somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিও তলস্তয়ের ছোটগল্প - গড সীজ দ্য ট্রুথ, বাট ওয়েটস (God Sees the Truth, But Waits)

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভ্লাদিমির শহরে ইভান দিমিত্রিচ আকসিনভ নামে এক তরুণ ব্যবসায়ী বাস করত। তাঁর নিজের দুটি দোকান আর একটা বাড়ি ছিল।

আকসিনভ দেখতে ছিল সুদর্শন, মাথা ভর্তি সুন্দর কোঁকড়ানো চুল, সারাটা দিন হাসিঠাট্টা করে কাটিয়ে দিত, আর গান গাইতে খুব ভালোবাসত। খুব অল্প বয়সেই মদ খাওয়া শুরু করেছিল সে, যখন একটু বেশি খেয়ে ফেলত একেবারে বুনো হয়ে উঠত; কিন্তু বিয়ের পর মদ খাওয়া ছেড়ে দিল, অবশ্য কখনো সখনো টুকটাক একটু খেত।

এক গ্রীষ্মে আকসিনভ নিৎসনি মেলায় যাচ্ছিল, পরিবারের কাছে থেক বিদায় নিল, তাঁর বউ বলল, “ইভান দিমিত্রিচ, তুমি আজকে রওনা দিও না; তোমাকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি আমি।”

আকসিনভ হেসে বলল, “আমি মেলায় যেয়ে পাছে হাসি গানে মেতে উঠি, এই ভয় পাচ্ছ তুমি।”

তাঁর বউ বলল, “জানি না কিসের জন্য ভয় পাচ্ছি আমি; শুধু জানি আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। তুমি শহর থেকে ফিরেছ, যখন তোমার টুপিটা খুললে, দেখলাম তোমার চুলগুলো সব ধূসর হয়ে গেছে।”


আকসিনভ হেসে বলল, “এটা তো শুভ লক্ষণ। দেখো, আমার সব মালপত্র বিক্রি না করে, তোমার জন্য কিছু একটা উপহার না এনে মেলা থেকে ফিরব না আমি।”

এরপর, সে পরিবারের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

অর্ধেক পথ ভ্রমণ করার পর, তার পূর্ব পরিচিত এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা হয়ে গেল, তাঁরা একই সরাইখানায় উঠলেন। এক সাথে চা খেলেন, এরপর পাশাপাশি দুই রুমে ঘুমাতে গেলেন।

অনেক বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমানোর অভ্যেস নেই আকসিনভের, তখনো বাইরে বেশ ঠান্ডা ছিল, তবুও সে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে চাইল, সকাল হবার আগেই তাঁর ঘোড়সওয়ারকে জাগিয়ে তুলে ঘোড়াগুলোকে ঠিক করতে বলল।

এরপর, সরাইখানার মালিকের বাড়ির দিকে গেল সে (তিনি পিছনে একটা কুটিরে থাকতেন), বিল পরিশোধ করে আবার যাত্রা শুরু করল।

পচিশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঘোড়াগুলোকে খাওয়ানোর জন্য সে থামল। সরাইখানার পথের উপর কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বারান্দার পথ ধরে এগোল, একটা সামোভারে পানি গরম করার ফরমাশ দিয়ে গিটারটা বের বাজাতে শুরু করল।

হঠাৎ করেই একটা ট্রয়কা গাড়ি টুং-টাং, টুং-টাং ঘন্টি বাজিয়ে সেখানে এলো, দুই জন সৈনিককে সাথে নিয়ে এক জন অফিসার নামল। আকসিনভের কাছে এসে সে তাকে জেরা করতে শুরু করল, জানতে চাইল সে কে, আর কোথা থেকেই বা এসেছে। আকসিনভ ঠিকঠাক সব প্রশ্নের জবাব দিল, বলল, “এক কাপ চা নিন না আমার সাথে?” কিন্তু অফিসারটি তাকে জেরা করা চালিয়ে গেল, জানতে চাইল, “কাল রাতে কোথায় ছিলেন আপনি? সেখানে কি একা ছিলেন নাকি সাথে পরিচিত অন্য কোন ব্যবসায়ী ছিল? আপনি কি সেই ব্যবসায়ীকে আজ সকালে দেখেছিলেন? ভোর হবার আগেই কেন সরাইখানা ত্যাগ করলেন?”

