somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওসামা : তালিবান শাসন নিয়ে একটি আফগান সিনেমা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওসামা নামের এই সিনেমাটা একজন আফগান পরিচালকের সৃষ্টি । ভদ্রলোকের নাম সিদ্দিক বারমাক। তিনি ২০০৩ সালে এই সিনেমাটি মুক্তি দেন। এটা হল একটা কিশোরীর গল্প যে তালিবান শাসনামলে আয় রোজগার করে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালের পরে পুরোপুরি আফগানিস্তানে শুটিং করা এটা প্রথম সিনেমা। তালিবান শাসকরা তখন সমস্ত ধরনের সিনেমা নির্মাণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এই সিনেমাটি একটা আন্তর্জাতিক প্রোডাকশন। আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ড, জাপান, আয়ারল্যান্ড এবং ইরান এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণে পেছনে জড়িত।

এক নজরে সিনেমাটি :

নাম : ওসামা
পরিচালক : সিদ্দিক বারমাক
প্রযোজক : জুলিয়া ফ্রেশার ও জুলি লি ব্রোকগে
স্ক্রিপ্ট : সিদ্দিক বারমাক
অভিনয় : মারিনা গোলবাহারি, আরিফ হেরাতি, জুবাইদা সহর ও খাজা নাদের।
মিউজিক : মোহাম্মদ রেজা দরবেশি
পরিবেশনা : আইসিএ (ইউকে) এবং ইউনাইটেড আর্টিস্ট (ইউএস)
মুক্তির তারিখ : ২০ মে, ২০০৩ (কানস) এবং ২৭ জুন, ২০০৩
দৈর্ঘ্য : ৮৩ মিনিট
ভাষা : পার্সি
আইএমডিবি রেটিং – ৭.৩

