somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বিহিত

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইকবাল ভাবলো আজ বাসায় যেয়ে সাথীর সাথে কথা বলতে হবে, এইভাবে চলতে পারে না। একসময় ছিল সহ্য করতে পারতো অনেক কিছু, কিন্তু আজ আর না।

- সাথী কথা আছে তোমার সাথে
- তোমার কথা মানে তো ক্যাচাল লাগানোর ইচ্ছে
- দেখো আমি তোমাকে নিষেধ করছিলাম…
- থামো, কোন অধিকারে নিষেধ কর?
-আচ্ছা অনুরোধ করছি…
- ইকবাল, হয়েছে। একটা বিষয় জেনে রাখো তোমার কোন নিষেধ বা অনুরোধ আমি শুনবো না। আমার যেটা ইচ্ছে হয় সেটা করব, যেটা ভাল মনে হয় সেটা করব। নিজের মত চলব।

ইকবাল বুঝে ফেলল আর কথা বাড়ানো যাবে না ।অথচ কি এমন হল যে সাথী এই ব্যবহার করছে। এই সেই মেয়ে যে কিনা ইকবাল কে ভালোবাসার মন্ত্র শিখিয়েছিল। এই সেই মেয়ে যার হাসি পাগল করে দিত ইকবাল কে। এক সময় ইকবাল ভাত না খেলে এই মেয়ে খেত না। আর আজ সব কিছু বদলে যাচ্ছে। এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে তাল মিলাতে আর পারছে না সে। একটা বিহিত করা দরকার। সকালে একবার ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলা দরকার।

-সাথী একটু ঠাণ্ডা মাথায় সময় দিতে পারবা?
- আমার মাথা কি গরম থাকে সব সময়?
- আরে নাহ, কি বল । মানে সময় দিতে পারবা?
- কি বিষয়ে?
- আমাদের ব্যাপারে আসলে কথা বলা উচিত। অনেকদিন হয়ে গেল এইভাবে চলছে
- তোমার সাথে কোন বিষয়ে কথা বলার রুচি আসে না ইকবাল
- তুমি এইভাবে কতদিন আমাকে…
- ইকবাল যদি ইচ্ছে হয় আমার সাথে থাকো আর ভাল না লাগলে অন্য মেয়ে দেখতে পারো। তোমার তো অভাব হবে না!

নাহ, এইভাবে হয় না। কিছুতেই হয়না। একটা বিহিত করা দরকার। চিরদিনের জন্য। এই মেয়ে জীবনে যতদিন আছে ততদিন আর শান্তি নাই। আজকে একটা প্ল্যান বানাতে হবে। আজকেই করতে হবে। অনেক সহ্য করছি। আর করার ক্ষমতা নাই।

পরেরদিন সন্ধ্যায়:

- সাথী ছাদে চল না
- রেলিং দেওয়া নাই ছাদে। এই সন্ধ্যায় বেলা যাওয়ার কোন মানে নাই
- আমি থাকতে কিছু হবে? চল।
ছাদে উঠে ঘুরা সাথীর একটা প্রিয় কাজ। অনেক আগে থেকে। যত গণ্ডগোল করুক ছাদে উঠার কথা সে ফেলবে না। ইকবাল ভাল করে জানে। আর একটু একটু করে ছয়তলার ছাদের ধারে নিয়ে যাওয়া কোন ব্যাপার না তার কাছে।
- কি ব্যাপার ইকবাল এত ধারে নিয়ে আসছো কেন?
- দেখো না ধারে আসতে কেমন লাগে
- না আমি চলে যাব

শক্ত করে হাত ধরে কাছে টেনে আনলো ইকবাল সাথী কে।
- মেয়ে চলে যাওয়ার জন্য তো নিয়ে আসছি
- তুমি… তুমি কি করতে চাও
- এক ধাক্কায় তোমাকে ফেলতে চাই, তারপর যা হবে
- ইক (চিৎকার করার আগেই সাথীর মুখ চেপে ধর ইকবাল)

প্রচণ্ড ধস্তাধস্তি করে ছাড়ার চেষ্টা করছে সাথী, বাচতে হলে বাচতে হলে কিছু করতে হবে ভেবে জোড়ে ধাক্কা দিল ইকবাল কে। আর ধাক্কার সাথে সাথে টাল সামলাতে পারলো না ইকবাল। এক চিৎকার করে পরে গেল নিচে। তারপর সাথীর কিছু মনে নাই…

তিনদিন পর:

- মিসেস সাথী ধাক্কা টা কি আপনি দিয়েছিলেন
- আমি আমি জানি না আসলে কি হয়েছিল, সে আমাকে ফেলে দিতে চাইছিল
- আপনার এতদিনের ভালোবাসার মানুষ আজ আপনাকে ফেলে দিতে চাইলো? কেন?
- আমি জানি না
- নাকি কোন কারনে আপনি খুন করতে চাইছেন তাঁকে
- না, আমি, আমি কেন খুন করতে চাইবো।
- জানেন আপনার স্বামী আসলে আপনাকে ভালবাসতো। লাশ দেখে মনে হয়েছে মারা যাবার আগে সে হাসছিল
- কি বলতে চান আপনেরা, কি করবেন আমার সাথে?

অফিসার মিনহাজ ভাবলো এইবার থামা উচিত। আসলে কিছু করার নাই। সত্য ঘটনা বলে দেয়।

- মিসেস সাথী আপনার চিন্তার কোন কারন নাই। ইকবালের লেখা ডায়েরি আমরা পেয়েছি। সেইখানে সেই সুইসাইড করার প্ল্যান লিখে ফেলেছিল। আপনাকে ছাদে নিয়ে যেয়ে আপনার সামনে লাফ দিতে চাইছিল। সে স্পষ্ট করে লিখে গেছে তাঁর মৃত্যুতে আপনার বা কারো কোন দায় নেই। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছিলো। আপনার চিন্তার কারন নেই। হা লেখা যে তাঁর সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। আপনি যেতে পারেন। তবে কোর্টে কেস চললে হয়ত আপনাকে আসতে হবে।

রাস্তায় যেতে যেতে সাথী ভাবলো, ইকবাল তাহলে সুইসাইডের প্ল্যান করছিল। কিন্তু সে তো সুইসাইড করার কথা না। তাহলে ডায়েরিতে যা লিখছে সেভাবে কাজ করল না কেন। তাঁর মানে, তাঁর মানে বুঝতে পারলো সাথী। সব বুঝতে পারলো। কেন মরার সময় তার মুখে হাসি লেগে ছিল। কান্নায় ভেঙ্গে পরল সাথী।

চারদিন আগে:
চমৎকার প্ল্যান করে ফেলেছে ইকবাল। সে নিজে লাফ দিবে না। সিনক্রিয়েট করবে যাতে সাথী ধাক্কা দেয়। যে মানুষটাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবেসেছে, তাকে মেরে ফেলে না, তার হাত দিয়ে মরে সুখ আছে। তার আগে ডায়েরিতে লিখে যেতে হবে যাতে পুলিশের ঝামেলায় না পরে মেয়েটি। সবাই জানবে সে সুইসাইড করছে কিন্তু মেয়েটা জানবে সে নিজের হাতে ইকবাল কে ধাক্কা দিয়েছে!!! এই কষ্ট নিয়ে সাথী বেঁচে থাকবে বাকি জীবন… চিরদিনের জন্য বিহিত হবে সব কিছুর।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×