নভেম্বর ২০০৮, অর্থাৎ সাধারণ নির্বাচন তথা শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দু' মাসের মাথায় পিলখানা বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের প্রচারণা শুরু হয়েছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, তাঁর ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্মতি ও সহায়তায় তা সংঘটিত হয়েছিল। সরকারের উচ্চপদস্থ মন্ত্রী, এম্পিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দেয় নি এবং চাকুরী হারিয়েছে শতাধিক সেনা অফিসার। রহস্য জনক বিমান দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছে অনেক অফিসার।
নভেম্বর ২০০৮ এ সজীব ওয়াজেদ জয় ও জনৈক কার্ল সিভাকোর নামে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জয় ও তার মাকে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে এগিয়ে যাবার প্রস্তুতির ইঙ্গিতের কথা বলা হয়। হাজার হাজার ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গী নিয়োগের জন্য ঐ নিবন্ধে জয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সামরিক ও আধা- সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন।
ভারতের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট লন্ডনভিত্তিক আওয়ামী লীগপন্থী কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী পর্যন্ত বলেছেন, সেনাবাহিনীতে যদি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হিন্দু নিয়োগ করা যায়, তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। তার গবেষণায় পেয়েছেন বলে দাবী করেছেন যে, গত ৭ বছরে সেনাবাহিনীর সব ধরনের নিয়োগে এক তৃতীয়াংশ মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি এ প্রচারণা তুঙ্গে উঠে যে, বিদ্রোহের একদিনমাত্র আগে মহিউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যগণ সেনাবাহিনীর তীব্র নিন্দা করেন যে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । বিদ্রোহের সময় আমাদের একদল পন্ডিত একই ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকে এবং তার অব্যবহিত পরেই বাণিজ্য মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন।
এ পরিকল্পনার কিছুটা বর্তমান ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল জানতেন তবে ঝুঁকি নেয়া ছাড়া তার কোন গত্যন্তর ছিল না। অন্যথায় ২০০৮ সালের শেষ দিকে ৬ কোটি টাকাসহ তাকে তার স্ত্রীর দেশত্যাগের ব্যর্থ প্রচেষ্টার ঘটনায় বিচারের মুখোমুখী হতে হত। জেনারেল মইনের স্ত্রী নাজনীন মইন তাকে এবং তার স্বামীর স্টাফ অফিসার মেজর মাহবুবকে উদ্ধার করেছিলেন।
মেজর জেনারেল শাকিল আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে ষড়যন্ত্র চলছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমীন যিনি পরে শহীদ হয়েছিলেন, ২১ তারিখ সকালে জওয়ানদের লিফলেট পেয়েছিলেন। তিনি দ্রুত তার কাছে ছুটে যান এবং লিফলেটটি দেখান। তিনি তাকে দ্রুত একটি কাউন্টার লিফলেট তৈরি করে তা বিলি করার পরামর্শ দেন। ২৩ তারিখে জানা যায় যে, অস্ত্রাগার থেকে তিনটি এসএমজি খোয়া গেছে। এ কথা্ জানাজানির পরে কর্মকর্তাদেরকে অস্ত্রাগারের দায়িত্ব দেয়া হয় যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক না হলে কখনও সতর্কতা অবলম্বন করা হত না।
