পাবলো নেরুদা নাজিম হিকমতকে নিয়ে লিখেছিলেন— 'সদ্য মুক্তি পাওয়া/বন্দীদের একজন নাজিম হিকমত/তার কবিতার মতো/লাল রং সোনার সুতায়/বোনা জামা উপহার দিয়েছে আমায়’।
প্রখ্যাত দার্শনিক জ্যঁ পল সার্ত্র তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন— ‘তিনি এমনি একজন কবি– যার কাব্য আর জীবনের মাঝে কোন ভেদরেখা টানা যায় না’।
নাজিম হিকমত এক বিপ্লবের নাম। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার জন্যে কমপক্ষে ২০ বছর তিনি কাটিয়েছেন জেলখানায়। তিনি একজন তুর্কি ভাষার কবি ও নাট্যকার। উনিশ বৎসর বয়সে তিনি তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অপরাধে তাকে মোট ৫৬ বছরের সাজা দেওয়া হয়, যা তার নিজের বয়সের চেয়েও বেশি। জন্ম ১৯০২ সালে তুরস্কের সোলানিকায়। তার বাবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বেড়ে ওঠা ইস্তাম্বুলে। তার মা একজন শিল্পী ছিলেন। নাজিম হিকমতের মৃত্যু ৩ জুন, ১৯৬৩।
উল্লেখ্য, পাবলো নেরুদার বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় তাঁর নিদারুণ কারাভোগের কাহিনীর কথা – ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত হিকমত ক্লান্ত হয়ে পড়তো ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে দীর্ঘ সময় ধরে হেঁটে যেতে বলা হতো। তারপর তাকে বিষ্ঠাপূর্ণ টয়লেটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হতো।’
The Faces Of Our Women by Nazim Hikmet
আমাদের রমণীদের মুখগুলো
ভাষান্তর: শুভ্র সরকার
মেরী ঈশ্বরকে গর্ভে ধারণ করেননি।
মেরী ঈশ্বরের মা নন।
মেরী ঠিক অসংখ্য মায়ের মধ্যে একজন মা যেমন।
মেরী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সত্য
অসংখ্য সন্তানের মধ্যে যে একটি সন্তান মাত্র।
এ’কারণে সমগ্র দৃশ্য জুড়ে মেরী এত মায়াময়
এ’কারণে মেরীর সন্তান আপন, নিজের মনে হয়।
আমাদের রমণীদের মুখগুলো তাই অনুবাদ করে সকল দুঃখ
আমাদের ব্যথা, আমাদের ভ্রান্তি এবং রক্তপাত সমেত
আমরা লাঙল দিয়ে তাদের মুখে চাষ করি ক্ষতচিহ্ন।
এবং আমাদের আনন্দ ভাঙা ঘুমের মত ছড়িয়ে থাকে তাদের চোখে
যেন হ্রদের জল থেকে স্নান শেষে ফিরে আসা ভোর।
আমাদের সকল কল্পনা, ভেসে বেড়ায় রমণীদের মুখে।
তাদের উপস্থিতিতে এমনকি অনুপস্থিতিতেও, তারা আমাদের মধ্যে বাস করে
বাস্তবের সবচে’ কাছে, অথচ আমাদের থেকে দূরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১২