আকসিনভ বিস্মিত হল কেন সে এই সব প্রশ্ন করছে তাকে, তবুও সে সব কিছুর বর্ণনা দিল যা ঘটেছিল, এরপর যোগ করল, “আপনি আমাকে জেরা করছেন কেন, আমি কি চোর না ডাকাত? আমার নিজের ব্যবসার প্রয়োজনেই ভ্রমণ করছি আমি, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোন প্রয়োজন নেই।”

সৈনিকদের ডাকতে ডাকতে অফিসার বলল, “আমি এই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার, আর আপনাকে জেরা করছি, কারন গতকাল আপনি যে ব্যবসায়ীর সাথে রাতে ছিলেন তাকে আজ গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমরা অবশ্যই আপনার জিনিসপত্র তল্লাশি করে দেখব।”

তাঁরা ঘরের ভিতর ঢুকল। পুলিশ অফিসার আর সৈনিক দুইজন মিলে আকসিনভের মালপত্রের গিঁট খুলে তল্লাশি চালাল। পুলিশ অফিসার হঠাৎ একটা ব্যাগ থেকে একটা ছুরি বের করল, চিৎকার করে জানতে চাইল, “এই ছুরিটি কার?”

আকসিনভ তাকাল, দেখল তার ব্যাগ থেকে একটা রক্ত মাখা ছুরি বের করে আনা হচ্ছে, সে ভয় পেয়ে গেল।

“এই ছুরিতে রক্ত এলো কি করে?”
আকসিনভ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু একটা শব্দও উচ্চারন করতে পারল না, শুধু তোতলালো, “আমি -- জানি না --আমার না।” এরপর, পুলিশ অফিসার বলল, “আজ সকালে সেই ব্যবসায়ীকে তার বিছানায় গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। আপনিই একমাত্র লোক যে এই কাজটি করতে পারে। ঘরটি ভিতর থেকে তালা দেওয়া ছিল, আর কেউ সেখানে ছিল না। এখন আপনার ব্যাগ থেকে এই রক্তমাখা ছুরিটি পাওয়া গেল, আপনার চেহারা, আপনার আচরণ আপনার অজান্তেই সত্য প্রকাশ করে দিয়েছে! আমাকে বলুন, কিভাবে তাঁকে খুন করেছেন আপনি, আর কত টাকা আপনি চুরি করেছেন?”

আকসিনভ শপথ করে বলল সে খুন করে নি; রাতে একসাথে চা খাবার পর সেই ব্যবসায়ীকে সে আর দেখে নি; নিজের আট হাজার রুবল ছাড়া তাঁর কাছে আর কোন টাকা নেই; আর এই ছুরিটিও তাঁর নয়। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর ছিল ভাঙা, চেহারা ফ্যাঁকাসে, এবং ভয়ে কাঁপছিল, এ কারনে দোষী স্যাবস্ত হয়ে গেল সে।

পুলিশ অফিসার আকসিনভকে বেঁধে ফেলে গাড়িতে তোলার নির্দেশ দিল সৈনিকদেরকে। তাঁরা তাঁর পা দুটো একসাথে বেঁধে গাড়িতে ছুঁড়ে ফেলল, আকসিনভ বুকে ক্রুশ এঁকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। টাকা-পয়সা, মালপত্র নিয়ে নেওয়া হল তাঁর কাছে থেকে, এবং তাঁকে নিকটবর্তী শহরে পাঠিয়ে দেয়া হল বন্দী করে রাখার জন্য। ভ্লাদিমিরে তার চরিত্র সম্পর্কে তদন্ত করা হল। ব্যবসায়ী ও শহরের অন্যান্য অধিবাসীরা বলল, আগের দিনগুলোতে সে মদে আসক্ত ছিল এবং সময় নষ্ট করত, কিন্তু সে একজন ভালো মানুষ ছিল। এরপর বিচার শুরু হল : রায়াৎসান শহরের এক ব্যবসায়ীকে হত্যা ও তার কাছে থেকে কুড়ি হাজার রুবল ডাকাতির দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হলো।

