ইরা সমাজের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। ইরা পেষায় একজন ছাত্রী। মেধার দিক দিয়ে ইরা অন্যদের চাইতে অনেক ভালো ছাত্রী। নম্র, ভদ্র ও ভীষণ শান্ত স্বভাবের মেয়ে ইরা। সুধু শান্ত নয়, মায়ায় ভরা সর্বাঙ্গ।
ইরা’র বাবা বোরহান সাহেব রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ সুপরিচিত একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তবে একটু কুটিল স্বভাবের। ইরা’র মা সাজেদা বেগম। পেষায় তিনি গৃহিনী। দেখতে শুনতে ও গুনে ইরা সাজেদা বেগমের হুবহু কপি। বোরহান সাহেব ও সাজেদা বেগম দম্পতির একমাত্র আদরের সন্তান নুসরাত জাহান ইরা।
শৈবাল সমাজের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মেধার দিক দিয়ে শৈবাল সবচাইতে পিছিয়ে অন্যদের তুলনায়। সারাদিন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘোরা ফেরাই শৈবালের সবচেয়ে জরুরী কাজ। এছাড়াও শৈবাল একটু অন্যমনস্ক । হটাত হটাত শৈবাল কোথায় যেন হারিয়ে যায়। যে কারণে পড়া লেখায়ও মন বসাতে পারে নাই।
শৈবালের বাবা রহমত সাহেব একটি প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজার। তিনি ন্যায়, নিতি ও আদর্শের পথে হাটতে গিয়ে পরিবারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেন নাই। শৈবালের মা মিলি বেগম পেষায় একজন গৃহিনী। সংসার নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাত দিন কখন কিভাবে যে পার হয় তা তিনি নিজেও জানেন না। রহমত সাহেব ও মিলি বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শৈবাল বড়। রহমত সাহেবের সামান্য উপার্জন দিয়ে সংসার চলছিলো টেনে হেঁচড়ে। আর তাই সংসারের বাড়তি আয়ের কথা ভেবে রহমত সাহেব আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে কাচা বয়সেই শৈবালকে বসিয়ে দেন ব্যবসায়। শৈবাল এখন ব্যবসায়ী!
শৈবাল বেশ ভালো ভাবেই ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসা থেকে যেটুকু লাভ আসে তার কিছু দিয়ে নতুন মালামাল দোকানে তোলে বাকিটা বন্ধুদের সাথে আনন্দ ফুর্তি করে বাড়ি ফেরে। একটু উড়ন চণ্ডী বইকি। বড় ছেলের এধরনের জীবন যাপন রহমত সাহেব আর মানতে পারছিলেন না । একদিন খেতে বসে শৈবালের বাবা ঠাট্টা করে শৈবালের মাকে বলছেন হ্যাঁ গো আমাদের শৈবাল এখন বড় হয়েছে, ব্যবসা করে। এ দিকে তোমারও তো বয়স হয়েছে। বলতো তোমার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দেই! উত্তরে শৈবালের মা হা..হা..হাহহহহহ সত্যি তো আমাদের শৈবাল তো অনেক বড় হয়ে গেছে।
কিরে শৈবাল, বিয়ে করবি নাকি..? শৈবাল মনে মনে ভাবছে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’ এ সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবেনা। হ্যাঁ মা তোমরা যা ভালো মনে করো।আমার আপত্তি নাই। সত্যিই তো আম্মার বয়স হয়েছে আর কতো। এখন একজন সহযোগী দরকার। তাই না বাবা ? একটু মুচকি হেঁসে রহমত সাহেব বললেন হ্যাঁ ঠিক তাই!
