গত ২২ নভেম্বর ২০১৪ একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হল । মানুষ যে কতটা খারাপ হতে পারে তার নমুনা দেখলাম । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ঢাকায় ফিরলাম ট্রেনে । রাত ১০ টায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে নামলাম । স্টেশন থেকে হেঁটেই আমার বাসায় আসা যায় । তাই প্ল্যাটফরমে হাঁটছিলাম । প্ল্যাটফরমে আমার পাশাপাশি আরো ২ জন ছিলেন । তাঁরা রাজশাহী থেকেই এসেছেন । ট্রেনে পরিচিত হয়েছিলাম । আমরা ৩ জনেই দেখলাম প্ল্যাটফরমে বসে এক মহিলা তার বাচ্চাকে স্তন্যপান করাচ্ছিল । মহিলাকে দেখেই বোঝা যায়, পাগলি । আমরা তার কাছাকাছি আসতেই জুতা দেখিয়ে বলল, “আমারে লইয়া যদি নাচস তাইলে এক্কেবারে জুতা দিয়া পিটাইয়া দিমু । শালা ভদ্রলোকের বাচ্চারা ।” এই পাগলিকে হয়তোবা কোন ভদ্রলোকের লেবাসধারী পশু অত্যাচার করেছিল । তাই সে আমাদের দেখে ক্ষেপে গিয়েছে । আসলেই মানুষ কতটা নীচ হলে এমন কাজ করতে পারে !!!!
স্টেশনে মানুষের অভাব নেই । কেউ মাত্রই ট্রেন থেকে নামল । আবার কেউ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় । কিন্তু এরা ছাড়াও আরো একদল মানুষ থাকে স্টেশনে । যাদের যাওয়ার মত কোনো জায়গা নেই । তারা স্টেশনেই থাকে । স্টেশনই এদের প্রথম ও শেষ ঠিকানা । স্টেশনে যারা থাকে তাদের মধ্যে ছেলেরা সারাদিন এখানে ওখানে কাজ করে । কেউ কাগজ কুড়ায়, কেউ হোটেলে কাজ করে, কেউ কুলিগিরি করে । আরো নানারকম কাজ করে । মেয়েরা কেউ কেউ খবরের কাগজ বিক্রি করে । সারাদিন যে যা করুক, রাতের বেলায় ঠিকই তারা হাজির হয় স্টেশনে, ঘুমানোর জন্য । ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় মোটামুটি শান্তিতেই ঘুমায় । কারণ মেয়েদের উপর রাতের বেলায় শুরু হয় অনৈতিক-পৈশাচিক অত্যাচার ।
আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এই মেয়েরা কখনোই চায় না অত্যাচারের শিকার হতে । কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কখনো পেটের দায়ে তাদেরকে এই অত্যাচার সহ্য করতে হয় । ৯ বছর বয়সী বাচ্চা মেয়ে থেকে শুরু করে যে কোনো মেয়েই এই অত্যাচারের শিকার হয় । এদের পেটের ক্ষুধাকে পুঁজি করে কিছু মানুষরূপী পশু এদেরকে প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে যাচ্ছে । সোজা কথায় বলতে গেলে ধর্ষণ করে যাচ্ছে । এই অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীকে দেখার মত কেউ নেই । অন্যদের কথা কি বলব ? আমি নিজেও হয়ত কতদিন এদেরকে দেখে দুই হাত দূর দিয়ে হেঁটে গেছি যাতে ধারে কাছে ঘেঁষতে না পারে ।
এই মানুষগুলোর উপরেও মানুষের দরদ কিছু কিছু সময় উথলে উঠে । যেমন নির্বাচনের আগে শীতের সময় । এই সময় নেতাগণ শীতের পোশাক, কম্বল ইত্যাদি বিতরণ করেন, যাতে তারা ভোট দেয় । এছাড়া কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য ঈদের পোশাক বিতরণ করে এদেরকে বিলবোর্ড বানায় । আরো অনেক উদাহরণ আছে যা আমি না বললেও চলে ।
আমি জানিনা আমি এদের জন্য কি করতে পারব । তবে কোনদিন এদের উপকার করতে পারি আর না পারি, ক্ষতি করব না । আসুন আমরা এই মানুষগুলোকে ওদের নিজেদের মত করেই বাঁচতে দেই । তাহলেই ওরা সুখী হবে । অনেক সুখে থাকবে ওরা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৯