ওসামা নামের এই সিনেমাটা একজন আফগান পরিচালকের সৃষ্টি । ভদ্রলোকের নাম সিদ্দিক বারমাক। তিনি ২০০৩ সালে এই সিনেমাটি মুক্তি দেন। এটা হল একটা কিশোরীর গল্প যে তালিবান শাসনামলে আয় রোজগার করে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালের পরে পুরোপুরি আফগানিস্তানে শুটিং করা এটা প্রথম সিনেমা। তালিবান শাসকরা তখন সমস্ত ধরনের সিনেমা নির্মাণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এই সিনেমাটি একটা আন্তর্জাতিক প্রোডাকশন। আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ড, জাপান, আয়ারল্যান্ড এবং ইরান এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণে পেছনে জড়িত।
এক নজরে সিনেমাটি :
নাম : ওসামা
পরিচালক : সিদ্দিক বারমাক
প্রযোজক : জুলিয়া ফ্রেশার ও জুলি লি ব্রোকগে
স্ক্রিপ্ট : সিদ্দিক বারমাক
অভিনয় : মারিনা গোলবাহারি, আরিফ হেরাতি, জুবাইদা সহর ও খাজা নাদের।
মিউজিক : মোহাম্মদ রেজা দরবেশি
পরিবেশনা : আইসিএ (ইউকে) এবং ইউনাইটেড আর্টিস্ট (ইউএস)
মুক্তির তারিখ : ২০ মে, ২০০৩ (কানস) এবং ২৭ জুন, ২০০৩
দৈর্ঘ্য : ৮৩ মিনিট
ভাষা : পার্সি
আইএমডিবি রেটিং – ৭.৩
এবার সিনেমার গল্পটা বলি।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসন চলছে। তাদের শাসনের ফলে মহিলাদের উপর চরম নির্যাতন নেমে এসেছে। বিশেষত মহিলাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং তাদের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাকুরিজীবী মহিলাদের সবার চাকুরি চলে গেছে।
এই পরিস্থিতি একটা পরিবারের জন্য চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ তাদের পরিবারে কোন পুরুষ নাই কেবল ৩ জন মহিলা – একটা কিশোরী, তার মা এবং তার দাদী। কিশোরীটির বাবা এবং চাচা মারা সোভিয়েত আক্রমণের সময় এবং আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের সময়। তাদের দেখাশোনা করার মতো কোন পুরুষ অবশিষ্ট নাই।
কিশোরীর মা একটা হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করত। নিষেধাজ্ঞার ফলে তার চাকুরি নাই। তালিবানরা সেই হাসপাতালে ফান্ড দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে হাসপাতালটিতে ঔষধ ও সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। নার্স হিসেবে কাজ করত যে বিদেশী মহিলা তাকেও গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে তালিবানরা।
কিশোরীর মা হাসপাতালের বাইরে কিছু নার্সিংএর কাজ করে এবং সামান্য আয় করে। কিন্তু যেই রোগীর নার্সিং করে মা কিছু টাকা আয় করতেন সেই রোগী মারা যায়। ফলে মায়ের আয় বন্ধ হয়ে যায়। মহিলাদের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ বিধায় সে আর কোন কাজও যোগাড় করতে পারে না।
উপায়ন্তর না দেখে মা এবং দাদী মিলে একটা অভিনব বুদ্ধি বের করে।তারা কিশোরীটিকে পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করায় যাতে করে সে একটা চাকুরি করে কিছু আয় করতে পারে।
ছদ্মবেশ ধারণ করায় উৎসাহী করার জন্য তার দাদী তাকে একটা গল্প বলে। গল্পটা এই রকম – একটা বালক বালিকায় রূপান্তরিত হয় যখন সে রংধনুর নিচে দিয়ে যায়। নিরুপায় কিশোরীটি ছদ্মবেশ ধারণ করতে রাজি হলেও তালিবানরা তাকে হত্যা করতে পারে এই আশংকায় ভয়ও পায়।