নেপথ্যের কুশীলবদের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল; যে গুপ্ত পরিকল্পনাকে অনুধাবনের সুবিধার্থে আমি ২ নং পরিকল্পনা বলে অভিহিত করছি, তা ছিল র' য়ের। জানা গেছে, পুরো কার্যক্রমের জন্য র' ৬০ কোটি রুপী দিয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার জন্য প্রায় ১৫ জন বিদেশী বন্দুকধারী ভাড়া করা হয়েছিল। র' পরিচালনাকারী ও তাদের বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ যারা অর্থের যোগান দিয়েছিলেন, তারা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকার গুলশানের একটি আন্তর্জাতিক ক্লাবে সাক্ষাৎ করেছিল ।সেই সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ছো্টভাইও উপস্থিত ছিলেন্ । ভাড়াকরা খুনীদের দাতা ও সংগঠকরা যাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় ও লাজার শিবাজান নামে রাশিয়ার অপরাধ জগতের এক নেতা ছিল যারা ১৯ তারিখ বা ঠিক তার আগে দুবাইয়ের হোটেল বাব- আল- শামসে বৈঠক করেছিল। সেখানে তারা ভাড়াকরা খুনীদের অপারেশন ও পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিল।
ঢাকার কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে অনুযায়ী ভাড়াকরা বন্দুকধারীরা ১১ তারিখে নয়, ১৯ তারিখের পরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। উভয় দেশের মানুয়ের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য যখন প্রায় ৫ ঘন্টা সীমা্ন্ত খোলা ছিল তখন তাদের কয়েকজন ২১ তারিখে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছিল; একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ১,০০,০০০ মিষ্টির মধ্যে তারা ১৬,০০০ মিষ্টি ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। তবে অন্যরা কিভাবে বা কোন সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছিল তা এখনো অজ্ঞাত । পরিকল্পনাটি ভয়াবহ হলেও সহজ ছিল বৈকি। ভাড়াকরা বন্দুকধারীরা অপারেশনের পূর্বে বিডিআরের ইউনিফর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে; বিডিআর জওয়ানরা যখন ১ নং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেই ভীতি ও ত্রাসের সুযোগে খুনীরা তাড়াতাড়ি প্রেবশ করবে এবং লাল ফিতেধারীদের ( কর্নেল ও উপরস্থ) অর্ধেককে খতম করবে। তারপরে তারা অন্য বিদ্রোহীদেরকে তাদের সাথে হত্যালীলায় যোগ দেবার জন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যবহার করবে এবং ৪ নং গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। একটি পিক-আপ দিয়ে তাদের ব্যবহার্য অস্ত্রশস্ত্র বহন করা হবে।
বিডিআরের কুশীলব, আওয়ামী লীগ এম.পি মির্জা আজম, হাজী সেলিম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ফজলে নূর তাপস এবং মহীউদ্দীন খান আলমগীর বেশ কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন এবং তোরাব আরী বিডিআর জওয়ান ও তাপস, নানক, আজম ও সোহেল তাজের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন।
স্থানীয় এম.পি. হবার সুবাদে তাপসের সংশ্লিষ্টতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল; নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি জড়িত হয়েছিলেন। তাপসের ঢাকা- ১২ আসনে প্রায় ৫,০০০ বিডিআর ভোটারকে নিবন্ধিত করা হয়েছিল। বিডিআরের কুশীলবরা সাবেক বিডিআর হাবিলদার ও ঢাকার ঢাকা- ১২ আসনের অন্তর্ভুক্ত ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি তোরাব আলীর মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখত।
বিদো্রহ ও হত্যাযজ্ঞের পূর্বে সবশেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২৪ তারিখে সন্ধ্যায় তোরাব আলীর বাড়িতে; একই্ রাত্রে তাপসের ধানমন্ডির বাড়িতে প্রায় ২৪ জন বিডিআর খুনী তাদের চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করে।
