লুট করছে। তারপরে লোকজন হত্যা করছে। আগুন দিয়া গ্রাম ছারখার কইরা দিছে। গাছপালা কাইট্যা ফালাইছে। আমাদের গ্রামে গাছপালা আর অবশিষ্ট ছিলো না। আর ঐ যে, পেয়ারা বাগান ছিলো, পেয়ারা বাগান তো মাইলের পর মাইল, সেই বাগান শেষ করছে।

প্র: বিভিন্ন জায়গায় যে লাশগুলো পড়ে ছিলো, সেই লাশগুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন?

উ: আমার একটা স্মৃতির কথা বলি। আমি যখন নবগ্রামে যাই তখন আমার এক আত্মীয় আমাকে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসছিলো। তার সঙ্গে আমরা কয় বোন মিললা তাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে ঐ জগদীশপুর স্কুলের পাশ দিয়া যে রাস্তা সেখান দিয়া রওনা করছি। দেখি যে স্কুলের পিছনে অসংখ্য লাশ পড়ে আছে। চিল, শৃগাল, শকুন, কুকুর, কাক এই লাশগুলো খাইতেছিলো। আমি বিভ্রান্তের মতো দাঁড়াই পড়ছিলাম, মনে হইছিলো যে, বাবার লাশটা হয়তো ওখানে আছে। আমি তখন ঐ লাশগুলির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে ছিলাম। কিন্তু লাশগুলি এমন বীভৎস যে, চেনা যায় না। আমি ঠিক চিনতে পারি নাই কাউকেই। কোনো লাশেরই সৎকার হয় নাই। আর খালে তো অসংখ্য লাশ ছিলো।

প্র: আপনার পরিবারে আর কেউ শহীদ হয়েছে কি ? হয়ে থাকলে তারা কিভাবে শহীদ হলো ?

উ: হ্যাঁ, প্রথমে বলবো আমার বাবার কথা। আমার বাবাকে ৩রা আষাঢ় পেয়ারা বাগান থেকে ধরে নিয়ে যায়। শুনেছি ৫ই আষাঢ় খুব ভোর রাত্রে তাঁকে ঐ বাওকাঠি খালের পাড়েই গুলি করে হত্যা করা হয়। ওনার সাথে আরো ছাব্বিশজনকে হত্যা করা হয়। ওদের সঙ্গে আমার মামা ছিলেন, বীরেন্দ্রনাথ ঘরামি। তিনি একটা ডোবা পুকুরে কচুরির মধ্যে পালানো ছিলেন। তাঁকে নাকি তারা পাইছে এবং ধরে নিয়ে গেছে। তাঁকেও একই দিনে গুলি করা হয়। আমার মেসোমশাই কার্তিকচন্দ্র বেপারি ওনারেও ধইরা নিয়া যাইয়া পরের দিন গুলি করছে। আর তা ছাড়া গ্রামে তো অনেক লোক মারছে।
আমার স্মৃতিতে একটা ঘটনা আজও জাগরূক; সেটা এরকম: ছেলেটার নাম কার্তিক। পদবী বলতে পারবো না। ওর বাবা আমাদের গ্রামেরই। ও আমার ছাত্র ছিলো। ওরে আমি বাড়িতে পড়াইতাম। আমি ’৭১ সালে আই.এসসি. পরীক্ষার পরে জগদীশপুর আপগ্রেড স্কুলে কিছুদিন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলাম অনারারি। ঐখানে আমার ছাত্র ছিলো কার্তিক। সে তখন ক্লাস এইটে পড়তো। সে খুব উঁচু লম্বা ছিলো ক্লাস এইটের তুলনায়। ওর প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিলো। কারণ ও জন্মাইবার আগেই ওর বাবাকে ডাকাতরা মাইরা ফালাইছিলো। ওর মা আমারে বেশ আদর যত্ন করতো। বিভিন্ন কারণেই ওর প্রতি আমার একটা সফ্‌ট কর্নার ছিলো। ও আমার বাড়িতেও আসতো। ওরে আমি বাড়িতে অংকটংক শিখাইছি, বিজ্ঞান পড়াইছি। যুদ্ধের পরে ওর মার অনেকটা মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। মহিলা আমার দাদুর নাম ধরে প্রায় বলতো যে, আমার খোকা অমুকের নাতির কাছে পড়তে গেছে, আমি যাই, আমি যাই। এই বইলা সে ছুইট্টা আসতো আমাদের বাড়িতে। সে প্রায়ই এরকম করতো। কিছুতেই মানতো না, মাইন্যা নিতো না যে, তার ছেলেকে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে।

প্র: আপনার এলাকায় কখন থেকে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা শুরু হয় এবং তখন মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে জনগণের মনোভাব কেমন ছিলো ?

