somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হযরত শাহজালালের জীবনির কিছু অংশ

২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শাহজালাল এর জন্ম হয় ইরেজীতে ১২৭১ সাল আরবীতে ৬৭১ হিজরীত তুরস্কতে । ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ । তার পুরো নাম শায়খ শাহ জালাল কুনিয়াত মুজাররদ । ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বৎসর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আমাদের বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আসেন বলে ধারনা করা হয় । সিলেট আগমনের সময় কাল নিয়ে যদিও বিভিন্ন অভিমত আছে তারপরেও শাহ জালালের সমাধির খাদিমগণের প্রাপ্ত পারসী ভাষার একটি ফলক লিপি হতে উল্লেখিত সন তারিখই সঠিক বলে ধারনা করা হয় । পারসী ভাষায় লিখিত ফলক লিপি বর্তমানে ঢাকা যাদুঘরে সংরক্ষিত রাখা আছে । সম্ভবত সিলেটে তার মাধ্যমেই ইসলাম সব থেকে বেশি প্রচার ঘটে । সিলেট বিজয়ের পরে শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের মধ্য হতে অনেক পীর দরবেশ এবং তাদের পরে তাদের বংশধরগণ সিলেট সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস ও ইসলাম প্রচার করেন । শাহজালাল ও তার সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার সঙ্গে নিয়ে সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা । তার মৃত্যুর পর তাকে সিলেটেই কবর দেয়া হয় ।


হযরত শাহ জালালের প্রাথমিক জীবনঃ

হিজরী ষষ্ঠ শতকের শেষেরদিকে মক্কার কোরায়েশ বংশের একটি শাখা মক্কা শহর হতে হেজাজ ভূমীর দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে ইয়েমেন প্রদেশে গিয়ে বসবাস করেন । শাহজালাল এর পিতা ঐ শাখার মোহাম্মদ বা মাহমুদ নামে পরিচিত । মাহমুদের পিতা ছিলেন ইব্রাহিম ।

হযরত শাহ জালালের রওজায় প্রাপ্ত ফলক লিপি সুহেলি ইয়্যামনি ও নতিপত্র অনুসারে শাহ জালাল এর ৩২ বছর বয়সে ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ সালে তিনি সিলেটে আগমন করেন । সুহেলি ইয়্যামনিতে উল্লেখিত তথ্য হতে জানা যায় যে ৬৭১ হিজরী ১২৭১ সালে শাহজালাল জন্ম গ্রহন করেছেন । তার জন্ম ভূমি ছিল প্রাচীন আরবে আযমের হেজাজ ভূমির সেসময়ের প্রদেশ ইয়্যামন দেশের কুনিয়া নামক শহরে । শাহ জালাল যখন তিন মাসের শিশু বালক তখন তার মা মৃত্যু বরণ করেন ।

শাহ জালাল শিশু কালেই মাকে হারান এবং তার পাচ বছর বয়সে পিতাকে হারান । শাহ জালাল এর মামা আহমদ কবিরই তাকে পালক নেন । আহমদ কবির আরবী ভাষায় কোরআন হাদিস শিক্ষা দেয়া সহ ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক বিষয়ে নামজ রোজায় অভ্যস্ততার জন্য তার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন । পরে আহমদ কবীর শাহ জালালকে ইয়েমেন থেকে মক্কায় নিয়ে যান । মক্কা শহরে আহমদ কবীরের একটি আস্তানা হোজরা ছিল । সেখানে অন্যান্য শিষ্যদের সাথে শাহ জালালকেও উপযুক্ত শিক্ষা দিয়া গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন বলে জানা যায় ।


শাহ জালাল এর গুরু পরিচিতিঃ
শাহ জালাল এর মামা এবং শিক্ষাগুরু সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি সাধারণত আহমদ কবির নামেই বেশি পরিচিত । সৈয়দ আহমদ কবিরের পিতা নাম সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী । সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী শাহ জালালের জন্মের আগে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের উদ্ধেশ্যে মোলতানের নিকট আউচে এসে বসবাস করতেন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন । সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দির পিতা সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী ছিলে তার মুরশীদ । শাহ জালাল (রহ) এর পীরদের উর্ধঃস্থন পীরগণের তালিকা যেমনঃ
হযরত মোহাম্মদ (সঃ)
হযরত আলী (রাঃ)