আকসিনভের বউ হতাশায় ভেঙে পড়ল, কিভাবে বিশ্বাস করবে বুঝতে পারল না। তাঁর ছেলেরা সবাই ছোট ছোট, একটা শিশু এখনও বুকের দুধ খায়। ওদের সবাইকে নিয়ে শহরে গেল সে, যেখানে তাঁর স্বামীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রথমে তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি পেল না, কিন্তু অনেক মিনতির পর অফিসারদের কাছে থেকে তার অনুমতি মিলল, স্বামীর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁকে। স্বামীকে কয়েদির পোষাক আর শিকল পড়ানো অবস্থায় চোর ও অপরাধীদের সাথে তালাবদ্ধ দেখে পড়ে গেল সে এবং দীর্ঘ সময় ধরে জ্ঞান ফিরে এলো না তাঁর। এরপর, ছেলেদেরকে কাছে টেনে নিয়ে স্বামীর পাশে বসল। আকসিনভকে বাড়ির কথা বলল, জানতে চাইল কি হয়েছিল তাঁর। আকসিনভ তাঁকে সব বলল, বউ জানতে চাইল, “এখন আমরা কি করতে পারি?”
“আমরা অবশ্যই জারের কাছে আবেদন করব যেন একজন নিরাপরাধীকে ধ্বংস হতে না দেন তিনি।”

তাঁর বউ বলল, সে জারের কাছে একটা আবেদন পাঠিয়েছিল, কিন্তু সেটা গৃহীত হয় নি।

আকসিনভ কোন জবাব দিল না, শুধু নিচের দিকে চেয়ে রইল।

এরপর, তাঁর বউ বলল, “আর কিছুই না, আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমার চুল ধূসর হয়ে গেছে। মনে আছে তোমার? ঐদিন তোমার যাত্রা শুরু করা উচিত হয় নি।” আঙুল দিয়ে আকসিনভের চুলে বিলি কাটতে কাটতে সে বলে চলল, “ঈশ্বরের দেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার তুমি আমার প্রিয়তম, তোমার বউকে সত্য বল; যে কাজটা করেছিল সে কি তুমি ছিলে না?”

“তাহলে তুমিও আমাকে সন্দেহ করলে!” আকসিনভ দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। এরপর একজন সৈনিক এসে বলল, তাঁর বউ ও ছেলেদেরকে এখুনি চলে যেতে হবে; আকসিনভ শেষবারের মতো তাঁর পরিবারকে বিদায় জানাল।

ওরা চলে গেলে, আকসিনভ এতক্ষণ ধরে যেসব কথা হয়েছে সেগুলোকে মনে করতে লাগল, যখন মনে পড়ল তার বউও তাকে সন্দেহ করছে, সে আপন মনে বলল, “মনে হচ্ছে শুধু ঈশ্বরই সত্য জানতে পারে; শুধু তার কাছেই পুনর্বিচারের প্রার্থণা করা উচিৎ, শুধু তার কাছে থেকেই করুণা আশা করা উচিৎ।

এরপর আকসিনভ আর কোন আবেদন লিখল না, সব আশা ছেড়ে দিল, শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করে গেল।

আকসিনভকে চাবুক দিয়ে পেটানোর শাস্তি দেওয়া হলো এবং খনিতে পাঠানো হল। একটা গিঁট বাঁধা চাবুক দিয়ে তাঁকে পেটানো হল, এবং যখন গিঁটের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত সেরে উঠল, তাঁকে অন্যান্য কয়েদির সাথে সাইবেরিয়ায় পাঠানো হল।

ছাব্বিশ বছর ধরে কয়েদি হিসেবে আকসিনভ সাইবেরিয়ায় কাটাল। তুষারের মত সাদা হয়ে উঠল তার চুলগুলো, দাড়ি লম্বা, চিকন ও ধূসর হয়ে গেল। তার সব আনন্দ উচ্ছলতা হারিয়ে গেল, নিজেকে ছোট করে ফেলল, হাঁটত ধীরে ধীরে, কম কথা বলত, কখনো হাসত না, কিন্তু প্রায় সব সময় প্রার্থণা করত।
বন্দী থাকার সময় আকসিনভ বুট জুতো বানানো শিখল, অল্প কিছু টাকা যা আয় করল তা দিয়ে 'দ্য লাইভস অব দ্য সেইন্টস’ বইটি কিনল। জেলখানায় যখন পর্যাপ্ত আলো থাকত, তখন সে এই বইটি পড়ত; রবিবারে জেলখানার গীর্জায় বাইবেল থেকে অনুচ্ছেদ পাঠ করত এবং ধর্মসঙ্গীত গাইত; তখনো তার কণ্ঠস্বর অনেক ভালো ছিল।

