somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামদানি কথন ২

০৪ ঠা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামদানি কথন ২

আমার লেখালেখির অভ্যাস কখনো ছিল না তা আমি আমার জামদানি কথন লেখায় বলেছিলাম। আসলে লেখার ইচ্ছা হয় কিন্তু লেখালেখির যোগ্যতা আমার নেই তাই লেখার সাহস করতে পারি না।
জামদানি নিয়ে যেহেতু ব্যবসা শুরু করেছি তাই জামদানির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বাধ্য হয়েই আমার জামদানি কথন লেখাটি লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম যাক লেখা শেষ বেঁচে গেছি। তবে প্রথম লেখা হিসেবে যতটুকু প্রশংসা পেয়েছিলাম অনেক বেশী খুশী ছিলাম আর তাই নিজের মনে সুপ্ত বাসনা ছিল যে জামদানি নিয়ে আরও কিছু লেখার প্রয়োজন আছে।
জামদানি নিয়ে আরো বেশী জানার জন্য আমি চেষ্টা করি প্রতি সপ্তাহে জামদানি যে সব এলাকায় তাঁতিরা বুনে থাকেন সেই এলাকাগুলো ঘুরতে। তাঁতিদের সাথে কথা বলি তাদের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝার জন্য।
এই জানার উদ্দেশ্য নিয়েই শেষ ২ সপ্তাহ যা জানতে পারলাম তাতে আমি নিজেই আঁতকে উঠতে বাধ্য হয়েছি। কেন আঁতকে উঠেছি তাই আজ বলব।
আমি জামদানি কথন এ বলেছিলাম জামদানি মূলত ২ প্রকার। এখন দেখছি আমি ভুল জানতাম। আসলে এখন জামদানি ৩ প্রকার।
• সুতি জামদানি
• হাফ সিল্ক জামদানি
• নাইলনের জামদানি।
যারা জামদানি সম্পর্কে জানেন কিছুটা হলেও তারা বলছেন যে আমি বেশী বুঝি। আমার এই ৩নং জামদানির ব্যাপারে যুক্তি দেখাচ্ছি।

গাউছিয়া আলাকার আশে পাশে, কাচপুর ব্রিজের ভিতরের কিছু এলাকা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সোনারগাঁ এলাকায় যত জামদানির ঘর দেখলাম তার মাঝে আমি নাইলনের তৈরি জামদানির হার আশংকাজনকভাবে বেশী দেখেছি।
সবাই সোনারগাঁ জাদুঘরে যান ঘুরতে এবং মহিলারা স্বামী অথবা বিশেষ কারো সাথে যান একটি জামদানির শখ মিটানোর জন্য। কিন্তু জাদুঘরের ভিতরে যে ১০/১২ টি দোকান রয়েছে তার সবকটিতেই নাইলনের জামদানি রয়েছে ৮০/৯০ শতাংশ। আমি তাদের সাথে ক্রেতা সেজেই কথা বলেছি এবং যা জেনেছি তা উপস্থাপন করছি।
ঘটনা-১ ঃ
প্রথম দোকানে প্রবেশ করলাম জামদানি শাড়ি দেখছি। আমার সাথে আরও কিছু ভদ্র মহিলা দোকানে প্রবেশ করলেন। আমি তাদের কেনাকাটা পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম। ভদ্রমহিলাগন এক্টার পর একটা শাড়ি দেখছেন আর বিক্রেতা দেখিয়ে চলেছেন। বিক্রেতা বলছেন এগুলো রেশমের তৈরি একদম অরিজিনাল জামদানি। তিতি শাড়ির দাম ৩০০০-৭০০০ টাকা দাম চাইলেন।কথা বার্তার এক পর্যায়ে ৪৫০০টাকা এর মত দামে একটি শাড়ি বিক্রি করলেন। শাড়িতে কাজ মোটামুটি ভাল ছিল। হাফ সিল্ক হলে ৬০০০ এর নিচে সম্ভব হত না বিক্রি করা। মহিলাগন চলে যাওয়ার পর আমি দাম জানতে চাইলাম ঐ একই দাম চাইল। আমি বললাম ভাই এগুলো তো নাইলনের। বিক্রেতা প্রথমে অস্বীকার করল এবং বলল যে আমি বুঝি না। যখন বললাম যে ভাই আমি জামদানি ব্যবসায়ী তখন কাঁচুমাচু শুরু করে দিলেন এবং দাম চাইলেন ৫০০০ টাকার টা ২৭০০ টাকা।
ঘটনা-২ঃ
পাশের আরেকটি দোকানে গেলাম একটি খুব জমকালো জামদানি দেখে নামাতে বললাম। একই ভাবে প্রথমে ক্রেতা হিসেবে বললাম এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়াতে আমার কাছে ৪২০০ টাকা দাম চাইল যেটি হাফ সিল্ক হলে আমি সিওর ৮০০০-৯০০০ টাকা দাম হত।
এই রকম কিছু দেখে আমি তাদের সামনে কিছু প্রশ্ন করলাম এবং এই টাইপের উত্তর পেলাম----