এ গুপ্ত পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী, তার চাচাতো ভাই তথা তাপসের চাচা শেখ সেলিম এম.পি, আব্দুল জলিল এম.পি. নানক, তাপস, সোহেল তাজ, মির্জা আজম, হাজী সেলিম, মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অন্য কয়েকজন সদস্যের জ্ঞাত ছিল। ১৩ তারিখ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় অন্ততঃ একটি বৈঠক হয়েছিল; বনানীর বাসিন্দা সোহেল তাজ সেখানে যোগ দিয়েছিলেন; এতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ সোহেল তাজের দায়িত্ব স্থির করা হয়েছিল। অকারণে শেখ সেলিম ২৫ ও ২৬ তারিখে বাসার বাইরে রাতযাপন করেননি।
আলমগীর, নানক ও আজম বরাবরই সেনা কর্মকর্তাদেও ধ্বংস করার পক্ষে ছিলেন। তারা যখন প্রধানমন্ত্রীর নিকট পরিকল্পনা উত্থাপন করেন তখন তিনি প্রথমত সম্পূর্ণভাবে গণহত্যার ব্যাপাওে দ্বিধাম্বিত্ ছিলেন। তবে তিনি ভয়াবহ বিদ্রোহের সপ্তাহখানেক পূর্বে ডিজি, তার স্ত্রী ও কর্নেল মুজিবকে অপসারণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। ১২ এপ্রিল গ্রেফতারকৃত বিডিআর কুশীলবদের জিজ্ঞাসাবাদে টিএফআই সেলে র্যাবের কর্মকর্তারা এ সকল তথ্য উদ্বৃত করেন এবং পরে তার সত্যতা প্রমাণ করেন। তারা আরও জানতে পারেন যে, ডিজি, তার স্ত্রী আকস্মিক গুলিতে মারা গেলে জেনারেল মইনকে আবেগায়িত না হতে বলা হয়েছিল; তার মৌনতা এ প্রস্তাব মানা ও অনুমোদনে সায় দিয়েছিল। ডিজি ও তার স্ত্রীকে হত্যায় ফাঁদে আটকে পড়া জেনারেলের অনুমোদন দানের যথেষ্ট কারণ ছিল; কারণ তাতে অবৈধ অর্থ উপার্জনে চোরাচালানের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় তার অংশীদারের মৃতু্য। তখন কেউ ঐ অপরাধের সাথে তাকে ও তার স্ত্রীকে জড়াতে পারবেনা। ডিএডি তৌহিদ, জলিল ও হাবিবসহ বিডিআরের প্রধান হোতারা ২ নং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানত।
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস নিশ্চিত করতে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের দায়িত্ব ছিল অন্যদিকে ফজলে নূর তাপসের দায়িত্ব ছিল হাজারীবাগ ও ঝিগাতলা এলাকা দিয়ে বিডিআর খুনীদের পলায়ন নিশ্চিত করা। তাপসের সাথে নানকের বাড়তি দায়িত্ব ছিল ২৫ তারিখ রাতে ভাড়াকরা খুনীদের এমবুলেন্সে করে নিরাপদে যেতে দেয়া এবং ২৬ তারিখের মধ্যে সকল খুনীর পলায়ন নিশ্চিত করা। তাদের এয়াপোর্টে যাবার পথে খুনীদেরকে মাইক্রোবাসে স্থানান্তর করা হবে। তাদের মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ পলায়নে নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল সোহেল তাজের। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দেরী হলে প্রয়োজনে এ উদ্দেশ্যে বিজি ০৪৯ ফ্লাইট ব্যবহার করা হবে।
ঠান্ডা মাথায় হত্যাকান্ড সংঘটনের জন্য নানক সুবিদিত যে জরম্নরী অবস্থাকালীন সময়ে ভারতে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপদ হাউস এর অন্যতম মেহমান ছিল। তাকে ২৫ তারিখ দুপুর থেকে পীলখানার অভ্যনত্দরের সামগ্রিক কমান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়; যা স্থানীয় সরকারের মন্ত্রনালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী হিসেবে তার দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। নানক এটা নিশ্চিত করেছিল যে বিদ্রোহে নিহত সেনা অফিসারদের লাশ ২৫ ও ২৬ তারিখের রাতে গণকবরে পুতে ফেলা ও দরবার হলকে ধুয়ে মুছে সাফ করা, যাতে হত্যাযজ্ঞের কোন চিহ্ন না থাকে।
বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা যাতে যথাযথ লক্ষ্য হাসিলে সর্বাত্মকভাবে তৎপর হয় তার জন্য ফেব্রুআরীর শুরু থেকে শেষ পর্যনত্দ প্রায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। প্রতিটি সেনা অফিসারকে হত্যার জন্য ৪ লক্ষ্য টাকার এ্রনাম নির্ধারন করা হয়। রিং লীডারদের অর্থের পরিমাণ ছিল আরও অনেক বেশী। হত্যাকারীদের সাথে অতি উৎসাহী হয়ে যারা পরবর্তীতে হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত হয় তাদেরকে বিদ্রোহের বা ধ্বংস যজ্ঞের আগে পরে অতিরিক্ত কোন অর্থ প্রদাণ করা হয়নি। পরিকল্পনা -১ এর সাথে সম্পৃক্তরা এমপি তাপস এর মাধ্যমে আর ডি এ ডি'র অনুগতরা নানকের চ্যানেলের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। সোহেল তাজ ও জয় ভাড়া করা খুনীদের অর্থ প্রদান করে। হত্যাযজ্ঞ সংঘটনে প্রথম দিকে কিছু আগাম অর্থ দুবাইয়ের হোটেল বাব-আল-শামস এ প্রদান করা হয়।