আলীর সমাধি এই মসজিদে অবস্থিত
শেখ হাসান বসরী
শেখ হবিব আজমী
শেখ মারুফ কর্খী
শেখ সিংরি সুকতি
শেখ মমশাদ সিকন্দরী
শেখ আহমদ দিন্নুরী
শেখ আমুবিয়া
শেখ আজি উদ্দীন সোহরাওয়ার্দী
শেখ আবু নজিব জিয়াউদ্দিন
শেখ হিসাব উদ্দীন
শেখ মাখদুম
শেখ বাহাউদ্দীন জাকারিয়া
সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী
সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি
শাহ জালাল ।

আধ্যাতিকতা
শাহ জালালকে সুফি মতবাদে দীক্ষিত করাই আহমদ কবিরের মুল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানা যায় । যে কারণে আহমদ কবিরের শাহ জালালকে নিয়ে মক্কায় আসা । মক্কা শহরে সোহরাওয়ার্দি তরিকার প্রবর্তক সিহাবুদ্দীনের প্রতিষ্টিত খানকায় (মরমী স্কুল) তত্কালে আহমদ কবির ছিলেন প্রধান তত্ত্ববধায়ক । আহমদ কবির শাহ জালালকে ইসলামের শরীআত এবং মারিফত উভয় ধারায় শিক্ষা দানে দীক্ষিত করেন ।

শাহ জালাল এর দরবেশী জীবনঃ

জন্ম গত ভাবে শাহ জালাল দরবেশ পরিবারে জন্ম নিয়েছেন । তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মানুরাগী মোজাহিদ ইয়্যামনে ধর্ম যুদ্ধে তিনি নিহত হন এবং তার মাতার দিক দিয়ে তিনি সৈয়দ বংশের প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারীর দৌহিত্র ছিলেন । তদুপরি দরবেশ আহমদ কবির তার মামা যাকে শাহ জালালের শিক্ষা গুরু হিসেবে পাওয়া যায় । তিনিও সে সময়ে একজন বিখ্যাত দরবেশ ছিলেন । আহমদ কবির যখন শাহ জালালের লালন পালনের ভার গ্রহন করেন সেই ছোট বেলা থেকেই তাকে দরবেশী তর তরিকায় জীবন যাপনের প্রণালি শিক্ষা দিয়েছন বলেও জানা যায় ।


শাহজালাল এর সিলেট আগমনঃ
শাহ জালাল মুজাররদ তার মামা এবং গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের আস্তানায় আরব দেশে ছিলেন । শাহজালাল ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের স্বপ্ন দেখার পরে সৈয়দ আহমদ কবির এর কাছে ব্যক্ত করেন । মামা এবং মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবিরকে তা জানান । কবির এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে শাহজালালকে ভারতবর্ষে যাবার পরামর্শ দেন । যাত্রাকালে কবির শাহ জালালেরর হাতে এক মুঠো মাটি তুলে দিয়ে বললেন যে স্থানে এই মাটির স্বাদ গন্ধ এবং বর্ণের মিল এক হবে সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়বে । মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবির (রহ) এর দোয়া সাথে নিয়ে শাহ জালাল (রহ) ধর্ম প্রচার অভিযানে আরবের মক্কা শরিফ হতে একা একাই যাত্রা শুরু করেন ।

শাহ জালাল এর হিন্দুস্থানে প্রবেশঃ
শাহ জালাল মক্কা হতে বিদায় কালে যে কয়েক জন সঙ্গী তার সাথে যাত্রা করেন তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন হাজী ইউসুফ হাজী খলীল ও হাজী দরিয়া এবং আরেক জন সঙ্গীর নাম চাশনী পীর তিনি ছিলেন মৃত্তিকার তহবিলদার । হিন্দুস্থানে আসার পূর্ব পর্যন্ত সমরবান্দ থেকে সৈয়দ ওমর রোম থেকে করিমদাদ ও বাগদাদ থেকে নিজাম উদ্দীন এবং ইরান, জাকারিয়া ও শাহ দাউদ এবং সৈয়দ মুহম্মদ প্রমুখ তার অনুগামী হলেন । তাদের নিয়ে তিনি হিন্দুস্থানে প্রবেশ করলেন । এরপর সুলতান থেকে আরিফ ও গুজরাট থেকে জুনায়েদ এবং আজমীর শরীফ থেকে মুহম্মদ শরীফ, দাক্ষিণাত্য থেকে সৈয়দ কাসিম, মধ্যপ্রদেশের হেলিম উদ্দীন তার মুরীদ হয়ে তার সঙ্গে সঙ্গে চললেন । এভাবে দিল্লী পর্যন্ত এসে পৌছলেন তখন শিষ্যদের সংখা ২৪০ জন বলে ধারণা পাওয়া যায় ।