এবার সিনেমার গল্পটা বলি।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসন চলছে। তাদের শাসনের ফলে মহিলাদের উপর চরম নির্যাতন নেমে এসেছে। বিশেষত মহিলাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং তাদের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাকুরিজীবী মহিলাদের সবার চাকুরি চলে গেছে।
এই পরিস্থিতি একটা পরিবারের জন্য চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ তাদের পরিবারে কোন পুরুষ নাই কেবল ৩ জন মহিলা – একটা কিশোরী, তার মা এবং তার দাদী। কিশোরীটির বাবা এবং চাচা মারা সোভিয়েত আক্রমণের সময় এবং আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের সময়। তাদের দেখাশোনা করার মতো কোন পুরুষ অবশিষ্ট নাই।
কিশোরীর মা একটা হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করত। নিষেধাজ্ঞার ফলে তার চাকুরি নাই। তালিবানরা সেই হাসপাতালে ফান্ড দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে হাসপাতালটিতে ঔষধ ও সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। নার্স হিসেবে কাজ করত যে বিদেশী মহিলা তাকেও গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে তালিবানরা।
কিশোরীর মা হাসপাতালের বাইরে কিছু নার্সিংএর কাজ করে এবং সামান্য আয় করে। কিন্তু যেই রোগীর নার্সিং করে মা কিছু টাকা আয় করতেন সেই রোগী মারা যায়। ফলে মায়ের আয় বন্ধ হয়ে যায়। মহিলাদের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ বিধায় সে আর কোন কাজও যোগাড় করতে পারে না।
উপায়ন্তর না দেখে মা এবং দাদী মিলে একটা অভিনব বুদ্ধি বের করে।তারা কিশোরীটিকে পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করায় যাতে করে সে একটা চাকুরি করে কিছু আয় করতে পারে।
ছদ্মবেশ ধারণ করায় উৎসাহী করার জন্য তার দাদী তাকে একটা গল্প বলে। গল্পটা এই রকম – একটা বালক বালিকায় রূপান্তরিত হয় যখন সে রংধনুর নিচে দিয়ে যায়। নিরুপায় কিশোরীটি ছদ্মবেশ ধারণ করতে রাজি হলেও তালিবানরা তাকে হত্যা করতে পারে এই আশংকায় ভয়ও পায়।
কিশোরীটির বাবার বন্ধু এক দুধ বিক্রেতা তার এই ছদ্মবেশের কথা জানে এবং তাকে তার দোকানে কাজ দেয়। এসপান্দি নামের এক বালকও তাকে চিনে ফেলে এবং তাকে ওসামা নামে ডাকে।
কিন্তু তালিবানরা আইন করে দেয় যে, সমস্ত বালকদের অবশ্যই মাদ্রাসায় যেতে হবে। সেখানে তাদের ধর্মীয় জ্ঞানার্জন এবং সামরিক ট্রেনিং নেয়া বাধ্যতামূলক। তালিবানরা বিভিন্ন স্থান থেকে বালকদের ধরে ধরে মাদ্রাসায় পাঠায়।
ছদ্মবেশী ওসামা তালিবানদের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। সেই মাদ্রাসায় তাদের শেখানো হয় কিভাবে লড়াই করতে হয় এবং ওজু করতে হয়।বালকদের ফরজ গোছল সম্পর্কে শেখানো হয়। তাদের শেখানো হয় স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সঙ্গের পর ফরজ গোছল করতে হয়।
সব বালক আগ্রহ করে ফরজ গোছল পর্বে অংশগ্রহণ করলেও ছদ্মবেশী কিশোরী ওসামা বিপাকে পড়ে যায়। সে ফরজ গোছল পর্বটায় অংশগ্রহণ করাটা থেকে বিরত থাকতে চায়। তাতে করে তার শিক্ষকের সন্দেহ হয়। তার সহপাঠীরাও তার আচরণে মজা পায় এবং তার উপর আলাদাভাবে নজর রাখতে শুরু করে। এসপান্দি তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার পরিচয় তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে যখন তার ঋতুস্রাব হয়ে যায়।
ওসামাকে গ্রেফতার করা করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তার সঙ্গে এক বিদেশী সাংবাদিক এবং বিদেশী নার্সটারও বিচার হয়। বিদেশী সাংবাদিক এবং নার্স উভয়ের মৃত্যুদণ্ড হয়। কিন্তু অল্পবয়স্ক এবং অসহায় বিধায় ওসামা বেঁচে যায়। তার এক মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে।বিচারকরা তাকে সেই বৃদ্ধ শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়। বৃদ্ধ শিক্ষক তাকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসে।
এই বৃদ্ধ শিক্ষকের ইতিমধ্যে তিন স্ত্রী আছে। এই তিন স্ত্রী বৃদ্ধকে ঘৃণা করে এবং বলে যে, সে তাদের জীবনটা ধ্বংস করেছে। তিন স্ত্রী কিশোরী ওসামার প্রতি সদয় হয় কিন্তু তারা তাকে কোন সহায়তা করতে পারে না। বৃদ্ধ তার স্ত্রীদের তালাবদ্ধ করে রাখে। সবচেয়ে বড় তালাটা সে ওসামাকে তালাবদ্ধ করার জন্য নিয়ে আসে।
সিনেমাটা শেষ হয় কিশোরীটির সঙ্গে বাসর কাটানোর পর বৃদ্ধ স্বামীর ফরজ গোছলের মধ্য দিয়ে । এই ফরজ গোছল শিখতে গিয়েই ওসামা সর্বপ্রথম ধরা পড়েছিল।

যারা সিনেমাটি দেখেন নাই, তারা দেখেন। সত্যিকার অর্থে দেখার মতো একটা সিনেমা। যেমন গল্প, তেমন অসাধারণ নির্মাণ।

আইএমডিবি পেজ :
http://www.imdb.com/title/tt0368913/

বিস্তারিত জানতে নিচে উইকি পেজ দেখতে পারেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Osama_(film)

সিনেমাটির টরেন্ট ডাউনলোড লিংক :
Click This Link)_[eng_subs_hard_code]

(লেখাটির বিস্তারিত তথ্যসূত্র ইউকিপেডিয়া এবং সিনেমাটি দেখার ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতা।)

মূল লেখাটি সিনেমা পিপলস - এ প্রকাশিত।
http://cinemapeoples.com/shajahanshamim/664


শাহজাহান শামীম
(চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক)
০১৬৮২৩০৩৩১৯, ০১৯১২৫৭৭১৮৭
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০২
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×