প্রজেক্ট ওয়ালেট ড্রপ কাহিনী পড়ে বহু আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। এই ঘটনাটি আমি কেবল একটি মানুষের ঘটনা বলে মনে করি, এর মাধ্যমে পুরো মানব জাতি বা বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে বিবেচনা না করার অনুরোধ জানাই। একটা মানুষ অসৎ হওয়ার জন্য তার পরিবার, সমাজ ও পরিবেশ হয়তো দায়ী, কিন্তু সবচেয়ে বড় দায়ী সে নিজে। কেউ অসৎ না হতে চাইলে কেউ তাকে অসৎ বানাতে পারে না।
গল্পটা যেহেতু অসৎ মানুষের, সঙ্গত কারণেই আমি তার পরিচয় লুকাচ্ছি। কেবল ঘটনাটা বলে যাচ্ছি। কারো চরিত্র হনন আমার উদ্দেশ্য না।
ভূমিকা শেষ করে মূল ঘটনায় আসা যাক।
অনেক আগে আমি একটা অফিসে চাকুরি করতাম। বড় অফিস । অনেক লোকজন চাকুরি করে। অফিসটার বড় বৈশিষ্ট্য হল, ওখানে নামাজের সময় বড় জামাত হয়। সহকর্মীরা সবাই এক সাথে নামাজ পড়ি। আমার ইমিডিয়েট বস নামাজের ইমামতি করেন।
নামাজের পরে তিনি কিছু বিষয় নিয়ে ওয়াজ করতেন। বিশেষত আসরের পরে বেশ খানিকটা সময় ধরে তার বয়ান শুনতাম আমরা। ভালোই লাগত। লোকটা অনেক কিছুই জানত।
বিশেষত মালিক উপস্থিত থাকলে উনি মালিককে খুশি করার জন্য বয়ানে কর্মচারীদের দায়িত্ব ও সততা সম্পর্কে বলতেন। এ বিষয়টা আমার বিরক্ত লাগত।
কারণ অফিসটায় কোন নিয়ম কানুনের বালাই ছিল না। বেতন সময় মতো হতো না। বছরের পর বছর কাজ করার পরও সামান্য বেতন বাড়ত না। ঈদে কোন বোনাস দেয়া হত না। সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা ছিল কাজের সময় নিয়ে । সকাল ৯টায় ঢুকতে হত। কখন ছাড়া পাওয়া যাবে, তার কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না। আমার মনে আছে কখনও এশার নামাজ না পড়ে ছাড়া পাইনি। প্রায় সময়ই রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। ৪ ওয়াক্ত নামাজই ওখানে পড়তে হত।
যাগগে, এ সব কারণে আমি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরক্ত ছিলাম। আমার ইমিডিয়েট বস চামচামি করতেন। তিনি মালিকের সামনে হাত কচলাতেন। তার এই চামচামির কারণে তাকে আমি পছন্দ করতাম না।
এক দিন একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে বেতন নেয়ার সময় আমাকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে ফেলল ওরা। আমি টাকাটা ফেরত দিলাম। একাউন্টসের ছেলেটি বলল, ভাই, আপনি ভালো লোক। অন্য কেউ হলে টাকাটা ফেরত দিত না।
আমার তখনই মাথায় কুবুদ্ধিটা এল। আচ্ছা, আমার ইমিডিয়েট বস তো নামাজের পর সততা নিয়ে অনেক ওয়াজ করে। উনারে ১০০ টাকা বেশি দিলে কি উনি ফেরত দিবেন ?
একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের ছেলেটার সাথে বুদ্ধি করলাম। তাকে জানালাম, এই ১০০ টাকা আমি দেব। বাড়তি ১০০ টাকাটা আমার ইমিডিয়েট বস ফেরত দেয় কিনা সেটা দেখার জন্য ওই ছেলেটিও উৎসাহী হয়ে উঠল।
সে দিন বিকেলে আমার ইমিডিয়েট বসের ডাক পড়ল একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। তিনি একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে গেলেন। আমি একটা অফিসিয়াল ফাইল নিয়ে অনর্থক ওখানে গেলাম। তিনি টাকা নিলেন। গুনলেন। বেতন রেজিস্ট্রারে সই করলেন এবং বেরিয়ে চলে গেলেন।
আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'টাকাটা দিয়েছেন ?'
'দিলাম তো ভাই। উনি তো টাকা গুনলেন। আমি নিজে উনার সঙ্গে গুনলাম। ১০০ টাকা বেশি হল। কিন্তু উনি ফেরত না দিয়ে চলে গেলেন।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাবলাম, হয়তো উনি খেয়াল করেন নি। আগামীকাল নিশ্চয়ই ফেরত দেবেন। কিন্তু না, উনি আর টাকাটা ফেরত দেন নি।
এই ঘটনা থেকে একটা বড় শিক্ষা হল আমার - কে সৎ সেটা তার কথাবার্তায় বোঝা সম্ভব না, বোঝা সম্ভব তার কাজে বা চর্চায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