পরিকল্পনা ছিল যদি শেখ হাসিনা সেনা অভিযান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ভারতে এস ও এস বার্তা প্রেরণ করবে এবং তার প্রেক্ষিতে আকাশ পথে ভারতীয় সেনা অভিযান চালানো হবে। আর তেমন পরিস্থিতিতে সারাদেশের বিডিআর ইউনিট সমুহ ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তখন বহিবিশ্ব দেখবে যে বাংলাদেশ এ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে অতএব সে অবস্থায় তারা হাসিনা সরকারকে বাঁচানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ প্রহণ করবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জী ঘোষণা দেন যে শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিপর্যসত্দ অবস্থায় পতিত হলে সেই সরকারের সহযোগিতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী এগিয়ে আসবে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র মতে সেই সময় আসামের জোরাট বিমান ঘাটিতে বড় ও মাঝারি ধরনের এয়ারফোর্স বিমান সহ প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সেনাকে প্রস্তুত রাখা হয়।
সম্ভাব্য তেমন আপদকালীন অবস্থায় যাতে হাসিনা সরকার পার পেয়ে যায় তার জন্য অনভিজ্ঞ সাহেরা খাতুনকে গুরম্নত্বপূর্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিদ্রোহ ঘটানোর হোতাদের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করতে দেয়া হয় যে হোটেলের মালিক হচ্ছে সাহারা খাতুনের এক ভাই। ঐ হোটেলে ষড়যন্ত্র বাসত্দবায়নের বহু গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল সাহারা খাতুনের জন্য এক ফাঁদ। যদি ভুলক্রমে কোনভাবে বিদ্রোহের সাথে সরকারের সম্পৃক্ততার কথা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে বলির পাঁঠা বানানো হতো এই সাহেরা খাতুনকে। তাকে অপসারন করে সোহেল তাজকে বসানো হতো পূর্ন মন্ত্রীতে।
আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বসাকুল্যে সেনাবাহিনীর ৫৫ জন অফিসার শহীদ হয়। তাদের মধ্যে সবাই যুদ্ধে নিহত হয়নি; কেউ কেউ সড়ক দূর্ঘটনা সহ অন্যবিধ কারনেও মৃতু্যবরণ করে। সেনা বাহিনীর কোন সেক্টর কমান্ডার এই মৃতু্য তালিকায় ছিল না। অথচ বিডিআর বিদ্রোহে মাত্র দুই দিনের মধ্যে হত্যা করা হলো ২ জন মেজর জেনারেল, ২ জন ব্রিগেডিআর জেনারেল, ১৬ জন কর্ণেল, ১০ জন লেন্ট্যানান্ট কর্ণেল, ২৩ জন মেজর, ২ জন ক্যাপ্টেন, মেডিক্যাল কোরের ৩ জন অফিসার।
২৪শে ফেব্রম্নয়ারী রাত ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঢাকার ঝিকাতলাস্ত একটি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক আতাউর তার মোবাইল থেকে বিডিআর এর ডিজিকে একটি ফোন করে বিডিআর এর ডিজি শাকিলকে এই মর্মে জানায় যে, স্যার আপনাকে কালকে পীলখানায় মেরে ফেলবে। আপনি কালকের অনুষ্ঠানে যাবেননা্ তার এই ফোন কল, র্যাব হেড কোয়াটার আড়িপেতে শুনে এবং কিছু সময়ের মধ্যে আতাউরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর তাকে অবশ্য ছেড়ে দেয়া হয়। র্যাব এবং এডিজি কর্ণেল রেজা নুর অনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য টিএফআই সেলকে প্রদান করে। এতদসত্বেও আমার জানা মতে এমন একটি তথ্য কোন তদনত্দ রিপোটেই উল্লেখ করা হয়নি।
