আত্মহত্যা বা আত্মহনন করা হচ্ছে একজন নর কিংবা নারী কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ করা । প্রথমেই আমাদে জেনে নেওয়া দরকার ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে এর অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা বা সেচ্চায় জীবন ত্যাগ করা । যখন কেউ আত্মহত্যা করেন তখন জনগণ এই প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে থাকেন । ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করেছেন । ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশে আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধরূপে ঘোষণা করা হয়েছে । অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচিত করেছেন । যিনি নিজেই নিজের জীবন প্রাণ বিনাশ করেন তিনি আত্মঘাতক, আত্মঘাতী এবং আত্মঘাতিকা, আত্মঘাতিনীরূপে সমাজে পরিচিত থাকেন ।
প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাদের মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যাই হলো ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ । কিশোর কিশোরী আর যাদের বয়স পয়ত্রিশ বছরের নিচে তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা । নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি । পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি ।
অনেক সময় নিরীহ জনসাধারণের উপর হামলার মাধ্যমে হত্যা করার জন্যও ব্যক্তির আত্মহত্যাকে এক ধরনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে । একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বোমা বহন করে কিংবা তার শরীরে টেপ দিয়ে বোমা বেধে রেখে জনতাকে হত্যার লক্ষ্যে অগ্রসর হয় এবং বোমা ফাটায় এরফলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিরীহ জনগণকে হত্যা কিংবা আহত করে এবং নিজেও এর শিকার হয় । সাধারণত বোমা বহনকারী ব্যক্তি নির্মমভাবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে থাকে কিংবা গুরুতর আহত হয়ে থাকেন ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আত্মঘাতী হামলার উদাহরণ রয়েছে । যেমন কামিকাযিদের আক্রমণ অন্যতম । তারা জাপানী বোমারু বিমানের পাইলট হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান সৈনিকদের হত্যার লক্ষ্যে নৌবহরে তাদের বিমানকে সংঘর্ষের মাধ্যমে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলেন ।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী বোমা হামলা পরিচালিত হয় । এতে উড়ন্ত বিমানকে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সুউচ্চ ভবন ও পেন্টাগনকে লক্ষ্য করে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছিল যা মানব ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ।
তাছাড়াও ভারতের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১ মে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরামবুদুরে এক আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন । ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত পায় । উক্ত বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধী ছাড়াও আরও চৌদ্দ জন নিহত হয়েছিলেন ।
নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮৭ থেকে ৯৮% আত্মহত্যাকর্ম সংঘটিত হয় । তাছাড়াও আত্মহত্যাজনিত ঝুকির মধ্যে অন্যান্য বিষয়াদিও আন্তঃসম্পৃক্ত। তারমধ্যে নেশায় আসক্তি ও জীবনের উদ্দেশ্য খুজে না পাওয়া এবং আত্মহত্যায় পারিবারিক ঐতিহ্য অথবা পূর্বেকার মাথায় আঘাত অন্যতম প্রধান কারন ।
আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, গৃহহীনতা এবং বৈষম্যতাজনিত উপাদানগুলো আত্মহত্যায় উৎসাহিত করে থাকে । দারিদ্র্যতা সরাসরি আত্মহত্যার সাথে জড়িত নয় । কিন্তু এটি বৃদ্ধির ফলে আত্মহত্যার ঝুকি বৃদ্ধি পায় এবং উদ্বেগজনিত কারণে আত্মহত্যার উচ্চস্তরে ব্যক্তি অবস্থান করে । শৈশবকালীন শারীরিক ইতিহাস কিংবা যৌন অত্যাচার বা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সময় অতিবাহিতজনিত কারণও ঝুকিগত উপাদান হিসেবে বিবেচিত আছে । হারহামেশায় দেখা যাচ্ছে বর্তমানে প্রেমে ব্যার্থতা বা প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়ে চলেছে । পরিবার বা সমাজ স্বীকৃতি না দেওয়ায় প্রেমিক যুগলের সম্মিলিত আত্মহত্যার ঘটনাও প্রায়ই ঘটে চলছে ।
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতাসংক্রান্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে । উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি । যখন একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যাপক চিন্তা ভাবনা শুরু করেন তখনই তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে । মনোবিদগণ বলেন যে যখন ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে কাউকে জানানো । ভুক্তভোগী ব্যক্তি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কিভাবে আত্মহত্যা করবেন তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । যে সকল ব্যক্তি দুঃশ্চিন্তায় পড়েন তারা আত্মহত্যায় সর্বোচ্চ ঝুকিপূর্ণ দলের অন্তর্ভূক্ত । উন্নত দেশে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম মুহুর্তজনিত হটলাইন রয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাদের চিন্তা ভাবনা এবং আত্মহত্যার পরিকল্পনার কথা জানায় । হটলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে ভুক্তভোগী তার সমস্যার সমাধানের পথ সম্পর্কে অবহিত হয়ে আত্মহত্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে । বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতা মত অনুযায়ী নিজেকে ভালবেসে আত্মহত্যা থেকে বাচার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যেমন যখন কোন প্রেমিক প্রেমিকার যখন আত্মহত্যা করেন ।তখন তাকে ভাবতে হবে সে চলে গেছে বলে এখানেই শেষ নয় এই শেষ থেকেই নিজের জীবনতাকে আবার অন্যভাবে নতুন করে সাজিয়ে নিতে হবে ।
তাকে দেখিয়ে দিতে হবে সে যদি আপনাকে ছেড়ে দিয়ে যেয়ে সুখী হতে পারে তাহলে আপনি কেন তাকে ছাড়া সুখী হতে পারবেন না । আপনাকেও তাকে ছাড়া সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং সেখানে আপনি নিশ্চিত জয় লাভ করবেন ।
বরং আপনি আত্মহত্যা না করে চাইলে বাঁচতে পারেন এবং আপনার কাছ থেকে আর দশ জন তরুনতরুনী শিখবে যে কিভাবে নিজেকে
শেষ হওয়া থেকেও আবার নতুন করে শুরু করা যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৯