শাহ জালাল এর নিজামুদ্দীন আউলিয়ার সাথে সাক্ষাতঃ
দিল্লিতে আসার পর নিজামুদ্দিন আউলিয়ার জৈনক শিষ্য গুরুর কাছে শাহ জালালের কুত্সা প্রচার করে । সঙ্গে সঙ্গে নিজাম্মুদ্দীন অন্যের কুত্সা রটনাকারী এ শিষ্যকে উপযুক্ত সাস্তি স্বরুপ দরবার থেকে তাড়াইয়া দিলেন এবং অন্য দুই শিষ্যকে ডেকে তাদের মারফতে শাহ জালালের কাছে সালাম পাঠালেন । শাহ জালাল সালামের উত্তরে উপটৌকন স্বরুপ ছোট একটি বাক্সে প্রজ্জলিত অঙ্গারের মধ্যে কিছু তুলা ভরিয়া নিজামুদ্দীন আউলিয়ার নিকট পাঠালেন । নিজামুদ্দিন আউলিয়া হযরত শাহ্ জালালের আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে তাকে সাদরে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানান । বিদায়কালে প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ নিজামুদ্দিন আউলিয়া তাকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দিলেন । মাজার সংলগ্ন এলাকায় সুরমা রঙের যে কবুতর দেখা যায় তা ঐ কবুতরের বংশধর। যা আমদের অনেকের কাছে জালালী কবুতর নামে পরিচিত ।


শেখ্ বুরহান উদ্দীনের দেখা এবং দুঃখ প্রকাশ করাঃ

উল্লেখ্য আছে যে শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে বর্ণনা অনুসারে তুর্কি বিজয়ের মধ্য দিয়ে শ্রীহট্টে মোসলমান জন বসতি গড়ে ওঠে ছিল । সিলেটের টুলটিকর মহল্লায় এবং হবিগঞ্জের তরফে সেসময়ে মুসলমানরা বসতির গড়ে ছিলেন । এ সময় শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যে গৌড় গোবিন্দ নামে এক অত্যাচারি রাজা ছিল । গৌড় রাজ্যের অধিবাসী বুরহান উদ্দীন নামক জৈনক মোসলমান নিজ ছেলের জন্ম উৎসব উপলক্ষে গরু জবাই করে গৌড়ের হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের কাছে অপরাধি হন । এর ফলে গোবিন্দ বুরহান উদ্দীনের শিশু ছেলেকে ধরে নিয়ে হ্ত্যা করেন । বুরহান উদ্দীন বাংলার তৎকালীন রাজা শামস উদ্দীন ফিরুজ শাহের নিকট গিয়ে এই নিষ্ঠুর হ্ত্যা কাণ্ডের অভিযোগ করলে রাজা তার ভাগিনে সিকান্দর গাজীকে প্রখণ্ড সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যে প্রেরণ করেন । শাহী সৈন্য যখন ব্রহ্মপুত্র নদী পার হতে চেষ্টা করে তখনই রাজা গোবিন্দ ভোতিক শক্তির সাহায্যে মুসলিম সৈন্যের উপর অগ্নীবাণ নিক্ষেপ করে সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে ফেলে । গোবিন্দের ঐন্দ্রজালিক শক্তির প্রভাবে সিকান্দর গাজীর প্রতিহ্ত এবং বিফল মনোরথের সংবাদ দিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজীর নিকট পৌছলে সম্রাট এ সংবাদে মর্মাহত হন । পরবর্তিতে সম্রাট তার রাজদরবারী আমেল উলামা সহ জ্যোতিষদের সাথে আলোচনায় এই মর্মে অবহিত হন যে সুলতানের সেনাবাহিনীতে আধ্যাতিক শক্তি সম্পন্ন এক ব্যক্তি রয়েছে তার নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করা হলে গৌড়গোবিন্দের যাদু বিদ্যার মোকাবেলা করে সিলেট বা শ্রীহট্ট জয় সম্ভব হবে । জ্যোতিষিরা উক্ত আধ্যাতিক শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তির পরিচয়ের পন্থা হিসেবে এও বলে ছিল আগামী দুই এক রাত্রের মধ্যে দিল্লী নগরীতে প্রখণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে সমস্ত নগরী ভেসে যাবে প্রতিটি ঘর বাড়ির বিষম ক্ষতি লক্ষিত হবে কোথায় কোন প্রদিপ থাকবেনা একটি মাত্র তাবু সারা । সম্রাট জ্যোতিষদের কথামত অনুসন্ধান করে সেই ঝড় বৃষ্টির রাতে দেখতে ফেলেন এক জন সাধারণ সৈনিক একটি তাবুতে একাগ্র মনে বসে কোরান পড়রছেন । সম্রাট সেখানে উপস্থিত হয়ে তার সব বিষয় অবগত হয়ে সিলেট অভিযানের নেতৃত্ব দেয়ার অনুরুধ জানান । তিনি সৈয়দ নাসির উদ্দীন সম্রাটের আদেশে সম্মত হলে সম্রাট তাকে সিপাহসালার সনদ প্রদানের মাধ্যে সিকান্দর গাজীর কাছে প্রেরণ করেন । এ দিকে গাজী বুরহান উদ্দীন তখন দিল্লীতে অবস্থান করতেছেন । এ সময় শাহ জালালও তার সঙ্গীদের নিয়ে দিল্লীতে আসেন । ঐতিহাসিক আজহার উদ্দীন ধরণা করে দিল্লীতেই বুরহান উদ্দীনের সাথে শাহ জালালের সাক্ষাত হয় এবং এখানেই বুরহান উদ্দীন নিজের দুঃখময় কাহিনী তার নিকট বর্ণনা করেন ।

