আমাদের অনেকের বাড়িতে এক জন বা দুজন গৃহকর্মী আছে। গ্রাম থেকে আসা এসব মেয়ে বা ছেলেরা খুব অভাবী পরিবারের সন্তান। এদের অনেকে নদীভাঙ্গা পরিবারের সন্তান। কেউ কেউ এতিম। কেউ বা বাবা মা পরিত্যক্ত।
এসব গৃহকর্মীকে আমরা প্রায় সময়ই মানুষ মনে করি না। বিশেষ করে বাড়ির গিন্নিটি গৃহকর্মীদের শাসন করার নামে নানা রকম নির্যাতন করতে থাকে। বাড়িতে থাকা অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে।
বাড়ির কর্তাটি তো কখনো কাজের মেয়েটির সাথে ভালো করে কথাই বলে না। কারণ, তার সময় নাই। অন্য দিকে তার গিন্নি কোন খারাপ কিছু ভেবে বসে কিনা কে জানে।
গিন্নির এ অত্যাচারের পাশাপাশি কর্তাটির চরিত্র খারাপ থাকলে তার প্রথম টার্গেট হয় কাজের মেয়ে। কিশোরী বা যুবতী কাজের মেয়েদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলাকে অনেকে তেমন অন্যায় মনে করে না।
গিন্নির অত্যাচার ও কর্তার অনৈতিক আহবানের মাঝে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের সাথে কী আচরণ করে ? বাড়িতে কোন জিনিস হারালে ধরেই নেয়া হয়, জিনিসটি চুরি করেছে কাজের মেয়েটি। তাকে জেরা করা হয়, মারধোর করা হয়। তার হাত পায়ে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয়া হয়। তাকে জলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা দেয়া হয়। এই সুযোগে অনেক দিনের ঝাল মেটায় গিন্নি বা কর্তা।
বাড়ির সবাই খাওয়ার পর তার খাবার জোটে । ভালো খাবার তো নয়ই ; খাবারের উচ্ছিষ্ট। সকালের খাবারে প্রায়ই থাকে আগের দিনের বাসি পচা খাবার।
ঘুমানোর জন্য সবাই বিছানা পেলেও তার কোন বিছানা নাই। সে মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমায়। তার মাথার উপর ফ্যান ঘুরবে কি না এই গরমে তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
আমরা প্রায়ই নারী নির্যাতন নিয়ে নানা কথা বলি। কেউ কি কখনো নারীদের হাতে নির্যাতিত এসব নারীদের কথা বলি ? এসব নারীরা দিনের পর দিন তাদের হাতেই নির্যাতিত হচ্ছে , যারা প্রকাশ্যে ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা। এসব ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলাদের বাইরের ভদ্র চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে একজন নির্যাতনকারী। একটু চোখ কান খুললেই আপনি দেখতে পাবেন তাদের ? হয়তো আপনার পরিবারেই আছে একজন।
আজ বাংলা নববর্ষ। সবাই যাবেন পান্তা ইলিশ খেতে। আর ওরা ? ওরা কি আজও অন্যদিনের মতো বাসি পচা খেয়ে দিন শুরু করবে ? একদিনের জন্য ওদের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেখি না ? ওরাও তো মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:৫৪