somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৃত্য আয়াজের গল্প

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুলতান ছিলেন মাহমুদ। তার একজন দাস ছিলেন, নাম আয়াজ। আয়াজকে সুলতান মাহমুদ খুব পছন্দ করতেন তার বিশ্বস্ততার জন্যে, সুলতানের প্রতি তার আনুগত্যের জন্যে। এতই পছন্দ করতেন যে, এটা আবার সুলতান মাহমুদের দরবারের কোনো কোনো মন্ত্রী-সভাসদের খুব গা-জ্বলুনির কারণ ছিল।

আনুগত্য কীরকম ছিল? একবার আয়াজ সুলতানের সাথে যাচ্ছে। পথে এক তরমুজ ক্ষেত দেখে সুলতানের তরমুজ খেতে ইচ্ছে হলো। কাফেলা থামিয়ে ক্ষেত থেকে তরমুজ আনা হলো। কাটা হলো। কাটা তরমুজের একটুকরো সুলতান আয়াজকে তুলে দিলেন। বললেন, খাও। আয়াজ খেলো। সুলতান আয়াজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগল? আয়াজ বললেন, জাঁহাপনা, এত স্বাদের এত মিষ্টি তরমুজ বহুদিন খাই নি। বলে তরমুজের টুকরোটার সবকিছু চেটেপুটে খেতে লাগলেন।

দেখে সুলতানের খুব মায়া লাগল। বললেন, ঠিক আছে, এতই যখন তৃপ্তি পাচ্ছে, তাহলে একে গোটা তরমুজটাই কেটে দাও। তা-ই করা হলো। একের পর এক তরমুজের টুকরো আসছে, আর আয়াজ চেটেপুটে খাচ্ছেন। সুলতানও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন-খাও খাও, আরো খাও।

শেষ পর্যন্ত একটা টুকরা বেঁচে গেল। এই শেষ টুকরাটা সুলতান মুখে তুললেন। আর সাথে সাথে ওয়াক থু করে ফেলে দিলেন। প্রচন্ড তেতো আর কষ। এই তরমুজ আয়াজ কী করে এত অম্লান বদনে খেয়ে গেল তা ভেবে সুলতান বিস্মিত হলেন। আয়াজকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এ তরমুজ তুমি খেলে? একটু তো বলতে পারতে। আয়াজ তখন বললেন, জাঁহাপনা, যে তরমুজ আপনার হাত থেকে এসেছে তা আদতে যত তেতোই হোক আমার কাছে তা মিছরির চেয়েও মিষ্টি।

কিন্তু একসময় সুলতান মাহমুদের কয়েকজন মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন আয়াজ। সুলতানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করল তারা। সুলতান আয়াজকে বন্দি করার নির্দেশ দিলেন। আয়াজ ধৈর্য ধরলেন। কারণ সে সময় তার আর কিছুই করার ছিল না।

জেলখানায় বন্দিদশায় কাটতে লাগল তার দিন। কিন্তু আয়াজ তার বিশ্বাসে অটল-যে, সুলতান একদিন তার ভুল বুঝতে পারবেন। এবং আজ হোক, কাল হোক তিনি মুক্তি পাবেনই। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। এখন তো কারাবন্দিদের জন্যে কিছু নিয়ম আছে। তখন এসব কিছু ছিল না। এক টুকরো রুটি-এই হয়তো এক সপ্তাহের বরাদ্দ। বন্দিরা একটু একটু করে জমিয়ে রেখে তা-ই খেতো। আয়াজও তা-ই করতেন। এরকমই একবার আয়াজ এক টুকরো রুটির খানিকটা খেয়ে বাকিটা তুলে রেখে ঘুমাতে গেলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন তিনদিনের খাবার সেই রুটির টুকরোটা নিয়ে এক ইঁদুর দৌড়ে পালালো।

দেখে আয়াজ হেসে উঠলেন। যাক! তাহলে আমার এখানকার রিজিক শেষ হয়ে আসছে। আমি এখন মুক্তি পাব। অর্থাৎ বিশ্বাস এবং আশাবাদটা কত! সে সময় তার মনে হয়েছে যে, না, এর চেয়ে খারাপ তো আর কিছু হতে পারে না এবং এরপরে আমার মুক্তি ছাড়া আর কোনো কিছু নাই। এবং সত্যি সত্যিই তার কিছুক্ষণ পরই তিনি খবর পেলেন যে, সুলতান মাহমুদ তার মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাকে দরবারে ডেকে পাঠিয়েছেন।

এই যে বিশ্বাস অর্থাৎ সর্বাবস্থায় শোকর আলহামদুলিল্লাহ এবং সর্বাবস্থায় আশাবাদী হওয়া-এটাই হচ্ছে প্রাচুর্যের জন্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×