somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - দ্যা এন্ড

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গল্প - দ্যা এন্ড
-------------------
শাহজাহান শামীম
--------------------




এই যে, হ্যালো, হ্যা, আপনাকেই বলছি। আরে হ্যা, আপনি। আপনিই। এত লোকজন ঘিরে গালগপ্পে মেতে থাকলে আমার কথা কিভাবে শুনবেন ? আপনার চারপাশে ভীড় জমানো ওরা কারা ? কী বললেন ? চলচ্চিত্র পরিচালক সবাই ? বাহ, দারুণ ! ঠিকই তো আছে, আপনি অভিনেত্রী, আপনার চারপাশ জুড়ে চলচ্চিত্র পরিচালকরা ভীড় জমানোই স্বাভাবিক। আমি ভেবেছিলাম, ওরা আপনার বন্ধু। তা ঠিক, আপনি সবাইকে বন্ধু মনে করেন। কাউকে 'আপনি' করে বলেন না। এমনকি বুড়ো 'দাদু'কেও জান, জানু, জানপাখি বলে ডাকার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে আপনার। আর এদের অনেকেই তরুণ। আপনার মধুর ডাক শুনে এদের হৃদয়ে আলোড়ন উঠবেই। পরিচালকের হৃদয়ে ঝড় তুলতে না পারলে দর্শকের হৃদয়ে কিভাবে ঝড় তুলবেন ? আরে বাবা, আমি জানি, আমাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না। আমি জানি, পরিচালককে ' বিশেষ বন্ধু' না বানালে অভিনেত্রীদের কাজ জোটে না। কী আর করা !
সরি, সরি, সরি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমাদের কথা বলাবলি বন্ধ। শেষ ঝগড়া যখন হল আমাদের, আপনার ও আমার সংলাপ ছিল এই রকম ---
তুমি : আর কোন দিন বোঝাতে আসব না
আমি : তুমি ভুল বুঝে বসে থাকলে আমি কী করব ?
তুমি : আর কিছু করার দরকার নাই। তুমি তোমার মতো থাকো, আমি আমার মতো। প্লিজ দয়া করে আর আমাকে কল করো না।
আমি : বাহ, মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।
তুমি : সেটা করার জন্যই বললাম। আল্লাহ হাফেজ।
আমি : তুমি অনর্থক আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলা ।
তুমি : সরি টা বলতে পারলাম না। আজই হয়তো ঠিকটা করতে পারছি। প্লিজ ডোন্ট কল মি। প্লিজ, প্লিজ, আমি আর খারাপ ব্যবহার করতে চাই না ।
আমি : তুমি ভুল করছ ।
তুমি : আমি ভুল করলে আপনার কী ? আপনি আপনার মতো থাকেন ।
আমি : বাহ, দারুণ দেখালে তো !
তুমি : আপনি আজ যা খুশি মনে করতে পারেন। তবে সেটা নিজের কাছে রাখেন। আমাকে কল করে বলার কোন দরকার নাই।
আমি : তুমি ভুল করছ ।
তুমি : এত দিনে আমি একটা ঠিক কাজ করলাম। আমার কোন কারো কাছে দায় নাই। আমি জীবনের সবটা তোমাকে দিয়েছি। বাট আপনি ...
আমি : তুমি আমার কথা না শুনে ফোন কেটে দিয়েছ ।
তুমি : প্লিজ, আপনার পায়ে পড়ি, আমাকে আর কোন ধরনের কথা না বললে হয়তো আমার কষ্টটা একটু হলেও কমবে। সো, ভালো থাকবেন।
আমি : আমি কখন বললাম, তোমাকে টাকা দেব না ?
