somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথের রসবোধ ও বাকচাতুর্য

২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসাথে বসে প্রাতরাশ করছিলেন। গান্ধীজি খাচ্ছিলেন রোজকারের মত পরিজ এবং রবীন্দ্রনাথ গরম লুচি।
গান্ধীজি বললেন, "গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ"।
উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বিষই হবে, তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে, কারণ আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষই খাচ্ছি"।

রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, "আপনাকে আমি দন্ড দেব"। ভদ্রলোক ভীষণ বিব্রত হ’য়ে বললেন, "কেন গুরুদেব! আমি কী অপরাধ করেছি"?
রবীন্দ্রনাথ বললেন, "গতকাল আপনার লাঠি, মানে দণ্ডটি আমার বাসায় ফেলে গেছেন, এই নিন আপনার দণ্ড"।
♥♥
একবার শরৎচন্দ্র একখানা টেলিগ্রাম পাঠালেন রবীন্দ্রনাথকে। সেকালে সাধারণত কোনও গুরুতর সংবাদ হ’লেই টেলিগ্রাম করা হ’ত। কাজেই টেলিগ্রাম এলে সকলেই কিঞ্চিৎ ভীত হতেন। তা, সেই টেলিগ্রাম খুলে দেখা গেল, শরৎবাবু লিখেছেন “গুরুদেব, আমি ভালোই আছি”। অর্থাৎ মস্ত এক ঠাট্টা!
রবীন্দ্রনাথও কি আর যে সে পাত্র! তিনিও এর উত্তরে বিশাল এক পাথরখন্ড পার্সেল করলেন শরৎচন্দ্রকে, তার সাথে চিরকুটে লিখলেন, “তব কুশল সংবাদ পাইয়া আমার হৃদয় হইতে এই পাষাণভার নামিয়া গিয়াছে”।
♥♥♥
একবার রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে তাঁর একটি নাটক পাঠ করছেন, শরৎচন্দ্র সেই আসরে উপস্থিত হলেন। একদা জুতো চুরি হবার কারণে তিনি জুতোজোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে ঢুকতেন। রবীন্দ্রনাথ জানতে পেরে একদিন বলে উঠলেন, "শরৎ, তোমার বগলে ওখানি কী? পাদুকাপুরাণ"? এ নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি হয়েছিল।
♥♥♥♥
একবার দোলপূর্ণিমার দিনে নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল জামার পকেট থেকে আবির বের করে কবিগুরুকে রাঙিয়ে দিলেন। আবিরে রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ বলে উঠলেন,”এতদিন জানতাম দ্বিজেনবাবু গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন, আজ দেখছি দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ”।
♥♥♥♥♥
মরিসসাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একদা তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, “গুরুদেব, চিনির ওপর একটি ভারি মিষ্টি গান লিখেছেন। তারপর গাইতে শুরু করলেন, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’…প্রমথনাথ জিজ্ঞেস করলেন, "চিনির ওপর, এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন"?
উত্তরে মরিসসাহেব জানালেন, “কেন স্বয়ং গুরুদেবই আমায় বলেছেন একথা”।
♥♥♥♥♥♥
রবীন্দ্রনাথ একদিন বিকেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নৃত্যনাট্যের রিহার্সাল করাচ্ছেন, একজন এসে বললেন, "গুরুদেব, চা খাবেন"? রবীন্দ্রনাথ বললেন, "আমি না-চা’র দলে (অর্থাৎ নাচের দল, আবার চা না খাবার দল) সেই ব্যক্তি বুঝলেন রবীন্দ্রনাথের রসিকতা, ভাবলেন গুরুদেবকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করে জব্দ করবেন। তিনি বললেন, “won’t you have tea?” রবীন্দ্রনাথ তেমনই মুচকি হেসে বললেন, “আমি no-tea’র দলে”(নটী)।
♥♥♥♥♥♥♥
সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রী বলাইচাঁদ-এর এক ভাই অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছে কার কাছে শুনলেন গুরুদেব কানে একটু কম শোনেন। দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ বললেন, "তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি"? তখন বনফুলের ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, “আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ"! রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, “না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে সানাই"!
♥♥♥♥♥♥♥♥
জীবনের শেষদিকে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনে ঝুঁকে উপুড় হয়ে লিখতেন। তা দেখে এক শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন , “গুরুদেব, আপনার নিশ্চয়ই ওভাবে লিখতে কষ্ট হচ্ছে, একখানা চেয়ারে হেলান দিয়ে তো আয়েশ করে লিখতে পারেন”! চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “তা তো পারি, তবে কি জানো, উপুড় হ’য়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়? পাত্রের জল ক’মে তলায় এসে ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়”।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩২
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×