২৫ তারিখ সকাল পৌনে নয়টার সময় গোয়েন্দা সংস্থা এন এস আই এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পীলখানায় বিদ্রোহ শুরু হবে। একই তথ্য সেনাবাহিনী প্রধানকেও দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কোনরম্নপ পাল্টা ব্যবস্থা প্রহন করেনি। সেনাপ্রধানও বিষয়টাতে নীরবতা অবলম্বন করে। পীলখানায় বিদ্রোহের শুরুতেই বিডিআর এর ডিজি প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান ও ডিজিএফআই এর ডিজিকে ফোন করলে তারা অবিলম্বে তাকে সাহায্য করার অঙ্গীকার করে। কর্ণেল গুলজার (?) সেনাবাহিনীর সিজিএস এবং ডিএমও'র সাথে কথা বলে এবং র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার লে: ক: জামান এর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রেরনের অনুরোধ জানায়।
ভাগ্যাহত অফিসারদের অনেকের স্ত্রী বিদ্রোহ শুরু হলে সেনা প্রধান মঈনের স্ত্রীকে সাহায্যের জন্যে ফোন করলে মঈনের স্ত্রী এ মর্মে ফোনে বকবকনো করতে থাকেন যে, ইনকামিং কল তিনি কিছুই শুনতে পারছেননা। তার এই চাতুর্যপূর্ণ ভূমিকা থেকে এটা আরো একটু বুঝা যায় যে বিদ্রোহে তার স্বামীর ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক।
সকাল সাড়ে দশটায় র্যাব ১০ এর অফিসাররা পীলখানার ৫নং গেট সংলগ্ন নিচু উচ্চতার দেয়ালের নিকটে পেঁৗছে যে দেয়াল দ্বারা সনি্নহিত বেসামরিক এলাকা থেকে বিডিআর সদর দফতরকে আলাদা করা হয়েছে। ঐ জায়গাটা ছিল বিদ্রোহ দমনে ঝটিকা অভিযান শুরু করে সদর দফতরকে মুক্ত করার সবচাইতে উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু সাড়ে এগারটার দিকে র্যাব এর এডিজি কর্ণেল রেজা নূর র্যাব-১০ অফিসারদের অধিনায়ককে পীলখানা থেকে ৩ মাইল দূরে বেড়ী বাঁধ এলাকায় গিয়ে অবস্থান গ্রহনের নির্দেশ জ্ঞাপন করে। এটা স্বভাবতই জিজ্ঞাস্য যে কার নির্দেশে কিংবা পরামর্শে এবং কেন কর্ণেল রেজা সে নির্দেশ প্রদান করেছিল? বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে তদনত্দ কর্যক্রমে এই সব দিক মোটেই আমলে নেয়া হয়নি। কর্ণেল রেজা নূর এর চাচাতো ভাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সহকারী বাহউদ্দীন নাসিম। সে কারনে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে। যথাসম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী নিজে অথবা তাঁর ঘনিষ্ট মহলের কেউ রেজা নূরকে দিয়ে ঐ কাজটি করিয়ে থাকবে। র্যাব -১০ কে ওখান থেকে সরিয়ে নেয়ায় বিদ্রোহ পরিকল্পনা বাসত্দবায়নে অনেক অনুকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঐ পথ দিয়েই বিদ্রোহীরা সদর দফতরের অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে তার আওয়ামীলীগের কমিশনার তোরাব আলীর বাসভবনে স্থানানত্দর করে যা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মধ্যে বিতরন করা হয় এবং তার চাইতেও বড় সুবিধা যে সে পথ দিয়ে বিডিআর এর হত্যাকারীরা নিরাপদে হাজারীবাগ ও ঝিকাতলা এলাকা দিয়ে বিনা বাধায় পালিয়ে যায়। র্যাব-১০ এর মোতায়েনকে পুন বিন্যস্থ করা ছিল স্পষ্টতই বিদ্রোহীদের অনুকুলে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। আরো উল্লেখ্য যে, র্যাব ১০ এর পাশাপাশি র্যাব ২ এবং ৩ কে ধানমন্ডি এলাকায় মোতায়েন করা হলেও তাদেরকে দিয়ে বিদ্রোহ দমনে কোন উদ্যেগই নেয়া হয়নি। তাদেরকে নড়চড়হীন করে রাখা হয়।
বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চবি্বশ ঘন্টা' বিষ্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর একটি চ্যানেল এনডি টিভি সংবাদ শিরোনামে দেখায় ১২টার সময় এবং আরও সংবাদ প্রচার করে ১২.১৫ মি: এর সময়ে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে এই বিদ্রোহের সংবাদ চাপা রাখা হয় ২৬ তারিখ অপরাহ্ন পর্যনত্দ। অথচ কর্ণেল মজিব ও লে: ক: এনায়েত এর লাশ উদ্ধার করা হয় ২৫ তারিখ বিকেল আড়াইটার সময়। এদিকে বিকেল ৩.৩০মি: এর সময় বাংলাদেশের মিডিয়া ঘটা করে নানক কতর্ৃক নিয়ে আসা ১৪ জন বিডিআর বিদ্রোহীর সাথে চা বিস্কুট খেতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবনে বৈঠক করার খবর প্রচার করা হয়। উক্ত সভা চলে ১৫০ মিনিট। মাঝপথে প্রধানমন্ত্রী একটি টেলিফোন কল রিসিভ করার পর তিনি বিডিআর বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদলকে বলেন, তোমরাতো বিডিআর এর ডিজিকে মেরে ফেলেছো, এই সময় বিডিআর এর ডিএডি তৌহিদ বলে উঠে যে, তাহলে সম্ভবত ডিজি মারা গেছেন এটা রীতিমত অবিশ্বাস্য যে তখন পর্যনত্দ প্রধানমন্ত্রী ও তার মেহমান হিসাবে আসা বিদ্রোহীরা জানতোনা বিডিআর এর ডিজির হত্যাকান্ডের খবর অথচ সকাল ১১ টা থেকে ভারতীয় টেলিভিশনের পর্দায় বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের খবর অবিরত প্রচার করা হচ্ছিল আর ইতিমধ্যে সমগ্র রাজধানীতে এটা নিয়ে ব্যপক আলাপ আলোচনা হচ্ছিল অথবা এটা কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায় যে বিদ্রোহীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তেমন জিজ্ঞাসা নিতানত্দই উদাসীনতা বশত করা হয়েছিল? সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর তেমন অজ্ঞতাসূলভ (?) জিজ্ঞাসার মধ্যে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দলের জন্য একটি বার্তা নিহিত ছিল।
রাত নেমে আসার সাথে সাথে আত্মতৃপ্তিতে বলিয়ান বিডিআর বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দল নানককে সাথে নিয়ে বিডিআর সদর দফতরে প্রত্যাবর্তন করেন। নানক একজন সাহসী নেতা ও বিদ্রোহীদের কাজকে সমর্থন জ্ঞাপনে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে বিদ্রোহীদের দ্বারা সমাদৃত হন। কিছু সময় পরই সাংসদ তাপস সংবাদ মাধ্যমকে জানায় যে ডি এডি তৌহিদ এখন থেকে বিডিআর এর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নাতির এমন ঘোষনা টিভির পর্দায় ভাসতে থাকে হত্যাকারী ও তাদের দুষ্কর্মের সহায়তাকারীরা বুঝতে পারলো যে সেনা অভিযানের আশংকা দূরীভূত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তাপস বিডিআর সদর দপ্তরের অভ্যনত্দরে গিয়ে বিদ্রোহেিদর সবকিছু ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলার নির্দেশ জ্ঞাপন করে। কার্যক্ষেত্রে এটা ছিল হত্যাকান্ডের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা। সেই লাইসেন্স সে অর্থহীন ছিলনা পরবর্তীতে তা সবাই বুঝতে পারে।
সন্ধ্যা রাত্রির দিকে পীলখানা থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে আহতদের স্থানানত্দরের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এটা ছিল একটা বাহানা। ঐ এ্যাম্বুলেন্স এ করে ভাড়াটে খুনীদের বধ্যভূমি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পীলখানা থেকে এ্যাম্বুলেন্স এ বের করে তাদেরকে পূর্ব নির্ধারিত পয়েন্ট এ অপেক্ষমান মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানের বিজি০৫৯ নং বিমানে তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গনত্দব্যে পেঁৗছিয়ে দেয়া হয়।
সাহারা অস্ত্র সমর্পন ও অফিসারদের পরিবার পরিজনদের উদ্ধারের নাটক শুরু করে। সাহারা কেবলমাত্র ওটোশী ভবন থেকে আইজির কন্যা ও বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে জড়িত কর্ণেল কামরুজ্জামানের স্ত্রী ও মিসেস আকবরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এমনকি উক্ত ভবনের দোতালার উপরে তিনি যাননি। উক্ত ভবনের উপরের দিকে অবস্থানকারীরা সহ অন্যান্য আবাসিক ভবনের সবাইকে তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়।...