উ: জনগণের একান্ত কাছের মানুষ ছিলো মুক্তিবাহিনী। একান্ত আপনজন মুক্তিবাহিনীকে যতো প্রকারে সাহায্য করা দরকার, সেটা আমাদের এলাকার জনগণ করেছে। তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করেছে। তাদের খাদ্য জোগাইছে, তাদের আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ সর্বতোভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে এবং জনগণ তাদেরকেই অর্থাৎ মুক্তিবাহিনীকেই ত্রাণকর্তা হিসাবে ভেবে নিয়েছিলো। পেয়ারা বাগানের মাঝে মাঝে একটা বাড়ি থাকতো। ঐসব বাড়িতে মূলত মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিলো এবং ওখানেই তারা ট্রেনিং নিতো। দেখতাম তারা ট্রেনিং নিচ্ছে। আমাদের এলাকার অনেক ছেলে মেয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো এবং ট্রেনিং নিয়েছিলো। এই মুহূর্তে আমি তাদের নাম স্মরণ করতে পারছি না।

প্র: আপনার এলাকায় যে সব ঘটনা ঘটেছিলো, সেখানে মেয়েদের উপরে কোনো অমানবিক বা পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছিলো কি ?

উ: আমি তো সে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে পারি নাই। তবে আমি শুনেছি। আমাদের এলাকাটা তো মোটামুটি শিক্ষিত এলাকা। সব বাড়ির মেয়েরাই লেখাপড়া শিখতো। কলেজে পড়তো। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পড়াশুনা করতো। পরে শুনেছি যে, কোনো কোনো বাড়ির মেয়েদের নাকি ধরে নিয়ে গেছিলো মিলিটারিরা।

প্র: আপনার গ্রাম বা এলাকায় কারা রাজাকার ছিলো, শান্তি কমিটিতে কারা ছিলো--তারা এখন কোথায় ?

উ: বেত্‌ড়া প্রাইমারি স্কুলের তৎকালীন হেড্‌টিচার শান্তি কমিটিতে ছিলো। তারপর বাওকাঠি হা্‌ইস্কুলের দুই একজন টিচারও ছিলো। তাদের নাম আমি ঠিক বলতে পারবো না। বাওকাঠি স্কুলের এক টিচারের ছেলে রাজাকারের হেড ছিলো। বাওকাঠিতে রাজাকারের যে একটা ক্যাম্প করেছিলো সেই ক্যাম্পের হেড ছিলো সে।

প্র: আপনি যাদের কথা বললেন, এরা এখন কি অবস্থায় আছে বা কোথায় আছে ?

উ: এখন দেশেই আছে। ওরা স্বাধীনতার পর একটু আত্মগোপন করেছিলো। গ্রামে ছিলো না। কিন্তু এখন তারা আবার গ্রামেই বহাল তবিয়তে আছে।

প্র: আপনার গ্রামে বা এলাকায় আল-বদর আল-শামস কারা ছিলো? তারা এখন কোথায় ?

উ: আমাদের গ্রাম তো হিন্দু অধ্যুষিত। আমাদের গ্রামের কেউ ঐ সব বাহিনীতে ছিলো না। আমাদের পাশাপাশি কালিকান্দা, বাওকাঠিজ্জ ঐ সব এলাকায় ছিলো। তারপর নবগ্রাম, শিমুলিয়া ঐসব এলাকার লোকজনও ছিলো।

প্র: যুদ্ধের শেষে গ্রামে ফিরে কি অবস্থা দেখলেন ? আপনার গ্রামের বা এলাকার স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, ব্রিজ ও বাড়িঘরের অবস্থা ?

