আমি যাকে ভালোবাসি তার নাম সোহিনী।
সে ছিল অসাধারণ সুন্দরী। আমরা একই কাসে একই স্কুলে পড়তাম। আমাদের বাড়ি ছিল পাশাপাশি। তাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করি। আমরা এক সঙ্গে স্কুলে যেতাম, ঝড়ের সময় আম কুড়াতাম। মারামারি করেছি অনেকবার। কিন্তু তাকে কোনোদিন আমার মনে দুর্বলতা বুঝতে দিইনি। বরং বার বার জিজ্ঞাসা করেছি সে কাউকে পছন্দ করে কি না।
সে বলতো, যদি কাউকে পছন্দ করি তবে তোকে আগে জানাবো।
আমরা তখন কাস টেনে। একদিন গণিত প্রাইভেট থেকে এক সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। আমাকে থামিয়ে সে বললো, তোকে আজ তার সম্পর্কে জানাবো।
অবাক হয়ে গেলাম!
কার কথা জানাবি?
সে যা উত্তর দিল তা আমার জন্য অনেক দুঃখ বয়ে এনেছিল। তার কথার সারমর্ম ছিল, সে অন্য এক ছেলেকে ভালোবাসে যে নাকি আমার চেয়ে অনেক সুন্দর আর তাদের অবস্থা অনেক ভালো।
সেদিন থেকে সে আমাদের বাড়িতে কম আসতো। আমিও তাদের বাড়িতে যেতাম না। শুধু এক সঙ্গে স্কুলে যেতাম। কোনো কথা হতো না।
আমাকে সে প্রায় জিজ্ঞাসা করতো আমার আচরণের পরিবর্তনের কারণ।
তাকে বোঝালাম, আমার সামনে পরীক্ষা। কিন্তু তার চোখের দিকে তাকাতে পারতাম না। শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলতাম।
এক বিকেলে ছাদে বসে আকাশ দেখছিলাম।
সে এসে পাশে বসলো।
তার দিকে তাকাতেই দেখি তার চোখে অশ্রু।
সে কোনো কথা বলছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে।
অনেক কষ্টে তার কান্না বন্ধ করে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম।
সে জানালো তার বাবা বিয়ে ঠিক করেছেন।
আকাশ থেকে পড়লাম। তাকে তার ভালোবাসার কথা জিজ্ঞাসা করতেই আবার সে অশ্রুর বর্ষা ঝরাতে লাগলো।
সে বললো, তার ভালোবাসার মানুষটি প্রতারণা করেছে। সোহিনীকে সে বিয়ে করতে পারবে না। সে অন্য এক মেয়ের সঙ্গে নতুন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিত তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমারও চোখ দিয়ে কখন বৃষ্টি নেমেছে তা বলতে পারব না।
তার বিয়ের দিন ঠিক হলো। আমি দুঃখে ভেঙ্গে পড়লাম। কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না।
বিয়ের দিন মহা ধুমধাম হলো। সবাই খুশি। নাচে-গানে বিয়ের পরিবেশ সবাই মুখরিত করছে শুধু সোহিনী ছিল নীরব। তার চোখে যে কেন অশ্রু তা শুধু আমিই জানতাম। না পাওয়ার বেদনা আমিই তো মর্মে মর্মে বুঝেছি।
হঠাৎ সোহিনী অজ্ঞান হয়ে পড়লো। তার মুখ দিয়ে বমি বের হতে লাগলো। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। পায়ের নিচে মাটি সরে গেল সবার।
সোহিনী প্রেগনান্ট! এ কথা শোনার পর আর তার বিয়ে হলো না। পাড়ার মানুষ তাদের বদনাম রটালো। তার বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। সবার ধারণা, তার পেটের সন্তান নাকি আমার ছিল। কিন্তু আমি এসবের কিছুই জানি না।
সোহিনীর বাবা আমার গালে কষে থাপ্পর মেরে গালি দিলেন। তার মা অভিশাপ দিলেন।
আমি তো ছিলাম নির্দোষ। আমাকে আমার বাবা বাড়ি থেকে বের করার ঘোষণা দিলেন। কিন্তু কাউকে সোহিনীর আসল কথাটি বলতে পারিনি।
সবার মত অনুযায়ী আমার সঙ্গে সোহিনীর বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। শর্ত হলো নিজের পায়ে দাড়ানোর পর মেয়েকে ঘরে তোলা হবে।
কিন্তু সেদিন রাতে সোহিনী সবার অজান্তে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলো। মরার আগে সে চিঠিতে তার সন্তানের আসল পিতার কথা লিখেছিল। আমি যে নির্দোষ তাও সে লিখেছিল। আমাকে সে লিখেছিল, আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোকে আমার পাপের ভাগিদারী হতে দেবো না। ভালো থাকিস।
সে ঘটনার পর আজও বিয়ে করিনি। সব সময় অন্তর জুড়ে সোহিনীকে অনুভব করি। রাতের তারার মাঝে তাকে খুজে বেড়াই।