আকসিনভের নম্রতা আর ধৈর্য্যশীলতার জন্য কারাকর্তৃপক্ষ তাকে পছন্দ করত, তাঁর সহ-কয়েদিরা তাঁকে সম্মান করত; ‘গ্রান্ডফাদার’ ও ‘দ্য সেইন্ট’ নামে ডাকত। যখন তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে কোন বিষয়ে আবেদন করতে চাইত, সব সময় আকসিনভকে তাঁদের মুখপাত্র বানাত। যখন কয়েদিদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যেত, সঠিক জায়গা মনে তাঁরা তাঁর কাছে আসত, বিষয়টির বিচার করার জন্য।

আকসিনভের বাড়ি থেকে কোন খবর পৌঁছত না, এমনকি সেও জানত না তাঁর বউ ও ছেলেরা এখনো বেঁচে আছে কিনা।

একদিন এক দল নতুন কয়েদি এলো জেলখানায়। সন্ধ্যায় পুরনো কয়েদিরা নতুনদের চারিদিকে সমবেত হল, তাঁদের কাছে জানতে চাইল তাঁরা কোন শহর বা গ্রাম থেকে এসেছে, কিসের জন্য তাঁদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আকসিনভ নতুনদের কাছেই বসেছিল, মাথা নিচু করে কথা শুনছিল।

নতুনদের মধ্যে এক জন কয়েদি, ষাট বছর বয়সী, লম্বা, শক্তপোক্ত মানুষ, ঘন করে ছাঁটা ধূসর দাড়ি, অন্যদেরকে বলছিল কিসের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“বেশ, বন্ধুরা,” সে বলল, “স্লেজ গাড়ির সাথে বাঁধা একটা ঘোড়া নিয়েছিলাম শুধু, এরপর গ্রেপ্তার হলাম আমি, আমাকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা হল। বললাম, শুধু দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য এটি নিয়েছিলাম, বাড়ি ফিরে এটিকে চলে যেতে দিতাম আমি; এছাড়া, ঘোড়সওয়ার ছিল আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। তাই আমি বললাম, ‘সব ঠিক আছে।’ ‘না,” তাঁরা বলল, “তুমি এটা চুরি করেছ।’ কিন্তু কিভাবে ও কোথায় আমি চুরি করেছি তাঁরা বলতে পারল না। একটা সময় আমি সত্যি কিছু ভুল করেছিলাম, আইন অনুসারে এখানে আমার অনেক আগেই আসা উচিৎ ছিল, কিন্তু সেই সময়ে আমাকে খুঁজে পায় নি। আমাকে এখন এখানে পাঠানো হলো একেবারে অকারনেই...এহ, আমি আপনাদেরকে মিথ্যে বলেছি; আমি সাইবেরিয়াতে এর আগেও এসেছি, কিন্তু আমি দীর্ঘ সময় থাকি নি।”

“আপনি কোথা থেকে এসেছেন?” কেউ একজন জানতে চাইল।
“ভ্লাদিমির থেকে। আমার পরিবার ঐ শহরেই থাকে। আমার নাম মাকর, আর পরিবারের লোকেরা আমাকে সেমিওনিচ নামেও ডাকে।”

আকসিনভ মাথা তুলে বলল, “আমাকে বলুন, সেমিওনিচ, আপনি কি ভ্লাদিমিরের আকসিনভ ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে কিছু জানেন? তাঁরা কি এখনো বেঁচে আছে?”

“তাদের সম্পর্কে জানি কিনা? অবশ্যই জানি আমি। আকসিনভেরা ধনী, যদিও তাঁদের বাবা সাইবেরিয়া থাকে; আমাদের মতই একজন অপরাধী, আমার ধারণা! আপনার কথা বলুন, গ্রান’ড্যাড, আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন?”

আকসিনভ তাঁর দুর্ভাগ্য নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে না। শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমার পাপের কারনে এই ছাব্বিশ বছর ধরে বন্দী আছি আমি।”

“কি পাপ?” জানতে চাইল মাকর সেমিওনিচ।

আকসিনভ শুধু বলল, “বেশ, বেশ – এটা আমার প্রাপ্যই ছিল।” সে আর কিছু বলল না, কিন্তু তাঁর সাথীরা নতুনদেরকে বলল কিভাবে আকসিনভ সাইবেরিয়ায় এলো, কিভাবে কেউ একজন ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল, এবং আকসিনভের মালপত্রের মধ্যে ছুরিটি রেখেছিল, আর আকসিনভ অন্যায়ভাবে দণ্ড পেল।

মাকর সেমিওনিচ এটা শুনে আকসিনভের দিকে তাকাল, নিজের হাঁটুতে চপেটাঘাত করে বিস্ময় নিয়ে বলল,”বেশ, এটা বিস্ময়কর! সত্যিই বিস্ময়কর! কিন্তু আপনি কতটা বুড়িয়ে গেছেন গ্রান’ড্যাড!”

