somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সততা থাকে চর্চায়, সদুপদেশে নয়

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রজেক্ট ওয়ালেট ড্রপ কাহিনী পড়ে বহু আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। এই ঘটনাটি আমি কেবল একটি মানুষের ঘটনা বলে মনে করি, এর মাধ্যমে পুরো মানব জাতি বা বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে বিবেচনা না করার অনুরোধ জানাই। একটা মানুষ অসৎ হওয়ার জন্য তার পরিবার, সমাজ ও পরিবেশ হয়তো দায়ী, কিন্তু সবচেয়ে বড় দায়ী সে নিজে। কেউ অসৎ না হতে চাইলে কেউ তাকে অসৎ বানাতে পারে না।

গল্পটা যেহেতু অসৎ মানুষের, সঙ্গত কারণেই আমি তার পরিচয় লুকাচ্ছি। কেবল ঘটনাটা বলে যাচ্ছি। কারো চরিত্র হনন আমার উদ্দেশ্য না।

ভূমিকা শেষ করে মূল ঘটনায় আসা যাক।

অনেক আগে আমি একটা অফিসে চাকুরি করতাম। বড় অফিস । অনেক লোকজন চাকুরি করে। অফিসটার বড় বৈশিষ্ট্য হল, ওখানে নামাজের সময় বড় জামাত হয়। সহকর্মীরা সবাই এক সাথে নামাজ পড়ি। আমার ইমিডিয়েট বস নামাজের ইমামতি করেন।

নামাজের পরে তিনি কিছু বিষয় নিয়ে ওয়াজ করতেন। বিশেষত আসরের পরে বেশ খানিকটা সময় ধরে তার বয়ান শুনতাম আমরা। ভালোই লাগত। লোকটা অনেক কিছুই জানত।

বিশেষত মালিক উপস্থিত থাকলে উনি মালিককে খুশি করার জন্য বয়ানে কর্মচারীদের দায়িত্ব ও সততা সম্পর্কে বলতেন। এ বিষয়টা আমার বিরক্ত লাগত।

কারণ অফিসটায় কোন নিয়ম কানুনের বালাই ছিল না। বেতন সময় মতো হতো না। বছরের পর বছর কাজ করার পরও সামান্য বেতন বাড়ত না। ঈদে কোন বোনাস দেয়া হত না। সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা ছিল কাজের সময় নিয়ে । সকাল ৯টায় ঢুকতে হত। কখন ছাড়া পাওয়া যাবে, তার কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না। আমার মনে আছে কখনও এশার নামাজ না পড়ে ছাড়া পাইনি। প্রায় সময়ই রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। ৪ ওয়াক্ত নামাজই ওখানে পড়তে হত।

যাগগে, এ সব কারণে আমি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরক্ত ছিলাম। আমার ইমিডিয়েট বস চামচামি করতেন। তিনি মালিকের সামনে হাত কচলাতেন। তার এই চামচামির কারণে তাকে আমি পছন্দ করতাম না।

এক দিন একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে বেতন নেয়ার সময় আমাকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে ফেলল ওরা। আমি টাকাটা ফেরত দিলাম। একাউন্টসের ছেলেটি বলল, ভাই, আপনি ভালো লোক। অন্য কেউ হলে টাকাটা ফেরত দিত না।

আমার তখনই মাথায় কুবুদ্ধিটা এল। আচ্ছা, আমার ইমিডিয়েট বস তো নামাজের পর সততা নিয়ে অনেক ওয়াজ করে। উনারে ১০০ টাকা বেশি দিলে কি উনি ফেরত দিবেন ?

একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের ছেলেটার সাথে বুদ্ধি করলাম। তাকে জানালাম, এই ১০০ টাকা আমি দেব। বাড়তি ১০০ টাকাটা আমার ইমিডিয়েট বস ফেরত দেয় কিনা সেটা দেখার জন্য ওই ছেলেটিও উৎসাহী হয়ে উঠল।

সে দিন বিকেলে আমার ইমিডিয়েট বসের ডাক পড়ল একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। তিনি একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে গেলেন। আমি একটা অফিসিয়াল ফাইল নিয়ে অনর্থক ওখানে গেলাম। তিনি টাকা নিলেন। গুনলেন। বেতন রেজিস্ট্রারে সই করলেন এবং বেরিয়ে চলে গেলেন।

আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'টাকাটা দিয়েছেন ?'
'দিলাম তো ভাই। উনি তো টাকা গুনলেন। আমি নিজে উনার সঙ্গে গুনলাম। ১০০ টাকা বেশি হল। কিন্তু উনি ফেরত না দিয়ে চলে গেলেন।

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাবলাম, হয়তো উনি খেয়াল করেন নি। আগামীকাল নিশ্চয়ই ফেরত দেবেন। কিন্তু না, উনি আর টাকাটা ফেরত দেন নি।

এই ঘটনা থেকে একটা বড় শিক্ষা হল আমার - কে সৎ সেটা তার কথাবার্তায় বোঝা সম্ভব না, বোঝা সম্ভব তার কাজে বা চর্চায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×