কিশোরীটির বাবার বন্ধু এক দুধ বিক্রেতা তার এই ছদ্মবেশের কথা জানে এবং তাকে তার দোকানে কাজ দেয়। এসপান্দি নামের এক বালকও তাকে চিনে ফেলে এবং তাকে ওসামা নামে ডাকে।
কিন্তু তালিবানরা আইন করে দেয় যে, সমস্ত বালকদের অবশ্যই মাদ্রাসায় যেতে হবে। সেখানে তাদের ধর্মীয় জ্ঞানার্জন এবং সামরিক ট্রেনিং নেয়া বাধ্যতামূলক। তালিবানরা বিভিন্ন স্থান থেকে বালকদের ধরে ধরে মাদ্রাসায় পাঠায়।
ছদ্মবেশী ওসামা তালিবানদের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। সেই মাদ্রাসায় তাদের শেখানো হয় কিভাবে লড়াই করতে হয় এবং ওজু করতে হয়।বালকদের ফরজ গোছল সম্পর্কে শেখানো হয়। তাদের শেখানো হয় স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সঙ্গের পর ফরজ গোছল করতে হয়।
সব বালক আগ্রহ করে ফরজ গোছল পর্বে অংশগ্রহণ করলেও ছদ্মবেশী কিশোরী ওসামা বিপাকে পড়ে যায়। সে ফরজ গোছল পর্বটায় অংশগ্রহণ করাটা থেকে বিরত থাকতে চায়। তাতে করে তার শিক্ষকের সন্দেহ হয়। তার সহপাঠীরাও তার আচরণে মজা পায় এবং তার উপর আলাদাভাবে নজর রাখতে শুরু করে। এসপান্দি তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার পরিচয় তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে যখন তার ঋতুস্রাব হয়ে যায়।
ওসামাকে গ্রেফতার করা করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তার সঙ্গে এক বিদেশী সাংবাদিক এবং বিদেশী নার্সটারও বিচার হয়। বিদেশী সাংবাদিক এবং নার্স উভয়ের মৃত্যুদণ্ড হয়। কিন্তু অল্পবয়স্ক এবং অসহায় বিধায় ওসামা বেঁচে যায়। তার এক মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে।বিচারকরা তাকে সেই বৃদ্ধ শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়। বৃদ্ধ শিক্ষক তাকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসে।
এই বৃদ্ধ শিক্ষকের ইতিমধ্যে তিন স্ত্রী আছে। এই তিন স্ত্রী বৃদ্ধকে ঘৃণা করে এবং বলে যে, সে তাদের জীবনটা ধ্বংস করেছে। তিন স্ত্রী কিশোরী ওসামার প্রতি সদয় হয় কিন্তু তারা তাকে কোন সহায়তা করতে পারে না। বৃদ্ধ তার স্ত্রীদের তালাবদ্ধ করে রাখে। সবচেয়ে বড় তালাটা সে ওসামাকে তালাবদ্ধ করার জন্য নিয়ে আসে।
সিনেমাটা শেষ হয় কিশোরীটির সঙ্গে বাসর কাটানোর পর বৃদ্ধ স্বামীর ফরজ গোছলের মধ্য দিয়ে । এই ফরজ গোছল শিখতে গিয়েই ওসামা সর্বপ্রথম ধরা পড়েছিল।
যারা সিনেমাটি দেখেন নাই, তারা দেখেন। সত্যিকার অর্থে দেখার মতো একটা সিনেমা। যেমন গল্প, তেমন অসাধারণ নির্মাণ।
আইএমডিবি পেজ :
http://www.imdb.com/title/tt0368913/
বিস্তারিত জানতে নিচে উইকি পেজ দেখতে পারেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Osama_(film)
সিনেমাটির টরেন্ট ডাউনলোড লিংক :
Click This Link)_[eng_subs_hard_code]
(লেখাটির বিস্তারিত তথ্যসূত্র ইউকিপেডিয়া এবং সিনেমাটি দেখার ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতা।)
মূল লেখাটি সিনেমা পিপলস - এ প্রকাশিত।
http://cinemapeoples.com/shajahanshamim/664
শাহজাহান শামীম
(চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক)
০১৬৮২৩০৩৩১৯, ০১৯১২৫৭৭১৮৭
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০২