সাহারা খাতুন পীলখানা ত্যাগ করার পর পরই কর্ণেল আফতাবকে হত্যা করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আগমনে তার মনে হয়তো এই বিশ্বাস হয়েছিল যে বিদ্রোহের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং তাই তিনি তার গোপন স্থান থেকে বের হয়ে এসে তার স্ত্রী ও কন্যার সাথে সাক্ষাত করতে যায়। সে জানতো যে তারা অফিসারস মেসে আছে। কোয়াটার গার্ড অভিমুখে যাওয়ার পথেই তাকে গুলি করা হয়। কর্ণেল রেজাকে হত্যা করা হয় রাত ৩টার পরে। সাহারা খাতুনের প্রত্যাবর্তনের পর কর্ণেল এলাহীকেও হত্যা করা হয়। সে একটি ম্যানহোলে পালিয়ে ছিল। সেখান থেকে বের হলেই তাকে হত্যা করা হয়। এই ভাবে বেশ কয়েকজন অফিসারকে রাতে হত্যা করা হয়।
এই জঘন্য হত্যাকান্ড যখন চলছিল তখন মীর্জা আজমকে অনবরত বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্ট ভাবে কর্ণেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং গুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ জ্ঞাপন করে। কর্ণেল গুলজারকে ঐরুপ বীভৎসভাবে হত্যা করার জন্যে মির্জা আজমের নির্দেশের পিছনে কারন ছিল তার বোনের স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণ করা। কর্ণেল গুলজার তখন, র্যাব গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ছিলেন। তার নেতৃত্বে মির্জা আজমের বোনের স্বামী জেএমবির প্রধান আবদুর রহমানকে তার গোপন আসত্দানায় র্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। কর্ণেল গুলজার ইতিহাসে সিলেট আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাড়াকরা বাড়ী থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও কর্ণেল গুলজার যুবলীগ প্রেসিডেন্ট নানক ও জেনারেল সেক্রেটারী আযমের ব্যক্তিগত আক্রোশের মুখে ছিল উল্লেখ্য যে আওয়ামীলীগ আহুত হরতালের সময় প্রথমবারের মত বাংলাদেশে হরতালে গান পাউডার ব্যবহার করে হোটেল শেরাটনের সনি্নকটে ১১ জন যাত্রীসমেত একটি বিআরটিসি বাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনার সাথে নানক ও আযমের সম্পৃক্তির প্রমানাদি কর্ণেল গুলজার প্রতিষ্টা করে। শেখ হাসিনা তখন যুবলীগের এই দুই নেতাকে এই মর্মে নির্দেশ জ্ঞাপন করে যে 'হয় সরকারী ক্ষমতার নিকট বশ্যতা স্বীকার করো; না হলে রাজপথ জনগনের রক্ত রঞ্জিত করে দাও।' ২০০৮ সালে র্যাবের কাছে আটক থাকার সময় শেখ সেলিম বাস জ্বালানোর সে লোমহর্ষক কাহিনী কর্ণেল গুলজারের নিকট ব্যাক্ত করেন এবং ঘটনা্র সাথে নানক ও আযমের সরাসরি সম্পৃক্তির কথা গুলজারকে জানান। শেখ সেলিমের সে স্বীকারোক্তির অডিও টেপ ইউটিউব এ প্রচার করা হয়। গুলজারকে অমন বীভৎস মৃত্যু ঘটানোর মধ্য দিয়ে নানক আযমরা কেবল যে প্রতিশোধই গ্রহন করেছিল তাই নয় তাদের সেই ঔদ্ধত বাংলাদেশে সৎ ও দেশপ্রেমিক লোকদের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবেও প্রতিষ্টা লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বাড়ীতে বিকেলের দোদুল্যমান বৈঠক যখন চলছিল তখন নানক লাউড স্পীকার এ পীলখানা বিডিআর সদর দফতরের তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থানকারী সকল শহরবাসীকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নেবার নির্দেশ প্রদান করে। পরে রাতের দিকে বিডিআর সদর দফতরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ দরকার ছিল ভাড়াটে ও স্থানীয় হত্যাকারীরা যাতে নিরাপদে সরে