তুমি : আমার আপনার থেকে কিছুই দরকার নাই। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
আমি : তুমি অত্যন্ত ভুল করলা। আমি খুব দুঃখ পেলাম।
তুমি : এই ভুলটা আরও আগে করা দরকার ছিল। তাইলে হয়তো আমি একটা সাধারণ ভালো মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকতাম। আর আপনি দুঃখ পেলেন ... আর পেতে হবে না। আপনার লাইফে আমার দ্যা এন্ড।

এখানেই আমাদের সেই দিনের সংলাপ শেষ হয়েছিল। দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড। সমাপ্ত, সমাপ্ত, সমাপ্ত। সমাপ্ত মানে শেষ। আমার মাথার মধ্যে এই একটা শব্দ ঢুকে আটকে গেল ---- দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড। রাত দিন এক হয়ে গেল। আমি ঘুমাতে পারি না। খেতে পারি না। বসতে পারি না। শুতে পারি না। মনের ভেতরে দলা পাকানো কষ্টের মেঘ হাহাকার হয়ে আমার পুরোটাকে গ্রাস করল। আমার জীবনে কেবল একটাই সত্য রইল --- দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড, দ্যা এন্ড।
আমি জানি, সমাপ্তের পরে কিছু থাকে না, তাহলে সেটা সমাপ্ত হয় না। কিন্তু জীবন নাটকের নাট্যকার হয়তো 'সমাপ্ত' করতে চান না। মাত্র দুদিন, হ্যা, মাত্র ২দিনের মাথায় আপনার মধ্যে পরিবর্তন ঘটল। আপনি আমাকে দিব্যি দিয়েছিলেন, আমি যেন আপনাকে ফোন করে বিরক্ত না করি। এমনকি একটু সামান্য ম্যাসেজও যেন না পাঠাই।
আমি প্রায় ক্রীতদাসের মতো আপনার এই নির্দেশ মেনে চলেছি। আমি জানি, আপনার জমিদারী মেজাজ আছে। সেই জমিদারী মেজাজের সামনে আর পড়ার কোন মানে হয় না। আমার কষ্ট হচ্ছে। বুক ভর্তি তৃষ্ণা নিয়ে আমি ছটফট করি। কিন্তু আপনাকে বিরক্ত করি না। আপনার জমিদারী মেজাজ নিয়ে আপনি জমজমাট থাকেন।
কিন্তু জীবন নাটকের নাট্যকারের ছিল অন্য পরিকল্পনা। তিনি আপনার জমিদারী মেজাজকে কমিয়ে এনে উম শান্তি করে দিলেন। আপনি ঠাণ্ডা হলেন, অনুতপ্ত হলেন। আপনার নিজের জারিকৃত আইন ভেঙ্গে আপনি আমাকে ফোন করলেন। অবাক হয়ে আমি দেখলাম, আমার ফোনের স্ক্রিনে আপনার নাম। প্রথমে ভাবলাম, হয় আমার ফোনে সমস্যা, নইলে আমার চোখে। কিন্তু না, আসলেই আপনি ফোন করেছেন। আপনার জমিদারী মেজাজের বজ্রপাত হওয়ার সময় হয়েছে। আমি ক্রীতদাস। আপনাকে ফোন করার অধিকার আমার নাই। ম্যাসেজ পাঠানো হারাম। কিন্তু আপনার ফোন না ধরার গুনাহ করতে পারি না। ফোন ধরলাম। আপনি বলেন, আমার কান নষ্ট। এই প্রথম বুঝলাম, আপনি সত্য বলেন। আপনি কথা বলছেন। আমি কানে কিছুই শুনছি না। আমার কান নষ্ট হয়ে গেছে।
আপনার কথা না শুনে আমি কী বলব ? আমার কিছু বলা নিষেধ।
ক্রীতদাসের মতো আপনার বাধ্য রইলাম। কিছুই শুনলাম না। কিছুই বললাম না। আপনি ফোন কেটে দিলেন।
এবার আপনার ম্যাসেজ এল -
আপনি : আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছিলাম না বলে কল করলাম । আর তুমি কথাই বললা না !