সিপাহশালার নাসির উদ্দীনের দেখা
শাহ জালাল দিল্লী হতে বুরহান উদ্দীনকে সহ ২৪০ জন সঙ্গীসহচর সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেন । শাহ জালাল সাতগাও এসে ত্রিবেণীর নিকট দিল্লীর সম্রাট প্রেরিত অগ্রবাহিনী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের সাথে মিলিত হন । সৈয়দ নাসির উদ্দীন শাহ জালাল সম্পর্কে অবগত হয়ে তদীয় শিষ্যত্ব গ্রহনের অভিপ্রা ব্যক্ত করেন । পথে পথে শাহ জালালের শিষ্য বর্ধিত হতে লাগল । ত্রিবেনী থেকে বিহার প্রদেশে আসলে আরো কয়েকজন ধর্ম যুদ্ধা অনুসঙ্গী হলেন । যাদের মধ্যে হিসাম উদ্দীন, আবু মোজাফর উল্লেখযোগ্য। এখান থেকে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের আনিত একহাজার অশ্বারোহী এবং তিন হাজার পদাতিক সৈন্য সহ শাহ জালাল নিজ সঙ্গীদের নিয়ে সোনার গাঁ অভিমুখে সিকান্দর গাজীর সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ।


শাহজালাল এর সিকান্দর গাজীর দেখা ও ব্রহ্মপুত্র পার

শাহ জালাল সোনার গাঁ আসা মাত্রই শাহ সিকান্দর গাজীর সাথে সাক্ষাত ঘটিল । সিকান্দর গাজী শাহ জালালকে সসম্মানে গ্রহন করলেন । শাহ জালাল তাঁর সঙ্গী অনুচর এবং সৈন্য সহ শাহ সিকান্দরের শিবিরে সমাগত হয়ে সিকান্দর হতে যুদ্ধ বিষয়ে সব বিষয় জেনে নিলেন । সিকান্দর শাহ জালালের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিষ্য গ্রহন পুর্বক সিলেট অভিমুখে যাত্রা করলেন । এভাবে শাহ জালালের শিষ্য সংখ্যা ৩৬০ জনে পৌছায় । এ দিকে গৌড় গৌবিন্দ নিজেস্ব চরদ্বারা শাহ জালালের সমাগম সংবাদ পেয়ে নতুন এ দল যাতে ব্রহ্মপুত্র নদী পার না হতে পারেন সে ব্যবস্থা অনুসারে নদীর সমস্ত নৌ চলা চল বন্ধ করে দেন । শাহ জালালের ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তিনি তার শিষ্যদের নিয়ে বিনা বাধায় জায়নামাজের সাহয্যে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হলেন ।