উ: আমি তো আগেই বলেছি যে, আমাদের ওখানে অনেকগুলো গ্রামেই কোনো ঘর ছিলো না। অনেক গাছপালা কাটা ছিলো। শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল, লতালি গাছের জঙ্গল। গরু বাছুরও ছিলো না। কোনো জিনিসপত্র ছিলো না। অধিকাংশই ভারতে গিয়া আশ্রয় নিয়েছিলো। আমাদের ছাব্বিশটা গ্রামের কথা আমি বলবো গ্রামের প্রায় লোকই ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো এবং তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে দেশে ফিরছে। ক্যাম্পে যে হাড়িকুড়ি তাদের দিছিলো সেইটাই তাদের সম্বল ছিলো। তারা বাড়িতে আইসা ধানের খড়কুটো দিয়া অথবা গোলপাতা দিয়া কোনোভাবে ছোটখাটো ঘর তুইলা একেক ঘরে পঁচিশ ত্রিশ জন মিলে ঠাসাঠাসি করে থাকতো। আমরা ঐ রকম দুইটা চালের নিচে প্রায় এক বছরের মতো ছিলাম। আমাদের এলাকায় লঙ্গরখানা খুলছিলো আমার মনে আছে। আমার সেজ বোন এবং আমি একটু লজ্জা পাইতাম খাবার আনতে। আমি তখন বড়। সেজ বোনও বড়। ছোট বোনটা তখন সিঙে পড়তো। সে আর আমার ছোট ভাই যে টু-তে পড়তো ওরা একটা গামলা বা একটা হাড়ি নিয়ে লঙ্গরখানায় যাইতো। এক সিদ্ধের চাল না কি বলে তার একটা জাউ-এর মতো বা খিচুড়ির মতো রান্না করতো। তারা ঐটা হাড়ি ভইরা নিয়া আসতো। সেইটা আমরা খাইতাম। আর ছিলো ছাতু, ভুট্টার ছাতু না কি বলতো, ঐটা আসতে লাগলো। ঐটা পাইতাম। ঐটা মাইখ্যা সকাল বিকালে খাইতাম। দুপুর বেলা লঙ্গরখানার সেই জাউ। কিছু গম টমও পাইতাম রিলিফ হিসাবে। রামকৃষ্ণ মিশন কিছু কাপড় দিছে। কিছু কিছু টাকাও দিছে। ঐ সংস্থা আমারে স্বাধীনতার পর এক’শ টাকা দিছিলো আর সম্ভবত আধা মন আতপ চাল। আর আমি ছাত্রী হিসাবে স্বাধীনতার পরে কলেজ খোলার পরে বাগেরহাটে আমারে আধা মণ চাউল, আধা মণ গম এবং রামকৃষ্ণ মিশন হতে দু’টো শাড়ি দিছিলো। কিছু টাকা পয়সাও দিছিলো তারা। তারপর স্থানীয় চেয়ারম্যান উনি মুসলিম ছিলেন। নবগ্রামে বাড়ি। উনি বাবারে খুব শ্রদ্ধা করতেন। উনি আমাদের বেশ সাহায্য করেছিলেন। কিছু চাল, গম, কাপড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। কম্বলও রিলিফ হিসাবে দিয়েছিলো। এইভাবেই আমরা পরবর্তীতে বেঁচে ছিলাম।

প্র: যুদ্ধের শেষে আপনি কি করলেন ?

উ: যুদ্ধের শেষে মনে করলাম যে, লেখাপড়া করতেই হবে। বাঁচতে হলে লেখাপড়াই আসল। তখন আমি বাগেরহাটে চলে যাই। আমি আগেই বোধহয় বলেছি যে, খৃস্টানদের একটা সংস্থা ছিলো বিনয়কাঠিতে, ওরা আমারে কিছু সাহায্য দিছিলো। সেই সাহায্য নিয়া আমি বাগেরহাটে চইল্যা যাই। বাগেরহাটে আমি এবং আমার এক বান্ধবীজ্জ ওরা কলকাতার সল্টলেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নিছিলো, সেখানে ওর মা মারা যায়জ্জ দু’জনে তখন বাগেরগহাট কলেজে পড়তাম। কলেজের তখন প্রিন্সিপাল ছিলেন শ্রদ্ধেয় আসমত আলী আখন্দ। উনি আমাদের কথা শুনে আমাদের দু’জনারে দুই স্যারের বাসায় লজিং-এর ব্যবস্থা করে দিলেন। আমার স্যার ছিলেন শ্রদ্ধেয় সুভাষচন্দ্র পাল। তৎকালীন বাগেরহাট পি.সি. কলেজের অংকের টিচার। উনি পরবর্তীতে অবশ্য ভারত চইলা গেছেন। আর আমার বান্ধবীও আরেক স্যারের বাসায়, উনার নামটা আমি ভুলে গেছি, ফ্রি লজিং থাকলো। এটা আমাদের প্রিন্সিপাল স্যারই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২১
২৪টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×