যেতে পারে। তোরাব আলী ও তার ছেলে অবৈধ অস্ত্রের ডিলার, সন্ত্রাসী লেদার লিটন এর মাধ্যমে বেসামরিক পোষাক পরিচ্ছেদ সরবরাহ সহ হত্যাকারীদের পালিয়ে যাবার খরচাদি প্রদান করা হয়। উক্ত লিটনকে র্যাব এর আটকাবস্থা থেকে তাপস ও নানকের হসত্দক্ষেপে জানুয়ারী মাসে মুক্ত করা হয়। ঐ দিন রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোট যোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয়া হয়। এই পারাপারে হাজী সেলিমের সহায়তায় তার সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করা হয়। হাজী সেলিম এই কাজে পুরোপুরি সমন্বয় সাধনের দ্বায়িত্ব পালন করে। হাজী সেলিমের লোকজন সেই সময় স্থানীয় লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঢাকার একটি টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোটে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে বলা হয় যে বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু কিছু রাজনৈতিক কর্মী তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।
হাজী সেলিম ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে যা বিদেশী ভাড়াটে খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক এটা জানার পর সে এন এস আইকে এই মর্মে অবহিত করে যে পীলখানায় কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগ রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ জড়িত। ষড়যন্ত্রের নীল নকশামত উক্ত সাংবাদিককে এনএসআই থেকে বলা হয় যে তিনি যেন আর কারো সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ আলোচনা না করেন। বিষয়টির সত্যাসত্য যাচাই বা তদনত্দ না করে এনএসআই গোটা বিষয়টি চাপিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে সদর দফতরের কিছু বাসাবাড়ী থেকে উদ্ধার করতে ভাগ্যাহত অফিসারদের পরিবার পরিজনকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মীর্জা আযম এই মর্মে সতর্ক করে দেয় যে তারা যেনো কেেেনা অবস্থাতেই সংবাদ মাধ্যমকে কিছু না বলে কেননা তখনও তাদের স্বামীরা বিদ্রোহীদের হাতে আটক আছে। নতুন করে এই ধরনের ভয়-ভীতি আতংক ভাগ্যাহতদের পরিবার পরিজনের মনে ঢুকিয়ে দেয়া এবং তার সাথে কিছু আশার সংমিশ্রন ঘটানোর পিছনে সেই দু'ব্যক্তির লক্ষ্য ছিল।
(১) পীলখানার অভ্যনত্দরে বর্বর হত্যাকান্ডের পাশাপাশি পরিবার পরিজনদের নির্যাতন, ধর্ষন সহ অন্যান্য অপরাধের খবর যেন দেশবাসী খুব সত্বর জানতে না পারে।
(২) এটা নিশ্চিত করা যে সেনা অভিযান যেন না করা হয় এবং মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলা সহ রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞের সকল চিহ্ন মুছে ফেলার জন্যে যেন প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়।
২৬ তারিখ রাতেও নানকের নির্দেশে পীলখানায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সেই সময় সকল ধরনের প্রমাণাদি নিশ্চিহ্ন করার জন্যে হত্যা করা সেনা অফিসারদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা সহ হত্যার প্রমানাদি মুছে ফেলার কাজে বিডিআর এর হিন্দু জওয়ানদের নিয়োজিত করা হয়। বর্তমানে আটকাবস্থাধীন মনোরঞ্জন নামে এক হিন্দু জওয়ান ঐ কাজে জড়িত ছিল।
মন্তব্যঃ তথ্যগুলোর মধ্যে অনেকের/গোষ্ঠীর সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য আছে। যা রটে তার কিছুটা হলেও ঘটে।