অন্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল কেন সে এত আশ্চর্য হল, আকসিনভকে আগে কোথায় দেখেছে কিনা; কিন্তু মাকর সেমিওনিচ কোন উত্তর দিল না। সে শুধু বলল, “এটা বিস্ময়কর, আমাদের এখানে দেখা হয়ে গেল, বৎস্য!”

এই কথাগুলো আকসিনভকে বিস্মিত করল, হয়ত এই লোকটি জানে কে ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল; তাই সে বলল, “সেমিওনিচ, সম্ভবত, এই বিষয়ে আপনি শুনেছিলেন, অথবা আপনি আমাকে আগে হয়ত দেখেছেন?”

“আমি কিভাবে শুনব? এই পৃথিবীটা গুজবে ঠাসা। কিন্তু এটা অনেক আগের কথা, আমি যা শুনেছিলাম ভুলে গেছি।”

“সম্ভবত আপনি শুনেছিলেন কে ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল?” জানতে চাইল আকসিনভ।

মাকর সেমিওনিচ হেসে উত্তর দিল, “এটা অবশ্যই সে যার ব্যাগে ছুরিটি পাওয়া গেছে!
যদি কেউ সেখানে ছুরিটি লুকিয়ে রাখে, প্রবাদে বলে ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সে ধরা না পড়ে সে চোর নয়।’ কিভাবে কেউ একজন আপনার ব্যাগে ছুরিটি রাখতে পারল, যখন এটা আপনার মাথার নিচে ছিল? এটা অবশ্যই আপনাকে জাগিয়ে তুলত।”

আকসিনভ এই কথাগুলো শুনে নিশ্চিত হয়ে গেল, এই সেই লোক যে ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে। সে উঠে চলে গেল। সারাটা রাত আকসিনভ বিছানায় শুয়ে জেগে রইল। ভয়ানক অসুখী বোধ করল, সব ছবি তার মনে জেগে উঠল। তাঁর বউয়ের ছবি, বউয়ের কাছে থেকে বিদায় দিয়ে মেলায় যাচ্ছিল সে ছবি। সে তাঁকে দেখল, যেন সে এখানেই আছে; তাঁর মুখ, চোখ দুটি চোখের সামনে ভেসে উঠল; সে তাঁর কণ্ঠ, তাঁর হাসি শুনতে পেল। এরপর সে তাঁর ছেলেদেরকে দেখল, সেই সময়ে ওরা ছিল বেশ ছোট; একজন ছোট আলখেল্লা পড়া, অন্যজন মায়ের কোলে। আর এরপর, নিজেকে মনে পড়ল, তাঁর থাকার কথা ছিল তরুন ও প্রফুল্ল। তাঁর মনে পড়ল কিভাবে সে সরাইখানার বারান্দায় বসে গিটার বাজাচ্ছিল, যেখানে সে গ্রেপ্তার হয়েছিল, সে কতটা দুশ্চিন্তা মুক্ত ছিল। তাঁর মনে ভেসে উঠল, সেই জায়গা যেখানে তাঁকে চাবুক দিয়ে পেটানো হয়েছিল, যে চাবুক মেরেছিল, তাঁকে ঘিরে দাঁড়ানো লোকগুলো; সেই শিকল, সেই সব কয়েদি, তাঁর বন্দী জীবনের সেই ছাব্বিশ বছর, তাঁর অকাল বার্ধক্য। এই সব ভাবনায় নিজেকে এত হতভাগা মনে হলো, সে নিজেকেই নিজে হত্যা করতে তৎপর হয়ে উঠল।

“ঐ বদমায়েশটার জন্যই এত কিছু!” আকসিনভ ভাবল। মাকর সেমিওনিচের বিরুদ্ধে তাঁর এত ভয়ানক রাগ হল, সে প্রতিশোধ নেবার আকাঙ্ক্ষা করল, এমনকি এর জন্য নিজেকে ধ্বংস করে দিয়ে হলেও। সে সারা রাত বার বার প্রার্থণা করল, কিন্তু কোন শান্তি পেল না। দিনের বেলা সে মাকর সেমিওনিচের কাছেও ঘেঁষল না, এমনকি তাঁর দিকে তাকালও না।

