somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুফ টপ সিনেপ্লেক্স : যে সম্ভাবনাটি বদলে দেবে আমাদের চলচ্চিত্র

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের চলচ্চিত্রের একটা দুঃসময় যাচ্ছে। একের পর এক সিনেমা হল ভেঙ্গে সেখানে বহুতল মার্কেট গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে খুব দ্রæত সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কোন মূল্যে সিনেমা হলকে টিকিয়ে রাখার জন্য সিনেমা হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী করে দর্শক টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে খুব বেশি সাফল্য আসছে না।
আমাদের সিনেমা হলগুলো খুবই পুরোনো। ঢাকায় বিশ শতকের দিকে প্রথম সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০-৯১ সালের দিকে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১২৩০টি। বর্তমানে সারা দেশে সিনেমা হল টিকে আছে প্রায় ৩০০টি। ঢাকায় হারিয়ে গেছে অনেক বিখ্যাত সিনেমা হল। যেমন : গুলিস্তান, নাজ, লায়ন, স্টার, শাবিস্তান, তাজমহল সিনেমা হল।
দর্শকরা প্রায় অভিযোগ করেন সিনেমা হলের পরিবেশ নিয়ে। আমাদের সিনেমা হলগুলো অনেক পুরোনো। কোন সিনেমা হলের এসি সিস্টেম নষ্ট, পর্দা নোংরা, হলের সিট ভাঙ্গা, হলের ভেতরে ছারপোকার কামড়, ভয়াবহ দুর্গন্ধ ইত্যাদির কারণে সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখা কষ্টকর। তাছাড়া সিনেমা হলের বাথরুম নোংরা থাকার কারণেও অনেক দর্শক সেখানে যেতে চায় না। হলের পরিবেশের এই অবনতির কারণে অনেক দর্শক সিনেমা হলে যায় না। বিশেষত মহিলারা আজকাল আর হলমুখী হয় না।
পুরোনো হওয়ার কারণেই আমাদের সিনেমা হলগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে। গত ৫০ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। মানুষের ঘরবাড়ি, যানবাহন, রাস্তাঘাট সবই বদলে গেছে। পুরোনো জিনিসের প্রতি মানুষের আর আকর্ষণ নাই। এ কারণে সিনেমা হলগুলো মানুষকে আর টানতে পারে না।
এক সময় অভিযোগ করা হত, আমাদের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার কারণে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কথাটা সত্য। কিন্তু অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র সিনেমা হলে চালিয়েও দর্শককে সিনেমা হলে আনা যাচ্ছে না। কারণ সিনেমা হলের অসহ্য দুর্গন্ধময় পরিবেশ।