প্রশ্ন ১ ঃ আপনাদের বিক্রি কি রকম হয়?
আছে মোটামুটি। বৈশাখে ভালই বিক্রি হয়েছে।

প্রশ্ন ২ঃ আপনারা হাফ সিল্ক শাড়ি রাখেন না?
অবশ্যই রাখি কিন্তু দেখাই কম। কারন ক্রেতা সবাই কমদামে মচমচা চানাচুর চায় তাই হাফ সিল্ক বিক্রি করা কষ্ট হয়।

প্রশ্ন ৩ঃ আপনারা বলেন না কেন নাইলনের জামদানি এগুলো?
ভাই সৎভাবে বিজনেস করা যায় না। আমি সত্য বলব কিন্তু ক্রেতা আমার কাছ থেকে না কিনে পাশের দোকান থেকে একই জিনিষ কিনে নিয়ে যাবে ।

প্রশ্ন ৪ঃ ক্রেতাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন?
ভাই বুঝালে বুঝে না কারন তারা শখ করে কিনবেন দাম কম হলেই আর দেখতে ভাল হলেই হল।

প্রশ্ন ৫ঃ নাইলনের গুলোতো বেশী দিন টিকে না ক্রেতা অভিযোগ করেন না?
আরে ভাই বিক্রির সময় বলে দেই যে নরম হলে নিয়ে আসবেন কাটা করে দিব কিন্তু কয়জন এ বা আসে আর?

প্রশ্ন ৬ঃ এইভাবে কি জামদানির প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে না?
আরে ভাই আপনি বুঝেন না? আপনি দিবেন ২টাকা আশা করবেন ৫ টাকার তা কি হয়? আপনি যেভাবে চাইবেন আমরাও সেভাবেই ব্যবস্থা করে দেই। আমাদের চলতে হবে নাকি ভাই? আমাদের ও ঘর সংসার আছে।

আমি আর কথা বাড়াই নি তাদের সাথে। শুধু মনে মনে এটাই ভাবছি যে কেন ক্রেতারা আমার শাড়ির দাম বেশী বলে? ক্রেতার তো আর সুতি,রেশম,নাইলন চিনে বুঝে কেনার দরকার নেই। ক্রেতার দকার জামদানি তারা তাই লুফে নিচ্ছে।

কোথাও একটা কথা শুনেছিলাম “Quality makes Difference”. আমিও এ বাক্যে বিশ্বাসী। আমি আমার ক্রেতাদের সবসময় ভাল জিনিষ দিতে চেয়েছি এখনও সেই অবস্থান এ আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ্‌। এখন হয়ত আমার বিক্রি কম কিন্তু যে দিন সবাই কিছুটা হলেও বুঝবে তখন আমার কদর বাড়তেও পারে। না বাড়লেও আফসোস থাকবে না এই ভেবে যে মানুষকে ঠকিয়ে তো আর ব্যবসা করিনি। নিজের কপালে যা আছে তাই হবে।

আমার কথাগুলো কাউকে ব্যথিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে লিখিনি। এমনি আমার লেখার অভ্যাস নেই। তারপরো না পেরেই আবার কিছু লিখে ফেললাম। কেউ ব্যাথা পেয়ে থাকলে এবং লেখায় কোথাও ভুল থাকলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।
আমার এ লেখার উদ্দেশ্যি হল ভোক্তা সচেত্নতা।লেখাটি পড়ে যদি ২/৪ জনো সচেতন হয় তাহলেই আমার লেখার সার্থকতা।
ধন্যবাদ
smile emoticon

জামদানি কথন এর লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/682883431858039/
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×