অনেক বছর আগে, ১৯৫২ সালে । যখন আমার জন্মতো দূরে থাক আমার বাবারও জন্ম হয় নাই, তখন কয়েকজন দেশপ্রেমিক বাঙালি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন । কয়েকজনের নামও জানি । রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকে । এই ঘটনা আমরা স্বচক্ষে দেখিনি । কেবল বইয়ের পাতায় পড়েছি । সেই ২য় শ্রেণী থেকে শুরু করে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত (আমি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি ২০১৩ সালে এইচ এস সি দিয়েছি) । হয়তোবা ভবিষ্যতেও পড়ব ।
এই ব্যক্তিরা প্রাণ দিয়েছিলেন মাতৃভাষা বাংলাকে বাঁচাতে । কিন্তু কাদের হাত থেকে ? পাকিস্তানি উর্দুভাষীদের হাত থেকে । শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রাণদান বিফল হয়নি । পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছিল । এরপর বাংলা ভাষা দিন দিন শুধু সমৃদ্ধ হয়েছে । বাংলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা । ২১শে ফেব্রুয়ারী হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । আফ্রিকান দেশ সিয়েরা লিওনে বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে ।
এত সম্মানের পরেও বাংলা ভাষার জীবন আজ হুমকির মুখে । আধুনিক ছেলে মেয়েরা আজকাল বাংলিশ ভাষায় কথা বলে । আরো আধুনিক বাচ্চারা হয়ে উঠছে ডোরেমন প্রজন্ম । তারা বাংলার চেয়ে হিন্দী ভাষা বেশি সুন্দর করে বলতে পারে । আধুনিক মায়েরা আবার স্টার জলসা আর জি বাংলা না দেখলে রাতে ঘুমাতে পারেন না । আর তাঁদের সাথে তাঁদের মেয়েরা তো আছেই । এক পাখি ড্রেস কত মানুষের ঈদ মাটি করেছে আল্লাহই জানেন ।
এটাতো গেল বাইরের চ্যানেলের কথা । এবার বাংলাদেশের নিজস্ব টিভি চ্যানেলের কথায় আসি । ঈদের তৃতীয় দিন সকালে ১০টা কি ১১টা বাজে । একুশে ইটিভি নামক বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম, সানি লিওনের "বেবী ডল" গানের সাথে নাচ চলতেছে । এরপর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার "Exotic" ও বাদ পড়ল না । একুশে ইটিভির মত স্বনামধন্য একটা চ্যানেলে প্রচার করার জন্য কি আর কোনো অনুষ্ঠান ছিল না ?
ভারতে নাকি বাংলাদেশী চ্যানেল সরকারীভাবে বন্ধ । আমি জানিনা কতটুকু সত্য । তবে আমার কাছে সত্য বলেই মনে হয় । ভারত সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চিন্তা জীবনেও করবে না । উলটো তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী । কিন্তু আমরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে তা কিনে আনছি আর নিজেদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছি । জানিনা কবে সেই দিন আসে যেদিন এই বাংলাদেশে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে, আর আমাদেরকে মিছিল বের করতে হবে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" বলে ।