এবার শৈবালের জন্য যোগ্য পাত্রীর সন্ধানে নেমে পড়লেন রহমত সাহেব। সব কিছুতে শৈবালের বাবা কৃপণতা করলেও ছেলের পাত্রী খোজে ঘটনা পুরো উল্টো। রহমত সাহেবের চোখে, মুখে আনন্দে কি ঝলকানি। বাড়িতে চলছে এক অন্যরকম আমেজ। প্রতিদিন ঘর সাজাতে নতুন নতুন কিছু নাকিছু কিনেই ঘরে ঢোকেন রহমত সাহেব।
অনেক খোজা খুঁজির পরও ব্যাটে বলে মিলছেনা রহমত সাহেবের। পাচ্ছেন না মনের মতো পুত্র বধূর সন্ধান। বেশ কিছু দিন যাবার পর হটাত একদিন রহমত সাহেব খুশিতে আত্মহারা হয়ে ঘরে ফিরেই ফোন করলেন শৈবালকে ।
রহমত: হ্যালো শৈবাল।
শৈবাল: জী বাবা।
রহমত: আব্বা তুমি এখুনি বাসায় আসো জরুরী কথা আছে।
শৈবাল: জরুরী কথা! বাবা কি জরুরী কথা? ফোনেই বলেন না।
রহমত: আব্বু ফোনে বলা যাবে না তুই এখুনি বাসায় আস। আমি না খেয়ে বসে আছি ।তুই আসলেই আমি খাবো। তাড়া তাড়ি। দেরি করিস না।
শৈবাল: আচ্ছা আসছি।
শৈবাল দোকান বন্ধ কওে বাসার দিকে রওনা করল। শৈবাল কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না। কি এমন জরুরী কথা ?
শৈবাল ঘরে ঢুকে বাবাকে ডাকছে... বাবা বাবা……
রহমত: আসছিস?
শৈবাল: হ্যাঁ কিন্তু কি হয়েছে বলেন তো।
রহমত: আরে গরম খবর আছে । হা..হা..হা..হা...হা ।
শৈবাল: না আগে বলেন কি খবর। যে এত জরুরী ভাবে আসতে বললেন ।
রহমত: শৈবালের মা শুনছো এদিকে এসো।
মিলি: আসছি..।
রহমত: মিলি জানো আমি এতদিন তোমার শৈবালের জন্য যেমন মেয়ে চাইছিলাম ঠিক তেমন একটি লক্ষ্মী মেয়ে আজ দেখে আসছি।
মিলি: কি বলও তাই না কি..?
রহমত: হ্যাঁ সত্যি বলছি। মেয়েটির ডাক নাম ইরা। দেখতে শুনতে আচার আচরণে আহ একদম মা লক্ষী। আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই নাও মেয়েটির ছবি।
মিলি: কই দাও দেখি তোমার মা লক্ষীকে দেখি। বাহ দারুণ তো দেখতে। কিরে শৈবাল দেখবি না কি? না থাক তুই আর কি দেখবি।
রহমত: হা..হা.. হা.....।
মিলি: হা..হা..হা..হা...।
শৈবাল: আমি আর কি দেখব ? আপনারা দেখলেই চলবে।
রহমত: হা..হাহ.হ.হ.হ..।
মিলি: হা..হা..হা..হা । বোকা ছেলে ।
শৈবাল: মা খেতে দাও; দোকানে যেতে হবে।
মিলি: তোর বাবা কে ডাক; আমি খাবার দিচ্ছি ।
শৈবাল: ইরা! নামটা তো ভালোই। দেখতে কেমন আল্লাহই জানেন ? কিভাবে ছবিটা দেখি! (মনে মনে ভাবছে শৈবাল)।
রহমত: কিরে কি ভাবছিস ?
শৈবাল: কৈ..? কিছু নাতো ।
মিলি: ভাবিস পরে আগে খেয়ে নে ।
রহমত: ওহ তোকে বলতে ভুলে গেছি আগামী কাল তোকে দেখতে ইরার চাচা আসবেন।
মিলি: চাচা ! ইরার বাবা কোথায়?
রহমত: আর বলও না ইরার বাবা ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। সময় পাবেন না।তাই ইরার চাচাই আসবেন।
মিলি:ওও আচ্ছা ।
শৈবাল: আচ্ছা ঠিক আছে ।
খাওয়া শেষে শৈবাল ফের দোকানে চলে যায়.......(চলমান)
মো: আসাদুজ্জামান লিটন
১৩-ফেব্রুয়ারী-২০১৮ইং সাল
সময়: ৯টা ২৪ মিনিট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