somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ শিকল ছিঁড়তে না পারে পাখি ~ ফিরে ফিরে আসে ~

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.
ম্যাক আর মিনিকে খাবার দিচ্ছেন শায়লা । প্রতিদিন সকালে এসময়টা ওদের ব্রেকফাস্ট টাইম । শায়লা খাঁচা পরিষ্কার করেন , নতুন বেসপ্লেট দেন । তারপর ট্রে তে করে সূর্যমুখীর বীচি আর কাজুবাদাম নিয়ে আসতেই তারা বুঝে  ফেলে এখন উড়াউড়ি বন্ধ করে খেয়ে নেবার পালা । আজও এর ব্যতিক্রম হলোনা । ওদেরকে খাবার দিয়ে শায়লা দেখেন ইশতিয়াক অফিসের জন্য রেডি ।
-আজ ফিরবে তো ? মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করেন শায়লা ।
-কেন  ? কাজ আছে ?
-না এমনি জানতে চেয়েছি ।
-শিওর না । ফোন করব ।
শায়লা ব্রেকফাস্ট টেবিলে থাকতেই ইশতিয়াক বের হয়ে গেলেন অফিসের উদ্দেশ্যে ।
এবার শায়লার অখন্ড অবসর । পত্রিকা হাতে বারান্দায় বসেন । রাস্তায় লাগোয়া বাড়ি । ছুটতে থাকা সবাইকে দেখে ভাবেন -"আচ্ছা, সব মানুষই কি  ইশতিয়াক এর মতো ? নাকি সবই তার কপাল ?"  একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অজান্তেই ।
আজ আর রান্না করবেন না । দরকার নেই । মনে হচ্ছে সে আজ ফিরবে না । এই বিশাল প্রাচুর্যপূর্ন ফ্ল্যাটে ম্যাক আর মিনিই শায়লার কথা বলার সঙ্গী । মানুষ না হয়েও আপনজন ।
একেকটা দিন যে কিভাবে কাটে ! টেলিভিশনের রঙিন ভুবনে চোখ রেখে ভাবেন-তন্ময় হয়ে । এই তো সেদিনের কথা সব । কতগুলো বসন্ত পার হয়ে গেলো । কখন যে চোখ লেগে এসেছিলো টেরই পাননি । ম্যাক চেঁচিয়ে উঠাতে পলকা ঘুমটা চলে গেলো ।
সন্ধ্যা হব হব করছে । দ্রুতহাতে সব পর্দা টেনে দেন। বারান্দার দরজা বন্ধ করেন । রুটিনমাফিক কাজ সব । ইশতিয়াক আসবে তো ?
ভোর হয়ে গেলো । এখনো তো এলো না । মধ্যবয়সের এ প্রতীক্ষা বড় অসহ্য লাগে । কোথায় হতে পারে এখন ? অফিসে ? ক্লাব ? কিংবা কারো ফ্ল্যাটে ? শায়লা ভাবতে চান না । বছর কয়েক আগেও কে বিশ্বাস করতো...আর এখন ....স্রেফ নিয়তি...

দুই.
কেটে গেলো আরো একটা দিন  । অফিসের কাজ এখনও ফুরোয়নি ? শায়লা আপনমনে হাসেন  । হঠাৎই মনে হয়-আচ্ছা, ইশতিয়াক নেই,  তবে সে কেন পড়ে আছে তার ফ্ল্যাট আগলে ? বড় অবহেলিত মনে হয় নিজেকে । শিকল নেই কোথাও,  তবু আছে যেন ! চোখ জ্বালা করে । বন্দি ! মায়ার শেকলে ! কার মায়া এ ? সংসারের ? হবেও বা !
হঠাত পাখি দুটোর দিকে চোখ পড়ে । ম্যাক ও মিনি । তারই উপহার । আচ্ছা, ওরা কি শায়লার ভালোবাসা  বুঝতে পারে ? কি মনে হতে পায়ে পায়ে এগিয়ে যান শায়লা । খাঁচার দরজা খুলে ম্যাক কে বের করে  উড়িয়ে দেন। ম্যাক ফিরে তাকায়- মিনি ! শায়লা এবার মিনিকেও উড়িয়ে দেন । একটু হেসে বলেন - ভালো থাকিস । অজান্তেই গলাটা ধরে আসে ।

তিন .
ভোরে বারান্দার দরজা খুলতেই বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়েন শায়লা । রেলিং এর একপাশে জড়সড় হয়ে বসে ম্যাক মিনি । তাকে দেখেই তারস্বরে চেঁচামেচি করতে করতে ছুটে এলো । মাথায় , হাতে বসে , বারবার ঠোঁট ছুঁয়ে যেন বলতে চাইলো - "আমরা ফিরে এসেছি ! আর যাবো না তোমায় রেখে ! " শায়লা হঠাত হৃদয় দিয়ে অনুভব করলেন - ম্যাক মিনি হারিয়ে যেতে গিয়েও ফিরে এসেছে ! তাহলে ইশতিয়াক ও কি পারে না ফিরতে ? তার কাছে ? আসবে...নিশ্চয়ই আসবে ! শায়লার গাল দুটো ক্রমশই জলের ছোঁয়া পায় ।
  মানবীর চোখের জল , পাখির চেঁচামেচি আর সকালের এক টুকরো রোদ-শায়লার বারান্দায় যেন নতুন এক ভোরের বার্তা দিয়ে যায় ...


# আমার লেখা প্রথম গল্প কিংবা বলা উচিত-গল্প লেখার চেষ্টা । বেশ আগে লেখা যদিও । একটা অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে লেখাটা ঘিরে...প্রথম বলেই হয়তো !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×