যে কোন শিল্পে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পুনঃবিনিয়োগ করতে হয়। পুরোনো প্রযুক্তি ফেলে দিয়ে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হয়। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের সেই সময় এসেছে। এখন এসেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ফলে সিনেমা হলে নতুন প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম বসাতে হবে। কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে হলের সার্বিক পরিবেশ অনুকূল না থাকলে দর্শক আর হলমুখী হবে না।
যারা সিনেমা হল ভেঙ্গে বহুতল মার্কেট বানাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে সরকার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্ত হল, তারা সিনেমা হল ভাঙ্গতে পারবেন, কিন্তু নতুন মার্কেটের মধ্যে সিনেমা হল রাখতে হবে। কমপক্ষে ভবনের ছাদে সিনেমা হল রাখতে হবে।
সিনেমা হল ভাঙ্গার ক্ষেত্রে সরকারী শর্ত থাকায় মার্কেটের পাশাপাশি আমরা নতুন নতুন সিনেমা হল পাব। সরকারের উচিত সিনেমা হল মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তাদের মার্কেট ও সিনেমা হল নির্মাণে সহায়তা করা।
তবে যে কোন বড় বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে গড়ে তোলা সম্ভব আধুনিক সিনেপ্লেক্স।
কিভাবে ?
উদাহরণ হিসেবে ঢাকা শহরের কথা বিবেচনা করি। ঢাকা শহরে অনেক বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন আছে। অনেক ভবন যে পর্যন্ত উচু করা হয়েছে, তার চেয়ে দুই এক তলা বেশি ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। এসব ভবনের ছাদে একটা আধুনিক সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা যায়।
কিভাবে করতে হবে ?
০১) ভবনের মালিক নিজে উদ্যোগ নিয়ে নতুন সিনেপ্লেক্স বানাতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারেন।
০২) কোন ডেভেলপারের সঙ্গে ভবন মালিক চুক্তি করে সিনেপ্লেক্স বানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে মালিকানা ভবন মালিক ও ডেভেলপার শেয়ার করবেন। এতে ভবন মালিকের লাভ হল তার কোন টাকা বিনিয়োগ করতে হবে না।
০৩) কোন বড় শিল্প গ্রæপ একটা চেইন সিনেপ্লেক্স বানাতে পারে। যেমন কোন শিল্প গ্রæপ যদি চায়, তারা ঢাকাতে ১৫টি সিনেপ্লেক্স বানাবে। তারা ভবন মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডেভেলপারদের মতো একটা চুক্তি করবে। মালিকানা শেয়ার করে ভবনগুলোর ছাদে একের পর এক সিনেপ্লেক্স বানাবে। এক্ষেত্রেও ভবন মালিকদের কোন বাড়তি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে না।
কিন্তু কথা হল কোন কোন ভবনের ছাদে সিনেপ্লেক্স আছে, দর্শক জানবে কিভাবে ? দর্শককে জানানোর জন্য ভবনগুলোর নিচতলায় এটিএম বুথের মতো করে দর্শনীয় ডিজাইনের টিকেট বুথ স্থাপন করতে হবে। টিকেট বুথের উপরে একটা ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপন করতে হবে - যাতে সিনেমার প্রমোশনাল চালানো যাবে। বিশাল বিলবোর্ডে ভিডিও প্রমোশনাল দেখে দর্শক টিকেট কাটার জন্য আসবে। তাছাড়া দর্শককে খুব সহজে ভবনের ছাদে নেয়ার জন্য একাধিক বড় বড় লিফট স্থাপন করতে হবে।
এই আধুনিক রুফ টপ সিনেপ্লেক্সে সিনেমা হল থাকতে হবে কমপক্ষে তিনটি। হলগুলোর সামনে রাখতে হবে ফুডকোর্ট এবং খোলা জায়গা - যাতে করে আগত দর্শকরা বাইরেও বসতে পারে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে পারে। সিনেমা হলগুলোতে সিট সংখ্যা কম রাখাই ভালো হবে। বড় জোর ২৫০ থেকে ৩০০ সিট হতে পারে প্রতিটি সিনেমা হলে। এসি সিস্টেমের পাশাপাশি হলের ভেতরে স্থাপন করতে হবে আরামদায়ক আসন। ডিসিআই কমপ্লায়েন্স ডিজিটাল সিনেমা চালানোর উপযোগী প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম ও পর্দা স্থাপন করতে হবে। মোট কথা হল, এমন একটা আধুনিক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে করে দর্শক সন্তুষ্ট হয়।
সিনেপ্লেক্স সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, একই জায়গায় একাধিক সিনেমা চলার ফলে বেশি পরিমাণ দর্শক আসে। কোন দর্শক কোন সিনেমার টিকেট না পেলে ফিরে যায় না। বরং অন্য আরেকটি সিনেমা দেখার জন্য টিকেট কেটে ঢুকে পড়ে। একই সিনেপ্লেক্সে বিভিন্ন রুচির সিনেমা চলার ফলে দর্শকেরও একই জায়গায় নানা রকম ও নানা দেশী সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হয়।
ইতিমধ্যে ঢাকা শহরে যেই সিনেমা হলগুলো ভেঙ্গে মার্কেট বানানো হয়েছে, সেই মার্কেটগুলোর ছাদে খুব সহজে আধুনিক সিনেপ্লেক্স স্থাপন করা সম্ভব। এই মার্কেট মালিকগুলো এক সময় সিনেমা হলের ব্যবসা করেছেন বলে তাদের পক্ষে এই ব্যবসাটা নতুন করে শুরু করা ব্যাপার না।
আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি, কেবল সিনেমা হলের অভাবে অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র অনেক বেশি সংখ্যায় সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দর্শক চাহিদা থাকা সত্তে¡ও অনেক নতুন চলচ্চিত্র ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারছে না। রুফ টপ সিনেপ্লেক্স সিনেমা হলের সংখ্যা বাড়াতে পারলে নতুন নতুন সিনেমার জন্য বাজার খুলে যাবে। তাছাড়া পরিবেশের দোহাই দিয়ে যে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্ত দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, তারা নতুন আধুনিক মনোরম পরিবেশে সিনেমা দেখার জন্য ফিরে আসবে।
চলচ্চিত্র শিল্পে শুরু হয়েছে ডিজিটাল বিপ্লব। এই বিপ্লব পুরোনো সকল ঝামেলাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন তৈরি করেছে। এই আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলতে পারলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন আধুনিক সিনেপ্লেক্সগুলো অবশ্যই নতুন দিনের দর্শককে টেনে নিয়ে আসবে।
লেখক : শাহজাহান শামীম, চূড়ান্ত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী, প্রথম ব্যাচ, চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ (ডিপ্লোমা) কোর্স, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট


বিশেষ দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় লেখাটি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×