এভাবে এক পক্ষকাল কেটে গেল। আকসিনভ রাতে ঘুমাতে পারত না, অবস্থা এতই দুর্বিষহ হয়ে উঠল, সে বুঝতে পারল না কি করবে।

এক রাতে সে হাঁটাহাটি করছিল, সে খেয়াল করল জেলখানায় বন্দীরা যে তাকগুলোতে ঘুমায় তার একটির নিচ থেকে কিছু মাটি গড়িয়ে আসছে। কী ঘটছে এটা জানার জন্য সে থামল। তাকের নিচ থেকে হটাৎ মাকর সেমিওনিচ হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলো, আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে আকসিনভের দিকে তাঁকাল সে। আকসিনভ তাঁর দিকে না তাকিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল, কিন্তু মাকর তাঁর হাত ধরে ফেলল, বলল, সে দেয়ালের নিচে একটা গর্ত খুঁড়েছে, আলগা মাটিগুলো তার উঁচু বুট দুটোতে ভরত, এবং প্রতিদিন রাস্তায় এসে খালি করত, যখন বন্দীদেরকে কাজের জন্য নিয়ে সা হতো।

“বুড়ো, আপনি একদম চুপ করে থাকবেন, তাহলে আপনিও বেরিয়ে যেতে পারবেন। যদি আপনি বোকার মতো ফাঁস করে দেন, ওরা চাবকিয়ে আমার জীবন বের করে নিবে, তবে এর আগেই আমি আপনাকে খুন করব।”

আকসিনভ রাগে কাঁপছিল যেন সে তার শত্রুর দিকে তাকাচ্ছিল। সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আমার পালানোর ইচ্ছে নেই, আর আমাকে হত্যা করার প্রয়োজন নেই আপনার; আপনি আমাকে অনেক আগেই হত্যা করেছেন। আপনাকে শুধু এটুকুই বলার আছে -- ঈশ্বর যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমি তাই করব অথবা করব না।”

পরের দিন, যখন কয়েদিদেরকে কাজের জন্য বাইরে নিয়ে আসা হল, নিরাপত্তারক্ষী সৈনিকরা লক্ষ্য করল, বন্দীদের ভিতরে কেউ একজন বা অন্য কেউ তার বুট জুতো দুটি দিয়ে কিছু মাটি এনে ফেলেছে। জেলখানা তল্লাশি করে একটা সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া গেল। গভর্নর এসে কে গর্ত খুঁড়েছে এটা বের করার জন্য সকল বন্দীকে জেরা করল। সকলেই অস্বীকার করল এই বিষয়ে কোন জানাশোনার ব্যপারে। যে জানত, সে মাকর সেমিওনিচের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করল না, জানত তাঁকে প্রায় মৃত্যু পর্যন্ত চাবুক দিয়ে পিটানো হবে। অবশেষে গভর্নর আকসিনভের দিকে ফিরল, যাকে সে জানত একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে, বলল, “আপনি একজন বিশ্বস্ত বৃদ্ধ মানুষ; ঈশ্বরকে সামনে রেখে আমাকে বলুন, কে গর্ত খুঁড়েছে?”

মাকর সেমিওনিচ এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যেন সে মোটেই সংশ্লিষ্ট নয়, আকসিনভের দিকে বেশি একটা পলক না ফেলে বরং গভর্নের দিকে চেয়ে রইল। আকসিনভের ঠোঁট ও হাত কেঁপে উঠল, এবং অনেকক্ষণ ধরে সে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না। সে ভাবল, “কেন আমি তাঁকে আড়াল করব যে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিল? আমি যেই কষ্ট সয়েচি সেটা তাঁকে পরিশোধ করে দিতে দেওয়া হোক। কিন্তু আমি যদি বলে দেই, তাঁরা হয়ত চাবুকপেটা করে তাঁর জীবন বের করে দেবে, হয়তবা আমি তাঁকে ভুলভাবে সন্দেহ করছি। আর, সব শেষে, এতে আমার কী ভালো হবে?”