আমি আপনার ম্যাসেজের উত্তর দেয়ার সাহস পাইনি। আপনার নির্দেশ আমি অমান্য করি কিভাবে ?
প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে আপনার পরবর্তী ম্যাসেজ এল।
আপনি : সরি, কী বলবা না কথা ?
ক্রীতদাস নিশ্চুপ ।
আপনি : খুব দাম দেখাচ্ছ, তাই না ? ওকে, দেখাও। আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না বলে তোমার খুব দাম বাড়ছে । সরি বললাম তো ! ওকে ফাইন, কথা বলবা না তো ? বইল না, বলতে হবে না। কী হবে তুমি কথা না বললে ? শুধু কষ্ট হবে এইত ! ঠিক আছে, কষ্টই হোক। আর কষ্ট কেমনে কমাইতে হয়, আমি জানি --- দেইখ পরে যাতে তোমার কষ্ট না হয়।
ক্রীতদাস নিশ্চুপ !
ঘণ্টাখানেক পর আবারও আপনার ম্যাসেজ ---
আপনি : তুমি এখনও কিছু বলবা না ? এখনও চুপ করে থাকবা ? শেষ একটা কথাই বলতে চাই -- যত কিছু হোক, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। লাভ ইউ !
লাভ ইউ, লাভ ইউ, লাভ ইউ - আপনার বলা এই দুটো শব্দ সব সময়ই আমার মাথায় ঘোর তৈরি করে। চোখের সামনে থেকে বাস্তব দুনিয়া হারিয়ে যায় এক মুহূর্তে । ঘোরের মধ্যে দেখি, আপনি একটি আলো ঝলমল মঞ্চে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চ। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী আপনি। আর আমি ? মিলনায়তনের এক অন্ধকার কোণে জীর্ণ দেহে দাঁড়ানো এক ব্যর্থ মানুষ । আসলেই কি আমি ওখানে ছিলাম ? নাকি আরেকটি ঘোরের মধ্যে ছিলাম ? নইলে ওই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমার মতো অভাজন থাকার কথা না।
ঘোর কেটে যায়। দেখি, আমি দাঁড়িয়ে রাস্তায়। আমি একা না, হাজার মানুষ ! কোন এক বিখ্যাত অভিনেত্রী এই পথ দিয়ে যাবেন। তার জন্য হাজার হাজার উৎসুক চোখ। সা করে গাড়ি চলে গেল। কালো গ্লাসের আড়ালে আপনার একটা অবয়ব দেখলাম। তাতেই আপনাকে চিনে ফেললাম। এক সময় আপনাকে আমি এত বেশি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। আপনার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকাটা ছিল আমার খুব প্রিয়। কালো গ্লাস সামান্য বিষয়, একটা দেয়ালের আড়ালে আপনি থাকলে আমি ঠিকই চিনে ফেলতাম। আপনার শরীরের ঘ্রাণ গায়ে মেখে সারা দিন বুঁদ হয়ে থাকতাম ।
আমাদের প্রেমটা ভুল ছিল, কিন্তু ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল না। শরীরের বাইরে একটা অশরীরী আকর্ষণে আমরা কতই না ঝগড়া করতাম !
আসলেই কী ? আসলেই কি আমরা এক সাথে সময় কাটিয়েছিলাম ? নাকি পুরোটাই একটা ঘোর ! আপনার সঙ্গে আমার কোন দিন দেখাই হয় নি। সুবহে সাদেকের সময় দেখা একটা মিষ্টি স্বপ্ন ছিলেন আপনি। সেই স্বপ্নের ঘোরটাই আজ এখনও কাটল না।
দ্যা এন্ড - সম্পর্ক শেষ হয়, সময় শেষ হয়, জীবন শেষ হয়। কিন্তু ঘোরটা থেকে যায়। বুকটাকে পোড়ায়, চোখটাকে জ্বালায়, মাথাটাকে এলোমেলো করে দিয়ে জীবন তছনছ করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৫৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×