পরিমন যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে সে সময় তার বাবা কোনো বিবেচনা না করেই তাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন । পরিমনের স্বামী পরিমন কারো সঙ্গে কথা বলুক বা লেখাপড়া করুক তা পছন্দ করতেন না ও চাইতেন না । পরিমন যখন ক্লাস এইটে ওঠলো স্বামী তখন পরিমনের লেখা পড়া বন্ধ করে দিতে বললেন । তখন পরিমন আপত্তি করলো আর আপত্তি করার কারনে ভাড়া বাসায় নিয়ে পরিমনকে নির্যাতন করতে শুরু করলো ।
পরিমনের স্বামী অফিসে যাওয়ার সময় তাকে ঘরের ভেতরে রেখে বাহির দিয়ে তালা মেরে অফিসে যেতেন । তাকে দুই-তিন দিনেও খাবার দিতেন না । এক কাপড় পরেই পরিমনকে থাকতে হয় প্রায় তিনটি মাস । এভাবে থাকতে থাকতে পরিমন একদিন হঠাৎ দেখতে পেল তার ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে তাদের বাড়ির কাছের এক প্রতিবেশীকে । পরিমন ঐ প্রতিবেশির কাছে তার মায়ের ফোন নম্বরটি দিয়ে বলে দিলো সে যেন পরিমনের এ দুঃখ কষ্টের খবরটি তার মায়ের কাছে জানিয়ে দেয় । ঐ প্রতিবেশি পরিমনের কথা অনুযায়ি সংবাদটি তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিলেন । তার মা লোকজন নিয়ে এসে পরিমনকে সে মৃত্যুদশা থেকে উদ্ধার করলেন ।
গল্প শেষ মূল পর্ব শুরুঃ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছাত্রী ও কাউনিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ওয়ারেছ আলীর তৃতীয় স্ত্রী হাবিবা আক্তার এভাবেই তাঁর ওপর স্বামীর করা নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বরিশাল মহিলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড কাজিপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান ও গৃহিণী মাহমুদা বেগমের মেয়ে হাবিবা আক্তার। হাবিবার নানা বাড়ির একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এসআই ওয়ারেছ পছন্দ করেন হাবিবাকে। ওই বছরই তাঁদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন ওয়ারেছ। এরপর হাবিবা ও তাঁর মা যখন জানতে পারেন ওয়ারেছ তাঁর দেশের বাড়ি রংপুর ও নগরীর নথুল্লাবাদে আরো দুটি বিয়ে করেছেন তখন ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়ারেছ পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে শুরু করেন মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন । তিন মাস আগে হাবিবাকে জোর করে ওয়ারেছ তাঁর কর্মস্থল কাউনিয়া থানার চৌধুরীপাড়া এলাকার আ. রহিমের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন । সেখানে এনে প্রথমে হাবিবার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর তাঁকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখেন। হাবিবার মায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হাবিবার মা খবর পেয়ে বিষয়টি মহিলা আইনজীবী সমিতিকে জানান। মহিলা আইনজীবী সমিতি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কাউনিয়া থানা) শাহানাজ পারভীনের সহযোগিতায় বন্দিদশা থেকে হাবিবাকে উদ্ধার করে। হবিবাকে পুলিশের ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক ওয়ারেছের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে থানায় পাওয়া যায়নি। তবে কাউনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম রেজা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ওয়ারেছ আলী দায়িত্ব পালন করেছিল। স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়টি জেনে পুলিশ কমিশনার তাঁকে লাইনে প্রত্যাহার করার মৌখিক নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিখিত আদেশ পেলেই তাঁকে লাইনে প্রত্যাহার করা হবে।
তর্থ্য নেটওয়ার্ক ।