“বেশ, বুড়ো,” গভর্নর পুনরায় জানতে চাইল,”আমাকে সত্যি করে বলুন; দেয়ালের নিচে কে খুঁড়েছে?”
আকসিনভ মাকর সেমিওনিচের দিকে এক পলক তাকাল, বলল, “মহামান্য, আমি বলতে পারি না। এটা ঈশ্বরের ইচ্ছে নয় যেন আমি বলি! আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করুন; আমি আপনার হাতে।”

যাইহোক, গভর্নর অনেক চেষ্টা করল! আকসিনভ কিছুই বলল না আর, তাই বিষয়টা এখানেই পড়ে রইল।

সেদিন রাতে, যখন আকসিনভ তার বিছানায় শুয়ে মাত্রই ঘুমে ঢুলে পড়তে শুরু করেছে, কেউ একজন নীরবে এসে তার বিছানার উপর বসল। সে অন্ধকারের মধ্যে অর্ধনিমীলিত চোখে তাকিয়ে মাকরকে চিনতে পারল।

“আমার কাছে আপনি আর কী চান?” জিজ্ঞাসা করল আকসিনভ। “কেন আপনি এখানে এসেছেন?”

মাকর সেমিওনিচ চুপ করে রইল। তাই আকসিনভ উঠে বসল, বলল, “আপনি কী চান? চলে যান, অথবা আমি গার্ড ডাকব!”

মাকর সেমিওনিচ ঝুঁকে আকসিনভের আরও কাছে গেল, একান্তে বলল, “ইভান দিমিত্রিচ, আমাকে ক্ষমা করে দিন!”

“কিসের জন্য?” জিজ্ঞেস করল আকসিনভ।

“আমিই সে যে ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল এবং আপনার জিনিসপত্রের মধ্যে ছুরি লুকিয়ে রেখেছিল। আমি আপনাকেও হত্যা করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু বাইরে একটা শব্দ শুনলাম, তাই আপনার ব্যাগে ছুরিটি লুকিয়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে যাই।”

আকসিনভ চুপ করে রইল, বুঝতে পারছিল না কি বলবে। মাকর সেমিওনিচ দ্রুত বিছানা থেকে নেমে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসল। “ইভান দিমিত্রিচ,” সে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিন! ঈশ্বরের ভালোবাসার দোহাই, আমাকে ক্ষমা করে দিন! আমি অপরাধ স্বীকার করে বলব, আমিই সে যে ব্যবসায়ীকে খুন করেছে, আর আপনি মুক্তি পেয়ে আপনার বাড়ি চলে যেতে পারবেন।”

“এটা বলা আপনার জন্য সহজ,” আকসিনভ বলল, “কিন্তু আমি যন্ত্রণা সয়েচি এই ছাব্বিশ বছর ধরে। আমি এখন কোথায় যেতে পারব? ... আমার বউ মরে গেছে, আর আমার ছেলেরা আমাকে ভুলে গেছে। আমার কোথাও যাবার নেই...”
মাকর সেমিওনিচ উঠল না, মাথা দিয়ে মেঝেতে আঘাত করতে লাগল। “ইভান দিমিত্রিচ, আমাকে ক্ষমা করে দিন!” সে কেঁদে ফেলল, “যদি তাঁরা আমাকে গিঁট বাঁধা চাবুক দিয়ে মারত সেটা সহ্য করা এত কঠিন ছিল না, যতটা না আপনাকে দেখে এখন হচ্ছে... এত কিছুর পরও আপনি আমাকে করুণা করলেন, আর কিছুই বললেন না। যিশু খ্রিস্টের দোহাই আমাকে ক্ষমা করে দিন, কতটা জঘন্য আমি!” ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল সে।

যখন আকসিনভ তার ফুঁপিয়ে কান্না শুনতে পেল, সেও চোখের পানি ফেলে বলল, “ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন! হয়ত আমি আপনার চেয়েও শতগুণ খারাপ লোক।” আর এই কথা বলার পর তার হৃদয় হালকা হয়ে এলো, বাড়ি ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার পিছে পড়ে রইল। এই জেলখানা ছেড়ে যাওয়ার আর কোন ইচ্ছে তার রইল না, শুধু তার শেষ সময় আসার আশায় পড়ে রইল।

আকসিনভ যা বলেছিল তা সত্ত্বেও, মাকর সেমিওনিচ তার অপরাধ স্বীকার করে নিল। কিন্তু তার মুক্তির আদেশ যখন এলো, ততক্ষণে আকসিনভ মরে গেছে।

মূল গল্পটি এখান থেকে পড়ুন।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×