somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনিভার্সিটি লাইফের শেষ ক্লাস পার্টি। যথারীতি আয়োজক জয়। তবে সে মুচকি মেরে হাসছে কিছুক্ষণ ধরে। ছেলে মেয়ে গুলো হা করে দেখছে যে তাদের প্রিয় চকলেট কেক গুলো মানুষের পেটে যাচ্ছে। কেক তো মুখে মাখার জন্য, খাওয়ার জন্য কি? একমাত্র জয় জানে শুধু ক্রিম দিয়ে একটা কেক বানানো আছে, সবার মুখে আজ মাখানো হবে। এর পর তো শুরু হবে বিদায়ের পালা...

মোবাইলের ভাইব্রেসনে চমকে উঠল, এসএমএস দিলো কে? অবন্তী এসএমএস দিয়েছে। হাসি মুখে পড়তে যাবে, কিন্তু চমকে উঠল, কি লিখেছে অবন্তী? “জয় আমাকে ক্ষমা কর,কথাটা মুখে বলার সাহস আমার নাই, কিন্তু কিছুতেই রিলেশনশিপ আমি কন্টিনিউ করতে পারছি না, কিছুতেই না”। থমকে গেলো জয়ের সময় টুকু। মাথায় আসলো না কল দেয় কিংবা রিপ্লাই এ কিছু বলে। ক্লাসের ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। পিছনে বন্ধুদের উৎসব শুরু হয়েছে। অনেকেই জয় কে খুঁজল, কিন্তু ক্লাসে নেই সে।

একটু পিছনে ফিরে চাইলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মারকুটে ছেলে জয়। পাশ করে বের হয়ে ফার্ম খোলার ইচ্ছা তার। শৃঙ্খলতায় বিশ্বাস নাই। জুনিয়র এক ছেলের গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিল একবার। সবকিছু বদলে গেলো অবন্তী আসার পর। রিলেশনে শুরু হয়েছিল ধীরে ধীরে। কোন এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরিচয়, বাধ্যে হয়ে বৃষ্টির দিনে এক ছাতার নিচে, শরতের সেই মুগ্ধ করা বিকেলে সাদা মেঘ কে সাক্ষী মানা। বদলে গেল জয়। সেই জুনিয়র ছেলের কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজেকে শৃঙ্খলতায় আনা। শুধু অবন্তীর জন্য প্রথমে একটা চাকরি পেতে হবে। ফার্মের চিন্তা বাদ।

একটু আলাদা ছিল তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মটর বাইকে না, কে এফসি না। রিক্সায় হাত দুটো ধরে ঘুরে আসা, মাসে একবার নিয়ম ছোট্ট কোন হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়া। গোধূলি বেলায় হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্ন গুলো বুনে চলা। নতুন করে ছোট্ট জীবন কে চেনা।


পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় ফোন আসলো জয়ের কাছে:
- জয়?
- জি বলছিলাম
-অবন্তীর বড় ভাই
-ও ভাইয়া কেমন আছেন
- ভাইয়া, আমার বোন কে, আমার পরিবার কে ক্ষমা করে দাও। সত্য ভালোবাসার যোগ্য না আমরা।
- ভাইয়া আমি তো ওর জন্য...
- জানি জয়, কিন্তু বাদ দাও। ও তো তোমার সাথে কথা বলতে পারবে না, তাই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
- আমার কি দোষ ছিল?
- না অনেক কিছু বললে হয়ত পরিস্থিতি বুঝবা, কিন্তু বলে কোন লাভ নাই। আজকে রাখছি।

সেদিন রাত্রি বেলায় নীল ফেসবুকের হোমপেজে অবন্তীর একটা স্ট্যাটাস ভেসে উঠল, “ সারা জীবন পাপী হয়ে থাকব একজনের কাছে। ক্ষমা চাইবো না, ক্ষমা পাবার যোগ্যতাটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে”। ঐটায় ছিল ফেসবুকে অবন্তীর শেষ স্ট্যাটাস। অ্যাকাউন্ট ডি একটিভ করে দেয় সে।


“স্যার, ঐ দেড় লক্ষ টাকার প্রজেক্ট টা আমরা পাচ্ছি বুঝছেন”। তার ফার্মের কর্মকর্তা ফারুকের কথায় বাস্তবে ফিরে আসলো জয়। কয়েকটা বছর কেটে গেছে। “ও, তাহলে তো ভালই ফারুক, আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করে দেয় নাকি?”। “জি স্যার, স্যার একটু ছুটি নিতাম দুপুরে, একসাথে লাঞ্চ করার কথা, ও অপেক্ষা করছে”। জয় হেসে বলল, “ও তা যান তাড়াতাড়ি। কাজ তো হয়ে গেছে”। হাসতে হাসতে স্যারের রুম থেকে বের হল ফারুক, ওর রিলেশনের ব্যাপারে স্যার জানে, পজিটিভ সাপোর্ট দেন তিনি।
অপেক্ষা, করে যাচ্ছে জয়। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস আছে তার। কত অলৌকিক কিছু না ঘটে এই পৃথিবীতে, তার জীবনেও ঘটতে পারে। হয়ত এমন কোন এক দুপুরে আসবে ফোন, অবন্তী বলে উঠবে, " কি ব্যাপার, ফার্ম নিয়ে বিজি, আমার কথা কি মনে আছে? সময় হবে আজকে একটু হাঁটতে বের হবার"। জীবনে আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসবে অবন্তী, এই অপেক্ষায় কেটে যায় জয়ের ব্যস্ত সময় গুলি।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×