শাহজালাল এর সিলেটে প্রবেশঃ

খ্রিস্টিয় দশম শতকে শ্রীহট্ট ভুমী লাউড় জয়ন্তীয়া এবং গৌড় নামে তিনটি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল । উক্ত রাজ্য গুলোর মধ্যে গৌড় অন্যতম রাজ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল । এ রাজ্যে প্রাচীন সীমা রেখা বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা সহ হবিগঞ্জ জেলার কিয়দাংশ নিয়ে বিস্তৃত থাকায় গৌড় রাজ্যের দহ্মিণ সীমাভুমী নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগণার পাশে রাজা গোবিন্দের চৌকি ছিল । শাহ জালাল তারসঙ্গীদের নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে প্রথমত সেখানে অবস্থান করেন । এখানে গৌড়ের সীমান্ত রক্ষীরা অগ্নীবাণ প্রয়োগ করে তাদেরকে প্রতিহত করতে চায় । কিন্তু সে মুসলমান সৈন্যের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই । গোবিন্দ সমস্ত বিষয় অবগত হয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে বরাক নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা জারি করে । শাহ জালাল আগের মত জায়নামাজের সাহায্যে বরাক নদী পার হলেন । বরাক নদী পারা পারে বাহাদুরপুর হয়ে বর্তমান সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় ফতেহ পুর নামক স্থানে রাত্রি যাপন করলেনন । উল্লেখিত তথ্য সম্মেলিত প্রাচীন গ্রন্থ তোয়ারিখে জালালীতে উল্লেখ আছেঃ
চৌকি নামে ছিল যেই পরগণা দিনারপুর
ছিলটের হর্দ্দ ছিল সাবেক মসুর
সেখানে আসিয়া তিনি পৌছিলা যখন
খবর পাইলা রাজা গৌবিন্দ তখন ।
এপারে হজরত তার লস্কর সহিতে
আসিয়া পৌছিলা এক নদীর পারেতে
বরাক নামে নদী ছিল যে মসুর
যাহার নিকট গ্রাম নাম বাহাদুরপুর।
যখন পৌছিলা তিনি নদীর কেনার
নৌকা বিনা সে নদীও হইলেন পার ।

সর্ব প্রকার কল-কৌশল অবলম্বন করে রাজা গৌড় গোবিন্দ যখন দেখলেন সকল প্রয়াসই বিফল হচ্ছে তখন শেষ চেষ্টা করার লক্ষে যাদু মন্ত্র সহ এক প্রকাণ্ড লৌহ ধুনুক শাহ জালালের কাছে প্রেরণ করে । যার শর্ত ছিল যদি কেহ একা উক্ত ধনুকের জ্যা ছিন্ন করতে পারে তখন গোবিন্দ রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে । শাহ জালাল তার দলের লোকদের ডেকে বললেন যে ব্যক্তির সমস্ত জীবনে কখনও ফজরের নামাজ খাজা হয় নাই বা বাদ পরে নাই একমাত্র সেই পারবে গোবিন্দের লৌহ ধনুক জ্যা করতে। অতপর মুসলিম সৈন্য দলের ভেতর অনুসন্ধান করে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনকে উপযুক্ত পাওয়া গেল এবং তিনিই ধনুক জ্যা করলেন ।


উত্তর পূর্ব ভারতের বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীতে বিভক্ত হয়ে যায় । সিলেট বিভাগের বেষ্টনী হিসেবে ধর্তব্য এ নদী গুলো প্রাচীন কালে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হত। বর্ষাকালের দৃশ্য প্রায় সাগরের মত দেখাত । ঐতিহাসিক পর্যটক ইবন বতুতা সুরমা নদীকে নহরি আজরফ বলে আখ্যায়িত করেছেন । শাহ জালাল ফতেপুর হতে যাত্রা করে যখন সুরমা তীরে অবস্থান নিলেন। এ নদী পার হয়েই গৌড়ের রাজধানী । শাহ জালাল আউলিয়ার কেরামতি এবং আলৌকিক বিভিন্ন ঘটনায় রাজা গোবিন্দ বীতশ্রদ্ধ হন । গোবিন্দ শক্রবাহিনীকে কিছু সময় ঠেকিয়ে রাখার জন্য সুরমা নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করেন । তা সত্ত্বেও শাহ জালাল নদী পার হন ।
শাহ্‌ জালাল বিসমিল্লাহ বলে সকল মুরিদকে নিয়ে জায়নামাজে করে অনায়াসে গেলেন চলে নদীর ওপারে ।

গোবিন্দ গড়দুয়ারস্থিত রাজবাড়ি পরিত্যাগ করে পেচাগড়ের গুপ্ত গিরি দুর্গে আশ্রয় নেন । এরপর থেকে তার আর কোন হদিস মেলেনি । শাহ জালাল তিন দিন সিলেটে অবস্থান করার পর, মিনারের টিলায় অবস্থিত রাজবাড়ি প্রথমে দখল নিলেন ।


তথ্যঃ সিলেট বিভাগের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক রুপরেখা, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক- শেখ ফারুক আহমদ, পলাশ সেবা ট্রাস্ট সিলেট, প্রকাশকাল
শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি, মুফতি আজহারুদ্দীন সিদ্দিকি, উত্স প্রকাশন ঢাকা
প্রকাশকাল ।
শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, দ্বিতীয় ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, দরবেশ শাহজালাল অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি প্রকাশক মোস্তফা সেলিম
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×